leadT1ad

আক্রান্ত গণমাধ্যম, যা বলছে ইসলামপন্থী দলগুলো

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৩
দুর্বৃত্তের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো ভবন। স্ট্রিম ছবি

ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের কারণে শুক্রবার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার প্রকাশ হয়নি। এই ঘটনায় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিবৃতি দিয়ে সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশবাসীকে ‘কয়েকজন বিচ্ছিন্ন উগ্রগোষ্ঠীর মাধ্যমে সংঘটিত’ সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

গতকাল বৃহস্পতিবার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আসার পরেই শোক প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলো। এক পর্যায়ে রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা করেন একদল লোক। সেখানে তারা সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করে।

বিক্ষোভের মুখে একসঙ্গে দুটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের প্রকাশনা বন্ধের ঘটনা নজিরবিহীন। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিএনপি, এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা এবং নাগরিক সমাজ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঘটনার প্রায় ১৮ ঘণ্টা পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে। এতে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ‘কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে জাতীয় ঐক্য ও নির্বাচন রক্ষার বার্তা’ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, হাদির জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে ছাত্র-জনতা। তাদের ক্ষোভ ও আবেগকে ন্যায্য ও বোধগম্য মন্তব্য করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘কিন্তু এই ক্ষোভকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্পষ্টভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছি- এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হতে পারে।’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন; গণমাধ্যমের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা প্রতিবাদের গ্রহণযোগ্য ভাষা হতে পারে না।’

বিবৃতিতে বলা হয়, যে দুটি পত্রিকার অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাদের সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে দেশের সিংহভাগ মানুষের আপত্তি আছে। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পক্ষে বয়ান ও সম্মতি উৎপাদনে এই পত্রিকা ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়। নানাভাবে অপতথ্য তৈরিতেও এই পত্রিকা দুটির দায় আছে। সবকিছু সত্ত্বেও আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে কোনো পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া যায় না।

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বৃহস্পতিবার যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় শক্তি ধারণ করে না। এমনকি বিপ্লবী শহীদ ওসমান হাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানও এই অগ্নিসংযোগকে সমর্থন করেনি। ফলে এই ঘটনা গুরুতর হলেও বিচ্ছিন্ন।

দলীয় মুখপাত্র সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল আচরণ করার আহবান জানান।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৭টা) মাওলানা মামুনুল হকের দল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি কোনো বিবৃতি দেয়নি। বিবৃতি দেয়নি বিএনপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার আলাপ এগিয়ে নেওয়া জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশও।

অন্যদিকে নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন পরিচয় দেওয়া কওমি ধারার বৃহৎ সংগঠন হেফাজতে ইসলামও গণমাধ্যম আক্রান্তের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গণতান্ত্রিক উত্তরণে বড় বাধা: গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। গত দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। অন্যান্য দল ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে জোট ও আসন সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। অতীতে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা দল বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান নির্বাচন সামনে রেখে ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসছেন। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের মিত্র জামায়াত সমমনা কয়েকটি দলকে বিএনপির বিপক্ষে নির্বাচনে লড়াইয়ের জোর প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।

এ অবস্থায় গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেওয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক আ-আল মামুন মনে করেন, আক্রান্তদের পাশে না দাঁড়ানোর ভূমিকা ধ্বংসাত্মক। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এটি বড় বাধা।

তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, ইসলামপন্থী দলগুলোর পক্ষ থেকে এমন ঘটনার প্রতিবাদ দূরে থাক, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে উসকানি দেওয়া হয়েছে। হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ঘোঁট পাকানো হয়েছে, সেখানে তাদের অনেকের অংশগ্রহণও দেখা গেছে। ইসলামপন্থীরা এই ধ্বংসাত্মক পথকেই যদি বাংলাদেশের মুক্তির একমাত্র পথ মনে করে, তাহলে ভুল করবে।

আ-আল মামুন বলেন, যখন মাজার ভাঙা হয়েছে, তখনও ইসলামপন্থীরা প্রতিবাদ করেনি। প্রতিবাদকারীদের নানা ট্যাগ দিয়ে এসব অপকর্মে উৎসাহ দিয়েছে তারা। আমি মনে করি, এটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। ইসলামপন্থার উত্থানকে যেভাবে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা আরও ভয়াবহ। এতে বেশ কিছু প্লেয়ার আছে। তবে তাদের থামাতে সরকারের বড় রকমের ব্যর্থতা স্পষ্ট।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক আর রাজী বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই তারা পাঠক ধরে রাখতে পেরেছে। পত্রিকা দুটি যখন হামলার শিকার বা প্রকাশনা বাধাগ্রস্ত হয়, তখন পাঠকদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এটা হতে পারে না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত