leadT1ad

এই বয়সে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৯
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘বাহাত্তর বছরের বেশি বয়সে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়’। বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন কথা বলেন।

শিক্ষকতার সূত্রে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ পেলেও তা নেননি বলেও জানান উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। আর এই বয়সে এসে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে ‘গভীর দুঃখের বিষয়’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

‘উপদেষ্টার রোজনামচা, চালকের হেলমেট নাই, ও সেফ এক্সিট’ শিরোনামের এই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল আমি সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ট্রেনযোগে ভৈরব যাই। আমার সঙ্গে ছিলেন যাতায়াত খাত বিশেষজ্ঞ ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মইনুদ্দিন, রেল ও সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী, জেলা ও উপজেলা পরিষদ ও পুলিশের কর্মকর্তারা। ট্রেনে ওঠার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করি ও ট্রেনে যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করি। ১০টা ১৫ মিনিটে ভৈরব পৌঁছাই এবং সেখান থেকে গাড়িতে করে আশুগঞ্জ ট্রেন স্টেশন পরিদর্শন করি। সেখানে পৌঁছে বিএনপি, জামায়াতসহ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলি। তাঁদের দাবি, স্টেশনটিকে আগের মতো বি শ্রেণিভুক্ত করতে হবে।’

স্টেশনের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘স্টেশনটির বেহাল অবস্থা। উঁচুতে অবস্থিত স্টেশনটিতে নারী ও বয়োবৃদ্ধদের ওঠা অত্যন্ত কষ্টকর। সিগন্যালিংসহ স্টেশনটির অন্যান্য ত্রুটি নিরসন ও দীর্ঘমেয়াদে কী করা যায়, সে বিষয়ে রেলের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিই।’

‘সেখান থেকে সরাইলের পথে রওনা হই। সাত-আট কিলোমিটার পথ এক ঘণ্টা অবস্থানের পরও অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমে পায়ে হেঁটে এবং পরে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দিই। মোটরসাইকেল খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় চালক কিংবা যাত্রী—কারওই হেলমেট নেই। আট-দশটা মোটরসাইকেল খুঁজে একটিমাত্র হেলমেট পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি ও অপেক্ষার পরও চালকের জন্য হেলমেট না পেয়ে সবার পরামর্শে একমাত্র হেলমেটটি নিজেই পরে রওনা দিই,’ যোগ করেন তিনি।

এরপর হেলমেটবিহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ এবং বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার কথা বলেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যানজটের মূল কারণ সরাইল চৌরাস্তার নির্মাণকাজ হলেও পথে দেখতে পাই, মূলত চালকদের শৃঙ্খলাবোধ ও হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থাপনার অভাবে যাত্রায় বিলম্ব ঘটছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁদের ফিরিয়ে এনে এখন পুনরায় কাজ শুরু করা হয়েছে।’

‘দুই লেনের মূল রাস্তার ডানপাশে দুই লেন ও বামপাশে একটি সার্ভিস লেন আছে। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার করা হলে এত যানজট হওয়ার কথা নয়। মূল রাস্তার দুই পাশে ডিভাইডার স্থানে স্থানে ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাশ থেকে গাড়ি উঠে দুই লেন কোথাও তিন-চার লেনে পরিণত হয়েছে। ফলে সবাই আগে যেতে চাইছে, কেউই এগোতে পারছে না। হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকলে এমনটা হতো না। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে, আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলব।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে অবিলম্বে রাস্তা সংস্কার বিষয়ে ছয়টি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্মাণকাজ তদারকির জন্য অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ ১২ জন কর্মকর্তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পদায়ন করা হয়েছে। ‘আমরা আশা করছি দ্রুত এ রাস্তায় চলাচল প্রায় স্বাভাবিক হবে,’ বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ফেরার পথে এক সাংবাদিক উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বিষয়ে আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়টি উত্থাপনকারী, প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসেবে শ্রদ্ধার পাত্র। তাই তাঁর বক্তব্যের ওপর আমার মন্তব্য করা শোভন নয়। তাছাড়া আমি রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করি না।

‘উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমার রোজনামচা এমনই। গতকালও রাত ৮টায় বাসায় ফিরেছি। নিজে পদে থেকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ করিনি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কাউকে ব্যবসা বা চাকরি দিইনি। নিজের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করে জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছি,’ যোগ করেন তিনি।

সড়ক উপদেষ্টা লেখেন, ‘শিক্ষকতার সূত্রে পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ গ্রহণ করিনি। তাই আজ ৭২+ বছর বয়সে আমাকে যদি সেফ এক্সিটের কথা ভাবতে হয়, তা হবে গভীর দুঃখের বিষয়!’

Ad 300x250

সম্পর্কিত