leadT1ad

পলাতক আসামিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, অনুমোদন পেল সংশোধিত আরপিও

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

সভা শেষে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। স্ট্রিম ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পলাতক আসামিদের প্রার্থিতা বাতিল, পোস্টাল ভোটের পুনঃপ্রবর্তন এবং একক প্রার্থী থাকলে ‘না ভোটে'র সুযোগসহ একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সংশোধিত আরপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

নতুন আইনে সবচেয়ে আলোচিত পরিবর্তনটি হলো আদালত কর্তৃক পলাতক ঘোষিত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা। অর্থাৎ, যাঁদের বিরুদ্ধে আদালতের সমন জারি বা হাজিরার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মগোপনে থাকছেন, আদালত তাঁদের ‘পলাতক’ হিসেবে ঘোষণা করলে তাঁরা কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আদালত যখন কোনো ব্যক্তিকে পলাতক ঘোষণা করে, তখন সেই ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য হবে—এটা এখন আইনে স্পষ্টভাবে যুক্ত করা হয়েছে। আদালত সমন পাঠানোর পরও হাজির না হলে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও সাড়া না দিলে, তখনই পলাতক ঘোষণা করা হয়। বিচার চলাকালীন অবস্থায়ও কেউ পলাতক হতে পারে।”

এখানে উল্লেখ্য গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম স্থগিত আওয়ামী লীগের বেশ কিছু শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতা হারানো দলটির অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। তাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা চলছে। আদালত তাঁদের পলাতক ঘোষণা করলে এই নেতারা আর জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারাবেন।

এদিকে, চলতি মাসের শুরুতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। নতুন ওই বিধানে বলা হয়েছে— মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হবেন। এ ছাড়া কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন না বা এসব পদে নিয়োগ পাবেন না। এমনকি প্রজাতন্ত্রের (সরকারের) কোনো সেবায় নিয়োগ পাওয়ারও অযোগ্য হবেন, সরকারের কোনো অফিসে (পাবলিক অফিস) থাকতে পারবেন না। তবে ট্রাইব্যুনাল কাউকে অব্যাহতি বা খালাস দিলে তার ক্ষেত্রে এসব বিষয় প্রযোজ্য হবে না বলেও আইনটির সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় এবার সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বিভাগের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী জোট গঠন করা গেলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ, জোটের নামে অভিন্ন প্রতীকে ভোট করা যাবে না।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “যদি কোনো নির্বাচনী জোট হয়, তাহলে জোটের অংশ হলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে—এটি কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে যুক্ত করা হয়েছে।”

সংশোধিত আইনে একক প্রার্থী থাকা আসনেও ‘না ভোট’ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা আগে ছিল না। এছাড়া পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা হয়েছে, যাতে প্রবাসী ভোটার ও দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারেন।

প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাই এই অর্থ জমা ও ফেরতের সিদ্ধান্ত তত্ত্বাবধান করবেন।

নতুন আইনে প্রার্থীদের জন্য অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সম্পদ ও আয়ের উৎস ঘোষণা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত সব ধরনের আয়, সম্পদ ও দায়-দেনার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।

আইন উপদেষ্টা জানান, “প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন—প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণ অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে, যাতে জনগণ স্বচ্ছ তথ্য পায়।”

আগের আইনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বাতিলের বিধান থাকলেও, নতুন আরপিওতে গুরুতর অনিয়ম বা জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করার ক্ষমতা কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই সংশোধনীগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠায়। কিন্তু দুই মাসেও মন্ত্রণালয় কোনো মতামত না দেওয়ায় কমিশন দুই দফা চিঠি পাঠায় অগ্রগতি জানতে। অবশেষে আজ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সম্পূরক বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নিলে চূড়ান্ত অনুমোদন পায় সংশোধিত আরপিও।

Ad 300x250

সম্পর্কিত