leadT1ad

হাদির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোকে বাংলাদেশ

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৯
সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। স্ট্রিম গ্রাফিক

আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করছে বাংলাদেশ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

নামাজে জানাজা ২টায়, সমাহিত করা হবে জাতীয় কবির কবরের পাশে

আজ বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানাজায় দেশের স্বাধীনতাকামী সর্বস্তরের জনতাকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চও। শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে এক ভিডিও বার্তায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দর থেকে মরদেহ সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়ার কথা থাকলেও, পারিবারিক অনুরোধ ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আজকের দিনটি শহীদের মরদেহ তার পরিবারের সান্নিধ্যেই রাখা হবে।’

আব্দুল্লাহ আল জাবের আরও জানান, শনিবার দুপুর ২টায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জানাজা শেষে বিশাল মিছিল সহকারে মরদেহ শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে জনতার কণ্ঠস্বর শরিফ ওসমান হাদিকে সমাহিত করা হবে।

জানাজা ও দাফন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার

ওসমান হাদির জানাজা ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা-প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, হাদির নামাজে জানাজায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পর্যবেক্ষণে রাখবে পুলিশের বডি-ওর্ন ক্যামেরা। এ উপলক্ষে মাঠে দায়িত্ব পালনকারী ১ হাজার পুলিশ সদস্যের শরীরে এই ক্যামেরা স্থাপন করে মাঠে পাঠানো হচ্ছে।

ওসমান হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংগৃহীত ছবি
ওসমান হাদির জানাজা ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংগৃহীত ছবি

আজ শনিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্ট্রিমকে জানান, ইতোমধ্যে তারা জাতীয় সংসদ ভবন এলাকাসহ হাদির নামাজে জানাজার ও দাফন স্থলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা এবং রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে নজরদারির দায়িত্ব পালন করবেন। পেট্রলিং ও তল্লাশি কর্মকাণ্ডেও এই ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন বলেন, এসব ক্যামেরার কিছু থাকবে অফলাইনে, কিছু থাকবে অনলাইনে। অনলাইনে থাকা ক্যামেরাগুলোর সঙ্গে সরাসরি কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগ থাকবে।

একই সঙ্গে জানাজার সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

হাদির মরদেহ হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমাগারে

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সিঙ্গাপুর থেকে শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি (বিজি-৫৮৫) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

হাদির পরিবারের সদস্য, সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা হাদির মরদেহের কফিন গ্রহণ করেন।

পরে বিমানবন্দর থেকে হাদির লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমাগারে রাখা হয়। ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, হাদির মরদেহ হিমাগারে রাখার পর সংগঠনের কর্মীরা রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেবেন।

শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান

অন্যদিকে, ছাত্র-জনতা শুক্র ও শনিবার শৃঙ্খলার আন্দোলন জারি রাখবেন জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের পোস্টে বলা হয়েছে, যেন কোনো গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করতে না পারে একই সঙ্গে সহিংসতা করার সুযোগও না পায়। শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং শহীদ ওসমান হাদির জন্য দোয়া করতে সবার প্রতি অনুরোধও জানানো হয়।

এর আগে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে গণসংযোগ করে ফেরার পথে দুপুর আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে অটোরিকশায় থাকা হাদির মাথা গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় গত ১৫ ডিসেম্বর পল্টন থানায় মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। এতে সাবেক ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়। হাদিকে গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফয়সালের মা-বাবা, স্ত্রীসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Ad 300x250

সম্পর্কিত