leadT1ad

কুষ্টিয়ায় পৌরসভার গাড়িচালকের মৃত্যু, স্বজনদের দাবি কিলঘুষি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাড়িচালক শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সেসময় ১১৫ নম্বর তথা সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি বন্ধ করতে গেলে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
কুষ্টিয়া

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ২৬
কুষ্টিয়ায় কিলঘুষিতে আহত হওয়ার পর কুমারখালী পৌরসভার এক গাড়িচালককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্ট্রিম ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় বকেয়া বেতন নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে কিলঘুষিত শহিদুল ইসলাম নামে (৫৭) পৌরসভার গাড়ি চালককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন পৌরসভার সার্ভেয়ার ফিরোজুল ইসলাম।

নিহত শহিদুল পৌরসভার শেরকান্দি এলাকার মৃত গঞ্জের আলীর ছেলে। এ দিকে ঘটনার পর থেকে ফিরোজুল পলাতক। তাঁর মুঠোফোনটিও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার কুমারখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিহতের মেয়ে সুবর্না আক্তার। তিনি বলেন, 'পৌরসভায় বড় কর্মচারীদের বেতন হয়। আমার বাবা ছোট কর্মচারী। পৌরসভা তার বেতন দেয়না। সকালে বেতন চাইতে গেলে পৌরসভার সার্ভেয়ার মো. ফিরোজুল ইসলাম বাবাকে ব্যাপক কিলঘুষি, লাথি মারে হত্যা করে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রেখেছিল।'

পুলিশ, পৌরসভা ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে নির্মিত প্রথম শ্রেণির কুমারখালী পৌরসভায় প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের প্রায় ৪২ মাসের বেতন বকেয়া। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে গাড়িচালক শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। সেসময় ১১৫ নম্বর তথা সার্ভেয়ার ফিরোজুলের কক্ষটি বন্ধ করতে গেলে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে কিলঘুষি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পৌরসভায় কর্মরত অন্যান্য সদস্যরা ফিরোজুলকে ১১৫ নম্বর এবং শহিদুলকে ১০১ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ১০১ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, শহিদুল মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁকে উদ্ধার করে সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ সময় শহিদুলের ভাগ্নি রূপালী খাতুন বলেন, পৌর ভবনের পেছনে আমার বাড়ি। মারামারির খবর শুনে দ্রুত ছুটে গিয়ে দেখি ১০১ নম্বর কক্ষে মামাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। খুলে দেখি মুখে দাঁতে আঘাতের চিহ্ন, রক্ত লেগে আছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পৌরসভার বাজার পরিদর্শক নুর ইসলাম বলেন, 'ফিরোজ কাজ করছিল কার্যালয়ে। তখন শহিদুল বেতন না পেয়ে দরজা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। সেসময় ফিরোজের সঙ্গে তর্কাতর্কি ও ধস্তাধস্তি হয়। তাঁর ভাষ্য, শহিদুল হার্টের রোগী ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়।

এ দিকে পৌরসভায় বেতন নিয়ে এমন ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে নিহত শহিদুলের স্বজন ও এলাকাবাসী। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে পৌরসভায় শেরকান্দি এলাকার অভিযুক্ত ফিরোজুলের বহুতল ভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। পরে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে কুমারখালী পৌর ভবনের প্রধান ফটক আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

নিহত শহিদুলের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, 'হিসাবরক্ষক রফিকুল এবং সার্ভেয়ার ফিরোজুল মিলে ভাইকে হত্যা করেছে। সঠিক বিচার না পেলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।'

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তাঁরা একটি অভিযোগ পেয়েছেন। ইতিমধ্যে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা এখনও জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, উত্তেজিত জনতা সার্ভেয়ারের বাড়ি ভাঙতে গেলে পুলিশ তা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত