leadT1ad

আচরণবিধিমালা চূড়ান্ত করেছে ইসি

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে পোস্টার নিষিদ্ধ, বিলবোর্ডেও কঠোর বিধিনিষেধ

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ১৭
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৬
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক, পিভিসি বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপকরণে তৈরি লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ফেস্টুন বা ব্যানার ব্যবহারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর বিলবোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে কড়াকড়ি—প্রত্যেক প্রার্থী একটি সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি–২০২৫’— এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে।

গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাবের পাশাপাশি আচরণবিধি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ভেটিংয়ের জন্য। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আরপিওর মতো আচরণবিধি অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তুলতে হবে না; মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে ইসি সরাসরি গেজেট আকারে জারি করতে পারবে।

আচরণবিধির খসড়া পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছিল। অনেক দল অন্তত সাদাকালো পোস্টার রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে সেটিও আমলে নেয়নি ইসি। পরিবেশবান্ধব প্রচারণা নিশ্চিত করার জন্য রেক্সিন, পলিথিন, প্লাস্টিক ও পিভিসি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘ভোটের প্রচারে পোস্টার ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছিল। আমরা সেটির সঙ্গে একমত হয়েছি। এছাড়া প্রচারে বিলবোর্ডের ব্যবহার আগে ছিল না, এবার যুক্ত করা হয়েছে। তবে এর সংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছে। ব্যানার ও ফেস্টুনের ব্যবহার নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’

নতুন বিধান অনুযায়ী, একজন প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড স্থাপন করতে পারবেন। একটি বিলবোর্ডের সর্বোচ্চ আয়তন হবে ১৬ বাই ৯ ফুট। জনসাধারণ বা যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিংবা পরিবেশ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে—এমনভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করা যাবে না। ইসির যুক্তি হলো, বিলবোর্ডে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় এবং সীমাহীন বিলবোর্ড প্রার্থীর ব্যয়সীমা অতিক্রম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ নিশ্চিত করেছেন, ‘আচরণবিধিতে একজন প্রার্থীর সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

আরপিওর সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, কেবল ডিজিটাল বিলবোর্ডে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আলোর ব্যবস্থা রাখা যাবে। তবে আলোকসজ্জা বা সাজসজ্জা নিষিদ্ধ থাকবে।

গত ২৯ জুন আচরণবিধির খসড়া তৈরি করার পর ইসি নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়েছিল। বিএনপিসহ সাতটি দল এবং একাধিক ব্যক্তি এতে মতামত দিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট ইসির সভায় খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আগে কেবল প্রার্থীর কাছ থেকে আচরণবিধি মানার অঙ্গীকার নেওয়া হতো, এবার দলের কাছ থেকেও অঙ্গীকারনামা নেওয়া হবে। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওর আওতায় প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে—যা আগে ছিল না।

আচরণবিধির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রচারের সময়সীমা তিন সপ্তাহ নির্ধারণ করা। এই সময়ে প্রতিটি আসনের প্রার্থীদের একই প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ইশতেহার পাঠ করতে হবে, যার আয়োজন করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। গণমাধ্যমে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেখানে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না। এবার ভিভিআইপি তালিকায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করতে পারবেন না এবং সরকারি রেস্ট হাউস বা ডাকবাংলোর মতো সুবিধা ব্যবহারে সীমাবদ্ধ থাকবেন।

নতুন বিধিমালায় প্রযুক্তি ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও কঠোরতা আনা হয়েছে। প্রচারে ড্রোন বা কোয়াডকপ্টারের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের নেতারা হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন, তবে আকাশ থেকে লিফলেট বা অন্য কোনো প্রচারসামগ্রী বিতরণ করা যাবে না। কোনো ভোটকেন্দ্রের ১৮০ মিটারের মধ্যে ভোটার স্লিপ বিতরণ নিষিদ্ধ, আর স্লিপের আকার সর্বোচ্চ ১২ সেন্টিমিটার গুণ ৮ সেন্টিমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রাখা হয়েছে—দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে, তবে শব্দসীমা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবেল।

এছাড়া সামাজিক মাধ্যম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর বা আক্রমণাত্মক কোনো কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বা আইডির তথ্য প্রচার শুরুর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। বিদেশি অর্থ ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে না। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতির দায়িত্বে বা সদস্য হিসেবে থাকলে প্রার্থীকে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আচরণবিধি ভাঙলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে—জরিমানা বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান বহাল রাখা হয়েছে।

নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত