leadT1ad

‘ভাবি, ইলিশ মাছ কিনে রেখো’—বাড়ি ফেরা হলো না কালামের

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
শরীয়তপুর

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ০১
আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সামনের একটি পিলার থেকে ভারী ধাতব যন্ত্রাংশ (বিয়ারিং প্যাড) নিচে পড়ে আবুল কালামের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ছবি: আশরাফুল আলম

দুপুরে ভাবির সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর। বলেছিলেন, ‘দু-এক দিনের মধ্যেই বাড়ি আসব, ইলিশ মাছ কিনে রেখো।’ কিন্তু সেই ইলিশ মাছ কেনা হলেও আর বাড়ি ফেরা হলো না তরুণ ব্যবসায়ী আবুল কালামের (৩৫)। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে।

আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনের একটি পিলার থেকে ভারী ধাতব যন্ত্রাংশ (বিয়ারিং প্যাড) নিচে পড়ে আবুল কালামের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

নিহত আবুল কালাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল চোকদারের ছেলে। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বসবাস করতেন কালাম। ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন তিনি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে আবুল কালাম নিজের চেষ্টায় ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন। ব্যবসায়িক কাজেই কালাম নিয়মিত ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াত করতেন।

আবুল কালাম মেঝ ভাবি আছমা বেগম বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে কালামের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। বলেছিল, দু-এক দিনের মধ্যে বাড়ি আসব, তুমি ইলিশ মাছ কিনে রেখো। কিন্তু ভাই আর বাড়ি ফিরল না।’

চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া চোকদার বলেন, ‘কালাম খুব ভদ্র ও পরিশ্রমী ছেলে ছিল। এমন দুর্ঘটনা সরকারের অবহেলার কারণেই ঘটেছে। এখন ওর সংসার কীভাবে চলবে?’

নিহতের পরিবার জানায়, আবুল কালামের পাঁচ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ এবং তিন বছরের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই মেট্রোরেলের পিলারের ওপর থেকে ভারী ধাতব বিয়ারিং প্যাডটি নিচে পড়ে যায়। সেটি সরাসরি কালামের মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় এরইমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সড়ক ও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, নিহতের পরিবারকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া, পরিবারের কর্মক্ষম কোনো সদস্যকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবারটিকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।

এদিকে, আবুল কালামের গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী কালাম পরিবারের হাল ধরেছিল। তাঁর শিশুসন্তানদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

Ad 300x250

সম্পর্কিত