leadT1ad

চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়ে

সমীক্ষার চেয়ে দিনে ৩১ হাজার কম গাড়ি চলাচল, নির্মাণব্যয় তুলতে লাগবে ২২৫ বছর

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে। সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ২০১৭ সালে শুরু হয় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। সাত বছর পরে ২০২৫ সালেও প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। যে সড়কে চলতি বছর প্রতিদিন ৩৯ হাজার গাড়ি চলাচলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয়েছিল, সেখানে ১০ মাসের হিসাবে গড়ে চলাচল করেছে মাত্র ৮ হাজার। সম্ভাব্যতার তুলনায় যা মাত্র ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে নির্মাণব্যয় তুলতেই লেগে যাবে প্রায় ২২৫ বছরের বেশি।

এদিকে প্রকল্পের নির্ধারিত সময় তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন করা হয়েছে। ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হলেও সড়কের নিচে যানজট থাকছে আগের মতোই, আর ওপরে থাকছে প্রায় ফাঁকা।

কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের নাম ছিল এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ে। এক বছর পরীক্ষামূলক চললেও গত ৩ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায় শুরু হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম স্মরণে নাম রাখা হয়েছে শহীদ ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে

কম গাড়ি, স্বল্প আয়

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে টোলসহ উদ্বোধনের পর ১০ মাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গাড়ি চলেছে ২৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি, যা গড়ে দিনেে ৮ হাজার ১১৯। এই সময়ে টোল থেকে আয় হয়েছে মোট ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। গড়ে দিনে আদায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি।

মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার—এসব যানবাহনই আয়ের মূল উৎস। কিন্তু যাত্রীভিত্তিক বাস ও মালবাহী ট্রাকের ব্যবহার একেবারেই কম। ফলে এটি শহরের স্বাভাবিক যানচাপ কমানোর বদলে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য বিলাসী সড়কেই পরিণত হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।

র‍্যাম্পের অভাবে উপকার পাচ্ছে না নগরবাসী

প্রকল্পের নকশায় শুরুতেই ১৫টি র‍্যাম্প থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয়টি নির্মাণ স্থগিত করেছে নতুন সিডিএ বোর্ড। বাকি ৯টির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪টির নির্মাণকাজ শেষ হলেও কোনোটি চালু হয়নি। দুইটির কাজ এখনো শুরুই হয়নি। বাকিগুলোর কাজ চলছে। ফলে অনেক এলাকার চালকদের এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে ঘুরপথে যেতে হয়। আর এত ঘোরাঘুরি না করে নিচ দিয়ে গেলেই সময় বাঁচে বলে মনে করেন চালকরা।

সমীক্ষাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকার উড়ালসড়কে বর্তমানে যে পরিমাণ গাড়ি চলছে, এটাই আসল সমীক্ষা। সিডিএ কর্তৃপক্ষ তাদের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় অতিরিক্ত গাড়ি চলবে দেখিয়েছে। অতিরিক্ত না দেখালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর গ্রহণযোগ্য না হলে এ ধরনের প্রকল্প আসবে না। এই অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান এই নগর-পরিকল্পনাবিদ।

প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে যান চলাচল প্রত্যাশা অনুযায়ী হবে। র‍্যাম্প কিছু প্রস্তুত হয়েছে, কিছুর কাজ চলছে। প্রস্তুতগুলো শিগগিরই খুলে দেব।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত