বর্তমান বিধিমালায় ‘শাপলা’ প্রতীক না থাকায় ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-কে ওই প্রতীক বরাদ্দের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন নিজস্ব বিবেচনায় অন্য প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব তথ্য জানান।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে ইসি। তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। আর গণভোটের বিষয়ে কোনো তথ্য জানে না ইসি।
অন্যদিকে, এনসিপিকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার আইনি ব্যাখা দেননি ইসি সচিব। তবে তিনি আইনজ্ঞদের কাছে এ ব্যাখ্যা জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন সাংবাদিকদের।
সচিব বলেন, ‘কমিশন আগেই জানিয়েছে—বিধিমালায় শাপলা প্রতীক নেই। এখন পর্যন্ত কোনো বিকল্প প্রস্তাব কমিশনের কাছে আসেনি। সুতরাং কমিশন আগের অবস্থানেই আছে। যে প্রতীক তফসিলে নেই, সেটি আইনি কারণে বরাদ্দ দেওয়া যায় না। কমিশন আগেও একই অবস্থানে ছিল এবং এখনো তাই আছে। ভবিষ্যতে কোনো বিকল্প প্রস্তাব এলে কমিশন বিবেচনা করবে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘শাপলা না থাকায় কমিশন স্ববিবেচনায় অন্য প্রতীক নির্ধারণ করবে এবং সে অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তফসিলে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে কোনো প্রতীক বরাদ্দের সুযোগ নেই। কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি—সে বিষয়ে কমিশনই ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’
শাপলা প্রতীক না দেওয়ার পেছনে আইনি ব্যাখ্যা কী জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মনে করেছে এটা রাখার দরকার নেই। এটার ব্যাপারে যদি আইনি ব্যাখ্যাটা জিজ্ঞেস করেন তাহলে আইনজ্ঞকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আখতার আহমেদকে নয়।’
এনসিপির অভিযোগ, শাপলা প্রতীক বরাদ্দে ইসির আইনি ব্যাখ্যা নেই—এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘আইনি ব্যাখ্যাটা হচ্ছে, প্রতীকটা আমাদের তফসিলে নেই। অতএব আইনগতভাবে তফসিলে না থাকার কারণে প্রতীক দেওয়া হয়নি। এটা আমরা আগাগোড়াই বলে আসছি। এখন তফসিলে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এটা কমিশন থেকে বলবে।’
সারা দেশে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলার ৩০০ সংসদীয় আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছি। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি ও নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি ভোটকক্ষ—মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি কক্ষ।’
গড়ে প্রতি কক্ষে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র প্রাথমিকভাবে ১৪টি নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা দেশে এই ১৪টি অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রে ১১ হাজার ৯৬৩টি কক্ষের ব্যবস্থা রাখবে ইসি।
ইসি সচিবের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সারা দেশে এবার ভোট কেন্দ্র বাড়বে ৬১৩টি। দেশের সবকটি বিভাগে ভোট কেন্দ্র বাড়লেও কমছে চট্টগ্রামে (১৬টি)। সবচেয়ে বেশী ভোট কেন্দ্র বাড়ছে খুলনা বিভাগে (১৪৯টি)।
সচিব আরও বলেন, ‘একটি ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৩ হাজার ভোটার থাকবে। এটি “ক্যাচমেন্ট এরিয়া” হিসেবে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে এই সংখ্যা সামঞ্জস্য করা হবে।’
আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘সংশোধনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছে কমিশন। এখন পর্যন্ত কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় দেখা যায়নি। তাই অনুমাননির্ভর মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তিনি আরও জানান, আরপিও প্রস্তাবনাগুলো কমিশন পাঁচটি দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছে—যেগুলো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য, যেগুলো ভাষাগত বা সংখ্যাগতভাবে সামান্য সংশোধনযোগ্য, যেগুলোর জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন, যেগুলো বিদ্যমান আইনে যথাযথভাবে নির্ধারিত, এবং যেগুলো কমিশনের নিজস্ব বিবেচনায় সংশোধনযোগ্য বলে মনে হয়েছে।’
রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন কার্যক্রমে সামান্য বিলম্ব হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, ‘২২টি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন যাচাই–বাছাই চলছে। মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ এই সপ্তাহের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। পর্যবেক্ষক সংস্থার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।’
নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ
তবে এ বিলম্ব নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ৯০-৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজগুলোও দ্রুত শেষ করা হবে। আমরা সময়মতো সব প্রস্তুতি শেষ করব। কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই।’
কমিশন পুনর্গঠনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক বিষয়। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হলে ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়বে কিনা জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। যে তথ্য নেই সে তথ্যের ওপরে কোনো তথ্য দেওয়ার সুযোগ আমার নেই।’