leadT1ad

মিরপুরে অগ্নিকাণ্ড

২৭ দিন গেল, কবে মেয়ের লাশ পাবেন বাবা

২৭ দিন ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেয়ের লাশ পাচ্ছেন না মোহম্মদ সুলতান। স্ট্রিম গ্রাফিক

মেয়ে মারজিয়া সুলতানার জন্য হয়রান বাবা মোহাম্মদ সুলতান। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে পাননি জীবিত কিংবা মৃত। বাবার মন মানে না। তাই নিজেই সন্ধানে যান পুড়ে যাওয়া পোশাক কারখানায়। অগ্নিকাণ্ডের ১২ দিন পর ২৬ নভেম্বর রাজধানীর রূপনগরের আরএন ফ্যাশন থেকে লাশ উদ্ধার করেন সুলতান। তবে শনাক্তের জটিলতায় এখনও মেয়ের লাশ বুঝে পাননি তিনি।

কর্মকর্তাদের অবহেলায় ২৭ দিন ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও লাশ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ সুলতানের। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমার মায়াডা মইরা গেছে। লাশও কেউ উদ্ধার করে নাই। পুড়া কারখানায় ফালায়া চইলা গেছে। নিজে গিয়া লাশ উদ্ধার করছি। উদ্ধার কইরাও কি লাভ হইল? লাশটা পইড়া আছে আরেক জাগায়। দাফনও করতে পারতেছি না।’ ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) টেস্টের অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে দাবি সুলতানের।

গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় আলম ট্রেডার্স নামের একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। বিস্ফোরণের পর আগুন আরএন ফ্যাশনসহ আশেপাশের ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় পরিচয় শনাক্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে ১৬ জনের লাশ বুঝে পেয়েছে পরিবার।

মিরপুরে পোশাক কারখানায় আগুন। ছবি: আশরাফুল আলম
মিরপুরে পোশাক কারখানায় আগুন। ছবি: আশরাফুল আলম

শুধু হিমঘরে পড়ে রয়েছে মারজিয়ার লাশ। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে হন্যে হয়ে ছুটছেন বাবা সুলতান। তিনি আরও বলেন, ‘লাশ পেতে থানায় যাচ্ছি, সিআইডির কাছে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো উপায় পাচ্ছি না। তারা কখনও কইচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আবার কইচ্ছে, দুই মাস লাগব।’

প্রশ্ন রেখে সুলতান বলেন, ‘সিআইডি অফিস থেকেই আমার সঙ্গে মারজিয়ার ডিএনএ ৩০ শতাংশ মিলেছে বলা হয়েছে। এখন নাকি আবার ওর মায়ের ডিএনএ নমুনা দিতে হবে। না হলে নাকি লাশ দেবে না। এই লাশের তো আর দাবিদার নাই। তাইলে আমারে ক্যান দিতেছে না?’

এ ব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শবনম হাফিজ বলেন, ‘আমরা সিআইডিতে গেছি। কর্মকর্তাদের কথায় মনে হচ্ছে, তাদের কারণেই জটিলতা তৈরি হয়েছে।’

রূপনগর থানা মারজিয়ার লাশ হস্তান্তর করবে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে দেওয়ার পর তাদের হাতে কিছু থাকে না। ডিএনএ পরীক্ষা করে সিআইডি। বাকি প্রক্রিয়া শেষে থানার মাধ্যমে স্বজনকে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

উদ্ধারের পর লাশের পাশে মোহাম্মদ সুলতান
উদ্ধারের পর লাশের পাশে মোহাম্মদ সুলতান

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মারজিয়ার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা সিআইডি গিয়েছিলাম। তারা বলেছে– এটি সময়সাপেক্ষ। মানবিক দৃষ্টি থেকে আমরা প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার অনুরোধ জানিয়েছি।’

সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান ও ডেপুটি চিফ ডিএনএ অ্যানালিস্ট আহমাদ ফেরদৌস স্ট্রিমকে বলেন, ‘অঙ্গার লাশটি ১২ দিন পর উদ্ধার করায় দেহের সমস্ত কোষ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই হাঁড় ও দাঁতের মতো শক্ত জায়গা থেকে কোষ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এজন্য সময় লাগছে।’

বাবার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে গাফিলতির সুযোগ নেই। যত দ্রুত সম্ভব, রিপোর্ট দেওয়া হবে। বিশ্বের সব দেশেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মা-বাবার নমুনা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু বাবার নমুনা পেয়েছি, নিশ্চিত হওয়ার জন্য মায়ের নমুনাও লাগবে। মোহাম্মদ সুলতানকে আমরা এটিই বলেছি।’

যেভাবে মারা যান মারজিয়া

ঈদুল আজহার ছুটিতে ভাতিজা জয় মিয়ার সঙ্গে মারজিয়ার বিয়ে দেন মোহাম্মদ সুলতান। এরপর ঢাকা এসে একই পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করে জয়-মারজিয়া দম্পতি। গত ১৪ নভেম্বর অগ্নিকাণ্ডের সময় দুজন ভবনের চার তলায় ছিলেন।

অগ্নিকাণ্ডে মারা যান জয়। কিন্তু খোঁজ মারজিয়ার। পরিবারের দাবি, জয় ও মারজিয়া একসঙ্গে মারা গেছেন। কিন্তু মারজিয়ার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে ২৬ নভেম্বর আত্মীয়-স্বজন, পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠনের সহযোগিতায় পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে একটি লাশ উদ্ধার করেন মোহাম্মদ সুলতান।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত