leadT1ad

ন্যায় প্রতিষ্ঠা ব্যর্থ হলে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৩২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, এটি একটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।

আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যখন রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উল্লেখ করে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কেবল ভাষা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য ছিল না, বরং তা ছিল ন্যায়, মর্যাদা ও অস্তিত্বের অধিকারের সংগ্রাম।

বিচার বিভাগ সংস্কার ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়

প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ন্যায়বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ বিনির্মাণ করতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে সৈয়দ রেফাত আহমেদ আরও জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। এই সচিবালয় বিচার প্রশাসনের কেন্দ্রীয় কাঠামো হিসেবে কাজ করবে, যা ন্যায়বিচার ও বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা নিশ্চিত করবে।

মাত্র দুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর নীতিগত অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই অধ্যাদেশ বিগত ১৫ মাসের সুপরিকল্পিত কৌশলগত প্রচেষ্টা ও বহুপাক্ষিক প্রয়াসের ফল।’

অংশীজনদের প্রতি সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

প্রধান বিচারপতি এই কাঠামোগত পরিবর্তনের টেকসই রূপায়ন নিশ্চিত করতে আইনজীবী, বিচারক এবং সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের প্রতি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সকল অংশীজনকে একটি মৌলিক সত্য উপলব্ধি করতে হবে, তারা সকলেই একটি পারস্পরিক দায়বদ্ধতার সম্পর্কে আবদ্ধ। তাই সকলের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে সহযোগিতা, যুক্তিবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীলতা।’

আইনজীবী ও নবীন আইনস্নাতকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনের অধ্যয়ন কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, বরং এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জনাব জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস. এম. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এ. কে. এম. আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া, অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত