.png)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, রাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবিতে রেল অবরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন করে দাবি আদায়—এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলছে উত্তেজনা। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এমন পরিস্থিতি। তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এ লেখায়।

মারুফ ইসলাম

ঘটনার শুরু বুয়েট দিয়ে। গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি—সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেডে শুধু ন্যূনতম বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিতে হবে, দশম গ্রেডেও ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি বিএসসি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষার সুযোগ রাখতে হবে এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করতে পারবে না।
এই তিন দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে থাকলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়কে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গতকাল ৩০ আগস্ট মধ্যরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখানে ঘটনা অবশ্য ভিন্ন। প্রতক্ষ্যদর্শী শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। তিনি গতকাল রাত ১২ টার দিকে বাসায় ঢুকতে গেলে ওই ভবনের দারোয়ান তাঁকে বাধা দেন। দরজা না খুলে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ছাত্রী গালিগালাজের জবাব দিলে দারোয়ান তাঁকে চড় মারেন।

চড় মারার পর ভবনটিতে ভাড়া থাকা ছাত্রীর রুমমেটরা ভবনের নিচে নামলে দারোয়ান আরও উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে লাত্থি দিতে থাকেন। এ সময় দুই নম্বর গেটে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং ওই ছাত্রীর রুমমেটরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় লোকজন মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। শিক্ষার্থীরাও মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা করে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর ৬টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আজ সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়রা আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। দুই দফার এই সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৮০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এখনো শান্ত হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর কিছু সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্য প্রান্তের আরেক বড় ক্যাম্পাস—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয় অবরোধ করে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শাখা ছাত্রদল। তখন ছাত্রদলের কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় অন্য শিক্ষার্থীদের। এতে আহত হয় অন্তত ৮ জন।

পরে দুপুরের দিকে কোষাধ্যক্ষ ভবনে ছাত্রদলের ঝুলানো তালা ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর স্থগিত থাকা মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখনো থমথমে। এরমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে একই দিনে দুটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। আজ রোববার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ বাস্তবায়নের দাবিতে উপাচার্যসহ ২২৭ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেছেন ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে তিন দফা দাবিতে কৃষি ব্লকেড (এগ্রি ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠাকে মোটেও ‘কাকতালীয়’ ঘটনা মনে করছেন না অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, চায়ের টং দোকানে কিংবা চলতি পথে লোকাল বাসের ভীড়ে কান পাতলে সাধারণ মানুষের অনেক ফিসফিসানি শোনা যায়।
জাকিয়া হাবিবা অন্তরা পড়েন পাবনা মেডিকেল কলেজে। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, আমাদের দেশে সরকারি একটা প্যাটার্ন আছে। সেটা হচ্ছে, সরকার তার বড় কোনো অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার পেছনে এই পুরোনো প্যাটার্নের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বিকেলের দিকে এক টং দোকানে চা খেতে গিয়ে কিছু কথা আছড়ে পড়ল কানে। মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন, নির্বাচনটা মনে হয় আর হইতে দিবো না। এর জন্যই দেশে একটা গ্যাঞ্জাম লগানোর চেষ্টা চলতেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণায় বিএনপি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দল খুব একটা খুশি নয়। নতুন আত্মপ্রকাশ করা দল এনসিপি তো প্রকাশ্যেই বলেছে, তারা সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর জামায়াত সরাসরি এমন ঘোষণা না দিলেও আকারে ইঙ্গিতে নির্বাচন পেছানোর পক্ষেই মত দিচ্ছে।
এই বাস্তবতায় ‘নির্বাচন না চাওয়া’ দলগুলো অন্তরালে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে কারও কারও।
অনেকে আবার এসব সংঘর্ষ, উত্তেজনার সঙ্গে ‘তৃতীয় পক্ষ’-এর যোগসাজশ খুঁজে ফিরছেন। আসলে দেশজুড়ে প্রতিদিন এখন এত সব ঘটনা ঘটছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত এত অপতথ্য ও ভূয়া তথ্যের ছড়াছড়ি যে আমাদের সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মন প্রতিটি ঘটনার পেছনে এখন কত কিছুই না খুঁজে পায়!
পতিত ফ্যাসিবাদের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। মিডিয়াও তাদের। তাদের কিছু বুদ্ধিজীবীও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াও তাদের। এসব ব্যবহার করে তারা নির্বাচন বানচাল বা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্য এখন সবকিছুকেই তারা মব বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।রাশেদ আলম ভূঁইয়া, শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরেরা এখনো দেশে রয়ে গেছেন। তারাই নানাভাবে দেশকে অশান্তির কিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন সরাসরিই বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।’
তিনি অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার জন্য সরকারকেও দুষেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসলে নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে।’

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। মিডিয়াও তাদের। তাদের কিছু বুদ্ধিজীবীও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াও তাদের। এসব ব্যবহার করে তারা নির্বাচন বানচাল বা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্য এখন সবকিছুকেই তারা মব বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।’
এসব ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’-এর বাইরেও সাদা চোখে কিছু বিষয় স্পষ্টই দেখা যায়। যেমন আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সরকারের হাতে না থাকা। এ কথার দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বহু সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও দল নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাদের কাউকেই সরকার কঠোর হাতে সামলাতে পারেনি। ফলে গত এক বছরে দেশে যেন একটি ‘দাবিবাহিনী’ তৈরি হয়েছে। দু-চারদিন পরপরই নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে তারা। যেহেতু দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলেই কিছু না কিছু সরকার পূরণ করছে, ফলে কারও কারও এমনও মনে হতে পারে যে এখনই তো সময় দাবি আদায়ের!
এমন গভীর মনস্তাত্বিক বাসনা থেকেই কি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামছেন? কে জানে!
এদিকে আবার গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে রাজধানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে গণ-অধিকার পরিষদের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। এ ঘটনার পেছনেও দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা বা নির্বাচন বানচালের অংশ হিসেবে ‘ষড়যন্ত্র’-এর গন্ধ খুঁজছেন কেউ কেউ।
আবার আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেছেন। ফলে দেশের নানারকম তরঙ্গ ও পরিস্থিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই উত্তেজনাকর অবস্থাও মেলাতে চাইছেন অনেকেই।
যা-ই হোক না কেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দাবিতে একের পর এক আন্দোলনের ফলে সরকার যে খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঘটনার শুরু বুয়েট দিয়ে। গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি—সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেডে শুধু ন্যূনতম বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিতে হবে, দশম গ্রেডেও ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি বিএসসি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষার সুযোগ রাখতে হবে এবং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ছাড়া কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করতে পারবে না।
এই তিন দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যেতে থাকলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়কে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গতকাল ৩০ আগস্ট মধ্যরাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এখানে ঘটনা অবশ্য ভিন্ন। প্রতক্ষ্যদর্শী শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। তিনি গতকাল রাত ১২ টার দিকে বাসায় ঢুকতে গেলে ওই ভবনের দারোয়ান তাঁকে বাধা দেন। দরজা না খুলে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ছাত্রী গালিগালাজের জবাব দিলে দারোয়ান তাঁকে চড় মারেন।

চড় মারার পর ভবনটিতে ভাড়া থাকা ছাত্রীর রুমমেটরা ভবনের নিচে নামলে দারোয়ান আরও উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে লাত্থি দিতে থাকেন। এ সময় দুই নম্বর গেটে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং ওই ছাত্রীর রুমমেটরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় লোকজন মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। শিক্ষার্থীরাও মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা করে বলে দাবি স্থানীয়দের।
এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর ৬টি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আজ সকাল ১১টার দিকে স্থানীয়রা আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। দুই দফার এই সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৮০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এখনো শান্ত হয়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর কিছু সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অন্য প্রান্তের আরেক বড় ক্যাম্পাস—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয় অবরোধ করে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে শাখা ছাত্রদল। তখন ছাত্রদলের কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি হয় অন্য শিক্ষার্থীদের। এতে আহত হয় অন্তত ৮ জন।

পরে দুপুরের দিকে কোষাধ্যক্ষ ভবনে ছাত্রদলের ঝুলানো তালা ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর স্থগিত থাকা মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম আবার শুরু হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখনো থমথমে। এরমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে একই দিনে দুটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। আজ রোববার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘কম্বাইন্ড ডিগ্রি’ বাস্তবায়নের দাবিতে উপাচার্যসহ ২২৭ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেছেন ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে তিন দফা দাবিতে কৃষি ব্লকেড (এগ্রি ব্লকেড) কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠাকে মোটেও ‘কাকতালীয়’ ঘটনা মনে করছেন না অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, চায়ের টং দোকানে কিংবা চলতি পথে লোকাল বাসের ভীড়ে কান পাতলে সাধারণ মানুষের অনেক ফিসফিসানি শোনা যায়।
জাকিয়া হাবিবা অন্তরা পড়েন পাবনা মেডিকেল কলেজে। তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, আমাদের দেশে সরকারি একটা প্যাটার্ন আছে। সেটা হচ্ছে, সরকার তার বড় কোনো অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার পেছনে এই পুরোনো প্যাটার্নের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বিকেলের দিকে এক টং দোকানে চা খেতে গিয়ে কিছু কথা আছড়ে পড়ল কানে। মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলছিলেন, নির্বাচনটা মনে হয় আর হইতে দিবো না। এর জন্যই দেশে একটা গ্যাঞ্জাম লগানোর চেষ্টা চলতেছে।

প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণায় বিএনপি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দল খুব একটা খুশি নয়। নতুন আত্মপ্রকাশ করা দল এনসিপি তো প্রকাশ্যেই বলেছে, তারা সংস্কার, বিচার ও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর জামায়াত সরাসরি এমন ঘোষণা না দিলেও আকারে ইঙ্গিতে নির্বাচন পেছানোর পক্ষেই মত দিচ্ছে।
এই বাস্তবতায় ‘নির্বাচন না চাওয়া’ দলগুলো অন্তরালে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে কারও কারও।
অনেকে আবার এসব সংঘর্ষ, উত্তেজনার সঙ্গে ‘তৃতীয় পক্ষ’-এর যোগসাজশ খুঁজে ফিরছেন। আসলে দেশজুড়ে প্রতিদিন এখন এত সব ঘটনা ঘটছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত এত অপতথ্য ও ভূয়া তথ্যের ছড়াছড়ি যে আমাদের সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মন প্রতিটি ঘটনার পেছনে এখন কত কিছুই না খুঁজে পায়!
পতিত ফ্যাসিবাদের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। মিডিয়াও তাদের। তাদের কিছু বুদ্ধিজীবীও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াও তাদের। এসব ব্যবহার করে তারা নির্বাচন বানচাল বা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্য এখন সবকিছুকেই তারা মব বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।রাশেদ আলম ভূঁইয়া, শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন, ফ্যাসিবাদীরা পালিয়ে গেলেও তাদের দোসরেরা এখনো দেশে রয়ে গেছেন। তারাই নানাভাবে দেশকে অশান্তির কিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন সরাসরিই বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।’
তিনি অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার জন্য সরকারকেও দুষেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসলে নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে।’

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আলম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে। মিডিয়াও তাদের। তাদের কিছু বুদ্ধিজীবীও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াও তাদের। এসব ব্যবহার করে তারা নির্বাচন বানচাল বা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আর এজন্য এখন সবকিছুকেই তারা মব বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।’
এসব ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্ব’-এর বাইরেও সাদা চোখে কিছু বিষয় স্পষ্টই দেখা যায়। যেমন আইনশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সরকারের হাতে না থাকা। এ কথার দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বহু সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও দল নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাদের কাউকেই সরকার কঠোর হাতে সামলাতে পারেনি। ফলে গত এক বছরে দেশে যেন একটি ‘দাবিবাহিনী’ তৈরি হয়েছে। দু-চারদিন পরপরই নানা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামে তারা। যেহেতু দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলেই কিছু না কিছু সরকার পূরণ করছে, ফলে কারও কারও এমনও মনে হতে পারে যে এখনই তো সময় দাবি আদায়ের!
এমন গভীর মনস্তাত্বিক বাসনা থেকেই কি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামছেন? কে জানে!
এদিকে আবার গত শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে রাজধানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের সঙ্গে গণ-অধিকার পরিষদের কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। এ ঘটনার পেছনেও দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা বা নির্বাচন বানচালের অংশ হিসেবে ‘ষড়যন্ত্র’-এর গন্ধ খুঁজছেন কেউ কেউ।
আবার আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেছেন। ফলে দেশের নানারকম তরঙ্গ ও পরিস্থিতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই উত্তেজনাকর অবস্থাও মেলাতে চাইছেন অনেকেই।
যা-ই হোক না কেন, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দাবিতে একের পর এক আন্দোলনের ফলে সরকার যে খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
.png)

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে আরও ঘনীভূত হয়ে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
১ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গত দুই দিনে ২ হাজার ৫০৯টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
১ ঘণ্টা আগে
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, এটি একটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।
১ ঘণ্টা আগে
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে বঙ্গোপসাগর ও দেশের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা শুরু করবেন জেলেরা।
৫ ঘণ্টা আগে