.png)
ফ্ল্যাটে ঢুকে বিচারকের ছেলেকে হত্যা

স্ট্রিম সংবাদদাতা

রাজশাহীতে নিজ বাসায় বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) কুপিয়ে হত্যার সাত দিন আগে তার মা তাসমিন নাহার লুসির (৪৪) খোঁজে সিলেটে গিয়েছিলেন লিমন মিয়া (৩৫)। সেখানে মেয়ের ভাড়া করা বাসায় ছিলেন বিচারকের স্ত্রী। ওই ঘটনায় লিমন মিয়াকে আটকে পরদিন জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ওই জিডির তদন্ত এখনো শুরু হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় বিচারক আব্দুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) জানায়, বিচারক আব্দুর রহমানের মেয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পড়াশোনা করেন। আব্দুর রহমান এক বছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহী আসেন, এর আগে তিনি সিলেট মহানগর দায়রা জজ ছিলেন। আব্দুর রহমান-লুসি দম্পতির মেয়েও বিবাহিত। নগরের নয়াবাজার খাদরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর মেয়ের বাসায় ছিলেন তাসমিন লুসি। সেখানে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়া গিয়ে হুমকি দিলে তিনি থানায় জিডি করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এক পরিদর্শক স্ট্রিমকে জানান, গত ৫ নভেম্বর রাতে বিচারকের মেয়ের বাসায় গিয়ে মা-মেয়ের সঙ্গে ঝামেলার চেষ্টা করেন লিমন মিয়া। ওই শিক্ষার্থীর খবরে শাবিপ্রবি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে লিমনকে পুলিশে দেন। পরে এসএমপি আইনের ৮৯ ধারায় লিমনকে কোর্টে চালান করে পুলিশ। পরদিন লিমনের পরিবারের সদস্যরা সিলেটে এসে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে সময় লিমন নিজেকে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য বলে পরিচয় দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে শাবিপ্রবির প্রক্টর মো. মুখলেসুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটি ছিল ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতের ঘটনা। তখনই লিমনকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। বাকি কার্যক্রমের বিষয়ে পুলিশ বলতে পারবে।’
এদিকে লিমনকে আটকের পরদিন ৬ নভেম্বর পুলিশের অনুরোধে এসএমপির জালালাবাদ থানায় জিডি করেন তাসমিন নাহার লুসি। এতে তিনি উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্রে লিমনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে সহযোগিতা নিতেন লিমন। একটা পর্যায়ে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ফোন করে তাঁকে নানারকম হুমকি দিচ্ছিলেন লিমন।
জিডিতে বলা হয়, ‘সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকালে লিমন আমার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। লিমন যেকোনো সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।’
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রণব রায় স্ট্রিমকে বলেন, ‘জিডির আগে থেকেই তাসমিন নাহার লুসি ও তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল লিমন। ওই দিন আমি ডিউটিতে ছিলাম। পরে তাঁকে ধরে কোর্টে চালান করি। পরদিন ম্যাডাম জিডি করেন। সে কখন কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে রাজশাহী গেছে, আমরা তা জানি না।’
জিডির পরও তদন্ত শুরু না হওয়ার প্রসঙ্গ জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির বলেন, ‘জিডি হওয়ার পর আদালত থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা জিডিটি আদালতে পাঠিয়েছি। তবে এখনও তদন্তের অনুমতি পাইনি। তাই জিডির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’
বিচারকের ভাই পরিচয়ে ফ্ল্যাটে যায় লিমন
বদলি হয়ে রাজশাহী আসার পর নগরের ডাবতলা এলাকায় স্পার্ক ভিউ নামে একটি দশতলা ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন বিচারক আব্দুর রহমান। সেখানে স্ত্রী ও ছেলে তাওসিফকে নিয়ে থাকতেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটেই লিমন মিয়ার হাতে খুন হন বিচারকের ছেলে তাওসিফ সুমন। আহত হন তার মা তাসমিন নাহার লুসি।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, লিমন মিয়াকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেন তিনি। তার আগে খাতায় তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন।
মেসের আলী বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারকের ফ্ল্যাটে যাওয়ার আগে লিমনের হাতে একটি ব্যাগ ছিল। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের এক গৃহকর্মী এসে তাঁকে জানান যে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তাঁরা ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে. বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিচারকের স্ত্রীর ডান হাত ও উরু এবং বাম বাহুতে গুরুতর জখম দেখা গেছে। তাঁর ডান হাতের একটি রগ কেটে গেছে। চিকিৎসকদের একটি সমন্বিত দল তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করেছেন। রাতেই তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়। লিমন মিয়ার ডান হাতে জখম থাকলেও তা গুরুতর নয় বলে জানান তিনি।
লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই দাবি পরিবারের
রাজশাহীতে বিচারকের ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর ছেলেকে হত্যার অভিযোগে হাসপাতাল থেকেই পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে লিমন মিয়াকে। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য এইচ এম ছোলায়মান শহীদ ছেলে। ছোলেমান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়। কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন লিমন। তবে সংসার টেকেনি। তিনি ‘জিয়া সাইবার ফোর্স’-এর জেলা কমিটির সদস্য হিসেবেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোলায়মান শহীদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে লিমন মেজো। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকে উপজেলার গজারিয়াহাট ও বালাসী ঘাট এলাকায় ইজারার শেয়ার, বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন কারবার করছিলেন।
লিমনের পরিবারের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য এক মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে ঢাকায় যান। তারপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না তাঁর। রাজশাহীতে যাওয়া ও বিচারকের পরিবারের সঙ্গে লিমনের সম্পর্কের বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানেন না। তবে সিলেট পুলিশ স্ট্রিমকে জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটে লিমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোর্ট থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
লিমনের বাবা শহীদ মিয়া বলেন, ‘সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে আসার পর থেকেই তাঁর (লিমন) সঙ্গে আমার সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সে এলাকায় ব্যবসা করত। এক মাস আগে চোখের চিকিৎসার কথা বলে ঢাকায় যায়। তারপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি।’ বিচারকের ছেলে হত্যার ঘটনা তিনিও শুনেছেন। এতে লিমন জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী বিচার চান তিনি।
একই জেলার বাসিন্দা লিমন ও তাসমিন
বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি গাইবান্ধা শহরের এটেস্ট্রেটপাড়ার ব্যবসায়ী লতিফ হাক্কানীর মেয়ে। একই জেলার সন্তান হওয়ায় পরবর্তীতে তাসমিন ও লিমনের মধ্যে পরিচয় ও নিয়মিত যোগাযোগ গড়ে ওঠে। লিমন প্রায়ই লুসির কাছে আর্থিক সাহায্য চাইতেন।
রাজশাহী পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্বপরিচয়ের সূত্রে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসির কাছ থেকে টাকা নিতেন লিমন। টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু তাসমিন নাহার সহযোগিতা না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকিও হুমকি দেন।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিমনের সাড়ে ছয় মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে তাঁকে বলতে দেখা যায়, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্রে বিচারকের স্ত্রী লুসির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এরপর পাঁচ বছর ধরে তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বিষয়টি লুসির মেয়েও জানতেন। হঠাৎ করে লুসি তাঁকে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। এ জন্য তিনি সিলেটে গেলে মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দিয়ে মারধরের পর জেলে পাঠিয়েছিলেন বিচারকের স্ত্রী। গতকালও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন লিমন। তবে সেখানে তাঁকে একটা ঘরে আটকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি দরজা ভেঙে লুসির ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় তাঁর ছেলে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হামলাকারী ব্যক্তির (লিমন) পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি একজন চালক। তাঁর সঙ্গে বিচারকের পরিবারের পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। হাসপাতাল থেকেই তাঁকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
একমাত্র আসামি করে মামলা
ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে খুনের ঘটনায় লিমন মিয়াকে একমাত্র আসামি করে রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন বিচারক আব্দুর রহমান। শুক্রবার দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরএমপি মুখপাত্র বলেন, ‘বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়া (৩৪)। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

রাজশাহীতে নিজ বাসায় বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৬) কুপিয়ে হত্যার সাত দিন আগে তার মা তাসমিন নাহার লুসির (৪৪) খোঁজে সিলেটে গিয়েছিলেন লিমন মিয়া (৩৫)। সেখানে মেয়ের ভাড়া করা বাসায় ছিলেন বিচারকের স্ত্রী। ওই ঘটনায় লিমন মিয়াকে আটকে পরদিন জালালাবাদ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। ওই জিডির তদন্ত এখনো শুরু হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় বিচারক আব্দুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) জানায়, বিচারক আব্দুর রহমানের মেয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পড়াশোনা করেন। আব্দুর রহমান এক বছর আগে শ্রম আদালতের বিচারক হয়ে রাজশাহী আসেন, এর আগে তিনি সিলেট মহানগর দায়রা জজ ছিলেন। আব্দুর রহমান-লুসি দম্পতির মেয়েও বিবাহিত। নগরের নয়াবাজার খাদরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর মেয়ের বাসায় ছিলেন তাসমিন লুসি। সেখানে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়া গিয়ে হুমকি দিলে তিনি থানায় জিডি করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) এক পরিদর্শক স্ট্রিমকে জানান, গত ৫ নভেম্বর রাতে বিচারকের মেয়ের বাসায় গিয়ে মা-মেয়ের সঙ্গে ঝামেলার চেষ্টা করেন লিমন মিয়া। ওই শিক্ষার্থীর খবরে শাবিপ্রবি প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা গিয়ে লিমনকে পুলিশে দেন। পরে এসএমপি আইনের ৮৯ ধারায় লিমনকে কোর্টে চালান করে পুলিশ। পরদিন লিমনের পরিবারের সদস্যরা সিলেটে এসে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে সময় লিমন নিজেকে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য বলে পরিচয় দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে শাবিপ্রবির প্রক্টর মো. মুখলেসুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘এটি ছিল ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতের ঘটনা। তখনই লিমনকে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়। বাকি কার্যক্রমের বিষয়ে পুলিশ বলতে পারবে।’
এদিকে লিমনকে আটকের পরদিন ৬ নভেম্বর পুলিশের অনুরোধে এসএমপির জালালাবাদ থানায় জিডি করেন তাসমিন নাহার লুসি। এতে তিনি উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্রে লিমনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে সহযোগিতা নিতেন লিমন। একটা পর্যায়ে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ফোন করে তাঁকে নানারকম হুমকি দিচ্ছিলেন লিমন।
জিডিতে বলা হয়, ‘সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকালে লিমন আমার মেয়ের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে কল করে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। লিমন যেকোনো সময় আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।’
জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রণব রায় স্ট্রিমকে বলেন, ‘জিডির আগে থেকেই তাসমিন নাহার লুসি ও তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল লিমন। ওই দিন আমি ডিউটিতে ছিলাম। পরে তাঁকে ধরে কোর্টে চালান করি। পরদিন ম্যাডাম জিডি করেন। সে কখন কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে রাজশাহী গেছে, আমরা তা জানি না।’
জিডির পরও তদন্ত শুরু না হওয়ার প্রসঙ্গ জানতে চাইলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির বলেন, ‘জিডি হওয়ার পর আদালত থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা জিডিটি আদালতে পাঠিয়েছি। তবে এখনও তদন্তের অনুমতি পাইনি। তাই জিডির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’
বিচারকের ভাই পরিচয়ে ফ্ল্যাটে যায় লিমন
বদলি হয়ে রাজশাহী আসার পর নগরের ডাবতলা এলাকায় স্পার্ক ভিউ নামে একটি দশতলা ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নেন বিচারক আব্দুর রহমান। সেখানে স্ত্রী ও ছেলে তাওসিফকে নিয়ে থাকতেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ফ্ল্যাটেই লিমন মিয়ার হাতে খুন হন বিচারকের ছেলে তাওসিফ সুমন। আহত হন তার মা তাসমিন নাহার লুসি।
সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে ভবনের দারোয়ান মেসের আলী জানান, লিমন মিয়াকে তিনি আগে কখনও দেখেননি। বিচারককে ভাই পরিচয় দেওয়ায় তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দেন তিনি। তার আগে খাতায় তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর লিখিয়ে নেন।
মেসের আলী বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে বিচারকের ফ্ল্যাটে যাওয়ার আগে লিমনের হাতে একটি ব্যাগ ছিল। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের এক গৃহকর্মী এসে তাঁকে জানান যে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। তাঁরা ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।
বৃহস্পতিবার রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে. বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিচারকের স্ত্রীর ডান হাত ও উরু এবং বাম বাহুতে গুরুতর জখম দেখা গেছে। তাঁর ডান হাতের একটি রগ কেটে গেছে। চিকিৎসকদের একটি সমন্বিত দল তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করেছেন। রাতেই তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়। লিমন মিয়ার ডান হাতে জখম থাকলেও তা গুরুতর নয় বলে জানান তিনি।
লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই দাবি পরিবারের
রাজশাহীতে বিচারকের ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর ছেলেকে হত্যার অভিযোগে হাসপাতাল থেকেই পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে লিমন মিয়াকে। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে। তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য এইচ এম ছোলায়মান শহীদ ছেলে। ছোলেমান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লিমন সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি করতেন। ২০১৮ সালে তাঁর চাকরি চলে যায়। কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন লিমন। তবে সংসার টেকেনি। তিনি ‘জিয়া সাইবার ফোর্স’-এর জেলা কমিটির সদস্য হিসেবেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছোলায়মান শহীদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে লিমন মেজো। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকে উপজেলার গজারিয়াহাট ও বালাসী ঘাট এলাকায় ইজারার শেয়ার, বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন কারবার করছিলেন।
লিমনের পরিবারের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য এক মাস আগে তিনি বাড়ি থেকে ঢাকায় যান। তারপর থেকেই পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না তাঁর। রাজশাহীতে যাওয়া ও বিচারকের পরিবারের সঙ্গে লিমনের সম্পর্কের বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানেন না। তবে সিলেট পুলিশ স্ট্রিমকে জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটে লিমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কোর্ট থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
লিমনের বাবা শহীদ মিয়া বলেন, ‘সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে আসার পর থেকেই তাঁর (লিমন) সঙ্গে আমার সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সে এলাকায় ব্যবসা করত। এক মাস আগে চোখের চিকিৎসার কথা বলে ঢাকায় যায়। তারপর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি।’ বিচারকের ছেলে হত্যার ঘটনা তিনিও শুনেছেন। এতে লিমন জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী বিচার চান তিনি।
একই জেলার বাসিন্দা লিমন ও তাসমিন
বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি গাইবান্ধা শহরের এটেস্ট্রেটপাড়ার ব্যবসায়ী লতিফ হাক্কানীর মেয়ে। একই জেলার সন্তান হওয়ায় পরবর্তীতে তাসমিন ও লিমনের মধ্যে পরিচয় ও নিয়মিত যোগাযোগ গড়ে ওঠে। লিমন প্রায়ই লুসির কাছে আর্থিক সাহায্য চাইতেন।
রাজশাহী পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, পূর্বপরিচয়ের সূত্রে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসির কাছ থেকে টাকা নিতেন লিমন। টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু তাসমিন নাহার সহযোগিতা না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকিও হুমকি দেন।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিমনের সাড়ে ছয় মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে তাঁকে বলতে দেখা যায়, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্রে বিচারকের স্ত্রী লুসির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। এরপর পাঁচ বছর ধরে তাঁদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। বিষয়টি লুসির মেয়েও জানতেন। হঠাৎ করে লুসি তাঁকে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। এ জন্য তিনি সিলেটে গেলে মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দিয়ে মারধরের পর জেলে পাঠিয়েছিলেন বিচারকের স্ত্রী। গতকালও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন লিমন। তবে সেখানে তাঁকে একটা ঘরে আটকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি দরজা ভেঙে লুসির ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় তাঁর ছেলে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, হামলাকারী ব্যক্তির (লিমন) পকেটে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি একজন চালক। তাঁর সঙ্গে বিচারকের পরিবারের পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। হাসপাতাল থেকেই তাঁকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
একমাত্র আসামি করে মামলা
ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে খুনের ঘটনায় লিমন মিয়াকে একমাত্র আসামি করে রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন বিচারক আব্দুর রহমান। শুক্রবার দুপুরে তিনি মামলার এজাহারে সই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে জামালপুরের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরএমপি মুখপাত্র বলেন, ‘বিচারক নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি লিমন মিয়া (৩৪)। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশের হেফাজতে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসা শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’
.png)

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (শাকসু) নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামী ১৭ ডিসেম্বর শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেছেন উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দীন চৌধুরী।
৩৯ মিনিট আগে
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে কৃষি গুচ্ছের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ৩ জানুয়ারি।
২ ঘণ্টা আগে
যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ছাত্রের করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এরশাদ হালিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
২ ঘণ্টা আগে
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার জেনেভা ক্যাম্পের একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ৩৫টি তাজা ককটেল ও বিপুল পরিমাণ ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ।
৩ ঘণ্টা আগে