leadT1ad

৫ আগস্টের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক কোন দিকে গড়াল

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ১২
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৩৮
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় তৈরি ছবি

গত বুধবার চারদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। আজ শনিবার দুপুরে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও ঢাকায় পৌঁছেছেন। একই সময়ে পাকিস্তানে অবস্থান করছে বাংলাদেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় সফরগুলো ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মোহাম্মদ ইসহাক দারের এই সফর গত ১৩ বছরের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কোনো পাকিস্তানি প্রতিনিধির বাংলাদেশে সফর। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় এ সফরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন।

বৈঠকগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সম্ভাব্য সব বিষয়সহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভির এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর ইসলামাবাদ-ঢাকার মধ্যে সম্পর্ককে জোরদার করবে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ফেব্রুয়ারিতেই দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির শুরু হয়। গত বছরই শুরু হয়েছিল সমুদ্রপথে বাণিজ্য। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ।

এর আগে গত বুধবার (২০ আগস্ট) পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসেন।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদারের লক্ষ্যে তিনি এই সফর করছেন বলে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন জানায়।

ইতিমধ্যে জাম কামাল খান কয়েকটি বৈঠক করেছেন। সেসব বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে পাকিস্তান আগ্রহী বলে জানিয়েছেন তিনি।

জাম কামাল খান বলেছেন, ‘বর্তমান পরিবর্তিত বৈশ্বিক অর্থনীতির ধারা আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। পাকিস্তানি ব্যবসায়ীরা এদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে অত্যন্ত আগ্রহী।’

শুক্রবার (২২ আগস্ট) দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্যদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জাম কামাল খান বলেন, ‘এ বছরের শেষে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে ও দুই দেশের বন্দরের মধ্যে কানেকটিভিটি বৃদ্ধি পেলে দেশ দুটির মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাকিস্তানি ভিসা সহজীকরণের ব্যবস্থা হয়েছে।’

এছাড়া রবিবার (২৪ আগস্ট) দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে, যার মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগের একটি রোড ম্যাপ প্রস্তুতির পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘দুই দেশ যৌথভাবে বা বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্টারমিডিয়েট পণ্য উৎপাদন করতে পারলে তা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে।’

এদিকে, বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে ইতিমধ্যে বৈঠকও হয়েছে বলে জিও টিভির খবরে বলা হয়েছে।

এর আগে গত মাসেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘অন অ্যারাইভাল’ (বিমানবন্দরে নামার পর ভিসার সুবিধা) ভিসা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেছিলেন, ‘দুই দেশের কূটনীতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা–সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক চুক্তিটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’

ওই সময় ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন রেজা নাকভি (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসা চালু নিয়ে আলোচনা হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা দুই দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন।

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার ভিসা অব্যাহতি চুক্তির খসড়া অনুমোদন পায় জানানো হয়।

বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছরের জন্য এ ভিসামুক্ত চুক্তি হবে। ভারতসহ আরও ৩১টি দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এ চুক্তিতে পাকিস্তান সরকারেরও সায় রয়েছে। অফিসিয়াল পাসপোর্ট ও কূটনীতিক পাসপোর্টধারীরা এ সুবিধা পাবেন।’

এর আগে এপ্রিলের শুরুতে করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরুকে স্বাগত জানায় দুই দেশ। তখনই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ আবার চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

এরপর গত ১৭ এপ্রিল ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে জানানো হয়, ‍দুই দেশের মধ্যে ভ্রমণ ও ভিসা সহজকরণ বিষয়ে আলোচনা সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, এপ্রিলেই দীর্ঘ ১৫ বছর পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে এবং বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে যৌথ সংকল্পের প্রতিফলন হয়েছে।

Ad 300x250

বাংলাদেশ–পাকিস্তান: যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে

ডেঙ্গুতে আরও চারজনের মৃত্যু, সবাই ঢাকা দক্ষিণ সিটির

বাঙালি মুসলমানের সংকটগুলো কোথায়? আলাপচারিতায় মোহাম্মদ আজম

ডাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বয়স্ক ভিপি পদপ্রার্থী আবু তৈয়ব হাবিলদার

গোপালগঞ্জে পথসভায় যা বললেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর

সম্পর্কিত