আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে, তা দূর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপত্তার অভাব একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। তাই জনমনে আস্থা ফেরাতে ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখনই দৃশ্যমান উদ্যোগ প্রয়োজন।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের চরকালিবাড়ি এলাকার ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে আয়োজিত প্রাক্-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ‘নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ আয়োজিত এই সংলাপে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’-এর প্রেক্ষাপট ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশ থেকে যেসব মতামত ও প্রস্তাবনা পাওয়া যাচ্ছে, তা একত্রিত করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘নাগরিক ইশতেহার’ হিসেবে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতে তুলে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি ও মূল্যায়ণ বর্তমান সরকারের কাছে পেশ করা হবে। নাগরিক সমাজের লক্ষ্য হলো, আগামী দিনের সরকার গঠনের প্রত্যাশী দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে যেন এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো স্থান পায়।
নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার আসবে এবং যাবে, কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ও দেশটা থেকে যাবে। তাই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মুখের কথায় কাজ হয় না, তাই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে মিডিয়া ও নাগরিকদের চাপ প্রয়োগের ভূমিকা রাখতে হবে।
দিনব্যাপী এই সংলাপে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও কৃষকরা অংশ নেন। তারা ডিজিটাল ভোটিং ও উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এতে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। কালো টাকার প্রভাব কমাতে নির্বাচনী ব্যয় রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা ও প্রার্থীদের জামানত কমিয়ে প্রতীকী অর্থে মাত্র ১০০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। নির্বাচনী সহিংসতা ও রেষারেষি কমাতে প্রার্থীদের জন্য সমন্বিত ও যৌথ প্রচারণা পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্যেরোধে ইসির সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা থাকার ওপর জোর দেওয়া হয়, যাতে স্থানীয় পর্যায় থেকে যোগ্য ও জনসম্পৃক্ত প্রার্থীরা উঠে আসতে পারেন।
আলোচনায় উচ্চ আদালত কর্তৃক পুনঃস্থাপিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষেও জোরালো মত প্রকাশ করা হয়। নাগরিকরা বিচার বিভাগীয় সুশাসন, বিশেষ করে নিম্ন আদালতে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং প্রশাসনে দলীয়করণ ও দুর্নীতি বন্ধের জোর দাবি জানান। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের প্রধান প্রত্যাশা হলো যেকোনো মূল্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহজ ও জনবান্ধব করা।