অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি দেশব্যাপী যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, মিডিয়াগুলো ‘আওয়ামী লীগের আগুন সন্ত্রাস’ কথাটি লিখতে লজ্জা পাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তৈয়্যব লেখেন, ‘প্রায় ১৫ বছর বিএনপি-জামায়াতের কথিত আগুন সন্ত্রাসের ক্রমাগত রিপোর্ট, এ সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির হিসাবনামা উপস্থাপন শেষে আজকে বাংলাদেশের মিডিয়া গুলো ‘আওয়ামী লীগের আগুন সন্ত্রাস’ লিখতে লজ্জা পাচ্ছে! ভাসুরের নাম বলে কথা!’
এর আগের আরেকটি পোস্টে তিনি চলমান সহিংসতার জন্য বর্তমান সরকারের অংশীজনদের মধ্যে অনৈক্যকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে আওয়ামী আগুন সন্ত্রাসের আস্পর্ধা এসেছে মূলত আমাদের অনৈক্য থেকে। এক দীর্ঘ মৃত্যুর উপত্যকা পেরিয়ে আমরা এতদূর এসেছি। সতর্ক হন, সাবধান হন, সংযত হন। ঐক্যবদ্ধ হন। আমাদের সম্মিলিত ঐক্য মানে হচ্ছে ওদের চূড়ান্ত পরাজয়।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিনে ঢাকা ও ময়মনসিংহে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় একটি বাসে অগ্নিসংযোগে গাড়ির ভেতরে ঘুমন্ত চালক জুলহাস মিয়া (৩০) দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া, রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমেও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, গত দুই দিনে রাজধানীতে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে এসব অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটতে শুরু করেছে।
আগামী ১৩ নভেম্বর এই রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ‘লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাচ্যুত দলটি এই রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
শুধু ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবই নন, দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ তুলেছে। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু, জাকসু, চাকসু ও রাকসু) এক যৌথ বিবৃতিতে আওয়ামী লীগকে ‘বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চলমান পরিস্থিতি কঠোরভাবে মোকাবিলার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাসে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।’ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর বলেও তিনি জানান। ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থানে থাকবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।