leadT1ad

তিস্তা সেতুর বাঁধের ৬০ মিটার ধসে গেছে, ঝুঁকিতে সেতু ও জনপদ

তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বুধবার থেকে সেতু রক্ষা বাঁধে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেতুটি, কাকিনা-মহিপুর সড়ক এবং আশপাশের অন্তত ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ, সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি এলজিইডিকে বারবার অবহিত করলেও তারা এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
লালমনিরহাট
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৩
গঙ্গাচড়া প্রান্তে ধসে যাচ্ছে দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর রক্ষা বাঁধ। স্ট্রিম ছবি

রংপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ছয় দিনে ৯০০ মিটার বাঁধটির প্রায় ৬০ মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধের পাশে সৃষ্টি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীর গর্ত।

বাঁধে ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেতুটি, কাকিনা-মহিপুর সড়ক এবং আশপাশের অন্তত ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। এ ছাড়া প্রায় ৪০০ একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে নির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধে সম্প্রতি ভাঙন দেখা দেয়। উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী অভিযোগ করে বলেন, সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি ‘এলজিইডিকে বারবার অবহিত করলেও তারা এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।’

তবে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা রংপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, প্রবল স্রোতের কারণে এখনই কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

যে কারণে ভাঙছে বাঁধ

জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে নির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশের সেতু রক্ষা বাঁধে সম্প্রতি ভাঙন দেখা দেয়। রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জানান, চলতি বছরের আগস্টের বন্যায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সম্প্রতি পানি বাড়ায় বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে আবার নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

মহিপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, আগস্টে দুই দফা বন্যায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কিংবা এলজিইডি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় গেল বুধবার থেকে সেতু রক্ষা বাঁধে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রবল স্রোতে বাঁধের সিসি ব্লকের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে বাঁধ ধসে পড়ছে।

রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধের উজানে চর জেগে ওঠায় তিস্তার পানির প্রবাহ সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।’

উজান থেকে নেমে আসা ঢলের চাপে নদীর পানি বাঁধের বিপরীত দিকে জেগে ওঠা চরের পাশ ঘেঁষে সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এতে বাঁধে ভাঙন তীব্র হচ্ছে বলেছেন উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী।

তিস্তা সেতুর গঙ্গাচড়া প্রান্তে ধসে যাচ্ছে রক্ষা বাঁধ। স্ট্রিম ছবি
তিস্তা সেতুর গঙ্গাচড়া প্রান্তে ধসে যাচ্ছে রক্ষা বাঁধ। স্ট্রিম ছবি

বাঁধ ভাঙলে কী প্রভাব পড়বে

২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়া দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার সঙ্গে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরকে যুক্ত করেছে। ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রশস্ত সেতুটিতে রয়েছে ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যান। প্রতিদিন লালমনিরহাটের চারটি উপজেলার মানুষ এই সেতু দিয়ে রংপুরে যাতায়াত করেন।

জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘সেতুটি শুধু রংপুর-লালমনিরহাট নয়, সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ অবকাঠামো। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতি, কৃষি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

গঙ্গাচড়ার মহিপুর গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধ যদি দ্রুত সংস্কার না করা হয়, সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাবে, হুমকিতে পড়বে সেতুটি। আমাদের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমিও নদীগর্ভে চলে যাবে।’

বাঁধ রক্ষায় কী উদ্যোগ

বাঁধটি সেতুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এলজিইডি এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বলে জানিয়েছেন রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম। ভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের জন্য এলজিইডিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান গঙ্গাচড়া ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা।

রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘প্রায় ৬০ মিটার বাঁধ ধসে গেছে। প্রবল স্রোতের কারণে এখনই কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পানি কমলেই বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত