জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাহরীন ইসলাম খানকে নিয়ে ‘অনলাইনে কটাক্ষ’ ও ‘সাইবারস্পেসে নারীর প্রতি সহিংসতা’র প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
বুধবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে সামনে থেকে মশাল মিছিলটি শুরু করেন তারা।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘গুপ্ত বটের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘অনলাইনে নারী নির্যাতন বন্ধ করো করতে হবে’, ‘ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন, ইন্টেরিম কি করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। মিছিলটি ছাত্রীদের হলগুলো প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। এরপরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। এসময় অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খানের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন তারা।
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল ছাত্রদলের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তানজিলা হোসাইন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি টক-শোতে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাহরীন ইসলাম খানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন জামায়াত নেতা। গণ-অভ্যুত্থানের পরেও কেনো মানুষের মত প্রকাশকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য মামলা, হামলা করা হবে এটা কল্পনায় করা যায় না। এছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেও গুপ্ত, বট আইডির উৎপাত বেড়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে অনলাইনে বুলিং করে নারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করছে। ব্যাঙের ছাতার মত বিভিন্ন বট আইডি এবং পেইজ জগিয়েছে যারা বিভিন্নভাবে নারীদের হেনস্তা করছে।
শাখা ছাত্রশক্তির সংগঠক নাদিয়া রহমান অন্বেষা বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে আমরা দেখেছি যে আসলে কীভাবে বিভিন্ন বট পেইজ এবং বট আইডি, যাদের অলমোস্ট আমরা আইডেন্টিফাইও করেছি; এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যু যখন এরাইজ করে। যা আসলে তাদের বিপক্ষে যায় বা এমন কোনো ন্যারেটিভ যেটা আসলে একটা গোষ্ঠীকে হয়তো কোনোভাবে কোণঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই সময়গুলোতে এই পেজগুলো এবং এই আইডিগুলো সামনে আসে। এই পেজ বা আইডিগুলো থেকে ব্যক্তি থেকে সামষ্টিক আক্রমণ; এমন কোনো আক্রমণ নাই যেটা আসলে হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি একটু আরো স্পেসিফিক করে কিছু অভিযোগ বলি, তাহলে জাকসু নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন প্রার্থীদের নিয়েও অনেক ধরনের নোংড়ামি করা হয়েছে এই পেজগুলো থেকে। পরবর্তী সময়ে নারী শিক্ষার্থীরাও আসলে এই পেজগুলো থেকে নিরাপদ নয়। কোনো পুরুষ শিক্ষার্থীও যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে থাকে এবং সেটা যদি খুব গঠনমূলক সমালোচনা হয়, সেটাও তারা নিতে পারে না এবং তারা সেই পুরুষ শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্নভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করে। এই বিষয়গুলো আসলে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করছি এবং অবশেষে আসলে আমার নিজের সঙ্গেও এ ধরনের ঘটনা আমি আসলে দেখেছি। তো সেই জায়গা থেকে আমরা আসলে মনে করেছি যে, ক্যাম্পাসে আমরা যারা নারী শিক্ষার্থীরা আছি, যারা আমরা সচেতন, তাদের আসলে একত্রিত হয়ে কিছু একটা করার সময় এসেছে।’
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাবি শাখার সংগঠক সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নারীদের কী সাহসী ভূমিকা ছিল, সেটা আমরা প্রত্যেকটা জায়গায় দেখেছি। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশের নারীরা কীভাবে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় এসে আমরা দেখলাম যেই নারীদের অংশগ্রহণে, যেই নারীদের লড়াই সংগ্রামের ফলে এই ইন্টেরিম সরকার ক্ষমতায় আসলেন, সে আসার পর সম্পূর্ণভাবে নারীদের যে নিরাপত্তা সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
‘আমরা দেখলাম আমাদের শিক্ষিকার নামে জামায়াতের এক নেতা মামলা করেছেন। এমনকি যেসব নারী জামায়াত এবং শিবিরের বিরুদ্ধে গঠনমূলক রাজনৈতিক বিরোধিতা করেছে, তাদের প্রত্যেককে অনলাইনে যতভাবে হেনস্থা করা যায়, মানসিক নির্যাতন করা যায় তার সবটাই তারা পরিকল্পনা করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন’, অভিযোগ করেন সোহাগী সামিয়া।
উল্লেখ্য, ২৫ অক্টোবর একটি বেসরকারি টিভিতে ‘রেইনবো নেশন বনাম ধর্মীয় কার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠান প্রচারের সময় ড. নাহরিন ইসলাম খান অভিযোগ করেন, সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে মানহানিকর বক্তব্য দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানা আমলি আদালতে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার বুলিং ও কটাক্ষের শিকার হন অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান।