leadT1ad

পাবনায় আবারও ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে ইছামতি-পদ্মার কোল ইজারার উদ্যোগ প্রশাসনের

চলতি বছর পাবনার আটটি উপজেলার ২৬টি জলাশয় ছয় বছরের জন্য ইজারা আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এসব জলাশয়ের চারটিই নদীর অংশ। যার মধ্যে রয়েছে জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি ও পদ্মা নদীর অংশও। গত বছর আইনি সতর্কতার পরও অবস্থান বদলায়নি জেলা প্রশাসনের।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
পাবনা

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৭
পাবনায় ইছামতিকে ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে মাছ চাষে ইজারার দিচ্ছে প্রশাসন। স্ট্রিম ছবি

পাবনায় আবারও প্রবহমান নদীকে ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি জেলার ২৬টি জলাশয় ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইছামতী ও পদ্মাসহ চারটি নদী রয়েছে। জলমহাল নীতিমালায় প্রবহমান নদী ইজারার বিধান না থাকলেও, শ্রেণি পরিবর্তন করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। পরে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ ও পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশে আইনজীবী সমিতির (বেলা) আইনি নোটিশের মুখে নদীর অংশ ইজারা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওই আইনি সতর্কতার পরও অবস্থান বদলায়নি জেলা প্রশাসনের।

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ের মাধ্যমে দেশের সব নদীকে ‘আইনি ব্যক্তি’ বা ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, নদীতে প্রবেশাধিকার কেউ সীমিত করতে পারে না বা রাজস্ব আয়ের জন্য নদীর কোনো অংশ বা শাখা ইজারা দেওয়া যায় না।

আবারও নদীকে যুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর জেলার আটটি উপজেলার ২৬টি জলাশয় ছয় বছরের জন্য ইজারা আহ্বান জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এসব জলাশয়ের মধ্যে চারটিই নদীর অংশ। যার মধ্যে রয়েছে জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতি ও পদ্মা নদীর অংশ। ২০ অক্টোবর (সোমবার) থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইজারা প্রত্যাশীরা অনলাইনে আবেদন জমা দিতে পারবেন।

ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাবনা সদর উপজেলার পদ্মার কোলের (পদ্মা নদীর একটি শাখা) ২১ একর এলাকা এবং সাঁথিয়া উপজেলার তিনটি স্থানে ইছামতি নদীর ১০৭ একর এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পাবনায় ইছামতিকে ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে মাছ চাষে ইজারার দিচ্ছে প্রশাসন। স্ট্রিম ছবি
পাবনায় ইছামতিকে ‘বদ্ধ জলাশয়’ দেখিয়ে মাছ চাষে ইজারার দিচ্ছে প্রশাসন। স্ট্রিম ছবি

এর আগে ২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি জেলায় ৬৩টি জলাশয় ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পাবনা জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৩১টি ছিল বিভিন্ন নদীর অংশ। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে সে সময় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বেলা’ আইনি নোটিশ পাঠালে নদীর অংশ ইজারা দেওয়া বন্ধ করে প্রশাসন।

ইজারাকে বেআইনি বলছেন পরিবেশবাদীরা

চলতি বছরও জেলার চারটি নদীকে যুক্ত করে ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সমালোচনা করেন বেলা’র রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়ক তন্ময় সান্যাল। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির আদালতের রায় অনুযায়ী নদীতে প্রবেশাধিকার কেউ সীমিত করতে পারে না বা রাজস্ব আয়ের জন্য নদীর কোনো অংশ বা শাখা ইজারা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ বিদ্যমান আইনে নদীর কোনো অংশ ইজারা দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন।’

নদী ইজারাকে ‘গোপন আর্থিক স্বার্থযুক্ত’ বলে সন্দেহ করে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসন রাজস্ব বাড়ানোর দোহাই দিয়ে এক ধরনের চতুরতার মধ্য দিয়ে নদী ইজারা দেয়। এগুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনৈতিক কাজ। কতটুকু রাজস্ব আসে? তার বিপরীতে সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আসলে এখানে গোপন আর্থিক স্বার্থ যুক্ত থাকে বলেও সন্দেহ হয়। এ কারণে তারা আইনেরও তোয়াক্কা করে না।’

কী বলছে প্রশাসন

বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী বদ্ধ জলাশয় ইজারা দেওয়ার জন্য এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২০ একরের বেশি আয়তনের তালিকাভুক্ত জলাশয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে।’

নদীর অংশকে ইজারার অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এগুলো দেশের বদ্ধ জলাশয়ের তালিকায় আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত আছে।’

ইছামতি নদীর একটি অংশ জলমহাল হিসেবে নিবন্ধিত দাবি করেন পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইছামতি নদীর একটি অংশ জলমহাল হিসেবে নিবন্ধিত, তাই জেলা প্রশাসন সেটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। একইভাবে পদ্মার কোলও ইজারা দেওয়া হচ্ছে, যদিও এটি পদ্মা নদীরই অংশ এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মাছ ধরার স্থান।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত