leadT1ad

খুলনায় আরেক যুবককে গুলি, নগরীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খুলনা

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩০
খুলনা নগরী। স্ট্রিম গ্রাফিক

খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে গতকাল দিনেদুপুরে দুজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একইদিন রাত ৯টার দিকে নগরের জিন্নাহপাড়া এলাকায় আরেক যুবককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিটি যুবকের বাঁ হাতে লেগেছে। এদিকে আজকের দুজনসহ খুলনা নগরে গত ১৫ মাসে ৪৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যার মধ্যে গত নভেম্বর মাসেই ছয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, গতবছর ৫ আগস্টের পর জামিনে বেরিয়ে আসা অপরাধী ও দীর্ঘদিন ‘আত্মগোপনে’ থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে সংগঠিত হয়েছে। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সোচ্চার রয়েছে।

রোববার (৩০ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে নগরের জিন্নাহপাড়া এলাকায় সম্রাট কাজী (২৮) নামে যুবককে ‍গুলি ছোড়া হয়। লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গুলিবিদ্ধ সম্রাট খুলনা শিপইয়ার্ডের অফিস সহকারী। তিনি নড়াইলের বাসিন্দা কাজী আজিজুর রহমানের ছেলে এবং বর্তমানে শিপইয়ার্ড এলাকায় বসবাস করেন।

ওসি হাওলাদার সানওয়ার বলেন, রোববার রাত ৯টার কিছু আগে নগরের জিন্নাহপাড়া এলাকার একটি চা-দোকানে অবস্থান করছিলেন সম্রাট। এ সময় কয়েক সন্ত্রাসী তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার বাঁ হাতে লাগে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শিপইয়ার্ডে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। পরে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এখুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে দুজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন, ফজলে রাব্বি রাজন ও হাসিব হাওলাদার। তাদের দুজনের নামেই হত্যাসহ ছয়টি করে মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।

ওসি শফিকুল বলেন, ‘নিহত দুজনই সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সহযোগী। তারা দুজনই আড়াই মাস আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হন।’

নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি নেই, আতঙ্কে নগরবাসী

খুলনায় কোনোভাবেই উন্নতি হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। নগরবাসী বলছেন, প্রতি রাতেই শহরের কোথাও না কোথাও গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সংঘর্ষে ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা নামলেই নগরীতে ভর করে অজানা আতঙ্ক। দিনের বেলাতেও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জামিনে বের হওয়া অপরাধী ও দীর্ঘদিন ‘আত্মগোপনে’ থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে সংগঠিত হয়েছে। তারা নির্বিঘ্নে মাদক বেচাকেনা, আধিপত্য বিস্তার, পেশীশক্তির প্রদর্শন, হামলা-চাঁদাবাজিসহ একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। তাদের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র।

পুলিশের দেওয়া তথ্যানুসারে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ১৫ মাসে খুলনা নগরেই ৪৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরের নভেম্বরে ছয়, অক্টোবরে চার, সেপ্টেম্বরে এক, আগস্টে পাঁচ, জুলাইয়ে দুই, জুনে তিন, মে মাসে পাঁচ, এপ্রিলে দুই, ফেব্রুয়ারিতে এক এবং জানুয়ারিতে দুজন হত্যার শিকার হন। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে গুলি, ধারালো অস্ত্র ও মারধরে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ।

উপজেলাগুলোর পরিস্থিতিও একই

খুলনার উপজেলাগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে নগরীর বাইরেও পুরো জেলাতে ৪৫ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনকেই গুলি করে বা কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা রূপসা উপজেলায়। এখানে গত দুই মাসে ৫ খুনের মধ্যে চার ক্ষেত্রেই গুলি করা হয়েছে।

গতকাল রোববার দুপুর ১টার দিকেও জেলার পাইকগাছা উপজেলার কাটিপাড়ার কপোতাক্ষ নদের খেরসা ব্রীজের নিকট থেকে দীনেশ দাস (২২) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌপুলিশ। দীনেশ উপজেলার পুরাইকাটী গ্রামের গৌর দাসের ছেলে। গত ২৬ নভেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তিনি।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, শহরে একের পর এক ‘টার্গেট কিলিং’ হচ্ছে। খুন, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অবৈধ অস্ত্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে পুলিশ প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পুরো শহর জুড়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মানুষ কোথাও নিরাপদ নয়। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়; এমনকি ঘুমের মধ্যেও মানুষ খুন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দিনের আলোতেও মানুষ আতঙ্কে থাকে। কারণ, অপরাধীরা প্রকাশ্যে অপরাধ করলেও পুলিশের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

তবে খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খানের দাবি, বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ মাসে ৪৫টির মতো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর অধিকাংশই ঘটেছে মাদক ও পারিবারিক রেষারেষিকে কেন্দ্র করে। আসামিরা আদালতে এমন স্বীকারোক্তিই দিয়েছে।’

খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, ‘পুলিশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে হত্যাকাণ্ডগুলো তদন্ত করছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তার দাবি, নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সতর্ক হয়ে কাজ করছে পুলিশ। এতে তদন্ত শেষ করতে সময় বেশি লাগছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত