leadT1ad

ফিরে দেখা ২৬ জুলাই

‘দিনে নাটক, রাতে আটক’, ব্লকরেইড আতঙ্কের মধ্যেই তিন সমন্বয়ককে তুলে নিল ডিবি

২৬ জুলাই ২০২৪। সবখানে গুটিশুটি পায়ে কড়া নাড়ত ভয়। রাত যত গভীর হতো, তত বাড়ত গ্রেপ্তার-আতঙ্ক। ২৬ জুলাই পর্যন্ত শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রুদ্ধশ্বাস দিনগুলোয় ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে জন্ম নিয়েছে কত না সত্য গল্প। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৩: ২৯
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩১
নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

রামপুরার বাসিন্দা ফজর আলী। ৪৭ বছর বয়সী এই গার্মেন্টস কর্মকর্তা ইদানীং রাতে খুব একটা বের হন না। তাঁর ভয়, দেশের এ পরিস্থিতিতে কখন কী ঘটে যায়! ভয়ের কারণে তিনি বাসা থেকে বের না হলেও ভয় যে বাসায় ঢুকতে পারবে না, এমন মাথার দিব্যি নিশ্চয়ই কেউ দেয়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রাতগুলো ছিল এমন। ভয় এখানে গুঁটিশুটি পায়ে বাসায় এসে কড়া নাড়ত। রাত যত গভীর হতো, তত বাড়ত গ্রেপ্তার-আতঙ্ক। চলত ব্লকরেইড। যেসব এলাকায় আন্দোলনকারীরা বেশি সক্রিয় ছিলেন, সেসব এলাকায় ব্লকরেইড চলত বেশিমাত্রায়। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে বিভিন্ন বাসায় বাসায় চলত গ্রেপ্তার অভিযান। ব্লকরেইডে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হতো।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২৬ জুলাই পর্যন্ত শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারা দেশে এ সংখ্যা ছিল তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। গ্রেপ্তার হওয়াদের বড় অংশ ছিলেন শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। অনেককে ফাঁসানো হয় আগের কোনো মামলায়।

তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবশ্য এই দিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না। কিন্তু রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না। তাই সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্য বেশ জনপ্রিয়তা পায়, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’।

হাসপাতাল থেকে তিন সমন্বয়ককে তুলে নিল ডিবি

২৬ তারিখ বেলা সাড়ে তিনটা। স্থান রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। সাদাপোশাকের একদল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢুকলেন হাসপাতালটিতে। তুলে নিয়ে গেলেন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে। তখন তাঁরা তিনজনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক।

চারদিকে তাঁদের খোঁজাখুঁজির হিড়িক। রাত ১১টার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, তিন সমন্বয়ক তাদের হেফাজতে রয়েছে। তুলে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিবি জানায়, নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছে। তা ছাড়া সহিংসতার বিষয়েও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানানো হয়।

হাসপাতালে শেখ হাসিনার ‘দুঃখী’ চেহারা

এদিন আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দুঃখী দুঃখী চেহারায় রোগীদের খোঁজখবর নেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতগুলা মানুষ! আমি তো আমার সব হারাইছি। বাবা, মা, ভাই—সব হারাইছি। আমি তো জানি মানুষের হারানোর বেদনা কী। আমার থেকে বোধহয় আর কেউ বেশি জানে না। আমি চাচ্ছিলাম দেশে শান্তি থাকবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে, দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। কখনো চাইনি যে এইভাবে মানুষ আপনজন হারাবে। এইভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে—এটা আমি কখনো চাইনি। কিন্তু আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।’

সরকার আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি, তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠুক এবং এর জন্য চিকিৎসায় যা দরকার হবে, সবই আমরা করব… আমি এটুকু বলতে পারি যে আমরা চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাঁদের অন্তত আয়রোজগারের ব্যবস্থা যাতে হয়, সেটাও আমরা করব।’

এ সময় এই পরিস্থিতির জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো সব দাবি মেনেই নিয়েছি। তারপরে আবার কেন? সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা কি জঙ্গিবাদকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য? আমি আমার দেশবাসীর কাছেই এটুকু বলব যে তাদেরই অপরাধী খুঁজে বের করে দিতে হবে এবং সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে আর এই ধরনের জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে।’

এছাড়া সকালে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) পরিদর্শনে যান তিনি। সেখানে গিয়েও ‘নাশকতাকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

২৬ জুলাই রাজধানীতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশনে যেহেতু এ সময় দেশের সত্যিকারের পরিস্থিতি প্রতিফলিত হচ্ছিল না, তাই অধিকাংশ মানুষেরই নজর থাকত বিদেশি গণমাধ্যমে এবং দেশের দু-একটি সংবাদপত্রে। নানা শ্রেণি-পেশার লোকেরা এ সময় গোয়েন্দা নজরদারির আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকেন। সব মিলিয়ে গোটা দেশের মানুষেরা ছিলেন শ্বাসরুদ্ধকর এক ভয়ের পরিবেশের মধ্যে।

Ad 300x250

পরিবারের দাবি মৃতদেহ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে কর্তৃপক্ষ, সরকার বলছে ভিন্ন কথা

চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা

ইসলামি শক্তির ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে

আগুনের লেলিহান শিখা পেরিয়ে যেভাবে সেদিন আমরা সূর্যকে খুঁজে পেলাম

আরও ১২ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা

সম্পর্কিত