leadT1ad

নরসিংদীতে বিএনপি নেতার ‘হুকুমেই’ পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
নরসিংদী
নরসিংদী থানা। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদী শহর বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর হোসাইনের ‘হুকুমেই’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে এমনটা উল্লেখ করেছে পুলিশ। মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হুকুমদাতা আলমগীর পৌর শহরের কয়েকটি স্থানে টোল আদায়ের ইজারা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গত শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতেই নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি মামলা করেন শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল আহমেদ। এতে বিএনপি নেতা আলমগীরকে হুকুমের আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে গত শনিবার সকালে পৌর শহরের আরশীনগর এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়ে বাধা ও দুজনকে আটক করায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলা চালায় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ও আটক দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা। এ ঘটনায় রাতেই করা মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকার ফজলুল রশিদ ওরফে আদর (৪০) ও মো. সোহাগ মিয়া (৩৫), বৌয়াকুর এলাকার তানভীর মিয়া (২২), শিবপুর উপজেলার দত্তেরগাঁও এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৪), বালিয়ার শান্ত মিয়া (২৩) এবং সদরের হাজীপুর এলাকার কুদরত হাসান (২৩) ও মো. রকিব খাঁ (৩০)। তাঁদের মধ্যে ফজলুল রশির আদরের নামে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ সাইয়াদুর রহমান।

মামলা অগ্রগতি বিষয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ

এদিকে হামলার ঘটনার আগে নরসিংদীর সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম। চলতি বছরের ১৬ ও ২৮ জুলাই ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে পোস্টও দেন তিনি। পরে এ নিয়ে একাধিক ‘ভুয়া অ্যাকাউন্ট’ থেকে তাঁকে হুমকি-ধমকি দিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়েছে বলে ১২ ও ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি দুটি পোস্ট দেন। এতে যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। এর মধ্যেই হামলার শিকার হন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শনিবারের হামলার ব্যাপারে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বীরপুর এলাকা থেকে ফেরার পথে দেখি কয়েকজন যুবক চলন্ত গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছে। জিজ্ঞাসা করতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন মিলে মব তৈরি করে আমার ওপর হামলা চালায়। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। আমি পড়ে গেলে লাথি, কিল ও ঘুষি মারে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’

মামলার পর অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও পৌর ইজারাদার আলমগীর হোসাইন গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

কয়েকটি স্থানে ইজারা, সারা শহরে চাঁদাবাজি

পৌর শহরের ইজারা সম্পর্কে জানতে চাইলে নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মনোয়ার হোসেন দাবি করেন, উচ্চ আদালত হাইওয়ে থেকে চাঁদা তুলতে নিষেধ করেছে, পৌরসভা থেকে নয়। তাই আলমগীরকে বৈধভাবে নরসিংদী শহরে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রতি ২৫ টাকা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতি ১০ টাকা হারে দৈনিক টাকা তুলতে গত ১ বৈশাখে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।

অটোরিকশাচালক সুমন, রহিম ও আব্দুল কুদ্দুসসহ একাধিক চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানা গেছে, পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ে পৌর চাঁদার নামে কয়েকটি চক্রের সদস্যরা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলে। তাদের দাবি করা টাকা না দিলেই গাড়ি আটকে রাখাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি অকথ্যভাষায় গালাগালি করে। এমনকি মারধরও করা হয়।

মামলার পর আত্মপোপনে আছেন বিএনপি নেতা আলমগীর হোসাইন। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন এখন বন্ধ। তবে হামলার ঘটনার পর ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমাকে সরাসরি বললে ভালো হতো। কিন্তু তিনি আমাকে না জানিয়ে ঘটনাস্থলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হয়তো রোদে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়ে আহত হয়ে থাকতে পারেন।’

তাঁর লোকজন হামলায় জড়িত নন দাবি করে তিনি বলেন, ‘নরসিংদী পৌর প্রশাসক ৭টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই স্থানগুলোর মধ্যে আরশীনগর মোড় এলাকা রয়েছে বলেও দাবি করে ছিলেন তিনি।’

তবে ভুক্তভোগী চালকরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত স্থানের বাইরেও শহরের একাধিকস্থানে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

বিএনপির নিন্দা, চাওয়া হয়েছে জবাব

পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ দাবি করেন নরসিংদী শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির কামাল। মোবাইল ফোনে স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে আলমগীর হোসাইন নরসিংদী পৌর শহরের একজন বৈধ ইজারাদার হিসেবেই টাকা তোলেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনাটি সম্পূর্ণ ন্যাক্কারজনক। আমরা দল থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

হামলার ঘটনা কেন্দ্র করে বিএনপির ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন করা হয়েছে উল্লেখ করে কামাল বলেন, ‘দলের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে লিখিতভাবে আলমগীর হোসাইনের কাছে জবাব (কারণ দর্শানো নোটিশ) চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ও সিনিয়র নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত