চবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষ
দুই দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন, গুরুতর আহত অন্তত ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন, গুরুতর আহত অন্তত ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার ডাকা হলেও যথাযথ সাড়া পাননি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা এবং সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা করার তৎপরতা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এবং শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। তিনি গতকাল রাত ১২ টার দিকে বাসায় ঢুকতে গেলে ওই ভবনের দারোয়ান তাকে বাধা দেন। দরজা না খুলে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ওই ছাত্রী গালিগালাজের জবাব দিলে দারোয়ান তাঁকে চড় মারেন।
সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার ডাকা হলেও যথাযথ সাড়া পাননি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা এবং সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা করার তৎপরতা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, চড় মারার পর ভবনটিতে ভাড়া থাকা ছাত্রীর রুমমেটরা ভবনের নিচে নামলে দাড়োয়ান আরও উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে লাত্থি দিতে থাকেন। এ সময় দুই নম্বর গেটে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং ওই ছাত্রীর রুমমেটরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় লোকজন মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ঘরবাড়ি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময়মতো বাসায় আসি। আজকেও দেরি করিনি। রাত ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব দিক থেকে রেলগেট পর্যন্ত উভয় দিকের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ ছাড়া ২ নম্বর গেট এলাকায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণজমায়েত কিংবা অস্ত্র পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উল্লেখিত এলাকায় ৫ জনের বেশি ব্যক্তি একসঙ্গে চলাচল করতে পারবেন না।
আগামীকাল সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার সূত্র জানায়, রাতে স্থানীয় লোকজনের হামলায় অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের শুরুর দিকে রাত পৌঁনে একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর রাস্তায় ঢুকতে পারেননি তাঁরা। পুরোটা স্থানীয় লোকজনের দখলে ছিল। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন), চ্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে। অন্যদের লাঠিসোঁটা, কাঠ, ইটপাটকেল ইত্যাদি দিয়ে জখম করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে অন্তত একজন, নিউরোলজিতে অন্তত তিনজন ভর্তি রয়েছেন, একজনের পা ভেঙে গেছে।
এ সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কয়েক দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিভাগগুলোর ক্লাস চলমান থাকবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ সকালে আলাদাভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠন দুইটি। সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকালে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলপথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা তিনটি দাবি জানান। দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সূত্রপাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া ও নিরাপত্তাচৌকি বসানো।
বিক্ষোভ চলাকালে বেলা ১১টার দিকে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও প্রক্টর। তাঁরা বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল বিষয়টি জানার পর নিরাপত্তাপ্রধান আবদুর রহিম, সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেইনসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ঘটনাস্থলে যান। পরে প্রক্টরের গাড়ি স্থানীয় বাসিন্দারা ভেঙে দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চেয়েও সময়মতো পাওয়া যায়নি।
এদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে এর বিচার চেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট যাওয়ার রেললাইনও অবরোধ করে রাখা হয়েছে।
আজ সকাল থেকে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেটে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দেড় ঘণ্টা মুখোমুখি অবস্থানের দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট–সংলগ্ন জোবরা গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রান্তে কয়েক শ শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। বিপরীত দিকে ছিলেন এলাকাবাসী। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছেন, গুরুতর আহত অন্তত ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার ডাকা হলেও যথাযথ সাড়া পাননি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা এবং সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা করার তৎপরতা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এবং শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। তিনি গতকাল রাত ১২ টার দিকে বাসায় ঢুকতে গেলে ওই ভবনের দারোয়ান তাকে বাধা দেন। দরজা না খুলে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ওই ছাত্রী গালিগালাজের জবাব দিলে দারোয়ান তাঁকে চড় মারেন।
সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়ে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বারবার ডাকা হলেও যথাযথ সাড়া পাননি। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা এবং সংঘর্ষের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা করার তৎপরতা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, চড় মারার পর ভবনটিতে ভাড়া থাকা ছাত্রীর রুমমেটরা ভবনের নিচে নামলে দাড়োয়ান আরও উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে লাত্থি দিতে থাকেন। এ সময় দুই নম্বর গেটে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং ওই ছাত্রীর রুমমেটরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান।
শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় লোকজন মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ঘরবাড়ি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময়মতো বাসায় আসি। আজকেও দেরি করিনি। রাত ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব দিক থেকে রেলগেট পর্যন্ত উভয় দিকের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। এ ছাড়া ২ নম্বর গেট এলাকায় সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, গণজমায়েত কিংবা অস্ত্র পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। উল্লেখিত এলাকায় ৫ জনের বেশি ব্যক্তি একসঙ্গে চলাচল করতে পারবেন না।
আগামীকাল সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ ধারা বলবৎ থাকবে। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার সূত্র জানায়, রাতে স্থানীয় লোকজনের হামলায় অন্তত ১০০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আল মাসনূন রয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের শুরুর দিকে রাত পৌঁনে একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর রাস্তায় ঢুকতে পারেননি তাঁরা। পুরোটা স্থানীয় লোকজনের দখলে ছিল। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ছাত্রলীগের সব বড় বড় ক্যাডার এ সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে। তাঁরা হেলমেট পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রড, লাঠিসোঠা, বড় বড় রামদা, ছুড়ি দিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেস্টার দপ্তরে কথা বলেছি, দুই ঘন্টা ধরে আমরা চেষ্টা চালিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন), চ্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে। অন্যদের লাঠিসোঁটা, কাঠ, ইটপাটকেল ইত্যাদি দিয়ে জখম করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে অন্তত একজন, নিউরোলজিতে অন্তত তিনজন ভর্তি রয়েছেন, একজনের পা ভেঙে গেছে।
এ সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কয়েক দফায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিভাগগুলোর ক্লাস চলমান থাকবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ সকালে আলাদাভাবে এই কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠন দুইটি। সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকালে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলপথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা তিনটি দাবি জানান। দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সূত্রপাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া ও নিরাপত্তাচৌকি বসানো।
বিক্ষোভ চলাকালে বেলা ১১টার দিকে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও প্রক্টর। তাঁরা বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল বিষয়টি জানার পর নিরাপত্তাপ্রধান আবদুর রহিম, সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেইনসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ঘটনাস্থলে যান। পরে প্রক্টরের গাড়ি স্থানীয় বাসিন্দারা ভেঙে দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চেয়েও সময়মতো পাওয়া যায়নি।
এদিকে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে এর বিচার চেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট যাওয়ার রেললাইনও অবরোধ করে রাখা হয়েছে।
আজ সকাল থেকে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেটে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দেড় ঘণ্টা মুখোমুখি অবস্থানের দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট–সংলগ্ন জোবরা গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনসহ ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রান্তে কয়েক শ শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। বিপরীত দিকে ছিলেন এলাকাবাসী। দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
চলতি বছরের জুন মাসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের এক বার্ষিক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সংবাদ এড়িয়ে চলার প্রবণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
১২ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আজ বুধবার সকালে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।
৩৩ মিনিট আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে গণভবনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান...
৯ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটকারী ছাত্রীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী। আলী হুসেন নামের ওই শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনে অধ্যয়নরত। এ ছাড়া তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক...
৯ ঘণ্টা আগে