leadT1ad

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হালচাল-০৩

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশ শিক্ষকের পিএইচডি নেই

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১১
স্ট্রিম গ্রাফিক

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের প্রায় ৮০ শতাংশের পিএইচডি ডিগ্রি নেই। আর শুধু পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে হিসাব করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪ শতাংশে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার কথা থাকলেও ‘যোগ্য শিক্ষকের ঘাটতির’ কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। আর গবেষণায় জোর দেওয়ার প্রশ্নে সবার আগে আসে পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, পেশাগত দক্ষতা অর্জন এবং গবেষণা খাতে উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রির বাধ্য-বাধকতাও রাখছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ফল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না।

গত মাসে ইউজিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, দেশে ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৭৯ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ১৩ হাজার ১৬৯ জন। পূর্ণকালীন শিক্ষকদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি আছে ২ হাজার ৭২ জনের। শতাংশের হিসাবে যা ১৫ দশমিক ৭৪।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিএইচডিধারী শিক্ষক আছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০৮ জন। এ ছাড়া ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২৮৩, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ২৬৪, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ২২৮ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে আছেন ২১৫ জন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৩১০ জন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩১ জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। অর্থাৎ প্রায় ৩৬ শতাংশ খণ্ডকালীন শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন মিলিয়ে এই সংখ্যা ৩ হাজার ৬০৩। শিক্ষকের পিএইচডি আছে। অর্থাৎ, মোট শিক্ষকের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশের পিএইচডি ডিগ্রি আছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পিএইচডিধারী শিক্ষক আছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০৮ জন। এ ছাড়া ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ২৮৩, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ২৬৪, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ২২৮ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে আছেন ২১৫ জন।

অবশ্য দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রিধারীর সংখ্যাও খুব বেশি নয়। ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষকের পিএইচডি নেই। ইউজিসির ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন ১৬ হাজার ৮০৫ জন। তাঁদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি আছে ৬ হাজার ৪০৭ জনের। অর্থাৎ, ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। পাশাপাশি এমফিল ডিগ্রি আছে ১ হাজার ২১৬ জনের।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন স্ট্রিমকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানোন্নয়নে দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক যাতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা আছে। তখন পিএইচডি বা উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা বাড়বে।’

ভারতের ২০২৪ সালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাংকিং ফ্রেমওয়ার্ক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ৫৯ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। দেশটিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষক রয়েছে।

পিএইচডির গুরুত্ব কোথায়

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি এখন বিশ্বজুড়েই এক অপরিহার্য যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে পিএইচডিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এমনকি দেশটির ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন পিএইচডি বাধ্যতামূলক করার রেগুলেশনও জারি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিএইচডির মাধ্যমে শিক্ষকেরা কেবল গবেষণায় নয়, পাঠদানে ও বিশ্লেষণমূলক চিন্তায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। এ ডিগ্রি শিক্ষকের পেশাগত উৎকর্ষ, গবেষণার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কার্যকর নির্দেশনা প্রদানে সহায়ক।

ভারতের ২০২৪ সালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাংকিং ফ্রেমওয়ার্ক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির ৫৯ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। দেশটিতে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষক রয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৮ জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। তবে দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি আছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ভারতের ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের ২০১৮ সালের এক রেগুলেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের নিয়োগে পিএইচডি ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলছেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পিএইচডি থিসিস ও গবেষণা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। গবেষণার মান ভালো না হওয়া ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত না থাকলে শিক্ষকের শিক্ষাদান অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না।

কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে সারা বিশ্বে অষ্টম এবং এশিয়ায় প্রথম হলো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঘেঁটে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের ক্ষেত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক।

পাঠদানের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে গবেষণা করা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্যতম কাজ বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ সাদেক। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, শিক্ষকেরা পেশাগত উৎকর্ষের জন্য এমফিল, পিএইচডির মতো উচ্চতর ডিগ্রি নেন। পিএইচডির মধ্য দিয়ে ভালো মানের গবেষণা করার প্রবণতা শিক্ষকদের মধ্যে থাকতে হবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলছেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পিএইচডি থিসিস ও গবেষণা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। গবেষণার মান ভালো না হওয়া ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত না থাকলে শিক্ষকের শিক্ষাদান অনেক সময় ফলপ্রসূ হয় না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, পশ্চিমা বিশ্বসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষক হিসেবে প্রবেশ করতে হলে পিএইচডি ডিগ্রি লাগে। বাংলাদেশেও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পিএইচডির মাধ্যমে গবেষণার পাশাপাশি টিচিং লার্নিংও অর্জিত হয়। সেমিনারে প্রেজেন্টেশন, বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে শিক্ষকের ক্যাপাসিটি তৈরি হয়। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারীরা তাঁদের গবেষণার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে নির্দেশনা দিতে সক্ষম হন। এ কারণে শিক্ষকদের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত