বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই দাবি করে এসেছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ও ‘আকস্মিক উত্তেজনা’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ব্যবসা ও আধিপত্যের স্বার্থে এমন সংঘাত ঘটায়। দোকান দখল, যাতায়াতের নিয়ন্ত্রণ ও আবাসিক হোস্টেলের পাশে দোকানপাটকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ সংঘর্ষ ঘটে।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
কখনো ছোটখাটো বিবাদ থেকে, আবার কখনো দোকান দখল নিয়ে প্রায়শই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি সম্প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়েও বড় আকারের সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের একাধিকবার এমন সংঘর্ষ ঘটেছে। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন, ভাঙচুর হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়দের সম্পদ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাও। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন অবধি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্থানীয় বনাম শিক্ষার্থীদের’ মধ্যে অন্তত চারবার বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। যার সবশেষ ঘটনাটি ঘটল গত ৩০ আগস্ট রাতে।
ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগে রক্তাক্ত সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত ঘটেছে ৩০ আগস্ট রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামে এক ছাত্রীকে ‘রাতে বাসায় ফেরা’কে কেন্দ্র করে মারধরের অভিযোগ ওঠে ওই বাসার দারোয়ানের বিরুদ্ধে। পরে ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এক আবাসিক ভবনের দারোয়ান ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই স্থানীয়ভাবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রাম থেকে শতাধিক মানুষ জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি-সোঁটা ব্যবহৃত হয় বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর জেরে আজ ৩১ আগস্ট দুপুরে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই পক্ষ। জোবরা গ্রাম ও লন্ডনি বিল্ডিং এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুর করা হয়েছে বহু দোকান ও যানবাহন। সংঘাত থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত হয়েছেন সহ-উপাচার্য কামাল উদ্দিনসহ ১৮০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে যৌথবাহিনী। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
৮ আগস্ট ২০২৫: দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘাত
চলতি আগস্ট মাসেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের আরেকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ আগস্ট সকালে ১ নম্বর গেটসংলগ্ন স্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা।
ঘটনার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মারধরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
মারধরের শিকার ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন জুবায়ের হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও জাকির হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, জুবায়ের ও আতিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন–সংলগ্ন স্থানে একটি দোকান নির্মাণের কাজ করছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা এসে দোকান নির্মাণে বাধা দেন। ওই বাসিন্দাদের দাবি ছিল, রেলওয়ের জায়গাটি তাঁরা ইজারা নিয়েছেন, তাই এখানে দোকান নির্মাণ করলে তাঁদের টাকা দিতে হবে। কিন্তু ওই দুই শিক্ষার্থী অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গাটি দোকানের জন্য ভাড়া নিয়েছেন বলে জানান। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। এরপর জাকির, জুবায়ের ও আতিকুলকে মারধর করেন স্থানীয় লোকজন। এতে তাঁরা আহত হন। পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
২১ অক্টোবর ২০২৪: দোকান দখল নিয়ে সংঘর্ষ
এদিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে একটি খাবার দোকান দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভোরে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করেন। এতে অন্তত চার শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীরা সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপর দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য ছিল, ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন–সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের হাতে ছিল। এসব দোকান ছিল রেলওয়ের জায়গায়। যাঁরা এখানে দোকান করতেন, হানিফকে তাঁরা নিয়মিত চাঁদা দিতেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর হানিফ এলাকা ছাড়লেও দোকানের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি।
সরকার পতনের পর তাঁর নিয়ন্ত্রিত জায়গায় নতুন করে খাবারের দোকান দেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসান। দুই মাস ধরে দোকানের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছিলেন তিনি। ঘটনার দুই দিন পরেই ‘আপ্যায়ন’ নামের খাবার হোটেলটি চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হানিফের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। দোকান পরিচালনা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলেও দাবি করেন। এসব নিয়ে বিবাদের মধ্যে ২১ আগস্ট ভোরে এই দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকটি পটকা ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গুলি ছোড়ার এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। পরে সেখানে সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মাইকিং করে জানান, স্থানীয় লোকজনের ওপর জামায়াত–শিবিরের লোকজন হামলা করেছে। তিনি সবাইকে প্রতিহত করার অনুরোধ করেন। পরে স্থানীয় লোকজনও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। চার জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ৯টার দিকে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
১২ মার্চ ২০২৪: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ে বিবাদ
ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল সংঘর্ষের জের ধরে হাতাহাতিতে এ দিন সংঘর্ষ দেখা দেয়। দুপুর থেকে রাত ৯টার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুপক্ষের চারজন আহত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নেয়।
এ দিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সাপ্তাহিক বাজারের দিন। এদিন অন্য দিনের তুলনায় এই এলাকায় লোকজনের সমাগম বেশি হয়।
সেদিন বিকেল ৫টার দিকে ওই বাজারে ইফতারি কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী বখতিয়ার উদ্দিন। এ সময় তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। পরে এ নিয়ে বখতিয়ারের সঙ্গে ওই ছাত্রের কথা-কাটাকাটি হয়।
এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন) কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের জামিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে বখতিয়ারের সঙ্গে জামিনেরও কথা-কাটাকাটি হয়। এর সূত্র ধরেই উপস্থিত কয়েকজন ছাত্র ও বখতিয়ারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বখতিয়ার স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল) সভাপতি। হাতাহাতির এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মচারী ও হাটহাজারী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এলে আবার হাতাহাতি হয়।
এরপর বখতিয়ার ও মিজানুরের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ধাওয়া দেয়। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
১৫ মার্চ ২০২৪: সামান্য ঘটনা থেকে সংঘর্ষ
২০২৪ সালের ১২ মার্চ ছিল রমজানের প্রথম দিন। এদিন ক্যাম্পাসে সামান্য কোনও বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে একটি দোকানও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ওই দিন রাতেই উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এরমধ্য দিয়ে কোনো সুরাহা না এলে ১৫ মার্চ উভয়পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়।
ওই দিন আগের ঘটনার জেরে বায়তুল মাল জামে মসজিদের নামাজের পর স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিয়ে ১ নম্বর গেট (রেলক্রসিং) এলাকায় অবস্থান নেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেন। দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের উপর আকস্মিক হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এতে এক ছাত্রীসহ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয়রা রেলক্রসিং এলাকায় দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। পরে একই স্থানে বিকেল ৪টার দিকে আরও দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর সৌরভ সাহা জয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি একটি ঘটনার জেরে স্থানীয়রা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছি।’
হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একটি অংশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বারবার কেন ঘটছে সংঘাত?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই দাবি করে এসেছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ও ‘আকস্মিক উত্তেজনা’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ব্যবসা ও আধিপত্যের স্বার্থে এমন সংঘাত ঘটায়। দোকান দখল, যাতায়াতের নিয়ন্ত্রণ ও আবাসিক হোস্টেলের পাশে দোকানপাটকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ সংঘর্ষ ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়ে উদাসীন উল্লেখ করে শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়ার স্ট্রিমকে বলেন, গত দুই বছরে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু বড় কোনো বিচার হয়নি। বারবার মাইক দিয়ে গ্রাম থেকে লোকজন ডেকে এনে ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনায়ও প্রশাসন নিরব থাকে।
অন্যদিকে স্থানীয়রা দাবি করে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উসকানিমূলক আচরণ করে এবং বাইরের লোকজনকে হেয় করে। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ফলে সামান্য ঝগড়া বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিকে এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সহকারি অধ্যাপক জি এইচ হাবীব এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একটা না বলে পারছি না। শিক্ষার্থীরা সামান্য কোনো ভুল করলে, বিশেষ ক'রে সেই শিক্ষার্থীদের ওপর যদি কোনো সরকারী বা শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন বা ছত্রছায়া না থাকে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা অবলম্বন করে, এমনকি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের সোপর্দ ক'রে আসার মতো অভূতপূর্ব ঘটনাও ঘটতে দেখি।
অথচ এই শিক্ষার্থীরাই যখন ভয়াবহ কোনো নির্যাতনের শিকার হয়, তখন সেই ঘটনার প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ততটা তৎপর হতে দেখা যায় না।
তিনি আরও লেখেন, বিশেষ করে আমি বলতে চাই, নারীর প্রতি, নারী শিক্ষার্থীর প্রতি এদেশে প্রশাসনের পুরুষ লোকজন থেকে শুরু করে আপামর পুরুষ জনসাধারণের একটা কুৎসিত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার মতো একটা মেকি, ভণ্ডামিপূর্ণ অজুহাতে, সব সময় তাদের ওপর একটা নিবর্তনমূলক আচরণ করতে চায় পুরুষতন্ত্র, তাদের মুখ বন্ধ করতে চায়, তাদের ঘরে আটকে রাখতে চায়। নারীদের প্রতি আমজনতার অবমাননাসূচক মনতব্য আর বাক্যবাণের আগুনে ঘৃতাহুতি দেন প্রশাসনের লোকজন, এটা আমরা প্রায়ই দেখি। ফলে ছাত্র থেকে শুরু করে পুরুষ শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, স্থানীয় লোকজন অনেকেই এই বার্তা পেয়ে যায় যে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে কোনো খারাপ আচরণ করা যায়, তাদের নিয়ে অকথা কুকথা বলা যায়।’
কখনো ছোটখাটো বিবাদ থেকে, আবার কখনো দোকান দখল নিয়ে প্রায়শই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকি সম্প্রতি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়েও বড় আকারের সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের একাধিকবার এমন সংঘর্ষ ঘটেছে। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন, ভাঙচুর হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয়দের সম্পদ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষাও। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন অবধি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্থানীয় বনাম শিক্ষার্থীদের’ মধ্যে অন্তত চারবার বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। যার সবশেষ ঘটনাটি ঘটল গত ৩০ আগস্ট রাতে।
ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগে রক্তাক্ত সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্প্রতি সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত ঘটেছে ৩০ আগস্ট রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামে এক ছাত্রীকে ‘রাতে বাসায় ফেরা’কে কেন্দ্র করে মারধরের অভিযোগ ওঠে ওই বাসার দারোয়ানের বিরুদ্ধে। পরে ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এক আবাসিক ভবনের দারোয়ান ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই স্থানীয়ভাবে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রাম থেকে শতাধিক মানুষ জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। হামলায় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি-সোঁটা ব্যবহৃত হয় বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এতে অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এর জেরে আজ ৩১ আগস্ট দুপুরে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই পক্ষ। জোবরা গ্রাম ও লন্ডনি বিল্ডিং এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়েছেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুর করা হয়েছে বহু দোকান ও যানবাহন। সংঘাত থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত হয়েছেন সহ-উপাচার্য কামাল উদ্দিনসহ ১৮০ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে যৌথবাহিনী। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
৮ আগস্ট ২০২৫: দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে সংঘাত
চলতি আগস্ট মাসেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের আরেকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ আগস্ট সকালে ১ নম্বর গেটসংলগ্ন স্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান স্থানীয়রা।
ঘটনার সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে তিন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মারধরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
মারধরের শিকার ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন জুবায়ের হোসেন, আতিকুল ইসলাম ও জাকির হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, জুবায়ের ও আতিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন–সংলগ্ন স্থানে একটি দোকান নির্মাণের কাজ করছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা এসে দোকান নির্মাণে বাধা দেন। ওই বাসিন্দাদের দাবি ছিল, রেলওয়ের জায়গাটি তাঁরা ইজারা নিয়েছেন, তাই এখানে দোকান নির্মাণ করলে তাঁদের টাকা দিতে হবে। কিন্তু ওই দুই শিক্ষার্থী অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গাটি দোকানের জন্য ভাড়া নিয়েছেন বলে জানান। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। এরপর জাকির, জুবায়ের ও আতিকুলকে মারধর করেন স্থানীয় লোকজন। এতে তাঁরা আহত হন। পরে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
২১ অক্টোবর ২০২৪: দোকান দখল নিয়ে সংঘর্ষ
এদিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে একটি খাবার দোকান দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভোরে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা ব্যবহার করেন। এতে অন্তত চার শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীরা সে সময় অভিযোগ করেছিলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপর দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য ছিল, ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বরাতে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন–সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের হাতে ছিল। এসব দোকান ছিল রেলওয়ের জায়গায়। যাঁরা এখানে দোকান করতেন, হানিফকে তাঁরা নিয়মিত চাঁদা দিতেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর হানিফ এলাকা ছাড়লেও দোকানের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি।
সরকার পতনের পর তাঁর নিয়ন্ত্রিত জায়গায় নতুন করে খাবারের দোকান দেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসান। দুই মাস ধরে দোকানের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছিলেন তিনি। ঘটনার দুই দিন পরেই ‘আপ্যায়ন’ নামের খাবার হোটেলটি চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হানিফের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। দোকান পরিচালনা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলেও দাবি করেন। এসব নিয়ে বিবাদের মধ্যে ২১ আগস্ট ভোরে এই দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকটি পটকা ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গুলি ছোড়ার এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। পরে সেখানে সকাল ৭টার দিকে স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন মাইকিং করে জানান, স্থানীয় লোকজনের ওপর জামায়াত–শিবিরের লোকজন হামলা করেছে। তিনি সবাইকে প্রতিহত করার অনুরোধ করেন। পরে স্থানীয় লোকজনও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কে অবস্থান নেন। চার জায়গায় ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ৯টার দিকে আবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়।
১২ মার্চ ২০২৪: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ে বিবাদ
ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং এক শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল সংঘর্ষের জের ধরে হাতাহাতিতে এ দিন সংঘর্ষ দেখা দেয়। দুপুর থেকে রাত ৯টার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় দুপক্ষের চারজন আহত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নেয়।
এ দিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সাপ্তাহিক বাজারের দিন। এদিন অন্য দিনের তুলনায় এই এলাকায় লোকজনের সমাগম বেশি হয়।
সেদিন বিকেল ৫টার দিকে ওই বাজারে ইফতারি কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারী বখতিয়ার উদ্দিন। এ সময় তাঁর মোটরসাইকেলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। পরে এ নিয়ে বখতিয়ারের সঙ্গে ওই ছাত্রের কথা-কাটাকাটি হয়।
এ সময় ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন) কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের জামিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে বখতিয়ারের সঙ্গে জামিনেরও কথা-কাটাকাটি হয়। এর সূত্র ধরেই উপস্থিত কয়েকজন ছাত্র ও বখতিয়ারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বখতিয়ার স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দল) সভাপতি। হাতাহাতির এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কর্মচারী ও হাটহাজারী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে এলে আবার হাতাহাতি হয়।
এরপর বখতিয়ার ও মিজানুরের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ধাওয়া দেয়। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
১৫ মার্চ ২০২৪: সামান্য ঘটনা থেকে সংঘর্ষ
২০২৪ সালের ১২ মার্চ ছিল রমজানের প্রথম দিন। এদিন ক্যাম্পাসে সামান্য কোনও বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে একটি দোকানও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ওই দিন রাতেই উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু এরমধ্য দিয়ে কোনো সুরাহা না এলে ১৫ মার্চ উভয়পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়।
ওই দিন আগের ঘটনার জেরে বায়তুল মাল জামে মসজিদের নামাজের পর স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিয়ে ১ নম্বর গেট (রেলক্রসিং) এলাকায় অবস্থান নেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেন। দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের উপর আকস্মিক হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এতে এক ছাত্রীসহ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয়রা রেলক্রসিং এলাকায় দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। পরে একই স্থানে বিকেল ৪টার দিকে আরও দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর সৌরভ সাহা জয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি একটি ঘটনার জেরে স্থানীয়রা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছি।’
হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের একটি অংশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় জড়ো হয় এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বারবার কেন ঘটছে সংঘাত?
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই দাবি করে এসেছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ ও ‘আকস্মিক উত্তেজনা’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ব্যবসা ও আধিপত্যের স্বার্থে এমন সংঘাত ঘটায়। দোকান দখল, যাতায়াতের নিয়ন্ত্রণ ও আবাসিক হোস্টেলের পাশে দোকানপাটকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ সংঘর্ষ ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়ে উদাসীন উল্লেখ করে শিক্ষার্থী ধ্রুব বড়ুয়ার স্ট্রিমকে বলেন, গত দুই বছরে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু বড় কোনো বিচার হয়নি। বারবার মাইক দিয়ে গ্রাম থেকে লোকজন ডেকে এনে ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনায়ও প্রশাসন নিরব থাকে।
অন্যদিকে স্থানীয়রা দাবি করে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ উসকানিমূলক আচরণ করে এবং বাইরের লোকজনকে হেয় করে। এতে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ফলে সামান্য ঝগড়া বড় সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিকে এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সহকারি অধ্যাপক জি এইচ হাবীব এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একটা না বলে পারছি না। শিক্ষার্থীরা সামান্য কোনো ভুল করলে, বিশেষ ক'রে সেই শিক্ষার্থীদের ওপর যদি কোনো সরকারী বা শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন বা ছত্রছায়া না থাকে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকা অবলম্বন করে, এমনকি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তাদের সোপর্দ ক'রে আসার মতো অভূতপূর্ব ঘটনাও ঘটতে দেখি।
অথচ এই শিক্ষার্থীরাই যখন ভয়াবহ কোনো নির্যাতনের শিকার হয়, তখন সেই ঘটনার প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ততটা তৎপর হতে দেখা যায় না।
তিনি আরও লেখেন, বিশেষ করে আমি বলতে চাই, নারীর প্রতি, নারী শিক্ষার্থীর প্রতি এদেশে প্রশাসনের পুরুষ লোকজন থেকে শুরু করে আপামর পুরুষ জনসাধারণের একটা কুৎসিত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার মতো একটা মেকি, ভণ্ডামিপূর্ণ অজুহাতে, সব সময় তাদের ওপর একটা নিবর্তনমূলক আচরণ করতে চায় পুরুষতন্ত্র, তাদের মুখ বন্ধ করতে চায়, তাদের ঘরে আটকে রাখতে চায়। নারীদের প্রতি আমজনতার অবমাননাসূচক মনতব্য আর বাক্যবাণের আগুনে ঘৃতাহুতি দেন প্রশাসনের লোকজন, এটা আমরা প্রায়ই দেখি। ফলে ছাত্র থেকে শুরু করে পুরুষ শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, স্থানীয় লোকজন অনেকেই এই বার্তা পেয়ে যায় যে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে কোনো খারাপ আচরণ করা যায়, তাদের নিয়ে অকথা কুকথা বলা যায়।’
তবে এ উদ্যোগের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল বলে সমালোচকরা মনে করেন।
১ ঘণ্টা আগেপররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসা তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তবে, প্রয়োজনে তাঁর ভ্রমণ নথি বা পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করবে সরকার।
১ ঘণ্টা আগেগোলাম রব্বানী বলেন, ‘পেজগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।’
১ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
২ ঘণ্টা আগে