leadT1ad

ফরিদপুর ও সিলেটে দুই হত্যাকাণ্ড

দুই মামলায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে ইজিবাইকচালক শওকত মোল্লা হত্যার প্রায় ৬ বছর পর এবং সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ হত্যার ৪ বছর পর মামলা রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

স্ট্রিম সংবাদদাতাফরিদপুর ও সিলেট
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ২১: ০৯
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ২১: ১১
ফরিদপুরে রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেওয়া হয় আসামিদের। স্ট্রিম ছবি

ফরিদপুরে এক ইজিবাইকচালককে হত্যা ও সিলেটের বিশ্বনাথে আলোচিত স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ শুকুর হত্যায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন স্থানীয় আদালত। ইজিবাইকচালক শওকত মোল্লা হত্যার প্রায় ৬ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মামলা রায় ঘোষণা হয়। স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ হত্যার ৪ বছর পর গতকাল বুধবার (৩০ জুলাই) মামলার ৩২ আসামির সবার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক ইজিবাইকচালক শওকত মোল্লা (২০) হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারক মাকসুদুর রহমান। এতে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও এক আসামিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। এই মামলার আরেক আসামিকে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।

এর আগে বুধবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ শুকুর হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেন বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন। রায়ে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনের অর্থদণ্ডসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। একই মামলায় আরও ১৭ জনের দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় এ মামলায় মোট ৩২ জন আসামির মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই উপস্থিত ছিলেন।

ফরিদপুর আদালতে ‎বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়ের সময় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত চার আসামি উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত আসামিরা হলেন ফরিদপুরের সদর উপজেলার মো. মেহেদী আবু কাওসার, মো. জনি মোল্লা, মো. রাসেল শেখ (পলাতক), রাজেস রবি দাস, মো. রবিন মোল্লা ওরফে ভিকি। তাঁদের মধ্যে মো. রাসেল শেখ পলাতক আছেন। ১০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া অপর আসামি বাদশা শেখের বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর চালক শওকত মোল্লা (২০) নিজের ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এর পরের দিন শহরের গোয়ালচামট এলাকায় একটি ধানক্ষেত থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ‌এ ঘটনায় তাঁর বাবা আয়নাল শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

‎আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) চৌধুরীর জাহিদ হাসান খোকন বলেন, ‘এই মামলায় আমরা সর্বোচ্চ রায় পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।’

বিশ্বনাথে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বনাথে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে সিলেটের স্কুলছাত্র সুমেল আহমেদ শুকুর হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৮ জন আসামি হলেন সাইফুল আলম, নজরুল আলম, সদরুল ওরফে সাদর আলম, সিরাজ উদ্দিন, জামাল মিয়া, শাহিন উদ্দিন, মো. আব্দুল জলিল ও আনোয়ার হোসেন।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া সাতজন হলেন ইলিয়াছ আলী, আব্দুন নুর, জয়নাল আবেদিন, আশিক উদ্দিন, আসকির আলী, মো. আলাইদ মিয়া ওরফে ফরিদ মিয়া ও আকবর মিয়া। একই সঙ্গে এই সাতজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ২ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ওই মামলায় আরও ১৭ জনের প্রত্যেককে ২ বছরের করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন আদালতের এপিপি কামাল হোসেন। মামলার বাদী ইব্রাহিম আহমদ সিজিল বলেন, ‌‘এখন সরকারসহ সংশিষ্ট সকলের কাছে দাবি রায়টি যেনো দ্রুত কার্যকর করা হয়।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবুল খায়ের হেলাল আহমদ বলেন, ‘ন্যায় বিচার হয় নাই। ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হয়েছে।…আমরা হাইকোর্টে আপিল করব।’

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ মে বিশ্বনাথ উপজেলার চৈতননগর গ্রামের নজির উদ্দিনের জমি থেকে রাস্তায় মাটি তোলা নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুল আলমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এ সময় এগিয়ে গেলে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সাইফুল আলমের বন্দুকের গুলিতে নিহত হন নজির উদ্দিনের ভাতিজা দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমেল। ওই দিন সুমেলের বাবা ও চাচাসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় তাঁর চাচা ইব্রাহিম আহমদ বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। তবে তদন্ত শেষে তৎকালীন বিশ্বনাথ থানার ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী ৩২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত