জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের থেকে কেন্দ্রীভূত এই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রনেতারা। রায়ের বিষয়ে তাঁদের কয়েকজনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে স্ট্রিম। তাঁরা বলছেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ধারা শুরু হল। সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে এই রায় কার্যকর করারও দাবি জানিয়েছেন এই ছাত্র নেতারা।
২০২৪ সালের সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন একসময় রূপ নেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। এই আন্দোলনে ১৪০০ বেশি মানুষ হত্যার শিকার হন। এক পর্যায়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্লাটফর্ম থেকেই শুরু হয় সরকার পতনের আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের প্রায় ১৫ মাস পর ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
গতবছর জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন উমামা ফাতেমা। রায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গণহত্যার মতো অপরাধ করার যেই শাস্তি, সেটা শেখ হাসিনার হওয়া উচিত। বাংলাদেশের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তিই তাঁকে দেওয়া হয়েছে। তবে পলাতক থাকায় এই রায় কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এজন্য শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম। বর্তমানে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক। তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সারজিস আলম লিখেছেন, ‘ভারত যতদিন না মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়ে রায় কার্যকর করতে সহযোগিতা করবে, ততদিন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।’
সারজিস আলমের সহযোদ্ধা, আন্দোলনের আরেক পরিচিত মুখ হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন, ‘ইদ মোবারক’।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আরেক ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম। তিনি বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে তথ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘খুনি হাসিনার হাতে শহিদদের আত্মা আজ প্রশান্ত। আমাদের কৈশোর, তারুণ্যের প্রতিটি দিনকে ট্রমায় পরিণত করা আর সারা দেশকে মৃত্যুকূপ বনিয়ে ফেলার কারিগর খুনি হাসিনার আজ বিচার হল। বিচার হবে সব খুনি-জালিমের, লুটেরাদের এবং বাংলাদেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রকারীদের, এটাই আশা।’
ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আরেক ছাত্রনেতা মহিউদ্দীন আহমেদ। যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের ধারা শুরু হলো। এর আগে এই ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছিল, তা ছিল ন্যায়ভ্রষ্ট। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবার ন্যায়বিচারের যাত্রা শুরু হলো। একইসঙ্গে শহীদের পরিবারের চোখে আমরা আনন্দের অশ্রু দেখতে পেয়েছি, তাঁরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। বিচারব্যবস্থার প্রতি আবার মানুষের আস্থা ফিরে আসছে। আশা করি, সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকর করবে।’
তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংগঠক এবং বর্তমান জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার রায়ের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এবং একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ে খুনি হাসিনার ফাঁসি কার্যকরের দাবিতে বাংলামোটর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দ মিছিল বের করছি। সেখানে আরো বিশদভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হবে।’