leadT1ad

জাকসু নির্বাচন

ভোটগ্রহণ-গণনায় টানা তিন দিন: ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোটগণনা এখন শেষের দিকে। স্ট্রিম ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা চলেছে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। এখন চলছে ভোটের ফলাফল প্রকাশের প্রস্তুতি। এর আগে আরও ৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হয় ভোটগ্রহণ। ফলে টানা তিন দিন ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা।

এর মধ্যে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস। এই মৃত্যুর পেছনেও নির্বাচনি ‘অব্যবস্থাপনাকে’ দায়ী করছেন শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাকসু ও হল সংসদের ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। তবে দুটি হলের ভোট গ্রহণে দেরি হওয়ায় ভোট গণনা শুরুর সময়ও পিছিয়ে যায়। নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ ঘণ্টা পরে রাত ১০টায় শুরু হয় গণনা। প্রথমে হল সংসদের ভোট গণনা শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরপর হল সংসদের পাশাপাশি জাকসুর ভোট গণনা শুরু হয়।

ওএমআর মেশিন দিয়ে ভোট গণনার প্রস্তুতি ছিল নির্বাচন কমিশনের। তবে কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থীদের আপত্তির কারণে ওএমআরের পরিবর্তে ভোট গণনা করা হয় হাতে। যে কারণে অতিরিক্ত সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব ও প্রক্টর একেএম রাশিদুল আলম।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভোট গণনার পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, ভোটগ্রহণ ২১টি আবাসিক হলে হলেও ভোট গণনা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে। ওই কক্ষটিও বেশি বড় নয়। আবার হাতে গণনার কারণে ‘অমানবিক পরিশ্রমের’ পাশাপাশি দীর্ঘ সময় লাগছে।

বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বশিরুজ্জামান খোকন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা যারা ভোটগ্রহণ ও গণনা কাজে ছিলাম তাদের প্রায় সবাই টানা দুই রাত প্রায় নির্ঘুম। তার আগে দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ ও তার আগের রাতে ভোট প্রস্তুতিতে অনেক রাত পর্যন্ত হলে থাকতে হয়েছে। গত রাত সাড়ে চারটায় আমাদের হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আমার একজন সহকর্মী ভোট গণনা করতে এসে মারা গেছেন, এটা বলে সহানুভূতি নিতে চাই না। মানুষ মাত্রই মরণশীল তো। তবে এরপরে স্বাভাবিক উদ্যম ও মানসিক শক্তি নিয়ে কাজ করাটা সহজ হয়নি আমাদের জন্য। এই সামর্থ্যের অভাবে ভোট গুণতে দেরি হওয়াতে যারা ক্ষুব্ধ তাদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আমার মৃত সহকর্মীর জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সামনে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা আক্তার বলেন, ‘মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছিল, যন্ত্রে ভোট গণনা করা হবে। কিন্তু করা হলো ম্যানুয়াল (হাতে গোনা) পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে যদি হল পর্যায়ে ভোট গণনা করা হতো, তাহলে ভোটের দিন রাত ১০টার মধ্যে বিভিন্ন হলের ফলাফল দেওয়া যেত। তার বদলে সিনেটে (নির্বাচন কমিশনের অফিস) ভোট গণনার জন্য নিয়ে আসা হয়।’

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সহকর্মীর মৃত্যুর দায় জাকসু নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন এড়াতে পারে না, সেটা এখানে বলে না রাখা হবে আমাদের প্রয়াত সহকর্মীর সাথে বেইমানি…। গত এক মাসে যে পরিমাণ অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাহীনতা ও ক্ষণে ক্ষণে নতুন সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছে/নিচ্ছে, তাতে করে ৩৩ বছর পর জাকসু করেছি নামক সাফল্যের পালক মুকুটে যোগ করা আর অন্য সব ফায়দা নিশ্চিত (যদি থাকে) করা ছাড়া জাকসুর অন্য কোন উদ্দেশ্য দেখি না।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত