স্ট্রিম প্রতিবেদক
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর। এদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ঘটে গেছে মর্মান্তিক এক ঘটনা। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গভীর রাতে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বর্তমানে নিষিদ্ধ-ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি।
এরপর কেটে গেছে ছয়টি বছর, এরমধ্যে বদলে গেছে অনেক কিছু। তবে দেশের প্রশ্নে আবরার ফাহাদের সাহস আর সংগ্রামকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে সারা দেশ। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা শিল্পকলায় একযোগে আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে আজ। ঢাকায় সবার জন্য উন্মুক্ত আয়োজনটি সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে উদ্বোধন করা হবে।
আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় তার জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান ‘আবরার ফাহাদ: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নয়া প্রতীক ও আমাদের সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘বিডিআর ম্যাসাকার দিবস’ প্রতিবছর বিশেষভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাৎবার্ষিকীতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
আজ বিকেল ৩টায় আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী চত্বরে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় আট স্তম্ভ উদ্বোধন করবেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। এনসিপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। স্মরণসভা ও আট স্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার অনুরোধও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এর আগে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে সর্বপ্রথম ৮ স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। যার নেতৃত্ব দেন আখতার হোসেন। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্দেশে তা ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়াও আট স্তম্ভ নির্মাণের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আখতার হোসেন ছাত্রলীগের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন। স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা ছিল ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলেও ওই উক্তি ব্যবহার করেছিলেন।
আট স্তম্ভের বিষয়গুলো হলো—সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা।
আখতার হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার আজ থেকে ছয় বছর আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। তাই আমরা এই স্থাপনাটির নাম দিয়েছিলাম আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করছি, আটটি স্তম্ভ আটটি বিষয়কে নির্দেশ করবে। এই আটটি বিষয় যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তা হলে আমরা একটি আগ্রাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি নিয়ে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এর জেরে পরের দিন ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার এক মাস পর ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আর প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। গত ১৬ মার্চ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তারা হলেন, মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) ও এস এম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
আবরার ফাহাদ ১৯৯৮ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বরকত উল্লাহ ও মায়ের নাম রোকেয়া খাতুন। আবরার কুষ্টিয়া মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ আবরার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পড়াশোনা চলাকালে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বর্তমান বুয়েটে অধ্যয়নরত।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর। এদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ঘটে গেছে মর্মান্তিক এক ঘটনা। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গভীর রাতে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে বর্তমানে নিষিদ্ধ-ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। দেশব্যাপী আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি।
এরপর কেটে গেছে ছয়টি বছর, এরমধ্যে বদলে গেছে অনেক কিছু। তবে দেশের প্রশ্নে আবরার ফাহাদের সাহস আর সংগ্রামকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে সারা দেশ। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা শিল্পকলায় একযোগে আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে আজ। ঢাকায় সবার জন্য উন্মুক্ত আয়োজনটি সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে উদ্বোধন করা হবে।
আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় তার জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান ‘আবরার ফাহাদ: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নয়া প্রতীক ও আমাদের সংস্কৃতি’ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘বিডিআর ম্যাসাকার দিবস’ প্রতিবছর বিশেষভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাৎবার্ষিকীতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
আজ বিকেল ৩টায় আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী চত্বরে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় আট স্তম্ভ উদ্বোধন করবেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। এনসিপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। স্মরণসভা ও আট স্তম্ভের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার অনুরোধও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এর আগে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে সর্বপ্রথম ৮ স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। যার নেতৃত্ব দেন আখতার হোসেন। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্দেশে তা ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়াও আট স্তম্ভ নির্মাণের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আখতার হোসেন ছাত্রলীগের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন। স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা ছিল ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলেও ওই উক্তি ব্যবহার করেছিলেন।
আট স্তম্ভের বিষয়গুলো হলো—সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা।
আখতার হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার আজ থেকে ছয় বছর আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। তাই আমরা এই স্থাপনাটির নাম দিয়েছিলাম আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করছি, আটটি স্তম্ভ আটটি বিষয়কে নির্দেশ করবে। এই আটটি বিষয় যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তা হলে আমরা একটি আগ্রাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারব।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি নিয়ে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এর জেরে পরের দিন ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার এক মাস পর ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় সব মিলিয়ে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। আর প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। গত ১৬ মার্চ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তারা হলেন, মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিই বিভাগ, ১৩তম ব্যাচ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৫তম ব্যাচ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৫তম ব্যাচ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (এমআই বিভাগ), সদস্য মোজাহিদুর রহমান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম (সিই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), শামীম বিল্লাহ (মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মাজেদুর রহমান মাজেদ (এমএমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর (মেকানিক্যাল, ১৭তম ব্যাচ), মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান (ইইই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), এস এম নাজমুস সাদাত (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (এমই বিভাগ, ১৭তম ব্যাচ), মিজানুর রহমান (ওয়াটার রিসোর্সেস, ১৬ ব্যাচ), শামছুল আরেফিন রাফাত (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ (কেমিকৌশল) ও এস এম মাহামুদ সেতু (কেমিকৌশল)।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (১৪তম ব্যাচ, সিই বিভাগ), গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (মেকানিক্যাল, তৃতীয় বর্ষ), আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সদস্য আকাশ হোসেন (সিই বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ) ও মোয়াজ আবু হোরায়রা (সিএসই, ১৭ ব্যাচ)।
আবরার ফাহাদ ১৯৯৮ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম বরকত উল্লাহ ও মায়ের নাম রোকেয়া খাতুন। আবরার কুষ্টিয়া মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ আবরার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। পড়াশোনা চলাকালে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বর্তমান বুয়েটে অধ্যয়নরত।
নির্বাচনে কারচুপি বা জালিয়াতি ঠেকাতে অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কার্যকর পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
২ মিনিট আগেসংগঠন হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেঢামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ভেতরে গেলে সহজেই বোঝা যায় রোগীর চাপ কতটা। বেড না পেয়ে মাটিতেই পাতা বিছানার সারি আর রোগী ও স্বজনদের ভিড়। রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই হাসপাতালই যেন হয়ে উঠেছে রোগ ছড়ানোর কেন্দ্র। ঢামেক হাসপাতাল চত্বরেই তৈরি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র।
২ ঘণ্টা আগেসমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে।
৩ ঘণ্টা আগে