leadT1ad

শেষ পর্যন্ত কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প

চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

তুফায়েল আহমদ
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৪৮
চলতি বছরের এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এআই জেনারেটেড ছবি।

আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক নির্বাহী আদেশে প্রায় ৭০টি দেশের পণ্যে নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।

এর আগে, চলতি বছরের ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। যদিও ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন কিছু বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে হওয়া চুক্তি প্রচারে ব্যস্ত। কিন্তু এখনো অনেক দেশের সঙ্গে কার্যকর চুক্তি হয়নি। অনেক দেশই রপ্তানি পণ্যে বাড়তি শুল্কের মুখোমুখি।

কোনও বাণিজ্য চুক্তি হয়নি, তবে এখনো বাড়তি শুল্কের হুমকিও কার্যকর হয়নি—এমন মাঝামাঝি অবস্থায়ও রয়েছে কিছু দেশ। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান এবং নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশ আছে এই অবস্থায়।

বাজারে অস্থিরতার কারণে ট্রাম্প দু’বার বাড়তি শুল্ক কার্যকর করার সময়সীমা পিছিয়েছিলেন। তবে গত বুধবার (৩০ জুলাই) প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন, ১ আগস্টের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এটি আমেরিকার জন্য একটি বড় দিন।

হুমকির শুল্ক

যেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়নি ও যারা বড় মাত্রায় শুল্কের হুমকির মুখে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির কারণ অর্থনৈতিক নয় বরং রাজনৈতিক বলেই মনে হচ্ছে।

ব্রাজিল

ব্রাজিলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল থেকে আমদানি করে কম, রপ্তানি করে বেশি। চলতি মাসের শুরুতে ব্রাজিল থেকে আসা পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্রাজিল আক্রমণ করছে এবং ব্রাজিলের ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা দেওয়ারও অভিযোগ করেন ট্রাম্প।

আমেরিকা মহাদেশের দুটি বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে দুই পক্ষের জন্য ক্ষতিকর সম্পর্ক তৈরি না করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। একই সঙ্গে লুলা বলেন, তিনি প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমালোচনা করতে ভয় পান না।

ভারত

ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়া থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কিনছে বলে অতিরিক্ত ‘শাস্তি’ পাবে দেশটি।

দিল্লিকে ‘বন্ধু’ বলে দাবি করলেও ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের “বিরাট” বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

মেক্সিকো

ট্রাম্প মেক্সিকোর পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে বলেন, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে মেক্সিকো উল্লেখযোগ্য কিছু করছে না। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। দেশটির প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাম বলেছিলেন, ১ আগস্টের সময়সীমার আগেই একটি চুক্তি হতে পারে।

কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা ১ আগস্টের আগে শেষ হবে না। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্য চুক্তির আওতায় না থাকা আমদানি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

বুধবার (৩০ জুলাই) ট্রাম্প আরও বলেন, কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাণিজ্য চুক্তি করা আরও কঠিন হয়ে গেছে।

চীন

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে নিজস্ব শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি মার্কিন প্রতিরক্ষা ও হাইটেক শিল্পে ব্যবহৃত বিরল খনিজ সম্পদ ও উপাদান বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

পরে কূটনৈতিক আলোচনায় শুল্ক বৃদ্ধির সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় দুই দেশ। তবে এই সপ্তাহের আলোচনায় অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও কোনো সমাধান হয়নি।

চুক্তিসমূহ

কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা শেষে ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে, ফলে ওই দেশগুলোর রপ্তানি পণ্যে আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানো হচ্ছে। অন্যদিকে, আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে, যার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। ট্রাম্প জানিয়েছেন, সময়সীমার মধ্যে চুক্তি না হলে শুল্ক আরোপ কার্যকর করা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া

গত বুধবার (৩০ জুলাই) ট্রাম্প ঘোষণা করেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে আরোপ হওয়া ৩০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে এবং পাশাপাশি কোরিয়া ১০০ বিলিয়ন মূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনবে।

ইইউ

গত ২৭ জুলাই চুক্তিতে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ অটোমোবাইল খাত, ফার্মাসিউটিক্যালস ও সেমিকন্ডাক্টরসহ পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তির অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৭৫০ বিলিয়ন মূল্যের জ্বালানি কিনতে ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে।

পরে সোমবার (২৮ জুলাই) ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেঞ্জামিন হ্যাডাদ বলেন এই চুক্তি ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’।

জাপান

জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যের শুল্ক ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে জাপানি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য থাকবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই চুক্তির অধীনে জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগ করবে।

ভিয়েতনাম

জুলাই মাসের শুরুর দিকে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। চুক্তি অনুসারে ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত ৪৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের প্রধান রপ্তানি বাজার।

ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যে আরোপিত ৩২ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। ওয়াশিংটনের মতে, চুক্তি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব পণ্য ইন্দোনেশিয়ায় শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশ করতে পারবে। শুল্ক কমানোর শর্তে আরও বেশি মার্কিন তেল ও শিল্পপণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।

পাকিস্তান

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। এই চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানের ওপর আরোপিত ২৯ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম শুল্ক পাকিস্তানের ওপর আরোপিত হয়েছে। পাশাপাশি এই চুক্তির অধীনে ওয়াশিংটন দেশটির তেলক্ষেত্র উন্নয়নে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যে নতুন করে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর দুই দফা আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ।

তবে আজ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দফার শুল্ক আলোচনা শেষ হওয়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়, আলোচনার পর আরোপিত শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে বিশ্ববাণিজ্যে এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। ট্রাম্পের এই শুল্ক-পাল্টা শুল্ক, চুক্তি—সব মিলিয়ে একটি বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না বলেই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, ইউএনবি

Ad 300x250

মেদভেদেভের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, রাশিয়ার কাছাকাছি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো গোপন চুক্তি হয়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

মাহফুজের আশা ৫ আগস্টের মধ্যেই ঘোষণাপত্র, আসিফ বললেন, আসছে…

চবি ছাত্রী হলে রাত ১০টার আগে না ফিরলে সিট বাতিলের হুমকি

দেশ নির্মাণের নতুন লড়াই শুরু হয়েছে : মির্জা ফখরুল

সম্পর্কিত