leadT1ad

কুকুর চালাচ্ছে স্কুটার, স্কেটবোর্ডিংও করতে পারে!

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৪
কুকরটি ঘরের ঘরের লাইট জ্বালাতে পারে, এমনকি আবর্জনাও যথাস্থানে ফেলে আসতে পারে। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

চীনের সিচুয়ান প্রদেশের মেইশান শহরে এক বিস্ময়কর ও হৃদয়গ্রাহী দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ বছর বয়সী একটি কালো ল্যাব্রাডর রিট্রিভার কুকুরকে একটি পরিবর্তিত চারচাকার মোবিলিটি স্কুটার চালাতে দেখা যায়। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয় ডৌইন (চীনের টিকটক), ইনস্টাগ্রাম ও এক্স-এ।

ভিডিওতে দেখা যায়, ‘ওয়েনঝি’ (বা ‘ওয়ানজি’) নামের কুকুরটি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পা দিয়ে স্টিয়ারিং ধরে স্কুটার চালাচ্ছে এবং উচ্ছ্বাসে ঘেউ ঘেউ করছে। পথচারীরা অবাক হয়ে দৃশ্যটি ধারণ করে। পরে ট্রাফিক পুলিশ এসে হস্তক্ষেপ করে।

ওয়েনঝির মালিক ও প্রশিক্ষক পেশাদার প্রাণী প্রশিক্ষক চেন। তিনি জানান, এটি শুধু একটি প্রদর্শন ছিল। ঘটনার সময় কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাতের ঘটনা ঘটেনি। কর্তৃপক্ষ চেনকে শুধু মৌখিক সতর্কতা দেয়।

চেন জানান, কুকুরটি স্কেটবোর্ডও চালাতে পারে, জ্বালাতে পারে ঘরের লাইট। এমনকি বাড়ির আবর্জনাও যথাস্থানে ফেলে আসতে পারে।

ঘটনার বিবরণ

গত ১৮ অক্টোবর মেইশান শহরের এক ব্যস্ত সড়কে দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। বৃদ্ধদের জন্য তৈরি একটি সাদা চারচাকা ইলেকট্রিক স্কুটারের চালকের আসনে দাঁড়িয়ে ছিল কালো ল্যাব্রাডরটি। সে সামনের পা দিয়ে স্টিয়ারিং ধরে ধীরে ধীরে সোজা পথে স্কুটার চালাচ্ছিল। পাশ দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিল, আর কুকুরটি আনন্দে ঘেউ ঘেউ করছিল।

এক পথচারী অবিশ্বাসভরে ভিডিওটি ধারণ করে বলে ওঠেন, ‘আমি কী দেখছি! কুকুর গাড়ি চালাচ্ছে!’ প্রায় এক মিনিটের এই ভিডিওতে দেখা যায়, কুকুরটি নিজেই পায়ের জন্য উপযোগীভাবে তৈরি করা প্যাডেল চেপে গতি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ছাড়লে স্কুটার থেমে যাচ্ছে।

কুকুরটির সঙ্গে তার মালিক চেনকে দেখা যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।
কুকুরটির সঙ্গে তার মালিক চেনকে দেখা যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত।

মালিক চেন প্রথমে পাশে ছিলেন, পরে কুকুরটির স্বয়ংক্রিয় দক্ষতা দেখাতে কিছুটা দূরে দাঁড়ান, তবে নিরাপত্তার জন্য কাছে থাকেন।

ভিডিওটি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুটারটি থামায়। তারা চেনকে সতর্ক করে জানায়, ‘কুকুর রাস্তা দিয়ে যানবাহন চালাতে পারে না।’তবে স্কুটারের গতি কম (ঘণ্টা প্রায় ১০ কিলোমিটারের নিচে) এবং এটি মোটরযান নয় বলে কোনো জরিমানা করা হয়নি।

কুকুর ও মালিক

ওয়েনঝি শান্ত, বুদ্ধিমান ও প্রশিক্ষিত একটি ল্যাব্রাডর। তার মালিক চেন একজন পেশাদার প্রাণী প্রশিক্ষক। তিনি একটি পোষাপ্রাণী ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনা করেন, যেখানে কুকুর ও বিড়ালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং মালিকরা চাইলে সেখানে তাদের প্রাণী রাখতেও পারেন।

চেন গত এক মাসে স্কুটারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কুকুরটির উপযোগী করে পরিবর্তন করেন। এখন ওয়েনঝি একাই সহজে এটি চালাতে পারে। স্কুটার ছাড়াও সে স্কেটবোর্ড চালানো, লাইটের সুইচ অন-অফ করা এবং ঘরের ময়লা ফেলার মতো কাজও জানে।

চেন বলেন, ‘ওর বুদ্ধি ও শান্ত স্বভাবের জন্য আশপাশের সবাই তাকে চেনে।’ এই ঘটনাটি চীনে দ্রুত বেড়ে ওঠা পোষা প্রাণী সংস্কৃতির প্রতিফলন। শহরের তরুণ প্রজন্ম এখন প্রাণীদের পরিবারের সদস্যের মতো ভালোবাসে, ফলে উন্নত প্রশিক্ষণ ও আচরণগত প্রোগ্রামের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

মালিক চেন প্রথমে পাশে ছিলেন, পরে কুকুরটির স্বয়ংক্রিয় দক্ষতা দেখাতে কিছুটা দূরে দাঁড়ান। ছবি: সংগৃহীত।
মালিক চেন প্রথমে পাশে ছিলেন, পরে কুকুরটির স্বয়ংক্রিয় দক্ষতা দেখাতে কিছুটা দূরে দাঁড়ান। ছবি: সংগৃহীত।

জনপ্রতিক্রিয়া ও ভাইরাল সেনসেশন

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোটি কোটি দর্শক তা দেখেন। ডৌইনে ভিডিওটি লাখ লাখবার শেয়ার হয়। ব্যবহারকারীরা ওয়েনঝির ‘ড্রাইভিং দক্ষতা’র প্রশংসা করে তাকে ‘সিচুয়ানের সবচেয়ে কুল কুকুর’ বলে আখ্যা দেন।

দ্রুতই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বিষয়টি তুলে ধরে। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও এক্স-এ #DogDriver এবং #LabradorScooter হ্যাশট্যাগগুলো ট্রেন্ড করে।

মানুষের প্রতিক্রিয়া বেশিরভাগই হাস্যরসাত্মক ও ইতিবাচক ছিল। কেউ কেউ মজা করে মন্তব্য করেন, ‘এই কুকুর কিছু মানুষের চেয়েও বেশি দায়িত্বশীল চালক!’ কেউ আবার আইনগত ও নিরাপত্তা নিয়ে হালকা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তবে সামগ্রিকভাবে এটি চেনের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক প্রচার বয়ে আনে। মেইশানের স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, ওয়েনঝির জনপ্রিয়তা আশপাশের শহরগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বাসিন্দা এর আগেও তার নানা ‘প্রদর্শনী’ দেখেছেন বলে জানান।

এই ঘটনা চীনের পরিবর্তিত পোষা প্রাণী সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছে। ছবি: সংগৃহীত।
এই ঘটনা চীনের পরিবর্তিত পোষা প্রাণী সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছে। ছবি: সংগৃহীত।

আইন ও নিরাপত্তা

চীনের সড়ক আইন অনুযায়ী, বৃদ্ধদের ব্যবহারের জন্য তৈরি মোবিলিটি স্কুটার সীমিত গতিতে রাস্তায় চলতে পারে, তবে সেটি মানুষের নিয়ন্ত্রণেই থাকতে হয়। কোনো প্রাণীকে এমন যান চালাতে দেওয়া আইনি ধোঁয়াশা তৈরি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে কঠোর বিধিনিষেধের পথ খুলে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রশিক্ষিত প্রাণীর জন্য এ ধরনের কার্যকলাপ সরাসরি নিষিদ্ধ না হলেও, জনসড়কে মানুষের তত্ত্বাবধানই প্রধান।

ওয়েনঝির ঘটনায় কেবল সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি একটি নিরীহ প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে যে, এমন ভাইরাল কর্মকাণ্ডে যেন প্রাণীদের অতিরিক্ত পরিশ্রমে বাধ্য না করা হয়।

ওয়েনঝির স্কুটার চালানোর এই গল্প পোষাপ্রাণী বিষয়ক উদ্ভাবন, মানব-প্রাণী সম্পর্ক ও ডিজিটাল যুগের বিনোদনের এক অনন্য মিশ্রণ। এটি শুধু মানুষের মুখে হাসি এনে দেয়নি, বরং চীনের পরিবর্তিত পোষাপ্রাণী সংস্কৃতিকেও তুলে ধরেছে।

চেন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি আরও নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমন প্রদর্শনী আয়োজন করবেন। আপাতত, এই চারপেয়ে ‘চালক’ প্রমাণ করে দিয়েছে—বুদ্ধিমত্তা প্রজাতিনির্ভর নয়, তার একেকটি ঘেউ ঘেউ যেন সেই বার্তারই প্রতিধ্বনি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত