leadT1ad

সিডনির সমুদ্র সৈকতে বন্দুক হামলায় নিহত বেড়ে ১৫, আহত ৪০

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেন আহমেদ আল আহমেদ নামের আরেক মুসলিম। ছবি: সংগৃহীত।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি সমুদ্র সৈকতে বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ ১৫ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এ ছাড়া আহতের সংখ্যাও ৪০ জন বলে জানা গেছে। গুরুতর আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উপলক্ষে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন শত শত মানুষ।

অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাদের মতে, হামলার পেছনে ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব ছিল। এটি দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বন্ডি বিচে হানুকা উৎসবের সূচনা উপলক্ষে বড় ধরনের জনসমাগম হয়েছিল। অনুষ্ঠান চলাকালে মেনোরাহ প্রজ্বলনের পরপরই হামলা শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হঠাৎ করেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলাকারীরা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালায়।

পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই এক হামলাকারী নিহত হয়। পুরো ঘটনা কয়েক মিনিট ধরে চলে। বেঁচে যাওয়া মানুষজন সমুদ্রের দিকে কিংবা কাছাকাছি ভবনে দৌড়ে আশ্রয় নেন।

নিহতদের সংখ্যা প্রথমে ১১ থেকে ১২ জন বলা হয়েছিল। পরে তা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়ায়। নিহতদের মধ্যে ছিল ১০ বছরের এক কন্যাশিশু, একজন রাব্বি এবং অন্যান্য বেসামরিক নাগরিক। পুলিশের গুলিতে এক হামলাকারীও নিহত হয়। এতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা কিছু হিসাবে ১৬ ধরা হচ্ছে।

আহত অন্তত ৪০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সেন্ট ভিনসেন্টস ও রয়্যাল প্রিন্স আলফ্রেড হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য। অনেকের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক মানুষও রয়েছেন। এই অনুষ্ঠানটি ইহুদি সম্প্রদায়ের উদ্যোগে আয়োজিত হওয়ায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী।

পুলিশ এই ঘটনায় হামলাকারী হিসেবে নাভিদ আকরাম (২৪) এবং তার বাবা সাজিদ আকরাম (৫০) নামে দুজনকে শনাক্ত করেছে। তারা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বলে জানা গেছে। পুলিশি অভিযানে বাবা নিহত হন। ছেলে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরও অস্ত্র পাওয়া যায়। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন জানান, অস্ত্রগুলো বৈধভাবে বাবার নামে লাইসেন্সকৃত ছিল। হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে এটি ইহুদিবিদ্বেষ থেকে উৎসারিত বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

এক হামলাকারীকে নিজের জীবন বাজি রেখে প্রতিহত করেন আহমেদ আল আহমেদ নামের আরেক মুসলিম। ফলে বহু মানুষ বেঁচে যায়। আর নয়তো হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারতো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাদা শার্ট ও প্যান্ট পরা ৪৩ বছর বয়সী ফলের দোকানি আহমেদ আল আহমেদ একটি গাড়ির আড়াল থেকে হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে কালো শার্ট পরা এক সশস্ত্র ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই ব্যক্তির হাতে একটি রাইফেল ছিল। পেছন দিক থেকে হামলে পড়ে আহমেদ দক্ষতার সঙ্গে অস্ত্রটি কেড়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

হামলকারীর কাছে বন্দুক কেড়ে নিয়ে তার দিকেই তাক করেন আহমেদ। পরে দূরে থাকা আরেক বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন তিনি।
হামলকারীর কাছে বন্দুক কেড়ে নিয়ে তার দিকেই তাক করেন আহমেদ। পরে দূরে থাকা আরেক বন্দুকধারীর গুলিতে আহত হন তিনি।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, নিরস্ত্র হওয়ার পর কালো শার্ট পরা ওই ব্যক্তি একটি সেতুর দিকে পিছিয়ে যেতে থাকেন, যেখানে আরেকজন হামলাকারী অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বুঝে আহমেদ আল আহমেদ একপর্যায়ে রাইফেলটি মাটিতে রেখে দেন। জীবন বাজি রেখে তার এই সাহসী পদক্ষেপে বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নিরস্ত্র করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন আহমেদ আল আহমেদ নামের ওই পথচারী। তাঁর বীরোচিত পদক্ষেপের কারণে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা ও দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এক হামলকারীকে প্রতিহত করার সময় অন্য বন্দুকধারীর হামলায় গুরুতর আহত হন আহমেদ। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে উঠছেন।

অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম ৭নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আহমেদের নিউ সাউথ ওয়েলসের সাদারল্যান্ড শহরে ফলের দোকান রয়েছে। কাঁধে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে।

হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহমেদ আল আহমেদের সাহসী পদক্ষেপ ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, একজন মুসলিম নাগরিকের এই সাহসিকতা ও মানবিকতা আবারও প্রমাণ করেছে যে সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষা করা কোনো ধর্মের বিপরীত নয়, বরং মানবতারই প্রতিচ্ছবি।

আততায়ীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে তার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেওয়া আহমেদকে ‘রিয়েল হিরো’ অর্থাৎ ‘প্রকৃত নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স।

ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ওই ব্যক্তির সাহসিকতার প্রশংসা করেন প্রিমিয়ার। তিনি তাকে ‘সত্যিকারের নায়ক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভিডিওটি তার দেখা সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্যগুলোর একটি। মিনসের ভাষায়, তার সাহসিকতার কারণেই ওই রাতে অসংখ্য মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই ঘটনাকে “আমাদের জাতির জন্য এক অন্ধকার মুহূর্ত” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া ঘৃণা ও সহিংসতায় বিভক্ত হবে না। এসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা হবে।

সারা দেশে ইহুদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালের পোর্ট আর্থার হত্যাকাণ্ডের পর কঠোর অস্ত্র আইন থাকা সত্ত্বেও বৈধ অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এটিকে ইহুদিদের ওপর নির্মম আক্রমণ বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দিল্লি, মুম্বাই ও বেঙ্গালুরুর মতো শহরে ইহুদি স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য হুমকির বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। হানুকা উপলক্ষে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত