স্ট্রিম ডেস্ক

প্রায় ২০ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়ডায় একটি বাংলো থেকে ১৯ জন নারী ও শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। বাংলোটি ‘হাউজ অব হররস’ নামে পরিচিত হয়। এখন আবার মামলাটি আলোচনায় এসেছে, কারণ দোষী সাব্যস্ত হওয়া শেষ ব্যক্তি সুরিন্দর কোহলি মুক্তি পেয়েছেন।
১২ নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কোহলিকে শেষ বাকি থাকা মামলায় খালাস দেয়। আদালত মেনে নেয় যে তার স্বীকারোক্তি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছিল। তিনি নরমাংস ভক্ষণ ও মৃতদেহকে যৌন নিপীড়নের স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন।
মামলাটি শুরু হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে। নয়ডার একটি বাংলোতে নারী ও শিশুদের হত্যা, দেহ টুকরো করা এবং কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা শনাক্ত করে পুলিশ। ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পান্ধের ও তার গৃহকর্মী সুরিন্দর কোহলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ির কাছে মানবদেহের অংশ পাওয়া গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ঘটনা জানাজানি হতেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ করে যে দুই বছর ধরে শিশু নিখোঁজের অভিযোগ উপেক্ষা করেছে পুলিশ। মামলাটি ভারতের গভীর সামাজিক বৈষম্যও উন্মোচিত করে। কারণ ঘটনা ঘটেছিল ধনী এলাকার একটি বাংলোতে, আর ভুক্তভোগীরা ছিলেন পাশের বস্তি ‘নিথারি’-র দরিদ্র অভিবাসী পরিবারের সদস্য।
দুজনই ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং বহু বছর মৃত্যুদণ্ডের প্রহর গুনে কাটান। ২০২৩ সালে প্রমাণের অভাবে পান্ধের খালাস পান। এখন তার কর্মচারী কোহলিও মুক্ত হয়েছেন। ফলে ভারতের অন্যতম ভয়াবহ এই অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া কার্যত শেষ হলো।
রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর বিবিসি নিথারি এলাকায় যায়। দেখা যায়, বেশিরভাগ ভুক্তভোগীর পরিবার আর সেখানে থাকে না। যারা রয়ে গেছে, তারা রায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে এবং একই প্রশ্ন করছে—‘যদি পান্ধের ও কোহলি না করে থাকে, তবে আমাদের সন্তানদের কে হত্যা করেছে?’
মুক্তির পর মনিন্দর সিং পান্ধের সাক্ষাৎকারে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। কোহলি এখনো প্রকাশ্যে আসেননি। তবে তার আইনজীবী যুগ মোহিত চৌধুরী বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ জাল।’
তিনি বলেন, ‘১৯ বছরে ১৩টি মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১২টিতে আগেই তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। শেষ মামলায় পাঁচটি আদালত তাকে দোষী বলেছিল। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ও বাতিল করেছে।’
চৌধুরীর দাবি, অভিযোগ ছিল অত্যন্ত গুরুতর, কিন্তু প্রমাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ‘এই গরিব মানুষটিকে এক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য ফাঁসানো হয়েছে। একটিও প্রমাণ ছিল না যা দণ্ড দেওয়ার যৌক্তিকতা তৈরি করত। আসল অপরাধীকে রক্ষা করতেই সিবিআই জাল প্রমাণ তৈরি করেছে’—তিনি এমন দাবি করেন। সিবিআই এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।
বিবিসি উত্তর প্রদেশ পুলিশের কাছেও বিস্তারিত জানতে চেয়েছে, তবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

নিথারির মানুষের ক্ষোভ ও হতাশা
রায় মেনে নিতে নিথারির মানুষ খুবই কষ্টে পড়েছে। নিহত শিশু জ্যোতির মা সুনীতা কনোজিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার প্রশ্ন, ‘যদি তারা নির্দোষ হয়, তবে ১৮ বছর জেলে ছিল কীভাবে?’ ২০০৫ সালে গ্রীষ্মে নিখোঁজ হওয়া জ্যোতির দেহ পরে ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়। সুনীতা বলেন, ‘যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে, ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করবেন না।’
সুনীতার স্বামী ঝাব্বু লাল কনোজিয়া ছিলেন এই সিরিয়াল হত্যাকাণ্ড উন্মোচনের অন্যতম ব্যক্তি। কোহলির খালাসের খবর শুনে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং বহু বছরের সংগ্রহ করা মামলার সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার ধনী পরিবারের পোশাক ইস্ত্রি করতেন। সেই কাজ করতেন মনিন্দর সিং পান্ধেরের বাড়ির ঠিক সামনে। মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর ১৫ মাস তিনি নিয়মিত থানায় যেতেন। তিনি বলেন, ‘কেউ নিখোঁজ হলে তার কোনো শেষ নেই। তা ক্ষতের মতো পচতে থাকে। সবসময় ভাবাতে থাকে—কোথায় আছে, কোন অবস্থায় আছে?’
২০০৬ সালের এক শীতের দিনে তিনি নিজে নর্দমায় নেমে খুলি, হাড় ও দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেন। তার দাবি, সেখানে পাওয়া খুলির সংখ্যা আদালতে যাওয়া ১৯ মামলার চেয়ে বহু বেশি ছিল।
আজও তিনি একই প্রশ্ন করেন—‘যদি তারা দোষী না হয়, তবে কে? আমাদের সন্তানদের সঙ্গে কী ঘটেছিল?’
দুজনের খালাস তার দীর্ঘদিনের লড়াইকে অর্থহীন করে দিয়েছে এবং পুরোনো ক্ষত আবার উন্মুক্ত করেছে। তিনি বলেন, এখন আর তার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই। ‘আমি বুড়ো মানুষ। আমি ভেঙে পড়েছি।’

আদালতের রায়
সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে বলে যে নিথারি হত্যাকাণ্ড ছিল ভয়াবহ, আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর যন্ত্রণা অপরিমেয়। আদালত সুরিন্দর কোহলিকে খালাস দেয়। বিচারকদের মতে, পূর্ববর্তী আদালতগুলো মূলত তার স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বাস করেনি যে ওই স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়েছিল।
তারা উল্লেখ করেন যে স্বীকারোক্তিটি নেওয়া হয়েছিল ৬০ দিন হেফাজতে রাখার পর এবং ‘এটি দেখে মনে হয়েছে, তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ স্বীকারোক্তির সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিও গুরুতর সন্দেহ তৈরি করে।
আদালত পুলিশ ও তদন্ত সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনা করে। তাদের মতে, তদন্ত ছিল ত্রুটিপূর্ণ, অবহেলাপূর্ণ এবং অযথা বিলম্বে ভরা। এর ফলে ‘আসল অপরাধী’কে কখনও শনাক্ত করা যায়নি। তদন্তকারীরা ‘সহজ পথ’ বেছে নিয়েছিল—গরিব একজন গৃহকর্মীর ওপর দোষ চাপিয়ে তাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
রায়ে আরও বলা হয়, তদন্তকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো খতিয়ে দেখেনি। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সরকারি কমিটি ‘অঙ্গ পাচার’-এর সম্ভাব্য দিকটি তুলে ধরেছিল। তখনকার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে দেহগুলো অত্যন্ত নিখুঁত অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে কাটা হয়েছিল।

পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ঝাব্বু লালের মতে, ‘যতক্ষণ না দায়ী পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হবে, ততক্ষণ ন্যায়বিচার মিলবে না।’নিথারিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন নয়। ভুক্তভোগী শিশুদের অভিভাবকরা যখন থানায় যেতেন, পুলিশ বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে বলত, তারা নিশ্চয়ই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।
নিহত শিশু রচনার বাবা পাপ্পু লাল জানান, ১০ এপ্রিল ২০০৬-এ তার মেয়ে দাদা-দাদির বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। দুই বাড়ির দূরত্ব ছিল মাত্র দুটি বাড়ির ফাঁক। তারা অনেক খুঁজেও না পেয়ে পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ বলে, আট বছর বয়সী রচনা নাকি প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
পাপ্পু লাল জানান, তিনি অন্য শহরেও গিয়েছিলেন মেয়েকে খুঁজতে। আট মাস পর ডি-৫ নম্বর বাংলোর পেছনের গলিতে রচনার পোশাক ও স্যান্ডেল পাওয়া গেলে তার খোঁজ শেষ হয়।
প্রথম দফায় খুলিগুলো পাওয়ার পর স্থানীয় মানুষরা বাড়িটিতে হামলা চালায় এবং পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দুইজন শীর্ষ কর্মকর্তা বদলি হন, ছয়জন পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হন। এরপর মামলাটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে যায়।
পাপ্পু লাল বলেন, ‘পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে রচনা বাঁচতে পারত। আরও অনেক শিশু বাঁচত।’
২০০৬ সালে এলাকার রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরুণা অরোরা বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এখন আর কেউ কি বিচার ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে পারে?’ তিনি জানান, শিশু নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ থেকে তিনি উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের ও জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু সব শিশুই গরিব পরিবারের ছিল, কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। কেবল দেহাবশেষ পাওয়া যাওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ এ সম্পর্কেও কোনো মন্তব্য করেনি।

পুলিশকে খুঁজে বের করতেই হবে কে হত্যাকারী
পাপ্পু লাল ভুক্তভোগী শিশুদের স্মৃতিবহ স্থানগুলো দেখাতে আমাদের নিয়ে যান। স্কোয়াট-আকৃতির ডি-৫ বাংলোটি এখন জীর্ণ, আশেপাশের সুশোভিত বাড়িগুলোর মাঝে বেমানানভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত এই বাড়ির দেয়ালে ২০১৪ সালের অগ্নিকাণ্ডের কালো দাগ রয়ে গেছে। প্রবেশপথ ইট-কাদা দিয়ে সধারণভাবে বন্ধ করা। সামনের সীমানার উপর দিয়ে ঝোপঝাড় আর বোগেনভেলিয়া গাছ বেড়ে উঠেছে। বাড়ির বাইরের খোলা নর্দমায় কালচে ময়লার স্রোতে ভাসছে প্লাস্টিক ব্যাগ ও বোতল, বাতাসে টিকে থাকা দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
বাড়ির পেছনে গিয়ে পাপ্পু লাল দেখান কোথায় দেহাবশেষ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনের ভয়াবহতা আমি ভুলতে পারি না।’ তবে তিনি লড়াই ছাড়তে চান না। ‘আমি আবার পুলিশে অভিযোগ করব। তাদের খুঁজে বের করতেই হবে—কে আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে।’
এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে চান। তার দাবি, সরকারেরও দায়িত্ব আছে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের সন্তানরা কি ভারতের সন্তান নয়?’
ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনগত সহায়তা দেওয়া ‘বেটার ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন’-এর অনুপম নাগোলিয়া বলেন, এখন বিচার পাওয়ার পথ প্রায় শেষ। ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ বেঞ্চ রায় দিয়েছে। এখন আর কোথাও তারা আপিল করতে পারবে বলে মনে হয় না।’
তাহলে পরিবারগুলো কী করবে? তিনি বলেন, ‘এখন তাদের একমাত্র পথ হলো কান্না, কষ্ট ও শোক পালন।’
কিছু আইনি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পরিবারগুলোর শেষ বিকল্প হতে পারে—সুপ্রিম কোর্টে পুনঃতদন্তের আবেদন করা। তবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন লোকুর মনে করেন, এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেটিও কার্যকর হবে না। ‘কারণ এতদিনে প্রমাণ বিলীন হয়ে গেছে। পুনঃতদন্ত কার্যত অসম্ভব।’
সূত্র: বিবিসি

প্রায় ২০ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের নয়ডায় একটি বাংলো থেকে ১৯ জন নারী ও শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। বাংলোটি ‘হাউজ অব হররস’ নামে পরিচিত হয়। এখন আবার মামলাটি আলোচনায় এসেছে, কারণ দোষী সাব্যস্ত হওয়া শেষ ব্যক্তি সুরিন্দর কোহলি মুক্তি পেয়েছেন।
১২ নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কোহলিকে শেষ বাকি থাকা মামলায় খালাস দেয়। আদালত মেনে নেয় যে তার স্বীকারোক্তি নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছিল। তিনি নরমাংস ভক্ষণ ও মৃতদেহকে যৌন নিপীড়নের স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন।
মামলাটি শুরু হয় ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে। নয়ডার একটি বাংলোতে নারী ও শিশুদের হত্যা, দেহ টুকরো করা এবং কিছু ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনা শনাক্ত করে পুলিশ। ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পান্ধের ও তার গৃহকর্মী সুরিন্দর কোহলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বাড়ির কাছে মানবদেহের অংশ পাওয়া গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ঘটনা জানাজানি হতেই দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিহতদের পরিবার অভিযোগ করে যে দুই বছর ধরে শিশু নিখোঁজের অভিযোগ উপেক্ষা করেছে পুলিশ। মামলাটি ভারতের গভীর সামাজিক বৈষম্যও উন্মোচিত করে। কারণ ঘটনা ঘটেছিল ধনী এলাকার একটি বাংলোতে, আর ভুক্তভোগীরা ছিলেন পাশের বস্তি ‘নিথারি’-র দরিদ্র অভিবাসী পরিবারের সদস্য।
দুজনই ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং বহু বছর মৃত্যুদণ্ডের প্রহর গুনে কাটান। ২০২৩ সালে প্রমাণের অভাবে পান্ধের খালাস পান। এখন তার কর্মচারী কোহলিও মুক্ত হয়েছেন। ফলে ভারতের অন্যতম ভয়াবহ এই অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া কার্যত শেষ হলো।
রায় ঘোষণার কয়েক দিন পর বিবিসি নিথারি এলাকায় যায়। দেখা যায়, বেশিরভাগ ভুক্তভোগীর পরিবার আর সেখানে থাকে না। যারা রয়ে গেছে, তারা রায়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে এবং একই প্রশ্ন করছে—‘যদি পান্ধের ও কোহলি না করে থাকে, তবে আমাদের সন্তানদের কে হত্যা করেছে?’
মুক্তির পর মনিন্দর সিং পান্ধের সাক্ষাৎকারে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। কোহলি এখনো প্রকাশ্যে আসেননি। তবে তার আইনজীবী যুগ মোহিত চৌধুরী বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ জাল।’
তিনি বলেন, ‘১৯ বছরে ১৩টি মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১২টিতে আগেই তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। শেষ মামলায় পাঁচটি আদালত তাকে দোষী বলেছিল। আজ সুপ্রিম কোর্ট সেই রায়ও বাতিল করেছে।’
চৌধুরীর দাবি, অভিযোগ ছিল অত্যন্ত গুরুতর, কিন্তু প্রমাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ‘এই গরিব মানুষটিকে এক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য ফাঁসানো হয়েছে। একটিও প্রমাণ ছিল না যা দণ্ড দেওয়ার যৌক্তিকতা তৈরি করত। আসল অপরাধীকে রক্ষা করতেই সিবিআই জাল প্রমাণ তৈরি করেছে’—তিনি এমন দাবি করেন। সিবিআই এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।
বিবিসি উত্তর প্রদেশ পুলিশের কাছেও বিস্তারিত জানতে চেয়েছে, তবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

নিথারির মানুষের ক্ষোভ ও হতাশা
রায় মেনে নিতে নিথারির মানুষ খুবই কষ্টে পড়েছে। নিহত শিশু জ্যোতির মা সুনীতা কনোজিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার প্রশ্ন, ‘যদি তারা নির্দোষ হয়, তবে ১৮ বছর জেলে ছিল কীভাবে?’ ২০০৫ সালে গ্রীষ্মে নিখোঁজ হওয়া জ্যোতির দেহ পরে ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত হয়। সুনীতা বলেন, ‘যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে, ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করবেন না।’
সুনীতার স্বামী ঝাব্বু লাল কনোজিয়া ছিলেন এই সিরিয়াল হত্যাকাণ্ড উন্মোচনের অন্যতম ব্যক্তি। কোহলির খালাসের খবর শুনে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন এবং বহু বছরের সংগ্রহ করা মামলার সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার ধনী পরিবারের পোশাক ইস্ত্রি করতেন। সেই কাজ করতেন মনিন্দর সিং পান্ধেরের বাড়ির ঠিক সামনে। মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর ১৫ মাস তিনি নিয়মিত থানায় যেতেন। তিনি বলেন, ‘কেউ নিখোঁজ হলে তার কোনো শেষ নেই। তা ক্ষতের মতো পচতে থাকে। সবসময় ভাবাতে থাকে—কোথায় আছে, কোন অবস্থায় আছে?’
২০০৬ সালের এক শীতের দিনে তিনি নিজে নর্দমায় নেমে খুলি, হাড় ও দেহের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেন। তার দাবি, সেখানে পাওয়া খুলির সংখ্যা আদালতে যাওয়া ১৯ মামলার চেয়ে বহু বেশি ছিল।
আজও তিনি একই প্রশ্ন করেন—‘যদি তারা দোষী না হয়, তবে কে? আমাদের সন্তানদের সঙ্গে কী ঘটেছিল?’
দুজনের খালাস তার দীর্ঘদিনের লড়াইকে অর্থহীন করে দিয়েছে এবং পুরোনো ক্ষত আবার উন্মুক্ত করেছে। তিনি বলেন, এখন আর তার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই। ‘আমি বুড়ো মানুষ। আমি ভেঙে পড়েছি।’

আদালতের রায়
সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে বলে যে নিথারি হত্যাকাণ্ড ছিল ভয়াবহ, আর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর যন্ত্রণা অপরিমেয়। আদালত সুরিন্দর কোহলিকে খালাস দেয়। বিচারকদের মতে, পূর্ববর্তী আদালতগুলো মূলত তার স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বাস করেনি যে ওই স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়েছিল।
তারা উল্লেখ করেন যে স্বীকারোক্তিটি নেওয়া হয়েছিল ৬০ দিন হেফাজতে রাখার পর এবং ‘এটি দেখে মনে হয়েছে, তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ স্বীকারোক্তির সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিও গুরুতর সন্দেহ তৈরি করে।
আদালত পুলিশ ও তদন্ত সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনা করে। তাদের মতে, তদন্ত ছিল ত্রুটিপূর্ণ, অবহেলাপূর্ণ এবং অযথা বিলম্বে ভরা। এর ফলে ‘আসল অপরাধী’কে কখনও শনাক্ত করা যায়নি। তদন্তকারীরা ‘সহজ পথ’ বেছে নিয়েছিল—গরিব একজন গৃহকর্মীর ওপর দোষ চাপিয়ে তাকে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
রায়ে আরও বলা হয়, তদন্তকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো খতিয়ে দেখেনি। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সরকারি কমিটি ‘অঙ্গ পাচার’-এর সম্ভাব্য দিকটি তুলে ধরেছিল। তখনকার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে দেহগুলো অত্যন্ত নিখুঁত অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে কাটা হয়েছিল।

পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ঝাব্বু লালের মতে, ‘যতক্ষণ না দায়ী পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হবে, ততক্ষণ ন্যায়বিচার মিলবে না।’নিথারিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন নয়। ভুক্তভোগী শিশুদের অভিভাবকরা যখন থানায় যেতেন, পুলিশ বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে বলত, তারা নিশ্চয়ই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।
নিহত শিশু রচনার বাবা পাপ্পু লাল জানান, ১০ এপ্রিল ২০০৬-এ তার মেয়ে দাদা-দাদির বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। দুই বাড়ির দূরত্ব ছিল মাত্র দুটি বাড়ির ফাঁক। তারা অনেক খুঁজেও না পেয়ে পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ বলে, আট বছর বয়সী রচনা নাকি প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
পাপ্পু লাল জানান, তিনি অন্য শহরেও গিয়েছিলেন মেয়েকে খুঁজতে। আট মাস পর ডি-৫ নম্বর বাংলোর পেছনের গলিতে রচনার পোশাক ও স্যান্ডেল পাওয়া গেলে তার খোঁজ শেষ হয়।
প্রথম দফায় খুলিগুলো পাওয়ার পর স্থানীয় মানুষরা বাড়িটিতে হামলা চালায় এবং পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দুইজন শীর্ষ কর্মকর্তা বদলি হন, ছয়জন পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হন। এরপর মামলাটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে যায়।
পাপ্পু লাল বলেন, ‘পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে রচনা বাঁচতে পারত। আরও অনেক শিশু বাঁচত।’
২০০৬ সালে এলাকার রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরুণা অরোরা বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এখন আর কেউ কি বিচার ব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখতে পারে?’ তিনি জানান, শিশু নিখোঁজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ থেকে তিনি উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের ও জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু সব শিশুই গরিব পরিবারের ছিল, কেউ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। কেবল দেহাবশেষ পাওয়া যাওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশ এ সম্পর্কেও কোনো মন্তব্য করেনি।

পুলিশকে খুঁজে বের করতেই হবে কে হত্যাকারী
পাপ্পু লাল ভুক্তভোগী শিশুদের স্মৃতিবহ স্থানগুলো দেখাতে আমাদের নিয়ে যান। স্কোয়াট-আকৃতির ডি-৫ বাংলোটি এখন জীর্ণ, আশেপাশের সুশোভিত বাড়িগুলোর মাঝে বেমানানভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত এই বাড়ির দেয়ালে ২০১৪ সালের অগ্নিকাণ্ডের কালো দাগ রয়ে গেছে। প্রবেশপথ ইট-কাদা দিয়ে সধারণভাবে বন্ধ করা। সামনের সীমানার উপর দিয়ে ঝোপঝাড় আর বোগেনভেলিয়া গাছ বেড়ে উঠেছে। বাড়ির বাইরের খোলা নর্দমায় কালচে ময়লার স্রোতে ভাসছে প্লাস্টিক ব্যাগ ও বোতল, বাতাসে টিকে থাকা দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
বাড়ির পেছনে গিয়ে পাপ্পু লাল দেখান কোথায় দেহাবশেষ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনের ভয়াবহতা আমি ভুলতে পারি না।’ তবে তিনি লড়াই ছাড়তে চান না। ‘আমি আবার পুলিশে অভিযোগ করব। তাদের খুঁজে বের করতেই হবে—কে আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে।’
এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করতে চান। তার দাবি, সরকারেরও দায়িত্ব আছে প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমাদের সন্তানরা কি ভারতের সন্তান নয়?’
ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনগত সহায়তা দেওয়া ‘বেটার ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন’-এর অনুপম নাগোলিয়া বলেন, এখন বিচার পাওয়ার পথ প্রায় শেষ। ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ বেঞ্চ রায় দিয়েছে। এখন আর কোথাও তারা আপিল করতে পারবে বলে মনে হয় না।’
তাহলে পরিবারগুলো কী করবে? তিনি বলেন, ‘এখন তাদের একমাত্র পথ হলো কান্না, কষ্ট ও শোক পালন।’
কিছু আইনি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পরিবারগুলোর শেষ বিকল্প হতে পারে—সুপ্রিম কোর্টে পুনঃতদন্তের আবেদন করা। তবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মদন লোকুর মনে করেন, এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেটিও কার্যকর হবে না। ‘কারণ এতদিনে প্রমাণ বিলীন হয়ে গেছে। পুনঃতদন্ত কার্যত অসম্ভব।’
সূত্র: বিবিসি

জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের পর ওই এলাকায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে
পর্যটকদের কাছে হিমালয় এবং কাঠমাণ্ডু আকর্ষণীয় স্থানের শীর্ষে। কিন্তু বন্যপ্রাণীতে ভরপুর, জাতীয় পার্ক এবং দৃষ্টিনন্দন অতিথিশালাসমৃদ্ধ নেপালের তেরাই নিম্নাঞ্চল সম্পর্কে পর্যটকরা খুব একটা জানে না।
৬ ঘণ্টা আগে
গত জানুয়ারিতে চীন জানায় যে তাদের পণ্য ও সেবাখাতে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে—যা বিশ্বে কোনো দেশের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু ২০২৫ সালের প্রথম ১১ মাসে চীন সেই সীমাও অতিক্রম করেছে। সোমবার প্রকাশিত কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত চীনের মোট বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮
৭ ঘণ্টা আগে
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের পতনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। গত বছর এই দিনে বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটে। আহমদ আল-শারা (সাবেক আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি) নেতৃত্বাধীন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) অন্তর্বর্তী সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে।
১০ ঘণ্টা আগে