ইসরায়েলের বাড়তি আগ্রাসন ও মার্কিন সমর্থনের প্রেক্ষাপটে তুরস্ক নিজেকে ক্রমেই সম্ভাব্য সংঘাতের মুখে দেখছে। আঙ্কারা বলছে, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে আর ন্যাটো বা ওয়াশিংটনের ভরসায় বসে থাকা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা নতুন আঞ্চলিক জোট ও প্রতিরোধ কৌশলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
স্ট্রিম ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে কাতার ন্যাটোর বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র এবং ওয়াশিংটনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় অংশীদার। গত সপ্তাহে ইসরায়েল কাতারে হামলা চালানোর পর চাঞ্চল্য শুরু হয়। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ইসরায়েল-পন্থী ভাষ্যকাররা দ্রুত তুরস্কের দিকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে এনেছেন।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিনের মতে, তুরস্ক ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। ন্যাটো সদস্য বলে ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই ভরসা করা তুরস্কের উচিত হবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মীর মাসরি পোস্ট করেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’ জবাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা কঠোর ভাষায় লেখেন, ‘বিশ্ব মানচিত্র থেকে জায়নবাদী ইসরায়েলি কুকুরদের মুছে ফেললে শান্তি খুঁজে পাবে সবাই।’
কয়েক মাস ধরে, ইসরায়েল-পন্থী গণমাধ্যমগুলো ক্রমাগত তুরস্কবিরোধী বয়ান প্রচার করছে। দেশটিকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করেছে তারা। ইসরায়েলি ভাষ্যকাররা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতিকে ‘হুমকি’ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়া পুনর্গঠনে এর ভূমিকাকে ‘নতুন উদীয়মান বিপদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন বৃদ্ধি এবং গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির কোনো লক্ষণ না দেখে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গত আগস্ট মাসে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক ফেলো ওমর ওজকিজিলচিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের এসব বয়ান প্রচারকে তুরস্ক গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে ইসরায়েল এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্ক বুঝতে পারছে, আমেরিকান সমর্থনের জোরে ইসরায়েলি আগ্রাসন সব ধরনের সীমা অতিক্রম করবে।’
মার্কিন নিরাপত্তা সুরক্ষায় থাকা কাতারের উপর হামলা আঙ্কারার সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ওয়াশিংটনের সাথে দোহার বিশেষ মিত্রতা থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, ন্যাটোর সনদ অনুযায়ী তুরস্কের উপর কোনো আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই নিজের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখবে কিনা।
ওজকিজিলচিকের মতে, ‘তুরস্ক অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে, নিজের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর উপর নির্ভর করা যায় না।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর দেশের দখলদারি আগ্রাসন নিয়ে প্রতিনিয়ত গর্ব করেন। গত আগস্ট মাসে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ এর ধারণায় বিশ্বাস করেন। আঙ্কারার জন্য, এই ধরনের বয়ান কেবল প্রতীকী নয়। এই বয়ান মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েলি আধিপত্যের দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়, যা তুরস্কের নিজস্ব আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে বলেন, ‘জায়নবাদীদের আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, মিশর এবং জর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত “বৃহত্তর ইসরায়েল” দৃষ্টিভঙ্গির লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর করে রাখা। ইসরায়েলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত করে রাখা।’
গত কয়েক সপ্তাহেই, গাজায় গণহত্যা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইয়েমেন ও সিরিয়াতেও আক্রমণ করেছে ইসরায়েল। এছাড়া তিউনিসিয়ায় গাজার সাহায্যকারী জাহাজের বহরে হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্য
ইসরায়েল এই অঞ্চলের একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। গত জুলাইয়ে তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়ার জন্য বিশেষ দূত টম ব্যারাক জানান, ইসরায়েল একটি খণ্ডিত ও বিভক্ত সিরিয়া চায়। শক্তিশালী আরব জাতি-রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য হুমকি।
টম ব্যারাকের কথা তুরস্ককে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নিরাপদ বোধ করার জন্য এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ মস্কোতে পালিয়ে যান। এই সুযোগে ইসরায়েল কয়েক ডজন বার সিরিয়ায় বোমা হামলা করেছে এবং তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে সিরিয়ার কিছু ভূখণ্ড দখল করেছে।
চলতি বছরের জুনে ইরানে আক্রমণ করে ইসরায়েল। ১২ দিনের এই যুদ্ধে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা, সিনিয়র কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা ও যুক্তরাষ্ট্রকেও এই যুদ্ধে টেনে আনে ইসরায়েল। শুধু ইরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ইরানের সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যেই এই হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন নতুন ঘাঁটি সিরিয়ায় স্থাপন করার অনুমতি তুরস্ককে দেওয়া হবে না। যা প্রমাণ করে ইসরায়েল এখন তুরস্ককে তার আঞ্চলিক আধিপত্যের পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
অবসরপ্রাপ্ত তুর্কি অ্যাডমিরাল এবং 'ব্লু হোমল্যান্ড' মতবাদের স্থপতি জেম গুরদেনিজের মতে, তুর্কি-ইসরায়েলি সংঘাতের প্রথম প্রকাশ সম্ভবত সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমায় দেখা যাবে। একইসঙ্গে তুরস্কের পার্শ্ববর্তী দেশ সাইপ্রাসে ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতি বৃদ্ধি সামুদ্রিক সীমানা ও সম্পদে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে ভাঙনের সংকেত দিচ্ছে। তুরস্কের কাছে ইসরায়েলের এসব কার্যক্রম প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং আক্রমণাত্মক ঘেরাও কৌশল।
তবে তুরস্কের নেকমেটিন এরবাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক গোকান সিনকারার মতে, আপাতত ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনাকে ‘নিয়ন্ত্রিত’ বলা যেতে পারে।
রেড লাইন এবং ঝুঁকি
নেতানিয়াহু একটি ‘বলকানাইজড’ সিরিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত একটি সিরিয়া তৈরির চেষ্টা করছে ইসরায়েল। এই পরিকল্পনার একটি বাস্তব পদক্ষেপ হলো, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজ-অধ্যুষিত এলাকাকে সম্পূর্ণ সেনামুক্ত করে ফেলা। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সিরিয়ায় কুর্দি ও আলাওয়িসহ অন্যান্য গোষ্ঠী নিজস্ব স্বায়ত্তশাসনের জন্য দাবি তুলতে পারে। আর তা হলে সিরিয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে।
ফাউন্ডেশন ফর পলিটিক্যাল, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের (এসইটিএ) বৈদেশিক নীতি গবেষণার পরিচালক মুরাত ইয়েসিল্টাস বলেন, আঞ্চলিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রচেষ্টা বিভিন্ন বিপদ এবং ঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিভাজনকে আরও গভীর করছে।
মার্চে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) একটি নিবন্ধে, তুরস্ক ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শান্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়।
আইএনএসএস দাবি করে, এই শান্তি প্রক্রিয়া তুরস্ককে দক্ষিণ সিরিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করবে, যা ইসরায়েলের স্বাধীনতার জন্য হুমকি বাড়াতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দক্ষিণ সিরিয়ায় দখলকৃত ভূখণ্ডের বিশাল অংশ ইসরায়েল দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজেদের কাছে রাখবে।
তুরস্ক যখন সিরিয়ার হোমস ও হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দরে সম্ভাব্য সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য নতুন দামেস্ক সরকারের সাথে আলোচনা করছিল, তখন ইসরায়েল সেই স্থানগুলিতে বোমা হামলা করে।
মুরাত ইয়েসিল্টাস বলেন, যদি তেল আবিব এই পথে চলতে থাকে, তাহলে আঙ্কারার সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। তুরস্ক তার দক্ষিণ সীমান্তে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করে এমন নীতি গ্রহণ করতে পারে না।
কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ আল জাজিরাকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনিবার্য নয়। কারণ উভয় পক্ষই সংঘাতের ব্যয় সম্পর্কে সচেতন। তুরস্কের প্রতি ইসরায়েলের হুমকি প্রচলিত সামরিক আগ্রাসন নয়, বরং পরোক্ষ উপায়ে তুর্কি স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা।’
নেতানিয়াহু এই অঞ্চলকে পুনর্গঠন করার প্রচেষ্টায় ওয়াশিংটনের পূর্ণ ও আপাতদৃষ্টিতে নিঃশর্ত সমর্থনের প্রেক্ষিতে ক্রিগ বলেন, আঙ্কারার করণীয় হলো বিমান-প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সক্ষমতার মাধ্যমে কৌশলগত প্রতিরোধকে শক্তিশালী করা এবং কাতার, জর্ডান ও ইরাকের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট গড়ে তোলা। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের সাথে খোলা চ্যানেল বজায় রাখা যাতে কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা এড়ানো যায়।
তবে ক্রিগ তুরস্ককে সতর্ক করে বলেন, আঙ্কারাকে বুঝতে হবে ভবিষ্যতে সংঘাতের ঘটনাগুলি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা কূটনীতি নয়, বরং গোপন অভিযান, বিমান হামলা ও প্রক্সি প্রতিযোগিতা আকারে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ।
দীর্ঘদিন ধরে কাতার ন্যাটোর বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র এবং ওয়াশিংটনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় অংশীদার। গত সপ্তাহে ইসরায়েল কাতারে হামলা চালানোর পর চাঞ্চল্য শুরু হয়। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ইসরায়েল-পন্থী ভাষ্যকাররা দ্রুত তুরস্কের দিকে তাদের মনোযোগ সরিয়ে এনেছেন।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো মাইকেল রুবিনের মতে, তুরস্ক ইসরায়েলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে। ন্যাটো সদস্য বলে ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পাবে এই ভরসা করা তুরস্কের উচিত হবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসরায়েলি শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মীর মাসরি পোস্ট করেন, ‘আজ কাতার, কাল তুরস্ক।’ জবাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা কঠোর ভাষায় লেখেন, ‘বিশ্ব মানচিত্র থেকে জায়নবাদী ইসরায়েলি কুকুরদের মুছে ফেললে শান্তি খুঁজে পাবে সবাই।’
কয়েক মাস ধরে, ইসরায়েল-পন্থী গণমাধ্যমগুলো ক্রমাগত তুরস্কবিরোধী বয়ান প্রচার করছে। দেশটিকে ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করেছে তারা। ইসরায়েলি ভাষ্যকাররা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের উপস্থিতিকে ‘হুমকি’ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী সিরিয়া পুনর্গঠনে এর ভূমিকাকে ‘নতুন উদীয়মান বিপদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন বৃদ্ধি এবং গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির কোনো লক্ষণ না দেখে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গত আগস্ট মাসে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করার ঘোষণা দেন।
আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক ফেলো ওমর ওজকিজিলচিক আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের এসব বয়ান প্রচারকে তুরস্ক গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে এবং মনে করা হচ্ছে ইসরায়েল এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্ক বুঝতে পারছে, আমেরিকান সমর্থনের জোরে ইসরায়েলি আগ্রাসন সব ধরনের সীমা অতিক্রম করবে।’
মার্কিন নিরাপত্তা সুরক্ষায় থাকা কাতারের উপর হামলা আঙ্কারার সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ওয়াশিংটনের সাথে দোহার বিশেষ মিত্রতা থাকা সত্ত্বেও, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, ন্যাটোর সনদ অনুযায়ী তুরস্কের উপর কোনো আক্রমণকে যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই নিজের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখবে কিনা।
ওজকিজিলচিকের মতে, ‘তুরস্ক অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে, নিজের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর উপর নির্ভর করা যায় না।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাঁর দেশের দখলদারি আগ্রাসন নিয়ে প্রতিনিয়ত গর্ব করেন। গত আগস্ট মাসে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ এর ধারণায় বিশ্বাস করেন। আঙ্কারার জন্য, এই ধরনের বয়ান কেবল প্রতীকী নয়। এই বয়ান মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরায়েলি আধিপত্যের দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়, যা তুরস্কের নিজস্ব আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে বলেন, ‘জায়নবাদীদের আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, মিশর এবং জর্ডান পর্যন্ত বিস্তৃত “বৃহত্তর ইসরায়েল” দৃষ্টিভঙ্গির লক্ষ্য হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর করে রাখা। ইসরায়েলের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিভক্ত করে রাখা।’
গত কয়েক সপ্তাহেই, গাজায় গণহত্যা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইয়েমেন ও সিরিয়াতেও আক্রমণ করেছে ইসরায়েল। এছাড়া তিউনিসিয়ায় গাজার সাহায্যকারী জাহাজের বহরে হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্য
ইসরায়েল এই অঞ্চলের একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। গত জুলাইয়ে তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়ার জন্য বিশেষ দূত টম ব্যারাক জানান, ইসরায়েল একটি খণ্ডিত ও বিভক্ত সিরিয়া চায়। শক্তিশালী আরব জাতি-রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য হুমকি।
টম ব্যারাকের কথা তুরস্ককে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নিরাপদ বোধ করার জন্য এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ মস্কোতে পালিয়ে যান। এই সুযোগে ইসরায়েল কয়েক ডজন বার সিরিয়ায় বোমা হামলা করেছে এবং তাৎক্ষণিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে সিরিয়ার কিছু ভূখণ্ড দখল করেছে।
চলতি বছরের জুনে ইরানে আক্রমণ করে ইসরায়েল। ১২ দিনের এই যুদ্ধে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা, সিনিয়র কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা ও যুক্তরাষ্ট্রকেও এই যুদ্ধে টেনে আনে ইসরায়েল। শুধু ইরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক সক্ষমতা দুর্বল করার জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ইরানের সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যেই এই হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন নতুন ঘাঁটি সিরিয়ায় স্থাপন করার অনুমতি তুরস্ককে দেওয়া হবে না। যা প্রমাণ করে ইসরায়েল এখন তুরস্ককে তার আঞ্চলিক আধিপত্যের পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে।
অবসরপ্রাপ্ত তুর্কি অ্যাডমিরাল এবং 'ব্লু হোমল্যান্ড' মতবাদের স্থপতি জেম গুরদেনিজের মতে, তুর্কি-ইসরায়েলি সংঘাতের প্রথম প্রকাশ সম্ভবত সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমায় দেখা যাবে। একইসঙ্গে তুরস্কের পার্শ্ববর্তী দেশ সাইপ্রাসে ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা উপস্থিতি বৃদ্ধি সামুদ্রিক সীমানা ও সম্পদে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণে ভাঙনের সংকেত দিচ্ছে। তুরস্কের কাছে ইসরায়েলের এসব কার্যক্রম প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং আক্রমণাত্মক ঘেরাও কৌশল।
তবে তুরস্কের নেকমেটিন এরবাকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অ্যান্ড রিজিওনাল স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক গোকান সিনকারার মতে, আপাতত ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনাকে ‘নিয়ন্ত্রিত’ বলা যেতে পারে।
রেড লাইন এবং ঝুঁকি
নেতানিয়াহু একটি ‘বলকানাইজড’ সিরিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত একটি সিরিয়া তৈরির চেষ্টা করছে ইসরায়েল। এই পরিকল্পনার একটি বাস্তব পদক্ষেপ হলো, ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজ-অধ্যুষিত এলাকাকে সম্পূর্ণ সেনামুক্ত করে ফেলা। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সিরিয়ায় কুর্দি ও আলাওয়িসহ অন্যান্য গোষ্ঠী নিজস্ব স্বায়ত্তশাসনের জন্য দাবি তুলতে পারে। আর তা হলে সিরিয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে।
ফাউন্ডেশন ফর পলিটিক্যাল, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের (এসইটিএ) বৈদেশিক নীতি গবেষণার পরিচালক মুরাত ইয়েসিল্টাস বলেন, আঞ্চলিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রচেষ্টা বিভিন্ন বিপদ এবং ঝুঁকির জন্ম দিচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে বিভাজনকে আরও গভীর করছে।
মার্চে ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নিরাপত্তা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএসএস) একটি নিবন্ধে, তুরস্ক ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শান্তি প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়।
আইএনএসএস দাবি করে, এই শান্তি প্রক্রিয়া তুরস্ককে দক্ষিণ সিরিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করবে, যা ইসরায়েলের স্বাধীনতার জন্য হুমকি বাড়াতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, দক্ষিণ সিরিয়ায় দখলকৃত ভূখণ্ডের বিশাল অংশ ইসরায়েল দীর্ঘ সময়ের জন্য নিজেদের কাছে রাখবে।
তুরস্ক যখন সিরিয়ার হোমস ও হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দরে সম্ভাব্য সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য নতুন দামেস্ক সরকারের সাথে আলোচনা করছিল, তখন ইসরায়েল সেই স্থানগুলিতে বোমা হামলা করে।
মুরাত ইয়েসিল্টাস বলেন, যদি তেল আবিব এই পথে চলতে থাকে, তাহলে আঙ্কারার সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। তুরস্ক তার দক্ষিণ সীমান্তে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত করে এমন নীতি গ্রহণ করতে পারে না।
কিংস কলেজ লন্ডনের নিরাপত্তা অধ্যয়নের সহযোগী অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ আল জাজিরাকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনিবার্য নয়। কারণ উভয় পক্ষই সংঘাতের ব্যয় সম্পর্কে সচেতন। তুরস্কের প্রতি ইসরায়েলের হুমকি প্রচলিত সামরিক আগ্রাসন নয়, বরং পরোক্ষ উপায়ে তুর্কি স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু করা।’
নেতানিয়াহু এই অঞ্চলকে পুনর্গঠন করার প্রচেষ্টায় ওয়াশিংটনের পূর্ণ ও আপাতদৃষ্টিতে নিঃশর্ত সমর্থনের প্রেক্ষিতে ক্রিগ বলেন, আঙ্কারার করণীয় হলো বিমান-প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সক্ষমতার মাধ্যমে কৌশলগত প্রতিরোধকে শক্তিশালী করা এবং কাতার, জর্ডান ও ইরাকের সঙ্গে আঞ্চলিক জোট গড়ে তোলা। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের সাথে খোলা চ্যানেল বজায় রাখা যাতে কৌশলগত বিচ্ছিন্নতা এড়ানো যায়।
তবে ক্রিগ তুরস্ককে সতর্ক করে বলেন, আঙ্কারাকে বুঝতে হবে ভবিষ্যতে সংঘাতের ঘটনাগুলি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা কূটনীতি নয়, বরং গোপন অভিযান, বিমান হামলা ও প্রক্সি প্রতিযোগিতা আকারে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অবলম্বনে তুফায়েল আহমদ।
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতেই আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
১ দিন আগেবন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প নিয়ে কোটি কোটি ডলারের দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় হাজারো মানুষ বিক্ষোভে নেমেছেন।
১ দিন আগেযুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আজ স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
১ দিন আগেনতুন এক নির্বাহী আদেশে জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামে বড়সড় পরিবর্তন আনলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন থেকে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের এই ভিসার জন্য আবেদন করতে বছরে দিতে হবে ১ লাখ ডলার (প্রায় ১ কোটি ২১ কোটি টাকা)।
২ দিন আগে