leadT1ad

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কথা বলে ভারত সরকারের রোষানলে সাংবাদিক-কনটেন্ট ক্রিয়েটররা

আদালতের ‘একপাক্ষিক আদেশের’ ভিত্তিতে তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের নোটিশ; এসেছে নিউজলন্ড্রি, দ্য ওয়্যার, রাভিশ কুমার, ধ্রুব রাঠী, আকাশ ব্যানার্জিসহ অনেকের নাম।

ইনস্ক্রিপ্ট প্রতিবেদক
সংগৃহীত ছবি

ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর অন্যতম আদানি গ্রুপকে ঘিরে ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত সমালোচনামূলক ‘লেখা ও কনটেন্ট’ সরানোর জন্য চিঠি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ইউটিউবের মূল প্রতিষ্ঠান গুগল ইনকরপোরেশন ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেশনকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে— ইউটিউবে এ সংক্রান্ত ১৩৮টি ভিডিও এবং ইনস্টাগ্রামে ৮৩টি পোস্ট অবিলম্বে অনলাইন থেকে অপসারণ করতে হবে।

চিঠির সংযুক্তিতে দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসহ জনপ্রিয় সাংবাদিক ও কনটেন্ট নির্মাতাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউজলন্ড্রি, দ্য ওয়্যার, সাংবাদিক রাভিশ কুমার, আজিত আঞ্জুম, ধ্রুব রাঠী, আকাশ ব্যানার্জি (দেশভক্ত নামে পরিচিত) সহ আরও অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে— সরকার কেন একটি নির্দিষ্ট বাণিজ্যগোষ্ঠীর সম্মান রক্ষায় এত তৎপর, আর এই পদক্ষেপ কি মূলত কণ্ঠরোধের চেষ্টা নয়?

এই নির্দেশনা এসেছে উত্তর-পশ্চিম দিল্লি জেলা আদালতের ৬ সেপ্টেম্বরের (মঙ্গলবার) একপাক্ষিক (এক্স পার্টি) একটি আদেশের ভিত্তিতে। আদানি এন্টারপ্রাইজের করা একটি মানহানির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ জারি করা হয়। আদালত সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, রবি নায়ার, আবীর দাশগুপ্ত, অয়শকান্ত দাস ও অয়ুষ জোষির মতো সাংবাদিক ও অ্যাকভিস্টদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের লেখা নিবন্ধ ও সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়।

উল্লেখ্য, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, রবি নায়ার, আবীর দাশগুপ্তরা গত কয়েক বছরে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। প্রবীণ সাংবাদিক পরঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সাতটি মানহানির মামলা করেছে আদানি। স্ট্রিমের ভারতীয় অংশীদার ইনস্ক্রিপ্টেরও প্রধান কনট্রিবিউটরও তিনি। ইনস্ক্রিপ্ট সম্পাদক অর্ক দেবের সঙ্গে তাঁর যৌথ প্রকাশনা ‘ফেসবুক মুখ ও মুখোশ’ ভারতে ব্যাপক আলোচনায় আসে।

এক্স পার্টি আদেশের অর্থ হচ্ছে— সাংবাদিক ও কর্মীদের বক্তব্য না শুনেই আদালত এই নির্দেশ দেয়। আরও বিস্ময়ের বিষয়, নোটিশ পাঠানো হয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে, যারা মামলার সরাসরি পক্ষও নন। যেমন দ্য ওয়্যার একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টের জন্য নোটিশ পেয়েছে। ওয়্যারের ওই প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)-এর অভিযোগের উল্লেখ ছিল। নিউজলন্ড্রির একটি ভিডিও এই তালিকায় রয়েছে। এমন অনেক ভিডিওকে টার্গেট করা হয়েছে যেগুলোতে শুধু পুরনো তথ্যই দেওয়া হয়েছে, নতুন কোনও মতামত নেই।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশিত সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই কনটেন্ট সরিয়ে তার বিবরণ মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া নোটিশের কপি পাঠানো হয়েছে মেটা ও গুগলের কাছেও।

৬ সেপ্টেম্বরের আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ বিচারক অন্য পক্ষের কথা শোনেননি। যদিও সিনিয়র সিভিল জজ অনুজ কুমার সিং জানিয়েছিলেন, তিনি সাংবাদিকদের ‘ন্যায়সঙ্গত, যাচাইকৃত ও প্রমাণিত রিপোর্টিং’ বন্ধের নির্দেশ দেননি।

এ নিয়ে পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা বলেছেন, ‘আমি ভারতের বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখি। আমি নিশ্চিত যে, আমার লেখা বা সহ-লেখা সব নিবন্ধ এবং দেওয়া সব বিবৃতি শুধু সত্য ও সঠিকই নয়, জনস্বার্থসংশ্লিষ্টও। আদানির করা সাতটি মানহানির মামলায় আমি সক্রিয়ভাবে লড়ব এবং দ্রুত আদালতে আমার যুক্তি তুলে ধরব।’

এই ঘটনা আবারও গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ কি সাংবাদিকদের ওপর অযথা চাপ তৈরি করছে— এই প্রশ্নও উঠেছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত