leadT1ad

ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে যে ‘ম্যাসেজিং অ্যাপ’

ভাবুন তো, জরুরি প্রয়োজনে আশেপাশে থাকা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে আর ভাবতে হচ্ছে না। ৩০ মিটার থেকে ৩০০ মিটার দূরে পর্যন্ত জরুরি ছবি বা মেসেজ পাঠানো যাচ্ছে। দারুণ হবে, তাই না! ঠিক এমনই এক অ্যাপ নিয়ে হাজির হয়েছেন টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি।

শতাব্দীকা ঊর্মিঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৪৩
আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৫, ১৭: ৪৭
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

টুইটারের (বর্তমান ‘এক্স’) সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি সম্প্রতি এক ব্যতিক্রমধর্মী অ্যাপ চালু করেছেন। যার নাম ‘বিটচ্যাট’। যা এক নতুন ধরনের মেসেজিং অ্যাপ। এই প্রযুক্তির বিশেষত্ব হচ্ছে, চ্যাট করার জন্য ইন্টারনেট বা মোবাইল সিগন্যালের কোনো দরকার নেই।

জ্যাক ডরসি অবশ্য মজা করে এই অ্যাপকে ‘উইকেন্ড প্রজেক্ট’ বলছেন। তবে বিটচ্যাটের ‘ব্লুটুথ মেশ নেটওয়ার্ক’, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন আর এই প্রযুক্তি নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী।

বিটচ্যাট সাধারণ মেসেজিং অ্যাপগুলোর মতো নয়। এটি ওয়াই-ফাই বা মোবাইল ডাটা ছাড়াই কাজ করে। অ্যাপটি ‘ব্লুটুথ লো এনার্জি’ ব্যবহার করে আশেপাশে থাকা ডিভাইসগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি করে। ফলে চ্যাটের তথ্য ইন্টারনেটে না ছড়িয়ে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যেই থেকে যায়।

অ্যাপটি ইতিমধ্যে আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ‘টেস্টফ্লাইট’ (অ্যাপেল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের আগেই পারফরম্যান্স টেস্টের সাইট)-এ বেটা সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে। আর সম্প্রতি অ্যান্ড্রয়েড টেস্টিং সংস্করণেও অ্যাপটি চলে এসেছে।

বিটচ্যাটকে তৈরি করা হয়েছে মূলত জরুরি যোগাযোগের জন্য। ইন্টারনেট না থাকলে বা দুর্বল নেটওয়ার্কে যোগাযোগ রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিটচ্যাট হতে পারে একটি আদর্শ অ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপ বা টেলিগ্রামের মতো বড় বড় সার্ভারের ‘ডেটা গ্র্যাব’ (ব্যক্তিগত তথ্য, ব্রাউজিং হিস্ট্রি, অবস্থান তথ্য ইত্যাদি গোপনে সংগ্রহ করা) হওয়ার বিপদ এখানে নেই।

অ্যাপটি নিয়ে ডরসি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে বলেছেন, ‘বিটচ্যাটে পুরোনো দিনের ইন্টারনেট চ্যাটরুমের মতো। যেমন ছিল আইআরসি (রিয়েল টাইমভিত্তিক কমিউনেকশন প্রোটোকল)। এখানেও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কোনো ই-মেইল বা ফোন নম্বর দিতে হয় না। আর বার্তাগুলো শক্তিশালী এনক্রিপশনের মাধ্যমে নিরাপদ রাখা হয়।’

বিটচ্যাট যেভাবে কাজ করে

এই অ্যাপ কাজ করে কিছুটা টরেন্ট ফাইল শেয়ারিং মডেলেই। যখন কেউ চলাফেরা করে, তখন তাঁর ফোন আশেপাশের ব্লুটুথ চালু ফোনগুলোর সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য সংযোগ তৈরি করে। এইভাবে এক ফোন থেকে আরেক ফোনে মেসেজ ধাপে ধাপে গন্তব্যে পৌঁছে যায়। শুধু ফোনের ব্লুটুথ চালু থাকলেই চলে।

সাধারণ ব্লুটুথ ১০০ মিটার পর্যন্ত কাজ করে। কিন্তু যদি মাঝখানে আরও কিছু ফোন থাকে, তাহলে বিটচ্যাটের মাধ্যমে মেসেজ ৩০০ মিটার বা তারও বেশি দূর পর্যন্ত যেতে পারে।

বিটচ্যাট যেখানে দারুণ কাজ করে

ইন্টারনেট ছাড়াই কাজ করার ক্ষমতা বিটচ্যাটকে অনেক রকম পরিস্থিতিতে বাঁচার উপায় বা লাইফলাইনে পরিণত করেছে। জানা যাক, কোথায় কোথায় এই অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর:

  • বড় ইভেন্টে: ধরুন আপনি কোনো বড় কনসার্ট বা উৎসবে আছেন, কিন্তু ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক নেই। তখন কী করবেন? বিটচ্যাট দিয়ে আপনি সহজেই বন্ধুদের মেসেজ পাঠাতে পারবেন। আপনার ফোন থেকে আশেপাশের অন্য ফোনে ‘হপ’ করতে করতে বার্তাটি পৌঁছে যাবে আপনার বন্ধুর কাছে। এই ‘মেসেজ হপিং’ বলতে বোঝায়, ডেটা এক ডিভাইস থেকে আরেকটিতে ধাপে ধাপে গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো।
  • ইন্টারনেট বন্ধের সময়: কখনো কখনো সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়—যেমনটা হয়েছিল ২০১৯ সালে হংকং-এ বা ২০২৪ সালে বাংলাদেশে। এমন সময় বিটচ্যাট অনেক কার্যকর। এতে সকলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে।
  • দুর্যোগকবলিত এলাকায়: ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যদি মোবাইল সিগন্যাল কাজ না করে, তখন বিটচ্যাট জরুরি তথ্য আদান-প্রদানে দারুণ সহায়ক হতে পারে। উদ্ধারকর্মী, চিকিৎসা সহায়তা টিম ও স্থানীয় মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দ্রুত সহায়তা পৌঁছাতে পারে।
  • অফ-দ্য-গ্রিড জায়গায়: যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। যেমন পাহাড়, জঙ্গল বা গ্রামীণ এলাকায় বিটচ্যাট স্থানীয় লোকজনের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করে।

বিটচ্যাটের ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বিটচ্যাটকে আরও শক্তিশালী করার জন্য জ্যাক ডরসির আছে নানা পরিকল্পনা। তিনি বলছেন, এতে ওয়াইফাই সরাসরি যোগ করার পরিকল্পনা আছে, যা অ্যাপকে অনেক দ্রুত (প্রায় ২৫০ Mbps এর বেশি স্পিডে) চালাতে সাহায্য করবে এবং যোগাযোগের দূরত্ব বাড়িয়ে ১০০ থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত নিয়ে যাবে। এতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিটচ্যাট আরও কার্যকর হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত