.png)
আজ বিশ্ব গন্ডার দিবস
আজ বিশ্ব গন্ডার দিবস। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণী সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা, আর অবৈধ শিকার ও পাচার বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো। প্রকৃতিতে গণ্ডার বিলুপ্তপ্রায় হলেও ‘মানবগন্ডার’-এর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

সৈকত আমীন

যথারীতি গগণে মেঘ জমিয়াছে, পত্রপল্লব নতশিরে দাঁড়াইয়া আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশ পাইয়াছে ‘অদ্য বিশ্ব গন্ডার দিবস পালিত হইতেছে।’ মানুষ দিবস উদ্যাপনের যে মহোৎসবে লিপ্ত, তাহার সহিত গন্ডারের নাম যোগ হইয়া গেলেও গন্ডার স্বয়ং কণ্ঠস্বর তোলে না। কারণ, গন্ডার আজিকে বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে যাহারা ‘মোটা চামড়ার’ নামে খ্যাত—অর্থাৎ রাজনীতির দপ্তরে, আমলাতন্ত্রের কুঠুরিতে, কিংবা বৈশ্বিক সম্মেলনের সুশীতল কক্ষে আসীন, সেই সব মানবগন্ডার আজও দিব্যি ধরাধামে বিরাজমান।
প্রকৃতিতে গন্ডার যে বিলুপ্ত হইতেছে, তাহার দায় এই মানবগন্ডারেরই। আফ্রিকার সাভানা হইতে আরম্ভ করিয়া এশিয়ার বনজঙ্গলে যাহা এককালে নির্ভয়ে বিচরণ করিত, তাহারা আজিকে শিকারির বন্দুকের সন্মুখে মৃতদেহ হইয়া পড়িয়া থাকে। গন্ডারের খোলের বাজার গোপনে বহুদূর প্রসারিত হইয়াছে। কেহ ঔষধে, কেহ অলঙ্কারে, কেহ ভ্রান্ত মর্যাদায় গন্ডারের শিং ব্যবহৃত করিতেছে আজকাল।
অন্যদিকে মানবগন্ডার শিঙবিহীন তবু অদম্য। তাহাদের নীতিহীনতা এত শক্ত যে কোনো যুক্তি, কোনো আন্দোলন, কোনো বিশ্বফোরাম তাহাদের হৃদয় ভেদ করিতে পারে না। সত্যের গোলাসমূহ তাহাদের গায়ে লাগিয়া ফিরিয়া আসে, যেন টিনের ছাদের ওপর বর্ষার ফোঁটা। গন্ডার যেমন গুলিবিদ্ধ হইলেও সহজে পড়ে না, তেমনি মানবগন্ডার তত্ত্বাবধায়ক চেয়ার আঁকড়ে ধরিয়া বসিয়া থাকে।
সচেতনতা সৃষ্টি করিবার জন্য বলি, গন্ডার প্রকৃতপক্ষে শান্তপ্রাণী। তাহারা হিংস্র নহে, ঘাসপাতা খাইয়া বাঁচে। শুধু যখন শিকারিরা আক্রমণ করে, তখনই তাহারা ক্রোধে ধাবিত হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ডারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গন্ডার ঘাসভূমি পরিষ্কার রাখে, বীজ ছড়ায়, বনকে দেয় নবজীবন। কিন্তু এই নিরীহ প্রাণীটির জীবন এখন টিকিয়া আছে কেবলমাত্র মানব করুণার ওপর।
অথচ মানবগন্ডারের সংখ্যা দিন দিন বাড়িতেছে। তাহারা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করিতেছে, গণতন্ত্রের ঘাসভূমি চিবাইতেছে, সত্যের বীজ নষ্ট করিতেছে। তাহাদের শিং না থাকিলেও ক্ষমতার আসনে বসিয়া যে গর্জন তোলে, তাহা আসল গন্ডারের হুঁশিয়ারির চেয়েও অধিক ভয়ংকর।
তাহাদের গায়ের চামড়া এতই মোটা যে সাধারণ মানুষের আর্তনাদ, জনতার প্রতিবাদ, কিংবা পৃথিবীর বিপদের সংকেত—কোনোকিছুই তা ভেদ করিতে পারে না। ধরা যাক, বরফ গলিতেছে, সমুদ্রে বারি বাড়িতেছে, খরা তীব্র হইতেছে, গন্ডার মরিতেছে—কিন্তু মানবগন্ডার তাহাতে নির্বিকার। সভাকক্ষে এক দফা ভাষণ, একখানি ফটোসেশন, তাহার পর পুনরায় আগের ভূমিকায় আসীন।

সত্যই বলিতেছি, যদি প্রকৃত গন্ডারের বদলে মানবগন্ডারের সংখ্যা ক্রমহ্রাস পাইত, তাহলে মানবসভ্যতা বোধহয় রক্ষার হইত। দুর্ভাগ্যক্রমে বাস্তব বড়ই উল্টো। গন্ডার মরিতেছে, গণ্ডামী বাঁচিতেছে।
অতএব, আজকের বিশ্ব গন্ডার দিবসে প্রার্থনা করিতেছি—হে পরম করুণাময়, আমাদের বন-জঙ্গল রক্ষা কর, গন্ডারকে বাঁচাইয়া রাখ, কিন্তু মানবগন্ডারকে বিলুপ্ত কর। কেননা প্রকৃত গন্ডারের টিকে থাকা মানে পরিবেশের টিকে থাকা, কিন্তু মানবগন্ডারের টিকে থাকা মানে সভ্যতার অবসান।
শিশুরা যখন স্কুলে অধ্যায়ন করে—‘গন্ডার এক মহামূল্যবান প্রাণী’, তখন তাহাদের জানাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে গন্ডার যদি মরিয়া যায় তবে প্রকৃতির অধ্যায় অসম্পূর্ণ হইবে। আর তাহাদের কানে কানে বলা উচিত—মানবগন্ডারকে চিনিবার শিক্ষা লও, তাহাদের বিরুদ্ধেই লড়িবার প্রস্তুতি রাখো।
যদি সত্যিই আমরা গন্ডারকে বাঁচাইতে চাই, তবে কেবল পোস্টার সাঁটানোই যথেষ্ট নহে। দরকার শিকার দমন, বন সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা। কিন্তু মানবগন্ডারকে সরাইতে চাইলে কেবল পোস্টার নয়—প্রয়োজন জনতার জাগরণ, ভয়ের দেওয়াল ভাঙিবার সাহস।
শেষে বলি, অদ্য বিশ্ব গন্ডার দিবস হইলেও ইহা কেবল প্রাণীবিদ্যার খাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজনীতির খাতায়ও এক অমোঘ শিক্ষা দেয়। প্রকৃত গন্ডার যদি বিলুপ্ত হইয়া যায়, তবে আমরা প্রকৃতির নিকট দায়ী থাকিব। আর মানবগন্ডার যদি টিকিয়া থাকে, তাহলে আমরা ভবিষ্যতের কাছে দায়ী হইব।
অতএব, প্রিয় পাঠক, চলুন গন্ডার রক্ষা করি—আর গণ্ডামীকে বিলুপ্ত করি। তাহাই হউক আজিকের বিশ্ব গন্ডার দিবসের প্রকৃত শপথ।

যথারীতি গগণে মেঘ জমিয়াছে, পত্রপল্লব নতশিরে দাঁড়াইয়া আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশ পাইয়াছে ‘অদ্য বিশ্ব গন্ডার দিবস পালিত হইতেছে।’ মানুষ দিবস উদ্যাপনের যে মহোৎসবে লিপ্ত, তাহার সহিত গন্ডারের নাম যোগ হইয়া গেলেও গন্ডার স্বয়ং কণ্ঠস্বর তোলে না। কারণ, গন্ডার আজিকে বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে যাহারা ‘মোটা চামড়ার’ নামে খ্যাত—অর্থাৎ রাজনীতির দপ্তরে, আমলাতন্ত্রের কুঠুরিতে, কিংবা বৈশ্বিক সম্মেলনের সুশীতল কক্ষে আসীন, সেই সব মানবগন্ডার আজও দিব্যি ধরাধামে বিরাজমান।
প্রকৃতিতে গন্ডার যে বিলুপ্ত হইতেছে, তাহার দায় এই মানবগন্ডারেরই। আফ্রিকার সাভানা হইতে আরম্ভ করিয়া এশিয়ার বনজঙ্গলে যাহা এককালে নির্ভয়ে বিচরণ করিত, তাহারা আজিকে শিকারির বন্দুকের সন্মুখে মৃতদেহ হইয়া পড়িয়া থাকে। গন্ডারের খোলের বাজার গোপনে বহুদূর প্রসারিত হইয়াছে। কেহ ঔষধে, কেহ অলঙ্কারে, কেহ ভ্রান্ত মর্যাদায় গন্ডারের শিং ব্যবহৃত করিতেছে আজকাল।
অন্যদিকে মানবগন্ডার শিঙবিহীন তবু অদম্য। তাহাদের নীতিহীনতা এত শক্ত যে কোনো যুক্তি, কোনো আন্দোলন, কোনো বিশ্বফোরাম তাহাদের হৃদয় ভেদ করিতে পারে না। সত্যের গোলাসমূহ তাহাদের গায়ে লাগিয়া ফিরিয়া আসে, যেন টিনের ছাদের ওপর বর্ষার ফোঁটা। গন্ডার যেমন গুলিবিদ্ধ হইলেও সহজে পড়ে না, তেমনি মানবগন্ডার তত্ত্বাবধায়ক চেয়ার আঁকড়ে ধরিয়া বসিয়া থাকে।
সচেতনতা সৃষ্টি করিবার জন্য বলি, গন্ডার প্রকৃতপক্ষে শান্তপ্রাণী। তাহারা হিংস্র নহে, ঘাসপাতা খাইয়া বাঁচে। শুধু যখন শিকারিরা আক্রমণ করে, তখনই তাহারা ক্রোধে ধাবিত হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ডারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গন্ডার ঘাসভূমি পরিষ্কার রাখে, বীজ ছড়ায়, বনকে দেয় নবজীবন। কিন্তু এই নিরীহ প্রাণীটির জীবন এখন টিকিয়া আছে কেবলমাত্র মানব করুণার ওপর।
অথচ মানবগন্ডারের সংখ্যা দিন দিন বাড়িতেছে। তাহারা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করিতেছে, গণতন্ত্রের ঘাসভূমি চিবাইতেছে, সত্যের বীজ নষ্ট করিতেছে। তাহাদের শিং না থাকিলেও ক্ষমতার আসনে বসিয়া যে গর্জন তোলে, তাহা আসল গন্ডারের হুঁশিয়ারির চেয়েও অধিক ভয়ংকর।
তাহাদের গায়ের চামড়া এতই মোটা যে সাধারণ মানুষের আর্তনাদ, জনতার প্রতিবাদ, কিংবা পৃথিবীর বিপদের সংকেত—কোনোকিছুই তা ভেদ করিতে পারে না। ধরা যাক, বরফ গলিতেছে, সমুদ্রে বারি বাড়িতেছে, খরা তীব্র হইতেছে, গন্ডার মরিতেছে—কিন্তু মানবগন্ডার তাহাতে নির্বিকার। সভাকক্ষে এক দফা ভাষণ, একখানি ফটোসেশন, তাহার পর পুনরায় আগের ভূমিকায় আসীন।

সত্যই বলিতেছি, যদি প্রকৃত গন্ডারের বদলে মানবগন্ডারের সংখ্যা ক্রমহ্রাস পাইত, তাহলে মানবসভ্যতা বোধহয় রক্ষার হইত। দুর্ভাগ্যক্রমে বাস্তব বড়ই উল্টো। গন্ডার মরিতেছে, গণ্ডামী বাঁচিতেছে।
অতএব, আজকের বিশ্ব গন্ডার দিবসে প্রার্থনা করিতেছি—হে পরম করুণাময়, আমাদের বন-জঙ্গল রক্ষা কর, গন্ডারকে বাঁচাইয়া রাখ, কিন্তু মানবগন্ডারকে বিলুপ্ত কর। কেননা প্রকৃত গন্ডারের টিকে থাকা মানে পরিবেশের টিকে থাকা, কিন্তু মানবগন্ডারের টিকে থাকা মানে সভ্যতার অবসান।
শিশুরা যখন স্কুলে অধ্যায়ন করে—‘গন্ডার এক মহামূল্যবান প্রাণী’, তখন তাহাদের জানাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে গন্ডার যদি মরিয়া যায় তবে প্রকৃতির অধ্যায় অসম্পূর্ণ হইবে। আর তাহাদের কানে কানে বলা উচিত—মানবগন্ডারকে চিনিবার শিক্ষা লও, তাহাদের বিরুদ্ধেই লড়িবার প্রস্তুতি রাখো।
যদি সত্যিই আমরা গন্ডারকে বাঁচাইতে চাই, তবে কেবল পোস্টার সাঁটানোই যথেষ্ট নহে। দরকার শিকার দমন, বন সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা। কিন্তু মানবগন্ডারকে সরাইতে চাইলে কেবল পোস্টার নয়—প্রয়োজন জনতার জাগরণ, ভয়ের দেওয়াল ভাঙিবার সাহস।
শেষে বলি, অদ্য বিশ্ব গন্ডার দিবস হইলেও ইহা কেবল প্রাণীবিদ্যার খাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাজনীতির খাতায়ও এক অমোঘ শিক্ষা দেয়। প্রকৃত গন্ডার যদি বিলুপ্ত হইয়া যায়, তবে আমরা প্রকৃতির নিকট দায়ী থাকিব। আর মানবগন্ডার যদি টিকিয়া থাকে, তাহলে আমরা ভবিষ্যতের কাছে দায়ী হইব।
অতএব, প্রিয় পাঠক, চলুন গন্ডার রক্ষা করি—আর গণ্ডামীকে বিলুপ্ত করি। তাহাই হউক আজিকের বিশ্ব গন্ডার দিবসের প্রকৃত শপথ।
.png)

১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর মুহাম্মদ ইকবাল জন্মেছিলেন, পাঞ্জাবের সিয়ালকোটে—যা বর্তমানে পাকিস্তানের পশ্চিম পাঞ্জাব অঞ্চলে অবস্থিত। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ। পরে সপ্তদশ শতকে মুঘল আমলে তাঁরা ইসলামে ধর্মান্তরিত হন।
৩ ঘণ্টা আগে
ফেসবুকে নতুন গৃহযুদ্ধের সূচনা যেন একদম দরজায় এসে থেমে আছে। এখনও সবার জন্য সেই ভয়ঙ্কর অস্ত্র কমেন্টে ‘ডিসলাইক’ বাটন চালু হয়নি। খুব শিগগিরই হয়ত একদিন সকালে চা হাতে ফোন খুলে দেখবেন, কমেন্টের নিচে একটা ছোট্ট থাম্বস নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
৮ ঘণ্টা আগে
আজকাল প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার কথা ভাবলেই নাকে এসে লাগে গরম পপকর্নের ঘ্রাণ। দুনিয়াজুড়েই এই খাবার ছাড়া আজকের সময়ে সিনেমা দেখাটা অসম্পূর্ণ মনে হয়। কিন্তু কীভাবে ভুট্টার খই কীভাবে হয়ে উঠল সিনেমা-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ? এর পেছনের গল্প কিন্তু সিনেমার কাহিনীর চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়।
১২ ঘণ্টা আগে
এমনও অনেক মানুষ আছেন যারা গভীর দুঃখ, কষ্ট বা মানসিক আঘাতে চাইলেও কাঁদতে পারেন না। কিন্তু কেন এমন হয়? এই বিষয়টিকে শারীরবৃত্তীয়, মানসিক ও সামাজিক নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।
১ দিন আগে