পোশাক-বিতর্ক
একটি দেশের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে সে দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সম্পর্ক। কেননা, পোশাকেরও রয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আছে রাজনীতি। তা ছাড়া বলা দরকার, কোনো দেশের পোশাক কেমন হবে, তা ওই দেশের আবহাওয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
শতাব্দীকা ঊর্মি
বেশ কিছুদিন আগে ভালো একটা কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়েছিলেন রিফাত (ছদ্মনাম)। ডাক পেয়ে তিনি বেশ খুশি। ইন্টারভিউয়ের জন্য সব রকম প্রস্তুতিও নিলেন। ভাইভাও হলো। তবে রিফাত লক্ষ করলেন, কোম্পানির লোকেরা তাঁর দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছেন। কারণ কী?
অনেক পরে রিফাত বুঝতে পারলেন, জুন মাসে যখন তাঁর ইন্টারভিউ হচ্ছিল, তখন তিনি পরে গিয়েছিলেন স্যুট আর টাই। কিন্তু বাইরে তখন ছিল কাঠফাঁটা রোদ।
জীবনের কোনো না কোনো সময় আমরা অনেকেই এমন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছি।
পোশাক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এমন কিছু পোশাক আছে, যা আমাদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে অথবা তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়।
এবার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে চোখ ফেরানো যাক।
গত ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পোশাকবিষয়ক একটি নির্দেশনা জারি করে। যেখানে নারীকর্মীদের জন্য ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস নিষিদ্ধ করা হয়; এবং পুরুষদের জন্য জিন্স আর গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে এক দিনের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ঘটনা অনেকগুলো বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, একটি দেশের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে সে দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সম্পর্ক। কেননা, পোশাকেরও রয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আছে রাজনীতিও। তা ছাড়া বলা দরকার, কোনো দেশের পোশাক কেমন হবে, তা ওই দেশের আবহাওয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
তবে এক্ষেত্রে এটিও বলা জরুরি, পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কখনো কখনো সামাজিকতার মাপকাঠিও প্রভাব রাখে। আমাদের দেশে একজন পুরুষ যখন গরমে আরামের জন্য হাফ প্যান্ট বা টি-শার্ট পরেন, তখন সেটি তাঁর ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও কোনো নারী যখন একই কারণে হালকা বা আধুনিক পোশাক পরেন, তখন তাঁকে ‘অশালীন’ হিসেবে দেখার প্রবণতা আছে লক্ষ করা যায় । কখনো কখনো হয়রানি ও সমালোচনার শিকারও হতে হয় তাঁকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ২০২২ সালে নরসিংদী স্টেশনে এক নারীকে পোশাকের জন্য মারধোর ও শ্লীলতাহানির কথা বলা যায়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া বছরের বেশির ভাগ সময়ই থাকে উষ্ণ। তাই ঐতিহাসিকভাবে এ দেশের মানুষের পোশাক হালকা ধরনের হয়ে থাকে। সুতি কাপড় ছিল এখানকার মানুষের পছন্দের শীর্ষে। গরমের জন্যই মূলত এই বাংলা অঞ্চলে মসলিন নামে এক ধরনের পাতলা কাপড় তৈরি করা হয়েছিল, যা ছিল খুবই আরামদায়ক।
পুরুষদের জন্য ধুতি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর নারীর জন্য শাড়িই ছিল এখানকার মানুষের প্রধান পোশাক।
সুতির শাড়ি এমন একটি পোশাক, যা নানা আবহাওয়ায় বেশ আরামদায়ক। আবার লুঙ্গি ও ধুতিও আরামদায়ক পোশাক হিসেবে বিবেচিত।
আধুনিক যুগে এসে পোশাকের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জিন্স, টি-শার্ট, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, টপস—এসব এখন দৈনন্দিন পোশাকের অংশ। অন্যদিকে উষ্ণতার ফলে দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হালকা রঙের, ঢিলেঢালা পোশাকেরও চাহিদা বেড়ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরার চল রয়েছে। যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তীব্র গরমে পুরুষেরা থোব বা দিশদাশার মতো ঢিলেঢালা সাদা পোশাক পরে থাকেন। আর নারীরা পরেন আবায়া, হিজাব বা নিকাব।
মজার ব্যাপার হলো, তাদের এই পোশাক নির্বাচনের পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে মরুভূমির আবহাওয়া। মরু-অঞ্চল অনেক উষ্ণ এবং এখানে অনেক ধুলোবালি। তাই নারীদের এসব পোশাক তাঁদের শরীরকে যেমন সূর্যের তীব্র তাপ থেকে রক্ষা করে, তেমনি ধুলোবালি থেকেও বাঁচায়। অন্যদিকে, ঠান্ডা আবহাওয়ার দেশগুলোতে উষ্ণতার প্রয়োজনে মানুষ ব্যবহার করে মোটা উলের পোশাক, জ্যাকেট, কোট ইত্যাদি। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই রাশিয়ার শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে।
লেখার শুরুতে ওই যে রিফাত নামে ছেলেটির কথা বলছিলাম, ইন্টারভিউয়ে যিনি সুট-টাই পরে এসেছিলেন, এখন আসা যাক সে প্রসঙ্গে। অর্থাৎ ‘ফরমাল’ পোশাক প্রসঙ্গে।
কর্মক্ষেত্রে ‘ফরমাল’ পোশাকের ধারণাটি এসেছে মূলত ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে। ব্রিটিশ আমলে প্রশাসনিক ও পেশাদারত্বের প্রতীক হিসেবে চালু হয় স্যুট-টাই ও শার্ট-প্যান্ট। এরপর ধীরে ধীরে এটি একরকম কেতা হয়ে ওঠে।
তবে স্যুট-টাই, শার্ট-প্যান্ট মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু উষ্ণ জলবায়ুর দেশগুলোতে এটি এখন যেন ‘পেশাদারত্ব’-এর প্রতীক হিসেবে টিকে আছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার একটা ভূমিকা রয়েছে।
ব্রিটিশরা কীভাবে আমাদের পোশাকের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চেয়েছিল, তার একটি বড় উদাহরণ হলো, নারীদের আটপৌরে শাড়ি পরাতেও বাধ সেধেছিল তারা।
বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, একবার সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ইংরেজ ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে গেলেন আটপৌরে শাড়ি পরে। কিন্তু ক্লাবের লোকজন তাঁকে সেখানে ঢুকতে দিল না। তখন থেকেই তিনি ব্লাউজ পরতে শুরু করলেন।
ভারতবর্ষের নারীরা কখনো ব্লাউজে অভ্যস্ত ছিলেন না। তবে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের হাত ধরে যখন এ অঞ্চলের মানুষেরা ব্লাউজ পরা শিখল, তারপর থেকেই বদলে যেতে থাকে বাঙালি নারীর পোশাকের ধরন। বদলাতে থাকে পোশাক নির্ধারনের মানদণ্ডও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় পুরুষদের জন্য ফরমাল শার্ট (লম্বা বা হাফ হাতা) ও প্যান্ট এবং ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরার কথা বলা হয়েছে। আর জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে বলা হয়েছে। ফলে আমাদের জলবায়ু যেমনই হোক, কর্মক্ষেত্রের পোশাক-সংস্কৃতিতে এখনো ঔপনিবেশিক প্রভাব তীব্রভাবেই দৃশ্যমান।
অন্যদিকে নারীদের জন্য ছোটহাতার পোশাকে নিষেধাজ্ঞা পোশাক-বিতর্কে যুক্ত করেছে ভিন্ন আরেক মাত্রা। অবশ্য নারীর পোশাক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আমাদের দেশে নতুন নয়।
গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশক থেকেই এই ধারা চলমান। এক্ষেত্রে কারও কারও মনোভঙ্গি এমন, পোশাকের মাধ্যমেই যেন নারীর ‘সম্মান’ও ‘চরিত্র’ নিরূপিত হয়। তাই আবহাওয়া বা পরিস্থিতি অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন নারীর জন্য এখনো বেশ কঠিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পোশাকসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর এর প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, গরমের দেশে ব্যাংক-কর্মীদের জন্য কেন এমন পোশাকবিধির প্রয়োজন পড়ে, যা আরামদায়ক নয়? জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট আরামদায়ক আর আধুনিক হলেও সেগুলোকে কেন ‘অ-ফরমাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে?
আধুনিক মানুষ হিসেবে আমরা কেউই স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা বোধের বাইরে নই। তবে কেন এমন প্রজ্ঞাপন? পোশাক আসলে ঠিক করবে কে? একটি দেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, সমাজ, নাকি প্রতিষ্ঠানিক অনুশাসন?
বেশ কিছুদিন আগে ভালো একটা কোম্পানিতে চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়েছিলেন রিফাত (ছদ্মনাম)। ডাক পেয়ে তিনি বেশ খুশি। ইন্টারভিউয়ের জন্য সব রকম প্রস্তুতিও নিলেন। ভাইভাও হলো। তবে রিফাত লক্ষ করলেন, কোম্পানির লোকেরা তাঁর দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছেন। কারণ কী?
অনেক পরে রিফাত বুঝতে পারলেন, জুন মাসে যখন তাঁর ইন্টারভিউ হচ্ছিল, তখন তিনি পরে গিয়েছিলেন স্যুট আর টাই। কিন্তু বাইরে তখন ছিল কাঠফাঁটা রোদ।
জীবনের কোনো না কোনো সময় আমরা অনেকেই এমন বিড়ম্বনার মুখোমুখি হয়েছি।
পোশাক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এমন কিছু পোশাক আছে, যা আমাদের পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে অথবা তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়।
এবার সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার দিকে চোখ ফেরানো যাক।
গত ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পোশাকবিষয়ক একটি নির্দেশনা জারি করে। যেখানে নারীকর্মীদের জন্য ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক ও লেগিংস নিষিদ্ধ করা হয়; এবং পুরুষদের জন্য জিন্স আর গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে এক দিনের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ঘটনা অনেকগুলো বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, একটি দেশের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে সে দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সম্পর্ক। কেননা, পোশাকেরও রয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আছে রাজনীতিও। তা ছাড়া বলা দরকার, কোনো দেশের পোশাক কেমন হবে, তা ওই দেশের আবহাওয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
তবে এক্ষেত্রে এটিও বলা জরুরি, পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কখনো কখনো সামাজিকতার মাপকাঠিও প্রভাব রাখে। আমাদের দেশে একজন পুরুষ যখন গরমে আরামের জন্য হাফ প্যান্ট বা টি-শার্ট পরেন, তখন সেটি তাঁর ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও কোনো নারী যখন একই কারণে হালকা বা আধুনিক পোশাক পরেন, তখন তাঁকে ‘অশালীন’ হিসেবে দেখার প্রবণতা আছে লক্ষ করা যায় । কখনো কখনো হয়রানি ও সমালোচনার শিকারও হতে হয় তাঁকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ২০২২ সালে নরসিংদী স্টেশনে এক নারীকে পোশাকের জন্য মারধোর ও শ্লীলতাহানির কথা বলা যায়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া বছরের বেশির ভাগ সময়ই থাকে উষ্ণ। তাই ঐতিহাসিকভাবে এ দেশের মানুষের পোশাক হালকা ধরনের হয়ে থাকে। সুতি কাপড় ছিল এখানকার মানুষের পছন্দের শীর্ষে। গরমের জন্যই মূলত এই বাংলা অঞ্চলে মসলিন নামে এক ধরনের পাতলা কাপড় তৈরি করা হয়েছিল, যা ছিল খুবই আরামদায়ক।
পুরুষদের জন্য ধুতি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর নারীর জন্য শাড়িই ছিল এখানকার মানুষের প্রধান পোশাক।
সুতির শাড়ি এমন একটি পোশাক, যা নানা আবহাওয়ায় বেশ আরামদায়ক। আবার লুঙ্গি ও ধুতিও আরামদায়ক পোশাক হিসেবে বিবেচিত।
আধুনিক যুগে এসে পোশাকের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জিন্স, টি-শার্ট, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, টপস—এসব এখন দৈনন্দিন পোশাকের অংশ। অন্যদিকে উষ্ণতার ফলে দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হালকা রঙের, ঢিলেঢালা পোশাকেরও চাহিদা বেড়ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরার চল রয়েছে। যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তীব্র গরমে পুরুষেরা থোব বা দিশদাশার মতো ঢিলেঢালা সাদা পোশাক পরে থাকেন। আর নারীরা পরেন আবায়া, হিজাব বা নিকাব।
মজার ব্যাপার হলো, তাদের এই পোশাক নির্বাচনের পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে মরুভূমির আবহাওয়া। মরু-অঞ্চল অনেক উষ্ণ এবং এখানে অনেক ধুলোবালি। তাই নারীদের এসব পোশাক তাঁদের শরীরকে যেমন সূর্যের তীব্র তাপ থেকে রক্ষা করে, তেমনি ধুলোবালি থেকেও বাঁচায়। অন্যদিকে, ঠান্ডা আবহাওয়ার দেশগুলোতে উষ্ণতার প্রয়োজনে মানুষ ব্যবহার করে মোটা উলের পোশাক, জ্যাকেট, কোট ইত্যাদি। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই রাশিয়ার শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে।
লেখার শুরুতে ওই যে রিফাত নামে ছেলেটির কথা বলছিলাম, ইন্টারভিউয়ে যিনি সুট-টাই পরে এসেছিলেন, এখন আসা যাক সে প্রসঙ্গে। অর্থাৎ ‘ফরমাল’ পোশাক প্রসঙ্গে।
কর্মক্ষেত্রে ‘ফরমাল’ পোশাকের ধারণাটি এসেছে মূলত ঔপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে। ব্রিটিশ আমলে প্রশাসনিক ও পেশাদারত্বের প্রতীক হিসেবে চালু হয় স্যুট-টাই ও শার্ট-প্যান্ট। এরপর ধীরে ধীরে এটি একরকম কেতা হয়ে ওঠে।
তবে স্যুট-টাই, শার্ট-প্যান্ট মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু উষ্ণ জলবায়ুর দেশগুলোতে এটি এখন যেন ‘পেশাদারত্ব’-এর প্রতীক হিসেবে টিকে আছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই আমাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতার একটা ভূমিকা রয়েছে।
ব্রিটিশরা কীভাবে আমাদের পোশাকের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চেয়েছিল, তার একটি বড় উদাহরণ হলো, নারীদের আটপৌরে শাড়ি পরাতেও বাধ সেধেছিল তারা।
বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, একবার সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ইংরেজ ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে গেলেন আটপৌরে শাড়ি পরে। কিন্তু ক্লাবের লোকজন তাঁকে সেখানে ঢুকতে দিল না। তখন থেকেই তিনি ব্লাউজ পরতে শুরু করলেন।
ভারতবর্ষের নারীরা কখনো ব্লাউজে অভ্যস্ত ছিলেন না। তবে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের হাত ধরে যখন এ অঞ্চলের মানুষেরা ব্লাউজ পরা শিখল, তারপর থেকেই বদলে যেতে থাকে বাঙালি নারীর পোশাকের ধরন। বদলাতে থাকে পোশাক নির্ধারনের মানদণ্ডও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় পুরুষদের জন্য ফরমাল শার্ট (লম্বা বা হাফ হাতা) ও প্যান্ট এবং ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরার কথা বলা হয়েছে। আর জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে বলা হয়েছে। ফলে আমাদের জলবায়ু যেমনই হোক, কর্মক্ষেত্রের পোশাক-সংস্কৃতিতে এখনো ঔপনিবেশিক প্রভাব তীব্রভাবেই দৃশ্যমান।
অন্যদিকে নারীদের জন্য ছোটহাতার পোশাকে নিষেধাজ্ঞা পোশাক-বিতর্কে যুক্ত করেছে ভিন্ন আরেক মাত্রা। অবশ্য নারীর পোশাক নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আমাদের দেশে নতুন নয়।
গত শতকের ষাট ও সত্তরের দশক থেকেই এই ধারা চলমান। এক্ষেত্রে কারও কারও মনোভঙ্গি এমন, পোশাকের মাধ্যমেই যেন নারীর ‘সম্মান’ও ‘চরিত্র’ নিরূপিত হয়। তাই আবহাওয়া বা পরিস্থিতি অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন নারীর জন্য এখনো বেশ কঠিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পোশাকসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর এর প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, গরমের দেশে ব্যাংক-কর্মীদের জন্য কেন এমন পোশাকবিধির প্রয়োজন পড়ে, যা আরামদায়ক নয়? জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট আরামদায়ক আর আধুনিক হলেও সেগুলোকে কেন ‘অ-ফরমাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে?
আধুনিক মানুষ হিসেবে আমরা কেউই স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনা বোধের বাইরে নই। তবে কেন এমন প্রজ্ঞাপন? পোশাক আসলে ঠিক করবে কে? একটি দেশের আবহাওয়া, পরিবেশ, সমাজ, নাকি প্রতিষ্ঠানিক অনুশাসন?
‘তুমি যে আমার’, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশ’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’, ‘বাবুজি ধীরে চল না’—এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়িকা গীতা দত্ত ছিলেন ভারতের নারী ‘সিংগিং-সুপারস্টার’। তবে অনেকেই জানেন না, এই কালজয়ী শিল্পী জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে।
১ দিন আগেশাফিন ভাই একদিন আমি ও আমার প্রেমিকাকে ‘মাইলস’-এর প্র্যাক্টিসেও নিয়ে গিয়েছিলেন। ‘মাইলস’-এর প্র্যাকটিস করার ধরন দেখে আমি সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম। একটানা তিন ঘণ্টায় ২৫টির বেশি গান তারা প্র্যাকটিস করল। তা-ও কোনো বিরতি ছাড়াই! ভাবছিলাম, এটা কীভাবে সম্ভব!
২ দিন আগেশিশু-কিশোর বলতে আমরা শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সীদের বুঝে থাকি। এ সময়ে তারা যা দেখে, শোনে ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে, সেটিই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২ দিন আগেযুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়া মানেই প্রাণহানি, হাহাকার ফলাফল হয় শোকাবহ। তবে এতসব হাহাকারের বাইরেও আছে এক ‘অলৌকিক’ গল্প। ২০০৯ সালের এক শীতের বিকেল। নিউইয়র্কের আকাশে হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে একটি যাত্রীবাহী বিমান—ইউএস এয়ারওয়েস ফ্লাইট ১৫৪৯।
৩ দিন আগে