১৫৩৩ সালে পর্তুগালের লিসবন থেকে যাত্রা শুরু করা পর্তুগিজ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘বোম জেসুস’ ৪৭৫ বছর ধরে নিখোঁজ ছিল। এরপর ২০০৮ সালে দক্ষিণ নামিবিয়ার উপকূলে তার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়। জাহাজ থেকে উদ্ধার হয় ঐতিহাসিক রত্নভান্ডার। এই লেখায় থাকছে বোম জেসুসের হারিয়ে যাওয়ার রহস্য ও দীর্ঘ সময় পর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হওয়ার গল্প।
মাহমুদ নেওয়াজ জয়
প্রাচীনকালে পর্তুগিজদের খ্যাতি ছিলো দুর্দান্ত নাবিক ও সমুদ্র অভিযাত্রী হিসেবে। পনের থেকে সতের শতকের শুরু পর্যন্ত ‘আর্লি মডার্ন পিরিয়ড’-এ তারা একের পর এক সমুদ্রযাত্রা করে সারা বিশ্বে নিজেদের ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু তখনকার দিনে সমুদ্রযাত্রা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। ঝড়, জলদস্যু, নাবিকদের রোগব্যাধি—সব মিলিয়ে সমুদ্রযাত্রা ছিল জীবন-মরনের খেলা। সেই সময়ের আধুনিক জাহাজগুলোর একটি ছিল ‘বোম জেসুস’। কিন্তু সেটিও রক্ষা পায়নি।
১৫৩৩ সালের ৭ মার্চ পর্তুগালের লিসবন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে বোম জেসুস। এরপর আর কখনো তার খোঁজ মেলেনি। অনেক বছর কেউ জানত না, জাহাজটি কোথায় হারিয়ে গেছে। এরপর ৪৭৫ বছর পর ২০০৮ সালে এই রহস্যময় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায় লিসবন থেকে অনেক দূরে, দক্ষিণ নামিবিয়ার উপকূলে।
বোম জেসুস জাহাজ পর্তুগালের রাজা মানুয়েল-১-এর শাসনামলে তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময় পর্তুগিজ সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যস্ত ছিল। এটি একটি ‘নাউ’(nau) শ্রেণির জাহাজ। এই নাউ জাহাজগুলো ছিল বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মূল মাধ্যম।
জাহাজগুলো দূরপাল্লার সমুদ্রযাত্রার জন্যই তৈরি হতো, বিশেষ করে ভারত ও পূর্ব এশিয়ার দিকে দূর দূর সমুদ্রযাত্রার জন্য। এইসব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য ছিল খুবই লাভজনক, আর তাই এই পথ ছিল পর্তুগিজদের প্রধান গন্তব্য।
বোম জেসুস ছিল সে সময়কার অন্যান্য জাহাজের চেয়ে বড়, মজবুত আর বেশি পণ্য বহনের উপযোগী। ইতিহাসবিদদের ধারণা, সম্ভবত কোনো ভয়াবহ ঝড় বা দুর্ঘটনায় জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল। তখনকার যোগাযোগব্যবস্থা খুব দুর্বল ছিল, তাই এমন দুর্ঘটনার খবর দ্রুত বা স্পষ্টভাবে পাওয়া যেত না। এই কারণে জাহাজটির ঠিক কোথায় বা কীভাবে ডুবে গেছে, তা বহুদিন অজানা ছিল।
২০০৮ সালে নামিবিয়ার উপকূলে একটি হীরা খননকারী কোম্পানির কর্মীরা খনন করতে গিয়ে হঠাৎ করেই কিছু তামার ইনগট (পিণ্ড) খুঁজে পান। দেখতে প্রাচীন মনে হওয়ায় দ্রুত বিষয়টি জানানো হয় দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্র প্রত্নতত্ত্ববিদদের। পরে জানা যায়, এটি শুধু একটি জাহাজের অবশিষ্টাংশ নয় বরং একটি বিশাল ঐতিহাসিক আবিষ্কারও।
বোম জেসুস নামের এই জাহাজ বালির নিচে তিন ভাগে ভেঙে থাকা অবস্থায় ৪৭৫ বছর বেশ ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। প্রায় ৪০ টন পণ্য উদ্ধার করা হয় এর ভেতর থেকে! এর মধ্যে ছিলো প্রায় ১,৮৪৫টি তামার ইনগট, যার ওজন ছিলো ১৬ থেকে ১৭ টনের মতো। এগুলো তৈরি হয়েছিল জার্মানির অগ্সবার্গ শহরের বিখ্যাত ফুগার পরিবারের হাতে।
এ ছাড়াও উদ্ধার হয় প্রায় দুই হাজারের বেশি সোনা ও রুপার মুদ্রা। যেগুলো এসেছিল স্পেন, ফ্রান্স, ভেনিসসহ নানা দেশ থেকে। সঙ্গে ছিল ১০৫টি হাতির দাঁত, যার ওজন প্রায় ২ টন। তলোয়ার, কামান, কাপড়চোপড়, জ্যোতির্বিজ্ঞানের যন্ত্র, নাবিকদের দিকনির্দেশনার সরঞ্জামসহ আরও অনেক মূল্যবান জিনিস উদ্ধার করা হয় ওই জাহাজ থেকে।
এই বিশাল রত্নভান্ডার ষোল শতকের বিশ্ব বাণিজ্যের জটিল ও আন্তমহাদেশীয় সম্পর্কের এক বাস্তব প্রমাণ। আফ্রিকার হাতির দাঁত, ইউরোপের তৈরি তামার পিণ্ড ও মুদ্রা, আর পূর্ব এশিয়ার সম্ভাব্য বাজার—সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যায়, তখন কীভাবে একটি ‘গ্লোবাল ট্রেড নেটওয়ার্ক’ গড়ে উঠছিল।
বোম জেসুসকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম সাব-সাহারান আফ্রিকার উপকূলে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম মূল্যবান জাহাজডুবির নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। উদ্ধারকৃত জিনিসগুলো বিশেষ লবণাক্ত পানির ট্যাংকে রাখা হচ্ছে যাতে ধাতু ও অন্যান্য উপকরণ দ্রুত ক্ষয়ে না এগুলো লিসবনে নিয়ে গিয়ে জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু নামিবিয়া সরকারের অনুমতি না থাকার কারণে বড় পরিসরে উদ্ধার ও স্থানান্তরের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
বোম জেসুস যেন আজও আমাদের জানান দেয়, আগে মানুষ কতটা সাহসী ছিল আর কতটা ঝুঁকি নিতে হতো সে সময়ের সমুদ্রযাত্রীদের। এই জাহাজ আর এর পণ্য শুধু একটি দুর্ঘটনার স্মৃতি নয়, বরং বিশ্ব ইতিহাসের এক আশ্চর্য দলিল।
প্রাচীনকালে পর্তুগিজদের খ্যাতি ছিলো দুর্দান্ত নাবিক ও সমুদ্র অভিযাত্রী হিসেবে। পনের থেকে সতের শতকের শুরু পর্যন্ত ‘আর্লি মডার্ন পিরিয়ড’-এ তারা একের পর এক সমুদ্রযাত্রা করে সারা বিশ্বে নিজেদের ছাপ ফেলেছিল। কিন্তু তখনকার দিনে সমুদ্রযাত্রা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। ঝড়, জলদস্যু, নাবিকদের রোগব্যাধি—সব মিলিয়ে সমুদ্রযাত্রা ছিল জীবন-মরনের খেলা। সেই সময়ের আধুনিক জাহাজগুলোর একটি ছিল ‘বোম জেসুস’। কিন্তু সেটিও রক্ষা পায়নি।
১৫৩৩ সালের ৭ মার্চ পর্তুগালের লিসবন বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে বোম জেসুস। এরপর আর কখনো তার খোঁজ মেলেনি। অনেক বছর কেউ জানত না, জাহাজটি কোথায় হারিয়ে গেছে। এরপর ৪৭৫ বছর পর ২০০৮ সালে এই রহস্যময় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায় লিসবন থেকে অনেক দূরে, দক্ষিণ নামিবিয়ার উপকূলে।
বোম জেসুস জাহাজ পর্তুগালের রাজা মানুয়েল-১-এর শাসনামলে তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময় পর্তুগিজ সাম্রাজ্য বিশ্বব্যাপী তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যস্ত ছিল। এটি একটি ‘নাউ’(nau) শ্রেণির জাহাজ। এই নাউ জাহাজগুলো ছিল বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মূল মাধ্যম।
জাহাজগুলো দূরপাল্লার সমুদ্রযাত্রার জন্যই তৈরি হতো, বিশেষ করে ভারত ও পূর্ব এশিয়ার দিকে দূর দূর সমুদ্রযাত্রার জন্য। এইসব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য ছিল খুবই লাভজনক, আর তাই এই পথ ছিল পর্তুগিজদের প্রধান গন্তব্য।
বোম জেসুস ছিল সে সময়কার অন্যান্য জাহাজের চেয়ে বড়, মজবুত আর বেশি পণ্য বহনের উপযোগী। ইতিহাসবিদদের ধারণা, সম্ভবত কোনো ভয়াবহ ঝড় বা দুর্ঘটনায় জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল। তখনকার যোগাযোগব্যবস্থা খুব দুর্বল ছিল, তাই এমন দুর্ঘটনার খবর দ্রুত বা স্পষ্টভাবে পাওয়া যেত না। এই কারণে জাহাজটির ঠিক কোথায় বা কীভাবে ডুবে গেছে, তা বহুদিন অজানা ছিল।
২০০৮ সালে নামিবিয়ার উপকূলে একটি হীরা খননকারী কোম্পানির কর্মীরা খনন করতে গিয়ে হঠাৎ করেই কিছু তামার ইনগট (পিণ্ড) খুঁজে পান। দেখতে প্রাচীন মনে হওয়ায় দ্রুত বিষয়টি জানানো হয় দক্ষিণ আফ্রিকার সমুদ্র প্রত্নতত্ত্ববিদদের। পরে জানা যায়, এটি শুধু একটি জাহাজের অবশিষ্টাংশ নয় বরং একটি বিশাল ঐতিহাসিক আবিষ্কারও।
বোম জেসুস নামের এই জাহাজ বালির নিচে তিন ভাগে ভেঙে থাকা অবস্থায় ৪৭৫ বছর বেশ ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল। প্রায় ৪০ টন পণ্য উদ্ধার করা হয় এর ভেতর থেকে! এর মধ্যে ছিলো প্রায় ১,৮৪৫টি তামার ইনগট, যার ওজন ছিলো ১৬ থেকে ১৭ টনের মতো। এগুলো তৈরি হয়েছিল জার্মানির অগ্সবার্গ শহরের বিখ্যাত ফুগার পরিবারের হাতে।
এ ছাড়াও উদ্ধার হয় প্রায় দুই হাজারের বেশি সোনা ও রুপার মুদ্রা। যেগুলো এসেছিল স্পেন, ফ্রান্স, ভেনিসসহ নানা দেশ থেকে। সঙ্গে ছিল ১০৫টি হাতির দাঁত, যার ওজন প্রায় ২ টন। তলোয়ার, কামান, কাপড়চোপড়, জ্যোতির্বিজ্ঞানের যন্ত্র, নাবিকদের দিকনির্দেশনার সরঞ্জামসহ আরও অনেক মূল্যবান জিনিস উদ্ধার করা হয় ওই জাহাজ থেকে।
এই বিশাল রত্নভান্ডার ষোল শতকের বিশ্ব বাণিজ্যের জটিল ও আন্তমহাদেশীয় সম্পর্কের এক বাস্তব প্রমাণ। আফ্রিকার হাতির দাঁত, ইউরোপের তৈরি তামার পিণ্ড ও মুদ্রা, আর পূর্ব এশিয়ার সম্ভাব্য বাজার—সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যায়, তখন কীভাবে একটি ‘গ্লোবাল ট্রেড নেটওয়ার্ক’ গড়ে উঠছিল।
বোম জেসুসকে এখন পর্যন্ত পশ্চিম সাব-সাহারান আফ্রিকার উপকূলে পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ও অন্যতম মূল্যবান জাহাজডুবির নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। উদ্ধারকৃত জিনিসগুলো বিশেষ লবণাক্ত পানির ট্যাংকে রাখা হচ্ছে যাতে ধাতু ও অন্যান্য উপকরণ দ্রুত ক্ষয়ে না এগুলো লিসবনে নিয়ে গিয়ে জাদুঘরে প্রদর্শনের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু নামিবিয়া সরকারের অনুমতি না থাকার কারণে বড় পরিসরে উদ্ধার ও স্থানান্তরের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
বোম জেসুস যেন আজও আমাদের জানান দেয়, আগে মানুষ কতটা সাহসী ছিল আর কতটা ঝুঁকি নিতে হতো সে সময়ের সমুদ্রযাত্রীদের। এই জাহাজ আর এর পণ্য শুধু একটি দুর্ঘটনার স্মৃতি নয়, বরং বিশ্ব ইতিহাসের এক আশ্চর্য দলিল।
পরীক্ষার হল থেকে অফিসের মিটিং, কাজের জিনিস মনে পড়ে না কিন্তু মাথায় মাছির মতো ভনভন করে বাজে কিছু ভাইরাল গান। চান বা না চান, বাসের স্পিকার থেকে চায়ের টং-এ বসা মুরুব্বির নোকিয়া ১২০০ সেট মারফত এইসব গান আপনার কানে ঢুকে পড়ছে হরদম। গত এক দশকে এই কালেকটিভ নেশা জাগানিয়া ৭টা ভাইরাল গান কোনগুলা ছিল?
৩ ঘণ্টা আগেহ্যারি পটারের গল্পগুলো কোথায় ঘটে? অতীতে না ভবিষ্যতে? কিছুদিন আগেই একজন আমাকে বললেন, সপ্তম বইয়ের ক্লাইম্যাক্সেও হ্যারি মরে নি (এবং এই তথ্য নাকি খুব জরুরি!)। অথচ হ্যারি যে অসুস্থ ছিল এটাই তো আমি জানতাম না!
১ দিন আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
১ দিন আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি। কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
২ দিন আগে