আজ বাংলাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের জন্মদিন। অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, গীতিকার এবং সাহিত্যিক হিসেবেও ছিল তাঁর পরিচিতি। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ভাত দে’র মতো বিখ্যাত চলচ্চিত্রের নির্মাতা তিনি। আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা ফিরে তাকাতে চাই ‘গোলাপী’ সিরিজের চলচ্চিত্রের গল্পে। গোলাপী ট্রিলজির সিনেমা কেন আজও প্রাসঙ্গিক?
স্ট্রিম ডেস্ক
আজ কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের জন্মদিন। তিনি নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, ভাত দে, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতার মতো অনেক জনপ্রিয় সিনেমার নির্মাতা। তিনি শুধু পরিচালক নন; তিনি একজন অভিনেতা, সংলাপকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, গীতিকার এবং সাহিত্যিকও।
সিনেমার জগতে আমজাদ হোসেনের পথচলা শুরু হয় অভিনয় দিয়ে। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ ছবিতে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। পরে নিজেই একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন।
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বকালে যে সিনেমা স্বাধীনতা আন্দোলনে গণজোয়ার এনেছিল, সেই ‘জীবন থেকে নেয়া’র কাহিনী ও সংলাপ জহির রায়হানের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছিলেন আমজাদ হোসেন। গ্রামবাংলার ভালোবাসার গল্প হিসেবে পরিচিত ‘সুজন সখী’ ছবির কাহিনী ও সংলাপ রচয়িতাও তিনিই।
অভিনেতা হিসেবেও আমজাদ হোসেন ছিলেন জনপ্রিয়। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে ‘মধু ভাই’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকের মনে আজও জীবন্ত। গীতিকার হিসেবে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘সুন্দরী’ ছবির কালজয়ী গানগুলোও তাঁর লেখা।
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে ‘গোলাপী’ শুধু একটি চরিত্র নয়। সে এক যাত্রা। প্রথম সিনেমা গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) দিয়ে শুরু। পরে আসে গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪) এবং গোলাপী এখন বিলেতে (২০১০)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে প্রথম ‘সিরিজ চলচ্চিত্র’ হিসেবে পরিচিত এই সিনেমাগুলো। এই ট্রিলজিতে পরিচালক আমজাদ হোসেন সমাজকে গোলাপীর চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন।
এমন কিছু ছবি আছে যেগুলো সময়কে ছাপিয়ে যায়। গোলাপী এখন ট্রেনে সেই ধরনের ছবি। সিনেমার গল্প তাঁর নিজের লেখা উপন্যাস ‘দ্রৌপদী এখন ট্রেনে’ থেকে নেওয়া।
সিনেমায় দেখা যায়, গোলাপী গ্রামের মেয়ে। গোলাপী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা। ছোটবেলায়ই সে বুঝেছিল জীবন সহজ নয়। দরিদ্র পরিবার। জীবিকা নির্বাহের জন্য ট্রেনে চা বিক্রি করতে শুরু করে। ট্রেনের কামরা তার কর্মক্ষেত্র। সেখানে নানা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়।
একদিন ফার্স্ট ক্লাসে বসার সময় একজন যাত্রী তাকে বলে, ‘এটা ফার্স্ট ক্লাস।’ গোলাপী জবাব দেয়, ‘বাংলাদেশে কোনো ক্লাস নেই, আমরা হইলো সবাই এক ক্লাসের মানুষ।’ এই সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
গোলাপী শুধু অর্থ উপার্জন করতে চায় না। সে লড়ছে সামাজিক অবহেলা, শোষণ ও অপমানের বিরুদ্ধে। গ্রামের মোড়ল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। ধনী, প্রভাবশালী, নির্দয় মোড়লের বিরোধ চলতে থাকে গোলাপীর সঙ্গে।
মোড়লের ছেলে মিলন (ফারুক) গোলাপীকে ভালোবাসে। কিন্তু বাবার অন্যায় দেখে চুপ থাকে না। পরিবারের ভেতর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। মিলন সাহসী, তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখে পড়ে। গোলাপী একা হয়। তবুও তার যাত্রা থামে না। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় সে আবার ট্রেনে উঠছে।
মুক্তির পর ছবিটি সাড়া ফেলে। গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১১টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় সিনেমাটি। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা পায়।
গোলাপী এখন ঢাকায় এই সিরিজের দ্বিতীয় ছবি। সিনেমাটি মুক্তি পায় প্রথম ছবির ১৬ বছর পর। আবারও ববিতা অভিনয় করেন গোলাপীর চরিত্রে। সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যায় ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, আনোয়ারাসহ তখনকার সময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের।
প্রথম ছবির গোলাপী গ্রামের মেয়ে ছিল। দ্বিতীয় ছবিতে গোলাপীকে ঢাকায় দেখা যায়। ঢাকায় এসে গোলাপী নতুন সংগ্রামে নামে। শহরের জীবিকা আরও কঠিন। ভিড়, প্রতিযোগিতা এবং বেঁচে থাকার লড়াই, সবই তাকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। সে চেষ্টা করে সৎভাবে বাঁচতে, কিন্তু শহরের নানা চক্র তাকে ভিন্ন পথে টেনে নিতে চায়।
ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, প্রান্তিক নারী হিসেবে শহরে টিকে থাকা অনেক বেশি কঠিন। গোলাপীর চারপাশে ভণ্ডামী, প্রতারণা এবং ক্ষমতার খেলা চলতে থাকে। কিছু মানুষ তাকে সাহায্য করে, কেউ নিতে চায় সুযোগ। ছবিটি মূলত দেখায় গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষ কীভাবে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় এবং শহর কীভাবে তাদের বদলে দেয়।
গোলাপী ট্রিলজির তৃতীয় সিনেমায় গল্পের পরিধি আরও বড়। গোলাপী এবার দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছে যায়। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, মৌসুমী, শাবনূর, ফেরদৌস আহমেদ, প্রবীর মিত্র, আহমেদ শরীফের মতো জনপ্রিয় সব তারকা।
প্রথম দুটি ছবির সঙ্গে এই ছবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগের গোলাপীর ঘটনাকে মিলিয়ে এই সিনেমা তৈরি করা হয়নি। ছবিটি মূলত দেখায়, যেসব বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য লন্ডনে যান, সেখানে গিয়ে তাঁদের কী অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া সেখানে বাংলাদেশি মেয়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গোলাপী (মৌসুমী) দেশে অপেক্ষা করে দিন, মাস গোনে। বছর যায়, কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষ আর দেশে ফিরে আসে না। বিলাতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষ (মিঠুন চক্রবর্তী) কি তাকে ভুলে গেছে? ওদিকে জীবিকার কারণে মিঠুন চক্রবর্তী আরেকটি বিয়ে করতে বাধ্য হয়। মিঠুন চক্রবর্তী তার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে সে গোলাপীকে দেখে কষ্ট পান। এরপর গোলাপীকে নিয়ে ফিরে যান বিলাতে।
বিলাতের পরিবেশে শুরু হয় গোলাপীর নতুন জীবন। ছবিতে আমজাদ হোসেন দেখিয়েছেন, ঝলমলে প্রবাসী জীবনের ভেতরটা ফাঁপাও হতে পারে। গল্পে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও উঠে এসেছে। এই সংকট যেন বলে দেয়, গোলাপী যেখানেই যাক, সমস্যা তার পিছু ছাড়ে না।
আমজাদ হোসেন চেয়েছিলেন দর্শকরা চাইলে গোলাপীকে নিয়ে চতুর্থ ছবি নির্মাণ করবেন। ২০১৩ সালে তিনি ‘গোলাপীরা এখন কোথায়’ নামে একটি ডকুফিকশনও বানিয়েছেন। ডকুফিকশনটিতে কাজী নওশাবা আহমেদকে গোলাপী চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
ডকুফিকশনটি দেখিয়েছিল গোলাপীর সেই চিরচেনা গল্পই। সমাজে নানা জায়গায় যে সংগ্রামী নারীরা আছেন, তাঁরা কীভাবে বেঁচে থাকেন? দর্শকরা কখনও গোলাপীকে গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে, কখনও বস্তির মেয়ের চরিত্রে সেখানে দেখতে পেয়েছিলেন।
গোলাপী সিরিজের প্রথম ছবিতে গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল গ্রাম এবং ট্রেন। দ্বিতীয় ছবিতে ঢাকা শহর। তৃতীয় ছবিতে বিদেশের মাটিতে প্রবাসী জীবন। ডকুফিকশনেও গোলাপীকে পাওয়া গেছে কয়েকটি রূপে। যদি এই সিরিজের চতুর্থ ছবি নির্মাণ হতো, নিশ্চিত সেটা চলমান সময়ে নারীর সংগ্রামের গল্পই বলত।
বেঁচে থাকলে আমজাদ হোসেন কী মধ্যপ্রাচ্যে থাকা গোলাপীদের নিয়ে সিনেমা বানাতেন? যারা গৃহকর্মী হয়ে বিদেশে গিয়ে পরিবারে টাকা পাঠানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের গল্প কী তিনি তুলে আনতেন? অন্য সম্ভাব্য গল্পে ‘গোলাপী এখন স্যোশাল-মিডিয়ায়’ থাকতে পারত। তাকে মোকাবিলা করতে হতো প্রতারণা আর সাইবার বুলিংকে।
গোলাপী তাই আজও প্রাসঙ্গিক। কারণ, সে প্রতিটি সময়ের আর প্রতিটি স্থানের মানুষের লড়াইকেই প্রতিনিধিত্ব করে। যদি কোনো নির্মাতা ‘গোলাপী এখন…’ সিনেমা বানান, আমরা হয়তো সেই ট্রেনে চড়তে চাইব, এটা দেখতে যে, এবার গোলাপী যাচ্ছে কোথায়।
আজ কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের জন্মদিন। তিনি নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, ভাত দে, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতার মতো অনেক জনপ্রিয় সিনেমার নির্মাতা। তিনি শুধু পরিচালক নন; তিনি একজন অভিনেতা, সংলাপকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, গীতিকার এবং সাহিত্যিকও।
সিনেমার জগতে আমজাদ হোসেনের পথচলা শুরু হয় অভিনয় দিয়ে। ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ ছবিতে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। পরে নিজেই একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন।
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বকালে যে সিনেমা স্বাধীনতা আন্দোলনে গণজোয়ার এনেছিল, সেই ‘জীবন থেকে নেয়া’র কাহিনী ও সংলাপ জহির রায়হানের সঙ্গে যৌথভাবে লিখেছিলেন আমজাদ হোসেন। গ্রামবাংলার ভালোবাসার গল্প হিসেবে পরিচিত ‘সুজন সখী’ ছবির কাহিনী ও সংলাপ রচয়িতাও তিনিই।
অভিনেতা হিসেবেও আমজাদ হোসেন ছিলেন জনপ্রিয়। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে ‘মধু ভাই’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় দর্শকের মনে আজও জীবন্ত। গীতিকার হিসেবে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ‘সুন্দরী’ ছবির কালজয়ী গানগুলোও তাঁর লেখা।
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে ‘গোলাপী’ শুধু একটি চরিত্র নয়। সে এক যাত্রা। প্রথম সিনেমা গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) দিয়ে শুরু। পরে আসে গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪) এবং গোলাপী এখন বিলেতে (২০১০)। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে প্রথম ‘সিরিজ চলচ্চিত্র’ হিসেবে পরিচিত এই সিনেমাগুলো। এই ট্রিলজিতে পরিচালক আমজাদ হোসেন সমাজকে গোলাপীর চোখ দিয়ে দেখিয়েছেন।
এমন কিছু ছবি আছে যেগুলো সময়কে ছাপিয়ে যায়। গোলাপী এখন ট্রেনে সেই ধরনের ছবি। সিনেমার গল্প তাঁর নিজের লেখা উপন্যাস ‘দ্রৌপদী এখন ট্রেনে’ থেকে নেওয়া।
সিনেমায় দেখা যায়, গোলাপী গ্রামের মেয়ে। গোলাপী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা। ছোটবেলায়ই সে বুঝেছিল জীবন সহজ নয়। দরিদ্র পরিবার। জীবিকা নির্বাহের জন্য ট্রেনে চা বিক্রি করতে শুরু করে। ট্রেনের কামরা তার কর্মক্ষেত্র। সেখানে নানা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়।
একদিন ফার্স্ট ক্লাসে বসার সময় একজন যাত্রী তাকে বলে, ‘এটা ফার্স্ট ক্লাস।’ গোলাপী জবাব দেয়, ‘বাংলাদেশে কোনো ক্লাস নেই, আমরা হইলো সবাই এক ক্লাসের মানুষ।’ এই সংলাপ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
গোলাপী শুধু অর্থ উপার্জন করতে চায় না। সে লড়ছে সামাজিক অবহেলা, শোষণ ও অপমানের বিরুদ্ধে। গ্রামের মোড়ল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। ধনী, প্রভাবশালী, নির্দয় মোড়লের বিরোধ চলতে থাকে গোলাপীর সঙ্গে।
মোড়লের ছেলে মিলন (ফারুক) গোলাপীকে ভালোবাসে। কিন্তু বাবার অন্যায় দেখে চুপ থাকে না। পরিবারের ভেতর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। মিলন সাহসী, তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখে পড়ে। গোলাপী একা হয়। তবুও তার যাত্রা থামে না। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় সে আবার ট্রেনে উঠছে।
মুক্তির পর ছবিটি সাড়া ফেলে। গানগুলো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ১১টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় সিনেমাটি। বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা পায়।
গোলাপী এখন ঢাকায় এই সিরিজের দ্বিতীয় ছবি। সিনেমাটি মুক্তি পায় প্রথম ছবির ১৬ বছর পর। আবারও ববিতা অভিনয় করেন গোলাপীর চরিত্রে। সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে দেখা যায় ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, আনোয়ারাসহ তখনকার সময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীদের।
প্রথম ছবির গোলাপী গ্রামের মেয়ে ছিল। দ্বিতীয় ছবিতে গোলাপীকে ঢাকায় দেখা যায়। ঢাকায় এসে গোলাপী নতুন সংগ্রামে নামে। শহরের জীবিকা আরও কঠিন। ভিড়, প্রতিযোগিতা এবং বেঁচে থাকার লড়াই, সবই তাকে একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। সে চেষ্টা করে সৎভাবে বাঁচতে, কিন্তু শহরের নানা চক্র তাকে ভিন্ন পথে টেনে নিতে চায়।
ছবিতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, প্রান্তিক নারী হিসেবে শহরে টিকে থাকা অনেক বেশি কঠিন। গোলাপীর চারপাশে ভণ্ডামী, প্রতারণা এবং ক্ষমতার খেলা চলতে থাকে। কিছু মানুষ তাকে সাহায্য করে, কেউ নিতে চায় সুযোগ। ছবিটি মূলত দেখায় গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষ কীভাবে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয় এবং শহর কীভাবে তাদের বদলে দেয়।
গোলাপী ট্রিলজির তৃতীয় সিনেমায় গল্পের পরিধি আরও বড়। গোলাপী এবার দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছে যায়। এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, মৌসুমী, শাবনূর, ফেরদৌস আহমেদ, প্রবীর মিত্র, আহমেদ শরীফের মতো জনপ্রিয় সব তারকা।
প্রথম দুটি ছবির সঙ্গে এই ছবির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগের গোলাপীর ঘটনাকে মিলিয়ে এই সিনেমা তৈরি করা হয়নি। ছবিটি মূলত দেখায়, যেসব বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের জন্য লন্ডনে যান, সেখানে গিয়ে তাঁদের কী অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া সেখানে বাংলাদেশি মেয়েদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গোলাপী (মৌসুমী) দেশে অপেক্ষা করে দিন, মাস গোনে। বছর যায়, কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষ আর দেশে ফিরে আসে না। বিলাতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষ (মিঠুন চক্রবর্তী) কি তাকে ভুলে গেছে? ওদিকে জীবিকার কারণে মিঠুন চক্রবর্তী আরেকটি বিয়ে করতে বাধ্য হয়। মিঠুন চক্রবর্তী তার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে সে গোলাপীকে দেখে কষ্ট পান। এরপর গোলাপীকে নিয়ে ফিরে যান বিলাতে।
বিলাতের পরিবেশে শুরু হয় গোলাপীর নতুন জীবন। ছবিতে আমজাদ হোসেন দেখিয়েছেন, ঝলমলে প্রবাসী জীবনের ভেতরটা ফাঁপাও হতে পারে। গল্পে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও উঠে এসেছে। এই সংকট যেন বলে দেয়, গোলাপী যেখানেই যাক, সমস্যা তার পিছু ছাড়ে না।
আমজাদ হোসেন চেয়েছিলেন দর্শকরা চাইলে গোলাপীকে নিয়ে চতুর্থ ছবি নির্মাণ করবেন। ২০১৩ সালে তিনি ‘গোলাপীরা এখন কোথায়’ নামে একটি ডকুফিকশনও বানিয়েছেন। ডকুফিকশনটিতে কাজী নওশাবা আহমেদকে গোলাপী চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
ডকুফিকশনটি দেখিয়েছিল গোলাপীর সেই চিরচেনা গল্পই। সমাজে নানা জায়গায় যে সংগ্রামী নারীরা আছেন, তাঁরা কীভাবে বেঁচে থাকেন? দর্শকরা কখনও গোলাপীকে গার্মেন্টসকর্মী হিসেবে, কখনও বস্তির মেয়ের চরিত্রে সেখানে দেখতে পেয়েছিলেন।
গোলাপী সিরিজের প্রথম ছবিতে গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল গ্রাম এবং ট্রেন। দ্বিতীয় ছবিতে ঢাকা শহর। তৃতীয় ছবিতে বিদেশের মাটিতে প্রবাসী জীবন। ডকুফিকশনেও গোলাপীকে পাওয়া গেছে কয়েকটি রূপে। যদি এই সিরিজের চতুর্থ ছবি নির্মাণ হতো, নিশ্চিত সেটা চলমান সময়ে নারীর সংগ্রামের গল্পই বলত।
বেঁচে থাকলে আমজাদ হোসেন কী মধ্যপ্রাচ্যে থাকা গোলাপীদের নিয়ে সিনেমা বানাতেন? যারা গৃহকর্মী হয়ে বিদেশে গিয়ে পরিবারে টাকা পাঠানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের গল্প কী তিনি তুলে আনতেন? অন্য সম্ভাব্য গল্পে ‘গোলাপী এখন স্যোশাল-মিডিয়ায়’ থাকতে পারত। তাকে মোকাবিলা করতে হতো প্রতারণা আর সাইবার বুলিংকে।
গোলাপী তাই আজও প্রাসঙ্গিক। কারণ, সে প্রতিটি সময়ের আর প্রতিটি স্থানের মানুষের লড়াইকেই প্রতিনিধিত্ব করে। যদি কোনো নির্মাতা ‘গোলাপী এখন…’ সিনেমা বানান, আমরা হয়তো সেই ট্রেনে চড়তে চাইব, এটা দেখতে যে, এবার গোলাপী যাচ্ছে কোথায়।
এআই কি মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী? ধ্বংস করবে মানবসভ্যতাকে? বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে এই প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন খোদ এআই বিশেষজ্ঞরা। এআই জগতের গডফাদারেরা খুঁজে ফিরছেন মানুষের বেঁচে থাকার উপায়। কী সেই উপায়?
৪ ঘণ্টা আগেখাইরুল বাসারের গান ইউটিউবে শুনতে গিয়ে কমেন্টবক্সে চোখ পড়ল। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘খাইরুল বাসারের গানে আলাদা একটা পিনিক আছে।’ এই ‘পিনিক’ আসলে 'ক্যাচি' আর লিরিকে-টিউনে রেপিটেটিভ ফর্মের কারণে হুকলাইন মুখস্ত হয়ে যাওয়া। আর সঙ্গে বাংলা ঢোলের মাথাদোলানো সাউন্ডস্কেপ।
১ দিন আগে‘ঘরে না থাকলে লাইট-ফ্যান বন্ধ রাখুন’—মোটামুটি সকলেই এ বাক্যটির সঙ্গে পরিচিত। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে টিভি, রেডিও, পত্রিকা- কোথায় ছিল না এই বিজ্ঞাপন?
১ দিন আগেবাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় ও আধুনিকতার এক উজ্জ্বল ভাষ্যকার রশীদ করীম। উপন্যাসের আখ্যানে ধারণ করেছেন বাংলা অঞ্চলের মানুষের নৈমিত্তিক ছবি-ব্যক্তিক ও সামষ্টিক বাসনার রূপকল্প।
১ দিন আগে