সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’
বাবিল থেকে পবিত্রভূমি জাহুদায় (ইয়াহুদা) ফিরছিল মিকা—যেখানে একদিন ধর্ম বা বিশ্বাসের জন্যই তাকে উৎখাত করা হয়েছিল। ফিরে গিয়েও পেল সেই ‘ঘরহীনতার’ নিষ্ঠুরতাই। আত্মপরিচয়ের দ্বন্দ্ব, স্মৃতির যন্ত্রণা আর সমাজের অবিশ্বাসে সে হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ। সত্যেন সেন তাঁর কলমে এই সর্বজনীন বিচ্যুতিকে রূপ দেন ‘পাপের সন্তান’-এ। জন্মদিনে সত্যেন সেনকে স্মরণ করে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শতাব্দীকা ঊর্মি
স্ট্রিম ডেস্ক
মিকার জীবন যেন প্রতিধ্বনি করে তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভার সেই দুঃসহ প্রশ্নটির—‘হোয়্যার ইজ হোম হোয়েন হোম হ্যাজ টার্নড ইটস ব্যাক ইন ইউ?’ বাস্তব ইতিহাস ও ধর্মের বাস্তবতা ব্যবহার করে সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসে গড়ে উঠেছে এক পরিহাসময়, অথচ গভীর ট্র্যাজেডি—যেখানে ‘ফিরে যাওয়া’ মানেই ঘরে ফেরা নয়, বরং আরও একবার নির্বাসনে পা রাখা।
ভারতীয় তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভা তাঁর ‘লোকেশন অব কালচার’-এ বলেছেন, ‘হোয়্যার ইজ হোম হোয়েন হোম হ্যাজ টার্নড ইটস ব্ল্যাক অন ইউ? আর এই প্রশ্নটিই যেন বারবার ফুটে উঠেছে সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসের প্রতিটি স্তরে। দেশভাগ, রাজনৈতিক ছিন্নতা, আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন এবং সামাজিক বিচ্যুতি—এসব উপাদান মিলে তৈরি হয় এক গভীর ‘ঘরহীনতার’ অনুভূতি।
হোমি কে ভাভার ‘আনহোমলিনেস’ বা ‘ঘরহীনতা’র তত্ত্বে উঠে আসে এই অভিজ্ঞতাই—যেখানে ব্যক্তি নিজের ঘরেই পরবাসী হয়ে পড়ে, ঘর হারিয়ে যায় অথচ দেশত্যাগ করা হয় না। ভাভার চিন্তা তত্ত্ব পাঠ করলে দেখা যায় উপন্যাসের নায়ক মিকা কেবল একজন ব্যক্তি নয়—সে এক ছিন্নমূল জাতির, এক পাপগ্রস্ত সময়ের এবং ‘ঘরের মধ্যেই গৃহহীন’ অবস্থার আয়না।
মিকার ‘আনহোমলিনেস’: পাপ, স্মৃতি ও নির্বাসন
মিকা হলো এমন এক চরিত্র, যে তার দেশেও ঘর খুঁজে পায় না, আর বিদেশেও নয়। জাহুদা থেকে বাবিল যাত্রা তাঁর জীবনের টানাপোড়েনের ছবি। নিজের ভূমিতে ফিরে গিয়েও ঘটনাক্রমে সে পরিণত হয় শরণার্থী বা বহিষ্কৃত হওয়া এক ‘অপর’ সত্তায়। তার অতীত রাজনৈতিক সংগ্রাম, পরিবারের ভাঙন এবং ব্যক্তিগত পাপ তাকে এমন এক মানসিক ভূগোলে নিয়ে যায়—যেখানে কোনো ঘর নেই, শুধু স্মৃতির ভাঙা দরজা-জানালা।
মিকার অস্থিরতা, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধা এবং পরিচয়ের সংকট ভাভার তত্ত্বের সরাসরি প্রতিফলন। সে নিজেকে ধর্মপ্রাণ সত্তা নিয়ে সংস্কারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। তার অতীত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান—সব যেন এক বিভ্রান্ত সময়ের বলয়ে আটকে থাকে। সমাজ তাকে গ্রহণ করে না, আবার সে নিজেও সমাজকে আপন ভাবতে পারে না।
এই অবস্থাকেই বিশ্লেষণ করেছিলেন পোস্ট-কলোনিয়াল তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভা। তিনি তাঁর লেখায় বলেন, ঘরহীনতা বা ‘আনহোমলি’ অবস্থান হলো এক প্রকার বাইরের দুনিয়া ও নতুন সংস্কৃতি সূচনার অবস্থা। এটি এমন এক বিচ্ছিন্ন অনুভব, যেখানে ‘ঘর’ এবং ‘জগৎ’—উভয়কেই নতুন করে অপরিচিত মনে হয়, যেন তারা আর স্বাভাবিক কোনো জায়গায় নেই।
এই অবস্থাকে ভাভা বলেন, ‘এসট্রাঞ্জমেন্ট উইথইন দ্য ফেমিলিয়ার'—যেখানে পরিচিত স্থানই অচেনা হয়ে পড়ে।
স্মৃতির শরণার্থী: ইতিহাস বনাম আত্মপরিচয়
ভাভার আনহোমলিনেসে স্মৃতি এক বড় ভূমিকা রাখে—বিশেষ করে উপনিবেশিক সমাজে। যেখানে ইতিহাস ব্যক্তিকে বলে দেয়, কে সে। মিকা তার স্মৃতিতে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু সেসব স্মৃতি কেবল অনুশোচনা আর ঘৃণার ভার বহন করে। তার শৈশব, রাজনৈতিক যৌবন, প্রেম—সবই তাকে আহত করে, ঘর ফিরতে দেয় না।
এখানে মিকার স্মৃতি যেন এক ‘ডিজকোলেটেড আর্কাইভ’—যা তার কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে না, বরং বিভ্রান্ত করে।
ভাভা বলেছিলেন, উপনিবেশ-উত্তর সমাজে পরিচয় কখনোই একরৈখিক নয়। যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি মিলেমিশে এক রূপ নেয়, যা একযোগে শক্তিও, আবার সংকটও।
সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসটি হোমি কে ভাভার আনহোমলিনেসের এক জীবন্ত চেহারা এবং ঘরহীন মানুষের একান্ত অন্তর্দহন। কেবল দেশছাড়া হলেই মানুষ পরবাসী হয় না। নিজের দেশেই মানুষ হতে পারে গৃহহীন, ছিন্নমূল এবং অন্তর্জাত যন্ত্রণায় দগ্ধ।
‘ঘর’ কেবল ইট-পাথরের কাঠামো নয়। বরং পরিচয়, গ্রহণযোগ্যতা, ইতিহাস এবং স্মৃতির এক জটিল নির্মাণ—যা একবার ভেঙে গেলে আর সহজে ফিরে আসে না।
মিকার জীবন যেন প্রতিধ্বনি করে তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভার সেই দুঃসহ প্রশ্নটির—‘হোয়্যার ইজ হোম হোয়েন হোম হ্যাজ টার্নড ইটস ব্যাক ইন ইউ?’ বাস্তব ইতিহাস ও ধর্মের বাস্তবতা ব্যবহার করে সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসে গড়ে উঠেছে এক পরিহাসময়, অথচ গভীর ট্র্যাজেডি—যেখানে ‘ফিরে যাওয়া’ মানেই ঘরে ফেরা নয়, বরং আরও একবার নির্বাসনে পা রাখা।
ভারতীয় তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভা তাঁর ‘লোকেশন অব কালচার’-এ বলেছেন, ‘হোয়্যার ইজ হোম হোয়েন হোম হ্যাজ টার্নড ইটস ব্ল্যাক অন ইউ? আর এই প্রশ্নটিই যেন বারবার ফুটে উঠেছে সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসের প্রতিটি স্তরে। দেশভাগ, রাজনৈতিক ছিন্নতা, আত্মপরিচয়ের টানাপোড়েন এবং সামাজিক বিচ্যুতি—এসব উপাদান মিলে তৈরি হয় এক গভীর ‘ঘরহীনতার’ অনুভূতি।
হোমি কে ভাভার ‘আনহোমলিনেস’ বা ‘ঘরহীনতা’র তত্ত্বে উঠে আসে এই অভিজ্ঞতাই—যেখানে ব্যক্তি নিজের ঘরেই পরবাসী হয়ে পড়ে, ঘর হারিয়ে যায় অথচ দেশত্যাগ করা হয় না। ভাভার চিন্তা তত্ত্ব পাঠ করলে দেখা যায় উপন্যাসের নায়ক মিকা কেবল একজন ব্যক্তি নয়—সে এক ছিন্নমূল জাতির, এক পাপগ্রস্ত সময়ের এবং ‘ঘরের মধ্যেই গৃহহীন’ অবস্থার আয়না।
মিকার ‘আনহোমলিনেস’: পাপ, স্মৃতি ও নির্বাসন
মিকা হলো এমন এক চরিত্র, যে তার দেশেও ঘর খুঁজে পায় না, আর বিদেশেও নয়। জাহুদা থেকে বাবিল যাত্রা তাঁর জীবনের টানাপোড়েনের ছবি। নিজের ভূমিতে ফিরে গিয়েও ঘটনাক্রমে সে পরিণত হয় শরণার্থী বা বহিষ্কৃত হওয়া এক ‘অপর’ সত্তায়। তার অতীত রাজনৈতিক সংগ্রাম, পরিবারের ভাঙন এবং ব্যক্তিগত পাপ তাকে এমন এক মানসিক ভূগোলে নিয়ে যায়—যেখানে কোনো ঘর নেই, শুধু স্মৃতির ভাঙা দরজা-জানালা।
মিকার অস্থিরতা, নিজের অস্তিত্ব নিয়ে দ্বিধা এবং পরিচয়ের সংকট ভাভার তত্ত্বের সরাসরি প্রতিফলন। সে নিজেকে ধর্মপ্রাণ সত্তা নিয়ে সংস্কারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়। তার অতীত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান—সব যেন এক বিভ্রান্ত সময়ের বলয়ে আটকে থাকে। সমাজ তাকে গ্রহণ করে না, আবার সে নিজেও সমাজকে আপন ভাবতে পারে না।
এই অবস্থাকেই বিশ্লেষণ করেছিলেন পোস্ট-কলোনিয়াল তাত্ত্বিক হোমি কে ভাভা। তিনি তাঁর লেখায় বলেন, ঘরহীনতা বা ‘আনহোমলি’ অবস্থান হলো এক প্রকার বাইরের দুনিয়া ও নতুন সংস্কৃতি সূচনার অবস্থা। এটি এমন এক বিচ্ছিন্ন অনুভব, যেখানে ‘ঘর’ এবং ‘জগৎ’—উভয়কেই নতুন করে অপরিচিত মনে হয়, যেন তারা আর স্বাভাবিক কোনো জায়গায় নেই।
এই অবস্থাকে ভাভা বলেন, ‘এসট্রাঞ্জমেন্ট উইথইন দ্য ফেমিলিয়ার'—যেখানে পরিচিত স্থানই অচেনা হয়ে পড়ে।
স্মৃতির শরণার্থী: ইতিহাস বনাম আত্মপরিচয়
ভাভার আনহোমলিনেসে স্মৃতি এক বড় ভূমিকা রাখে—বিশেষ করে উপনিবেশিক সমাজে। যেখানে ইতিহাস ব্যক্তিকে বলে দেয়, কে সে। মিকা তার স্মৃতিতে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু সেসব স্মৃতি কেবল অনুশোচনা আর ঘৃণার ভার বহন করে। তার শৈশব, রাজনৈতিক যৌবন, প্রেম—সবই তাকে আহত করে, ঘর ফিরতে দেয় না।
এখানে মিকার স্মৃতি যেন এক ‘ডিজকোলেটেড আর্কাইভ’—যা তার কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে না, বরং বিভ্রান্ত করে।
ভাভা বলেছিলেন, উপনিবেশ-উত্তর সমাজে পরিচয় কখনোই একরৈখিক নয়। যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি মিলেমিশে এক রূপ নেয়, যা একযোগে শক্তিও, আবার সংকটও।
সত্যেন সেনের ‘পাপের সন্তান’ উপন্যাসটি হোমি কে ভাভার আনহোমলিনেসের এক জীবন্ত চেহারা এবং ঘরহীন মানুষের একান্ত অন্তর্দহন। কেবল দেশছাড়া হলেই মানুষ পরবাসী হয় না। নিজের দেশেই মানুষ হতে পারে গৃহহীন, ছিন্নমূল এবং অন্তর্জাত যন্ত্রণায় দগ্ধ।
‘ঘর’ কেবল ইট-পাথরের কাঠামো নয়। বরং পরিচয়, গ্রহণযোগ্যতা, ইতিহাস এবং স্মৃতির এক জটিল নির্মাণ—যা একবার ভেঙে গেলে আর সহজে ফিরে আসে না।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র স্মরণে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রিয় আননোন থার্টি ওয়াই’। গত শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে হয়ে গেল সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো। কী দেখিয়েছে সিনেমাটি?
১ দিন আগেশাফিন আহমেদের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা গান এখনো তাঁকে হারানোর ব্যথা ভুলতে পারেনি। সংগীতপ্রেমীরা টের পাচ্ছেন তাঁর শূন্যতা। আজ আমরা ফিরে তাকাতে চাই ১৮ বছরের এক তরুণ শাফিন আহমেদের দিকে। কীভাবে তিনি ‘মাইলস’ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন—শুরুর সেই ঘটনা আজ মনে করতে চাই।
২ দিন আগেএকটি দেশের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে সে দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সম্পর্ক। কেননা, পোশাকেরও রয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আছে রাজনীতি। তা ছাড়া বলা দরকার, কোনো দেশের পোশাক কেমন হবে, তা ওই দেশের আবহাওয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
৩ দিন আগে‘তুমি যে আমার’, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশ’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’, ‘বাবুজি ধীরে চল না’—এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়িকা গীতা দত্ত ছিলেন ভারতের নারী ‘সিংগিং-সুপারস্টার’। তবে অনেকেই জানেন না, এই কালজয়ী শিল্পী জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে।
৪ দিন আগে