কে এম রাকিব
‘দূরে থাকার একটা প্রধান সুখ হচ্ছে চিঠি—দেখাশোনার সুখের চেয়েও তার একটু বিশেষত্ব আছে।…একরকমের নিবিড়তা-গভীরতা, একপ্রকার বিশেষ আনন্দ আছে। তোমার কি তাই মনে হয় না?’—একটি চিঠিতে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ; যেখানে মৃণালিনী দেবীকে তিনি সম্বোধন করেছেন ‘ভাই ছুটি’ বলে।
‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিও’--হেলাল হাফিজও চেয়েছেন প্রিয়তমা তাকে চিঠি দিক। অথচ
দাপ্তরিক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া, চিঠি এখন আর আমরা লিখি না। একসময়ের নৈমিত্তিক, অনিবার্য চিঠি আজ বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক উপাদান। এখন আমরা মেসেজ করি, হোয়াটস্যাপ করি, মেইল করি, ভিডিও বা অডিও মেসেজ পাঠাই। তবে চিঠি শব্দটা এখনো অনেকের জন্য স্মৃতির দুয়ার খুলে দেয়, নস্টালজিয়া আবাহন করে।
চিঠি সময়ের আয়না। পুরোনো চিঠি পুরোনো দিনের স্মৃতির জাদুঘর। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
বিশ্বসাহিত্যে ও ইতিহাসে অসংখ্য, অনবদ্য, অদ্ভুত, মজার, দুঃখের বিচিত্র ধরনের চিঠি রয়েছে। পত্রোপন্যাস বলে একটা জনপ্রিয় সাহিত্য ধারাই একসময় ছিল। আজ বিশ্ব চিঠি দিবসে, সবিনয়ে নিবেদন, খুঁজে পাওয়া কিছু ব্যতিক্রমী চিঠি।
একটা লম্বা চিঠির শেষে ব্লেইজ পাসকাল একবার লিখেছিলেন, ‘সময়ের অভাবে চিঠিটা সংক্ষিপ্ত করতে পারলাম না, লম্বা হয়ে গেল।’ আপাত স্ববিরোধী বলে মনে হলেও ছোট ও সংক্ষিপ্ত চিঠি লেখা কিন্তু কঠিন। তবে যদি প্রশ্ন ওঠে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম চিঠি কোনটি? পড়ুন…
এইমাত্র আপনি দুটি চিঠি পড়ে ফেললেন। লেখক ও প্রকাশকের চিঠি আদান-প্রদান। পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম চিঠি হিসেবে বিবেচিত। লেখকটি ছিলেন ভিক্টর হুগো। তার ‘লা মিজারেবল’ বইয়ের বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রে কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে জবাবে মার্কিন প্রকাশক জানান '!’—মানে ব্যাপক কাটতি। বেস্টসেলার।
গুরুদেবের প্রেমপত্র?
দুনিয়ার এন্তার বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঠিক প্রেমপত্র বলতে যা বোঝায়, রবীন্দ্রনাথ তা লেখেননি। এমনকি যাঁকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ‘বিবি’ ডাকতেন, সেই ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিপত্রকেও প্রেমপত্র বলা যায় না।
নিচের এই একটা চিঠিতে মাঝেমধ্যে একটু বিরহবিধুর প্রেমভাব উঁকি মেরেছে, যেখানে মৃণালিনী দেবীকে রবীন্দ্রনাথ ‘ভাই ছুটি’ বলে সম্বোধন করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ প্লাস প্রেমপত্র’ কোটায় এই চিঠিটা পাঠকদের সঙ্গে আমরা শেয়ার করছি।
ভাই ছুটি,
তোমার সন্ধ্যা বেলাকার মনের ভাবে আমার কি কোনো অধিকার নেই? আমি কি কেবল দিনের বেলাকার? সূর্য্য অস্ত গেলেই তোমার মনের থেকে আমার দৃষ্টিও অস্ত যাবে? তোমার যা মনে এসেছিল আমাকে কেন লিখে পাঠালে না? তোমার শেষের দু চার দিনের চিঠিতে আমার যেন কেমন একটা খটকা রয়ে গেছে। সেটা কি ঠিক এনালাইজ করে বলতে পারিনে কিন্তু একটা কিসের আচ্ছাদন আছে। যাক গে! হৃদয়ের সূক্ষ্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করাটা লাভজনক কাজ নয়। মোটামুটি সাদাসিধে ভাবে সব গ্রহণ করাই ভাল।
রবি
আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি।
কান্ট্রি সিঙ্গার জনি ক্যাশের সঙ্গে জুন কার্টারের প্রথম দেখা হয় ১৯৫৬ সালে। ক্যাশ তখন বিবাহিত হলেও দুজনের তাৎক্ষণিক বন্ধুত্ব হয়ে যায়, যা আসলে ছিল বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি। ক্যাশ বেশ কয়েকবার প্রস্তাব দিলেও কার্টার রাজি হননি। প্রথম সাক্ষাতের ১৩ বছর পর ১ মার্চ ১৯৬৮ সালে এক কনসার্টে ক্যাশ আবার প্রস্তাব দেন। জুন এবার সম্মত হন। তাঁরা বিয়ে করেন এবং আমৃত্যু তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। ১৯৯৪ সালে জুনের পয়ষট্টিতম জন্মদিনে নিচের চিঠিটা লেখেন জনি ক্যাশ। ভণিতাহীন, অলংকারহীন, সহজ-সরল প্রেমের স্বীকারোক্তি।
কয়েক বছর পরে আরেকটা নোট লেখেন জুনের মৃত্যুর পরে। চিঠি ও নোট–দুটিই এখানে শেয়ার করা হলো।
জুন ২৩, ১৯৯৪
ওডেন্স, ডেনমার্ক
শুভ জন্মদিন প্রিন্সেস,
আমরা বুড়ো হই আর পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে নিই। আমরা একইরকম করে ভাবি। পরস্পরকে পাঠ করি। মুখে না বললেও আমরা বুঝতে পারি, সে কী চায়। কখনোবা আমরা পরস্পরকে বিরক্ত করি। মাঝেমধ্যে একে অন্যের ব্যাপারে বদ্ধমূল ধারণা পুষে রাখি।
তবে, মাঝেমধ্যে, যেমন আজ, উপলব্ধি করলাম আমার কী সৌভাগ্য যে আমার দেখা সেরা নারীটির সঙ্গে জীবন শেয়ার করতে পারছি। জুন, তুমি এখনও আমাকে মুগ্ধ করো, প্রেরণা দাও। ভালো করতে প্রভাবিত করো। তুমি আমার বাসনার মঞ্জিল। আমার পার্থিব অস্তিত্বের একমাত্র কারণ। তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি।
শুভ জন্মদিন প্রিন্সেস,
জন
জুলাই ১১, ২০০৩
দুপুর
আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি। সত্যিই বাসি। আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি। সত্যিই বাসি। সেও বাসে।
এখন সে স্বর্গের দূত, কিন্তু আমি নই। এখন সে স্বর্গের দূত, কিন্তু আমি নই।
১৯২২ সালে ফ্রিদা কাহলো ও দিয়েগো রিভেরার প্রথম মোলাকাত, ১৯২৯-এ বিয়ে। কাহলো ও রিভেরার বয়সের পার্থক্য ২০, মতপার্থক্য (প্রেম, পরকীয়া, শিল্প ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে) আরও বেশি। তারপরও দুজনের দীর্ঘ ২৪ বছরের বিবাহিত জীবন। তবে দুই দফায়। ১৯৩৯ সালে প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর তাঁরা আবার বিয়ে করেন ১৯৪০ সালে। ১৯৫৬ সালে ফ্রিদার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিয়ে টিকে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ দিকে যখন ফ্রিদার একটা পা অ্যাম্পুটেট করা হবে, তখন হাসপাতাল থেকে দিয়েগোকে লেখা একটা চিঠি তুলে দেওয়া হলো এখানে। চিঠিটা তাঁদের সম্পর্ক ও জীবনের মতোই পাগলাটে ও তীব্র। পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত প্রেমপত্রগুলোর একটি।
মেক্সিকো,
১৯৫৩
প্রিয় দিয়েগো,
এই চিঠিটা আমি লিখছি হাসপাতাল থেকে, ঠিক অপারেশন থিয়েটারে অ্যাডমিট হওয়ার আগ মুহূর্তে। আমাকে ওরা তাড়া দিচ্ছে, কিন্তু আমি চিঠিটা শেষ করবো বলে গোঁ ধরেছি; কারণ, আমি কিছু অসম্পূর্ণ রেখে যেতে চাই না। বিশেষ করে এই সময়ে, কারণ আমি জেনে গেছি ওঁরা কী করতে চায়। ওরা আমার আত্মসম্মানে চোট দিয়ে আমার পা কেটে ফেলতে চায়। যখন ওরা আমাকে বলল, আমার পা অ্যাম্পুটেট করতে হবে, তখন আমি অতটা আক্রান্ত হই নাই যতটা সবাই ধরে নিয়েছিল হবো। হই নাই, আমি অলরেডি একজন পঙ্গু নারীই ছিলাম যখন আমি তোমাকে হারিয়েছি, আবার, শততমবারের মতো, এবং আমি তারপরও বেঁচে আছি।
আমি ব্যথা ভয় পাই না, তুমি জানো। ব্যথা আমার একান্ত, আমার সত্তার অংশ। যদিও আমি স্বীকার করবো আমি ভুগি, বেশ অনেকটা, যখন তুমি আমার ওপর চিট করো, প্রতিবার, বিভিন্ন নারীর সাথে, আমার বোনের সাথে। কীভাবে তারা তোমার কাছে বোকা বনে যায়? তোমার নিশ্চয়ই মনে হয় আমি ক্রিস্টিনার ওপর অনেক রাগ, আজকে যেহেতু কনফেস করছি তোমাকে বলি, আমি ওর ওপর রেগে নেই। আমার রাগ আছে, তোমার আর আমার ওপর। নিজের ওপর, কারণ আমি কখনো বুঝতে পারি নি তুমি কী খুঁজতে ও খুঁজছো তাদের কাছে, যা আমি দিতে দিতে পারি না। ভণিতায় যাবো না দিয়েগো, একটা মানুষের পক্ষে যা যা দেওয়া সম্ভব ভালোবেসে আমি তোমাকে সব দিয়েছি। এটা আমরা দুজনই জানি। কিন্তু তারপরও তুমি কীভাবে তুমি এতগুলো নারীকে সিডিউস করলে একজন কুৎসিত জানোয়ার হয়ে?
যাইহোক, এই চিঠি শুধু অভিযোগ করার জন্য আমি লিখছি না। আমরা একে অপরকে এক জীবনে এবং তার পরবর্তী জীবনগুলোয় যা যা দোষারোপ করা সম্ভব, করে ফেলেছি। আমি লিখছি কারণ আমার পা কেটে ফেলা হচ্ছে (এই হতচ্ছাড়া পায়ের মর্জি মোতাবেক)। আমি তোমাকে অসংখ্যবার বলেছি, আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ লাগে, কিন্তু সবার তা নিয়ে ওয়াকিবহাল হওয়া কি জরুরি ছিল? এখন আমার খণ্ডিত সত্তা, আমার অসম্পূর্ণতা সবার চোখে ধরা দেবে, তোমার চোখেও…। তাই কারোর মুখে, ফিসফাসে শোনার আগে আমিই তোমাকে জানাচ্ছি। আমাকে রুম থেকে বেরুতে দিচ্ছে না, বাথরুমে যাওয়ার জন্যও না। তাই তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমাকে জানাতে পারছি না, আমাকে মাফ করে দিয়ো। করুণা বা অপরাধবোধ কোনোটাই আমার চিঠির উদ্দেশ্য না। আমি লিখছি কারণ আমি তোমাকে মুক্ত করছি, আমি তোমাকেও কেটে ফেলছি। ভালো থেকো এবং আমার খোঁজ করো না। আমি তোমার হদিস চাই না, তুমি আমার হদিস চেয়ো না। মৃত্যুর আগে আমার শেষ ইচ্ছা এটাই, আর কখনো যাতে আমার দেখতে না হয় তোমার বিদঘুটে বাস্টার্ড মুখ আমার বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এটুকুই, আমি যাচ্ছি এখন শান্তিতে খণ্ডিত হতে।
গুডবাই, একজন পাগলপ্রায় মানুষের কাছ থেকে যে তোমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসে।
ইতি,
তোমার ফ্রিদা
এটা এই তালিকার দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ত চিঠি। সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রেম(?)পত্র। ফ্রিদার সমান ক্রোধ ও আবেগ নিয়ে তার চেয়ে অনেক অল্প কথায় চিঠিটি লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ তাঁর স্ত্রী শাওনকে।
‘দূরে থাকার একটা প্রধান সুখ হচ্ছে চিঠি—দেখাশোনার সুখের চেয়েও তার একটু বিশেষত্ব আছে।…একরকমের নিবিড়তা-গভীরতা, একপ্রকার বিশেষ আনন্দ আছে। তোমার কি তাই মনে হয় না?’—একটি চিঠিতে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ; যেখানে মৃণালিনী দেবীকে তিনি সম্বোধন করেছেন ‘ভাই ছুটি’ বলে।
‘এখন তুমি কোথায় আছো কেমন আছো, পত্র দিও’--হেলাল হাফিজও চেয়েছেন প্রিয়তমা তাকে চিঠি দিক। অথচ
দাপ্তরিক বা ব্যবসায়িক প্রয়োজন ছাড়া, চিঠি এখন আর আমরা লিখি না। একসময়ের নৈমিত্তিক, অনিবার্য চিঠি আজ বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক উপাদান। এখন আমরা মেসেজ করি, হোয়াটস্যাপ করি, মেইল করি, ভিডিও বা অডিও মেসেজ পাঠাই। তবে চিঠি শব্দটা এখনো অনেকের জন্য স্মৃতির দুয়ার খুলে দেয়, নস্টালজিয়া আবাহন করে।
চিঠি সময়ের আয়না। পুরোনো চিঠি পুরোনো দিনের স্মৃতির জাদুঘর। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—
বিশ্বসাহিত্যে ও ইতিহাসে অসংখ্য, অনবদ্য, অদ্ভুত, মজার, দুঃখের বিচিত্র ধরনের চিঠি রয়েছে। পত্রোপন্যাস বলে একটা জনপ্রিয় সাহিত্য ধারাই একসময় ছিল। আজ বিশ্ব চিঠি দিবসে, সবিনয়ে নিবেদন, খুঁজে পাওয়া কিছু ব্যতিক্রমী চিঠি।
একটা লম্বা চিঠির শেষে ব্লেইজ পাসকাল একবার লিখেছিলেন, ‘সময়ের অভাবে চিঠিটা সংক্ষিপ্ত করতে পারলাম না, লম্বা হয়ে গেল।’ আপাত স্ববিরোধী বলে মনে হলেও ছোট ও সংক্ষিপ্ত চিঠি লেখা কিন্তু কঠিন। তবে যদি প্রশ্ন ওঠে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম চিঠি কোনটি? পড়ুন…
এইমাত্র আপনি দুটি চিঠি পড়ে ফেললেন। লেখক ও প্রকাশকের চিঠি আদান-প্রদান। পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম চিঠি হিসেবে বিবেচিত। লেখকটি ছিলেন ভিক্টর হুগো। তার ‘লা মিজারেবল’ বইয়ের বিক্রি যুক্তরাষ্ট্রে কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে জবাবে মার্কিন প্রকাশক জানান '!’—মানে ব্যাপক কাটতি। বেস্টসেলার।
গুরুদেবের প্রেমপত্র?
দুনিয়ার এন্তার বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঠিক প্রেমপত্র বলতে যা বোঝায়, রবীন্দ্রনাথ তা লেখেননি। এমনকি যাঁকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ‘বিবি’ ডাকতেন, সেই ইন্দিরা দেবীকে লেখা চিঠিপত্রকেও প্রেমপত্র বলা যায় না।
নিচের এই একটা চিঠিতে মাঝেমধ্যে একটু বিরহবিধুর প্রেমভাব উঁকি মেরেছে, যেখানে মৃণালিনী দেবীকে রবীন্দ্রনাথ ‘ভাই ছুটি’ বলে সম্বোধন করেছেন। ‘রবীন্দ্রনাথ প্লাস প্রেমপত্র’ কোটায় এই চিঠিটা পাঠকদের সঙ্গে আমরা শেয়ার করছি।
ভাই ছুটি,
তোমার সন্ধ্যা বেলাকার মনের ভাবে আমার কি কোনো অধিকার নেই? আমি কি কেবল দিনের বেলাকার? সূর্য্য অস্ত গেলেই তোমার মনের থেকে আমার দৃষ্টিও অস্ত যাবে? তোমার যা মনে এসেছিল আমাকে কেন লিখে পাঠালে না? তোমার শেষের দু চার দিনের চিঠিতে আমার যেন কেমন একটা খটকা রয়ে গেছে। সেটা কি ঠিক এনালাইজ করে বলতে পারিনে কিন্তু একটা কিসের আচ্ছাদন আছে। যাক গে! হৃদয়ের সূক্ষ্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করাটা লাভজনক কাজ নয়। মোটামুটি সাদাসিধে ভাবে সব গ্রহণ করাই ভাল।
রবি
আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি।
কান্ট্রি সিঙ্গার জনি ক্যাশের সঙ্গে জুন কার্টারের প্রথম দেখা হয় ১৯৫৬ সালে। ক্যাশ তখন বিবাহিত হলেও দুজনের তাৎক্ষণিক বন্ধুত্ব হয়ে যায়, যা আসলে ছিল বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি। ক্যাশ বেশ কয়েকবার প্রস্তাব দিলেও কার্টার রাজি হননি। প্রথম সাক্ষাতের ১৩ বছর পর ১ মার্চ ১৯৬৮ সালে এক কনসার্টে ক্যাশ আবার প্রস্তাব দেন। জুন এবার সম্মত হন। তাঁরা বিয়ে করেন এবং আমৃত্যু তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন। ১৯৯৪ সালে জুনের পয়ষট্টিতম জন্মদিনে নিচের চিঠিটা লেখেন জনি ক্যাশ। ভণিতাহীন, অলংকারহীন, সহজ-সরল প্রেমের স্বীকারোক্তি।
কয়েক বছর পরে আরেকটা নোট লেখেন জুনের মৃত্যুর পরে। চিঠি ও নোট–দুটিই এখানে শেয়ার করা হলো।
জুন ২৩, ১৯৯৪
ওডেন্স, ডেনমার্ক
শুভ জন্মদিন প্রিন্সেস,
আমরা বুড়ো হই আর পরস্পরের সঙ্গে মানিয়ে নিই। আমরা একইরকম করে ভাবি। পরস্পরকে পাঠ করি। মুখে না বললেও আমরা বুঝতে পারি, সে কী চায়। কখনোবা আমরা পরস্পরকে বিরক্ত করি। মাঝেমধ্যে একে অন্যের ব্যাপারে বদ্ধমূল ধারণা পুষে রাখি।
তবে, মাঝেমধ্যে, যেমন আজ, উপলব্ধি করলাম আমার কী সৌভাগ্য যে আমার দেখা সেরা নারীটির সঙ্গে জীবন শেয়ার করতে পারছি। জুন, তুমি এখনও আমাকে মুগ্ধ করো, প্রেরণা দাও। ভালো করতে প্রভাবিত করো। তুমি আমার বাসনার মঞ্জিল। আমার পার্থিব অস্তিত্বের একমাত্র কারণ। তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি।
শুভ জন্মদিন প্রিন্সেস,
জন
জুলাই ১১, ২০০৩
দুপুর
আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি। সত্যিই বাসি। আমি জুন কার্টারকে ভালোবাসি, আসলেই বাসি। সত্যিই বাসি। সেও বাসে।
এখন সে স্বর্গের দূত, কিন্তু আমি নই। এখন সে স্বর্গের দূত, কিন্তু আমি নই।
১৯২২ সালে ফ্রিদা কাহলো ও দিয়েগো রিভেরার প্রথম মোলাকাত, ১৯২৯-এ বিয়ে। কাহলো ও রিভেরার বয়সের পার্থক্য ২০, মতপার্থক্য (প্রেম, পরকীয়া, শিল্প ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে) আরও বেশি। তারপরও দুজনের দীর্ঘ ২৪ বছরের বিবাহিত জীবন। তবে দুই দফায়। ১৯৩৯ সালে প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের পর তাঁরা আবার বিয়ে করেন ১৯৪০ সালে। ১৯৫৬ সালে ফ্রিদার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বিয়ে টিকে ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ দিকে যখন ফ্রিদার একটা পা অ্যাম্পুটেট করা হবে, তখন হাসপাতাল থেকে দিয়েগোকে লেখা একটা চিঠি তুলে দেওয়া হলো এখানে। চিঠিটা তাঁদের সম্পর্ক ও জীবনের মতোই পাগলাটে ও তীব্র। পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত প্রেমপত্রগুলোর একটি।
মেক্সিকো,
১৯৫৩
প্রিয় দিয়েগো,
এই চিঠিটা আমি লিখছি হাসপাতাল থেকে, ঠিক অপারেশন থিয়েটারে অ্যাডমিট হওয়ার আগ মুহূর্তে। আমাকে ওরা তাড়া দিচ্ছে, কিন্তু আমি চিঠিটা শেষ করবো বলে গোঁ ধরেছি; কারণ, আমি কিছু অসম্পূর্ণ রেখে যেতে চাই না। বিশেষ করে এই সময়ে, কারণ আমি জেনে গেছি ওঁরা কী করতে চায়। ওরা আমার আত্মসম্মানে চোট দিয়ে আমার পা কেটে ফেলতে চায়। যখন ওরা আমাকে বলল, আমার পা অ্যাম্পুটেট করতে হবে, তখন আমি অতটা আক্রান্ত হই নাই যতটা সবাই ধরে নিয়েছিল হবো। হই নাই, আমি অলরেডি একজন পঙ্গু নারীই ছিলাম যখন আমি তোমাকে হারিয়েছি, আবার, শততমবারের মতো, এবং আমি তারপরও বেঁচে আছি।
আমি ব্যথা ভয় পাই না, তুমি জানো। ব্যথা আমার একান্ত, আমার সত্তার অংশ। যদিও আমি স্বীকার করবো আমি ভুগি, বেশ অনেকটা, যখন তুমি আমার ওপর চিট করো, প্রতিবার, বিভিন্ন নারীর সাথে, আমার বোনের সাথে। কীভাবে তারা তোমার কাছে বোকা বনে যায়? তোমার নিশ্চয়ই মনে হয় আমি ক্রিস্টিনার ওপর অনেক রাগ, আজকে যেহেতু কনফেস করছি তোমাকে বলি, আমি ওর ওপর রেগে নেই। আমার রাগ আছে, তোমার আর আমার ওপর। নিজের ওপর, কারণ আমি কখনো বুঝতে পারি নি তুমি কী খুঁজতে ও খুঁজছো তাদের কাছে, যা আমি দিতে দিতে পারি না। ভণিতায় যাবো না দিয়েগো, একটা মানুষের পক্ষে যা যা দেওয়া সম্ভব ভালোবেসে আমি তোমাকে সব দিয়েছি। এটা আমরা দুজনই জানি। কিন্তু তারপরও তুমি কীভাবে তুমি এতগুলো নারীকে সিডিউস করলে একজন কুৎসিত জানোয়ার হয়ে?
যাইহোক, এই চিঠি শুধু অভিযোগ করার জন্য আমি লিখছি না। আমরা একে অপরকে এক জীবনে এবং তার পরবর্তী জীবনগুলোয় যা যা দোষারোপ করা সম্ভব, করে ফেলেছি। আমি লিখছি কারণ আমার পা কেটে ফেলা হচ্ছে (এই হতচ্ছাড়া পায়ের মর্জি মোতাবেক)। আমি তোমাকে অসংখ্যবার বলেছি, আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ লাগে, কিন্তু সবার তা নিয়ে ওয়াকিবহাল হওয়া কি জরুরি ছিল? এখন আমার খণ্ডিত সত্তা, আমার অসম্পূর্ণতা সবার চোখে ধরা দেবে, তোমার চোখেও…। তাই কারোর মুখে, ফিসফাসে শোনার আগে আমিই তোমাকে জানাচ্ছি। আমাকে রুম থেকে বেরুতে দিচ্ছে না, বাথরুমে যাওয়ার জন্যও না। তাই তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমাকে জানাতে পারছি না, আমাকে মাফ করে দিয়ো। করুণা বা অপরাধবোধ কোনোটাই আমার চিঠির উদ্দেশ্য না। আমি লিখছি কারণ আমি তোমাকে মুক্ত করছি, আমি তোমাকেও কেটে ফেলছি। ভালো থেকো এবং আমার খোঁজ করো না। আমি তোমার হদিস চাই না, তুমি আমার হদিস চেয়ো না। মৃত্যুর আগে আমার শেষ ইচ্ছা এটাই, আর কখনো যাতে আমার দেখতে না হয় তোমার বিদঘুটে বাস্টার্ড মুখ আমার বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এটুকুই, আমি যাচ্ছি এখন শান্তিতে খণ্ডিত হতে।
গুডবাই, একজন পাগলপ্রায় মানুষের কাছ থেকে যে তোমাকে তীব্রভাবে ভালোবাসে।
ইতি,
তোমার ফ্রিদা
এটা এই তালিকার দ্বিতীয় সংক্ষিপ্ত চিঠি। সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রেম(?)পত্র। ফ্রিদার সমান ক্রোধ ও আবেগ নিয়ে তার চেয়ে অনেক অল্প কথায় চিঠিটি লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ তাঁর স্ত্রী শাওনকে।
আজ ৪ সেপ্টেম্বর। ‘গানের পাখি’ সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। তাঁর আসল নাম কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিন নয়! দিলশাদ ইয়াসমিন থেকে কেন তিনি সাবিনা ইয়াসমিন হলেন? আর কীভাবে শুরু হয়েছিল তাঁর গান-যাত্রা? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এ লেখায়।
১ ঘণ্টা আগেসত্তর দশকের শেষ ভাগ। ঢাকার ব্যস্ত অলিগলিতে সদ্য স্বাধীন দেশের ভাঙাচোরা রাস্তায়, মাঠে ফুটবল খেলে বেড়াচ্ছে এক কিশোর। কেউ ভাবেনি এই ছেলেটি একদিন হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। হয়ে উঠবেন প্রজন্মের নায়ক আর মাঠের বাইরেও ছড়িয়ে দেবেন ক্রিকেটের উন্মাদনা।
১ দিন আগেবাংলাদেশের বাস্তবতায় গুজব যেন এক অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশ্বকোষে জায়গা না পেলেও রিকশার হ্যান্ডেলে, বাসের সিটে, সেলুনের আয়নায় এবং অবশ্যই ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে গুজবের অবাধ বিচরণ। মনস্তত্ত্ববিদেরা মনে করেন, গুজবের জন্ম অনিশ্চয়তা থেকে।
২ দিন আগেআফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পে ইতিমধ্যেই ৮০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। ২০২৩ সালের ভূমিকম্পে দেশটিতে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বড় ভূমিকম্প হলে, দেশ-বিদেশে আলোচনায় উঠে আসে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
৩ দিন আগে