leadT1ad

কী সুবিধা নিয়ে এল ফাইভ-জি, গুনতে হবে কি অতিরিক্ত টাকা

ফাইভ-জি কী, ফাইভ-জি বনাম ফোর-জি, কী সুবিধা নিয়ে এল ফাইভ-জি, যেভাবে চালু করবেন ফাইভ-জি, গুনতে হবে কী অতিরিক্ত টাকা– ফাইভ-জি নিয়ে যত প্রশ্নের জবাব পড়ুন এই লেখায়।

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ০০
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ০২
স্ট্রিম গ্রাফিক

দ্রুতগতির ইন্টারনেটের নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। দেশের শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি গতকাল সোমবার প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করেছে। রবির ফাইভ-জি চালুর ঘণ্টাখানেক পর গ্রামীণফোন তাদের ফাইভ-জি ইন্টারনেট সেবা চালুর ঘোষণা দেয়।

ফাইভ-জি কী

ফাইভ-জি হলো দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট প্রযুক্তি। এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের ‘পঞ্চম প্রজন্ম’। ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে ডাউনলোড ও আপলোডের গতি অনেক বেশি থাকে। ইন্টারনেটে সংযোগও স্থিতিশীল থাকে। তাই ভিডিও স্ট্রিমিং, ওয়েবসাইট লোডিং বা ডেটা আদান-প্রদানে সময় অনেক কমে আসে।

শুরুতে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় চালু হলেও ধাপে ধাপে ফাইভ-জির কাভারেজ বাড়ানো হবে। ছবি: সংগৃহীত
শুরুতে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় চালু হলেও ধাপে ধাপে ফাইভ-জির কাভারেজ বাড়ানো হবে। ছবি: সংগৃহীত

ফাইভ-জি আগের ফোর-জি নেটওয়ার্কের মতোই রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে। তবে এটি আরও উন্নত প্রযুক্তি। ফাইভ-জি এমন জায়গায়ও ভালো কাজ করতে পারে যেখানে ব্রডব্যান্ড বা দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেই। এটি আগের সব নেটওয়ার্কের চেয়ে উন্নত সুবিধা দেয়। ফাইভ-জি আমাদের দৈনন্দিন জীবন এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন বদলে দিতে পারে।

ফাইভ-জি বনাম ফোর-জি, কী সুবিধা নিয়ে এল ফাইভ-জি

সাধারণত ফোর-জির চেয়ে ফাইভ-জির গতি ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি হয়ে থাকে। তবে দেশভেদে ইন্টারনেটের গতি ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তাদের ফাইভ-জির সেবায় ইন্টারনেটের গতি ফোর-জি থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি পাওয়া যাবে।

ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে লেটেন্সির সময় ফোর-জি থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কম। ফলে এক মিনিটের বদলে কোনো ফাইল কয়েক সেকেন্ডে ডাউনলোড করা সম্ভব হবে। অনলাইন গেমিং, লাইভ স্ট্রিমিং এবং ভিডিও কল আগের চেয়ে অনেক মসৃণ হবে।

ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে লেটেন্সির সময় ফোর-জি থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কম। ফলে এক মিনিটের বদলে কোনো ফাইল কয়েক সেকেন্ডে ডাউনলোড করা সম্ভব হবে। অনলাইন গেমিং, লাইভ স্ট্রিমিং এবং ভিডিও কল আগের চেয়ে অনেক মসৃণ হবে।

ফাইভ-জি আরও বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পারে। এটি লো-ব্যান্ড, মিড-ব্যান্ড এবং হাই-ব্যান্ডে কাজ করে। ১০০ গিগাহার্জ পর্যন্ত রেডিও স্পেকট্রাম ব্যবহার করে। এর ফলে এক সঙ্গে অনেক ডিভাইস সংযুক্ত থাকলেও দ্রুতগতিতে ডেটা প্রেরণ ও গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ফাইভ-জি চালু হয়েছে

বাংলাদেশে ফাইভ-জি সেবা শুরুতে নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় চালু হয়েছে। গ্রামীণফোন ও রবি জানিয়েছে, ধাপে ধাপে এর কাভারেজ বাড়ানো হবে।

দ্রুতগতির ইন্টারনেটের নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। সংগৃহীত ছবি
দ্রুতগতির ইন্টারনেটের নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। সংগৃহীত ছবি

রবি প্রথম পর্যায়ে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটের কয়েকটি এলাকায় ফাইভ-জি চালু করেছে। ঢাকা শহরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ভবন, মগবাজার চৌরাস্তা, ফকিরাপুল-পল্টন এলাকা এই সেবার আওতায় এসেছে। চট্টগ্রামে ওয়াসা মোড়, খুলশি, কাটালগঞ্জ আবাসিক এলাকা ও পাঁচলাইশে ফাইভ-জি চালু হয়েছে। সিলেটে সাগরদিঘির পাড়েও এই সেবা সক্রিয় করা হয়েছে বলে রবির ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

গ্রামীণফোন সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছে, প্রথম ধাপে দেশের বিভাগীয় শহরের নির্বাচিত এলাকায় ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গ্রামীণফোনের টাওয়ার বা বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশনগুলো (বিটিএস) ফাইভ-জির আওতায় আনা হচ্ছে। এর ফলে দেশের বিস্তৃত এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে।

যেভাবে চালু করবেন ফাইভ-জি

ফাইভ-জি ব্যবহার করার জন্য আলাদা সিমের প্রয়োজন নেই। বর্তমান ফোর-জি সিম দিয়েই ফাইভ-জি চালানো যাবে। তবে মোবাইল ফোনটিতে অবশ্যই ফাইভ-জি সুবিধা থাকবে হবে।

সেক্ষেত্রে স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে ‘অটো’ মোড চালু থাকলে আর সেই এলাকা ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত হলে, স্মার্টফোনের সিগন্যাল বারের পাশে ফাইভ-জি আইকন দেখা যাবে। আর ফাইভ-জি ‘কাভারেজ এরিয়া’র বাইরে চলে গেলে স্মার্টফোনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোর-জি বা টু-জি নেটওয়ার্ক চালু হয়ে যাবে।

ফাইভ-জি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আলাদা কোনো ডেটা প্যাকেজ কেনার প্রয়োজন নেই। বর্তমানে যে ডেটা প্যাক ব্যবহার করছেন, তা-ই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কেও কাজ করবে।

ফাইভ-জি সুবিধাসম্পন্ন মোবাইলে নেটওয়ার্ক মোড ‘অটো’ করতে হলে ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে যেতে হবে। স্মার্টফোন কোম্পানি ও মডেলভেদে নেটওয়ার্ক সেটিংসের ভেতরের অপশনগুলোর নাম ভিন্ন হতে পারে। এরপর ‘নেটওয়ার্ক মোড’, ‘প্রিফার্ড নেটওয়ার্ক টাইপ’ বা ‘মোবাইল ডাটা অপশন’ থেকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ‘অন’ বা ‘অটো’ সিলেক্ট করতে হবে।

পরের ধাপে স্মার্টফোনটি বন্ধ করে পুনরায় চালু করতে হবে। এখন সিগনাল বারের পাশে ফাইজ-জি আইকন দেখতে পাবেন।

ভয়েস কলের সময় ফাইভ-জি কি কাজে আসবে

ভয়েস কলের ক্ষেত্রে ফাইভ-জি সরাসরি কোনো সুবিধা বয়ে আনবে না। গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ফোন কল করার সময় মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোর-জি বা টু-জি নেটওয়ার্কে চলে যাবে।

এর মানে, কল করার সময় ব্যবহারকারীরা ফাইভ-জির উচ্চ গতি বা কম লেটেন্সির কোনো সুবিধা পাবেন না। তাই মোবাইল-টু-মোবাইল কলের মান বা ‘ভয়েজ ক্লিয়ারিটি’র কোনো পরিবর্তন আসবে না।

ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য কি আলাদা ডেটা প্যাকেজ কেনা লাগবে

ফাইভ-জি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে আলাদা কোনো ডেটা প্যাকেজ কেনার প্রয়োজন নেই। বর্তমানে যে ডেটা প্যাক ব্যবহার করছেন, তা-ই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কেও কাজ করবে। অর্থাৎ ফাইভ-জি চালু বা ব্যবহার করতে কোনো বাড়তি টাকা দিতে হবে না।

ফাইভ-জি সুবিধাসম্পন্ন মোবাইলে নেটওয়ার্ক মোড ‘অটো’ করতে হলে ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে যেতে হবে।
ফাইভ-জি সুবিধাসম্পন্ন মোবাইলে নেটওয়ার্ক মোড ‘অটো’ করতে হলে ফোনের নেটওয়ার্ক সেটিংসে যেতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কারো কাছে দশ জিবি ফোর-জি ডেটা প্যাকেজ থাকে, সেটি ফাইভ-জিতেও ঠিক একইভাবে ব্যবহার করা যাবে। পার্থক্য শুধু এটুকুই -- ইন্টারনেট হবে আগের চেয়ে অনেক দ্রুতগতির।

বাংলাদেশে ওয়ান-জি থেকে ফাইভ-জি

বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি চালু হয় ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে। তখন মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের মাধ্যমে আসে ওয়ান-জি প্রযুক্তি। এরপর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি টু-জি চালু হয়। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রামীণফোন প্রথম থ্রি-জি নেটওয়ার্ক চালু করে।

চতুর্থ প্রজন্মের ফোর-জি প্রযুক্তি বাংলাদেশে চালু হয় ২০১৮ সালে্র ১৯ ফেব্রুয়ারি। গ্রামীণফোন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এই ফোর-জি সেবা চালু করেছিল। এর পরের দিন রবি আর বাংলালিংকও তাদের ফোর-জি সেবা শুরু করে।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৯ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু করে। এর বছর দুয়েক পর, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ফাইভ-জি প্রযুক্তির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

২০২২ সালের মার্চ মাসে বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) ফাইভ-জি চালুর জন্য তরঙ্গ নিলামের আয়োজন করে। একই বছর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি ব্যবহার করেছিল। সর্বশেষ গতকাল (১ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি ইন্টারনেট সেবা।

Ad 300x250

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এক হলো কেন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাবি শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হচ্ছে স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্যানেল

ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি, পরিচয়পত্র ছাড়া ঢুকতে পারবেন না শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরাও

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে জিডি করা লাগবে না

সম্পর্কিত