নেপালে আন্দোলনের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি শর্মা গতকাল পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু এ আন্দোলনের কি কোনো মাস্টারমাইন্ড আছেন? আন্দোলনটিতে বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছায়া ঠিক কতটুকু?
অর্ক দেব
ইতিহাস বলছে, বিপ্লবের নেপথ্যে থাকে কোনো মহৎ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অভীপ্সা। আর সেই লড়াইয়ে পুরোভাগে নেতৃত্ব দেন বিদ্রোহী স্পার্টাকাস। একুশ শতকের অভ্যুত্থানের কোনো একক নায়ক নেই। কোনো একটি পক্ষ নেই, এমনকি কোনো সুপরিকল্পনাও হয়তো থাকে না। তবে এখানে থাকে অসংখ্য স্টেকহোল্ডার। বেয়াড়া রোখ। কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম বা এমন কিছু কর্মসূচি—যেখানে বামপন্থী-ডানপন্থীকেও জনস্রোতে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। বিশ শতকের চশমায় এই ঘটনাপ্রবাহ দেখে যিনি ভিড়মি খাবেন, তাঁর জন্য আরও বিস্ময় বাকি। একটি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফল কোনো অলিগার্ক পাবে, সেই অলিগার্কের থাকা না থাকাই এত বড় হয়ে যাবে যে শাসককে গদিচ্যুত করবে মানুষ, স্মরণাতীত কালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা কঠিন। নেপালের ছাত্রজনতার বিদ্রোহকে আপাতভাবে দেখলে কিন্তু তেমনটাই মনে হবে। মনে হবে, ফেসবুক-এক্সের (সাবেক টুইটার) মতো সারভিলেন্স-অর্থনীতির প্রধান স্থপতির অনুপস্থিতি একদল ছেলেমেয়েকে পথে নামাল, তাঁরা বুকে গুলি খেলেন, শাসককে টেনে নামালেন। অথচ এই ফেসবুকের বিপজ্জনক অ্যালগোরিদমইতো হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। তাহলে কি নব্যপুঁজিবাদ রোবট মব পেয়ে গেল?
ঘটনাপ্রবাহ দেখতে দেখতে অবধারিতভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের কথা। নেপালের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি শর্মার সঙ্গে বাংলাদেশের পতিত শাসক শেখ হাসিনার মিল অনেক। দুজনেই বারবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, গদিচ্যুত হতে পারেন, তা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত আঁচ করতে পারেননি। একইভাবে দুজনকে সেফ প্যাসেজ দিয়েছে সেনাবাহিনী। গেল বছর উন্মত্ত জনরোষের চেহারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছিল এই প্রতিবেদক। এখন একইভাবে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যখন আগুন ধরাচ্ছে উন্মত্ত মানুষ, সেই অগ্নি নির্বাপনের জন্য অপেক্ষমান হাজারো প্রশ্ন। স্রেফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার দায়েই সরতে হলো কেপি শর্মা অলিকে? নেপালের ভবিষ্যত ভারত না চীন—কোন দেশের চাপে পরাভূত হবে? কে হবেন নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের চুম্বক। কে পি অলি কখনও বোঝেননি নতুন প্রজন্মের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্রেফ যোগাযোগের বাহন নয়, বরং মতপ্রকাশের মাধ্যম। সেই যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার অর্থ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। কণ্ঠরোধ। কণ্ঠরোধ করলে এই অবদমনের ফল হবে তৎক্ষণাত, আছড়ে পড়বে দ্বিগুণ শক্তিশালী টর্নেডো হয়ে। ঠিক বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন যেভাবে হিতে বিপরীত হয়ে ফিরে এসেছিল। এই সিদ্ধান্ত আসলে তরুণ প্রজন্মের স্নায়ু-সংবেদ না বোঝারই ফল। মনে রাখতে হবে, অতীতেও ক্ষমতায় এসে (২০১৮-২০২১) কে পি অলি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিল সামনে এনেছিলেন, যা আসলে কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখেছিল নেপালের সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ আজকের রাগের পূর্বাপর রয়েছে। এই রাগ যখন স্ফূলিঙ্গে পরিণত হচ্ছে, তখন কে পি অলির নির্দেশে সৈন্যরা গুলি চালাল। অন্তত ১৯জন প্রতিবাদীর প্রাণ গেল। এত বড় গণহত্যা ২০০৬ সালের জনযুদ্ধের পর নেপালে আর ঘটেনি। ফলে জেন-জিদের কোনো পূর্বস্মৃতি নেই। এই আকস্মিকতায় তারা বদলার দাবিতে মারমুখী হয়ে ওঠে। আর সেটাই হয়ে দাঁড়ায় এ বিদ্রোহের টার্নিং পয়েন্ট। ঠিক যেমন বাংলাদেশের আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধদের মৃত্যুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন অন্যমাত্রা নেয়। নেপালের তরুণ-তরুণীরা ১৯টি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর শুধু যে বাড়ি ফিরতে চায়নি তা-ই নয়, বরং বারবার তারা বলেছে, শেষ দেখতে চাই। কে পি অলির ইস্তফাতেও তারা খুশি নয়। তাদের দাবি বিচার।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোটা সংস্কারকে ঘিরে শুরু হলেও তার শিকড় ছিল অনেক গভীরে প্রোথিত। পরপর দুটি নির্বাচনকে সন্দেহাতীতভাবে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন শেখ হাসিনা। নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ক্ষমতায় এসে কে পি অলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সংবিধানিক সংস্কারের। সুশাসনের প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু সেসবই কথার কথা হয়ে রয়ে গেছে। এ বছরের জুলাইয়েই অলির মন্ত্রিসভার সদস্য রাজকুমার গুপ্ত ও বলরাম অধিকারীকে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। তাঁদের অডিও রেকর্ড সামনে এসেছিল। ভিজিট ভিসা স্ক্যামে নাম জড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের। যেখানে কাজের জন্য বিদেশ যাওয়ার ভিসা দিয়ে অবৈধভাবে টাকা তোলা হয়।
এসব ঘটনা চটিয়েছে নেপালের সাধারণ মানুষ আর সব পক্ষকে। মানুষ বুঝেছে, মুখে সততার কথা বললেও অলি কোনো সংস্কারের পথে হাঁটবেন না। ছাত্র-শিক্ষকসহ সবস্তরের মানুষ ক্রমে সুর চড়িয়েছে। আজ যাঁরা রাজপথে তাঁরা 'নেপোকিড'দের বৈভব ভালো চোখে দেখেননি। করোনার মতো ঘাতক মহামারিকে গা-ছাড়াভাবে নিয়েছিলেন অলি। ফলে শিক্ষিত যুক্তিবাদী ছেলেমেয়েরা তাঁকে নিয়ে কখনই খুশি ছিলেন না। এবার সেই দলে যোগ দিয়েছে সুযোগসন্ধানী দক্ষিণপন্থীরা। রয়েছে জোট সরকারে অর্থবান প্রতিপক্ষ, রয়েছে রাজতন্ত্রের কায়েমী স্বার্থ। এভাবে ভাবলেও বাংলাদেশের সঙ্গে চরিত্রগতভাবে মিল পাওয়া যাবে নেপালের।
বাংলাদেশের সঙ্গে এই আন্দোলনের মূলগত ফারাক লাভের প্রশ্নে। শেখ হাসিনা সরকারকে যে কারণে দিল্লির পুতুল সরকার বলা হয়, নিসন্দেহে অলির সরকারকে সেই একই কারণে চীনের ক্রীড়ানক বলা যেতে পারে। ২০২০ সালের জুন মাসেই নতুন মানচিত্রে সিলমোহর দেন অলি। সেই মানচিত্রে ভারতের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে নেপাল। এক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমই হাতিয়ার ছিল অলির। এই মানচিত্র সামনে আসার আগে চীনের রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকির সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করেছিলেন অলি। এই সময়েই তিনি দাবি করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম অবতার রাম নেপালের রাজপুত্র ছিলেন এবং অযোধ্যর অবস্থান ছিল নেপালেই। অবশ্য আরএসএসের মুখপত্র বারবার অলির প্রগলভতার সমালোচনা করেছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানকে ‘মেটিক্যুলাসলি ডিজাইনড’ বলেছিলেন তিনি। নেপালে এই বিদ্রোহের পর এর অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে উঠে আসছে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহর নাম। বলেন্দ্র পড়াশোনা করেছেন কর্ণাটকে। স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতেছেন। বদলে দিয়েছেন ভোটের সমীকরণ। যুবসমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে র্যাপ লিখে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। রাষ্ট্রপরিচালিত হত্যার বদলা চাইতে তাঁর বৃষস্কন্ধেই কি ভরসা রাখবে ক্লান্তপ্রাণ জেন-জি? তিনিও কি একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’? দাবার বোর্ডের অশ্ব? নাকি বোড়ে?
লেখক: ইনস্ক্রিপ্ট-এর সম্পাদক।
ইতিহাস বলছে, বিপ্লবের নেপথ্যে থাকে কোনো মহৎ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার অভীপ্সা। আর সেই লড়াইয়ে পুরোভাগে নেতৃত্ব দেন বিদ্রোহী স্পার্টাকাস। একুশ শতকের অভ্যুত্থানের কোনো একক নায়ক নেই। কোনো একটি পক্ষ নেই, এমনকি কোনো সুপরিকল্পনাও হয়তো থাকে না। তবে এখানে থাকে অসংখ্য স্টেকহোল্ডার। বেয়াড়া রোখ। কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম বা এমন কিছু কর্মসূচি—যেখানে বামপন্থী-ডানপন্থীকেও জনস্রোতে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে। বিশ শতকের চশমায় এই ঘটনাপ্রবাহ দেখে যিনি ভিড়মি খাবেন, তাঁর জন্য আরও বিস্ময় বাকি। একটি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফল কোনো অলিগার্ক পাবে, সেই অলিগার্কের থাকা না থাকাই এত বড় হয়ে যাবে যে শাসককে গদিচ্যুত করবে মানুষ, স্মরণাতীত কালে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা কঠিন। নেপালের ছাত্রজনতার বিদ্রোহকে আপাতভাবে দেখলে কিন্তু তেমনটাই মনে হবে। মনে হবে, ফেসবুক-এক্সের (সাবেক টুইটার) মতো সারভিলেন্স-অর্থনীতির প্রধান স্থপতির অনুপস্থিতি একদল ছেলেমেয়েকে পথে নামাল, তাঁরা বুকে গুলি খেলেন, শাসককে টেনে নামালেন। অথচ এই ফেসবুকের বিপজ্জনক অ্যালগোরিদমইতো হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে বাস্তুচ্যুত করেছিল। তাহলে কি নব্যপুঁজিবাদ রোবট মব পেয়ে গেল?
ঘটনাপ্রবাহ দেখতে দেখতে অবধারিতভাবেই মনে পড়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের কথা। নেপালের পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী কে পি অলি শর্মার সঙ্গে বাংলাদেশের পতিত শাসক শেখ হাসিনার মিল অনেক। দুজনেই বারবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, গদিচ্যুত হতে পারেন, তা শেষমুহূর্ত পর্যন্ত আঁচ করতে পারেননি। একইভাবে দুজনকে সেফ প্যাসেজ দিয়েছে সেনাবাহিনী। গেল বছর উন্মত্ত জনরোষের চেহারা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছিল এই প্রতিবেদক। এখন একইভাবে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যখন আগুন ধরাচ্ছে উন্মত্ত মানুষ, সেই অগ্নি নির্বাপনের জন্য অপেক্ষমান হাজারো প্রশ্ন। স্রেফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার দায়েই সরতে হলো কেপি শর্মা অলিকে? নেপালের ভবিষ্যত ভারত না চীন—কোন দেশের চাপে পরাভূত হবে? কে হবেন নেপালের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করা নেপালে জেন-জি অভ্যুত্থানের চুম্বক। কে পি অলি কখনও বোঝেননি নতুন প্রজন্মের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্রেফ যোগাযোগের বাহন নয়, বরং মতপ্রকাশের মাধ্যম। সেই যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার অর্থ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। কণ্ঠরোধ। কণ্ঠরোধ করলে এই অবদমনের ফল হবে তৎক্ষণাত, আছড়ে পড়বে দ্বিগুণ শক্তিশালী টর্নেডো হয়ে। ঠিক বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন যেভাবে হিতে বিপরীত হয়ে ফিরে এসেছিল। এই সিদ্ধান্ত আসলে তরুণ প্রজন্মের স্নায়ু-সংবেদ না বোঝারই ফল। মনে রাখতে হবে, অতীতেও ক্ষমতায় এসে (২০১৮-২০২১) কে পি অলি ডিজিটাল প্রযুক্তি বিল সামনে এনেছিলেন, যা আসলে কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখেছিল নেপালের সাধারণ মানুষ। অর্থাৎ আজকের রাগের পূর্বাপর রয়েছে। এই রাগ যখন স্ফূলিঙ্গে পরিণত হচ্ছে, তখন কে পি অলির নির্দেশে সৈন্যরা গুলি চালাল। অন্তত ১৯জন প্রতিবাদীর প্রাণ গেল। এত বড় গণহত্যা ২০০৬ সালের জনযুদ্ধের পর নেপালে আর ঘটেনি। ফলে জেন-জিদের কোনো পূর্বস্মৃতি নেই। এই আকস্মিকতায় তারা বদলার দাবিতে মারমুখী হয়ে ওঠে। আর সেটাই হয়ে দাঁড়ায় এ বিদ্রোহের টার্নিং পয়েন্ট। ঠিক যেমন বাংলাদেশের আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধদের মৃত্যুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন অন্যমাত্রা নেয়। নেপালের তরুণ-তরুণীরা ১৯টি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর শুধু যে বাড়ি ফিরতে চায়নি তা-ই নয়, বরং বারবার তারা বলেছে, শেষ দেখতে চাই। কে পি অলির ইস্তফাতেও তারা খুশি নয়। তাদের দাবি বিচার।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোটা সংস্কারকে ঘিরে শুরু হলেও তার শিকড় ছিল অনেক গভীরে প্রোথিত। পরপর দুটি নির্বাচনকে সন্দেহাতীতভাবে প্রহসনে পরিণত করেছিলেন শেখ হাসিনা। নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে ক্ষমতায় এসে কে পি অলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সংবিধানিক সংস্কারের। সুশাসনের প্রতিশ্রুতিও ছিল। কিন্তু সেসবই কথার কথা হয়ে রয়ে গেছে। এ বছরের জুলাইয়েই অলির মন্ত্রিসভার সদস্য রাজকুমার গুপ্ত ও বলরাম অধিকারীকে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে পদত্যাগ করতে হয়। তাঁদের অডিও রেকর্ড সামনে এসেছিল। ভিজিট ভিসা স্ক্যামে নাম জড়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের। যেখানে কাজের জন্য বিদেশ যাওয়ার ভিসা দিয়ে অবৈধভাবে টাকা তোলা হয়।
এসব ঘটনা চটিয়েছে নেপালের সাধারণ মানুষ আর সব পক্ষকে। মানুষ বুঝেছে, মুখে সততার কথা বললেও অলি কোনো সংস্কারের পথে হাঁটবেন না। ছাত্র-শিক্ষকসহ সবস্তরের মানুষ ক্রমে সুর চড়িয়েছে। আজ যাঁরা রাজপথে তাঁরা 'নেপোকিড'দের বৈভব ভালো চোখে দেখেননি। করোনার মতো ঘাতক মহামারিকে গা-ছাড়াভাবে নিয়েছিলেন অলি। ফলে শিক্ষিত যুক্তিবাদী ছেলেমেয়েরা তাঁকে নিয়ে কখনই খুশি ছিলেন না। এবার সেই দলে যোগ দিয়েছে সুযোগসন্ধানী দক্ষিণপন্থীরা। রয়েছে জোট সরকারে অর্থবান প্রতিপক্ষ, রয়েছে রাজতন্ত্রের কায়েমী স্বার্থ। এভাবে ভাবলেও বাংলাদেশের সঙ্গে চরিত্রগতভাবে মিল পাওয়া যাবে নেপালের।
বাংলাদেশের সঙ্গে এই আন্দোলনের মূলগত ফারাক লাভের প্রশ্নে। শেখ হাসিনা সরকারকে যে কারণে দিল্লির পুতুল সরকার বলা হয়, নিসন্দেহে অলির সরকারকে সেই একই কারণে চীনের ক্রীড়ানক বলা যেতে পারে। ২০২০ সালের জুন মাসেই নতুন মানচিত্রে সিলমোহর দেন অলি। সেই মানচিত্রে ভারতের প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে নেপাল। এক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমই হাতিয়ার ছিল অলির। এই মানচিত্র সামনে আসার আগে চীনের রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়ানকির সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করেছিলেন অলি। এই সময়েই তিনি দাবি করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম অবতার রাম নেপালের রাজপুত্র ছিলেন এবং অযোধ্যর অবস্থান ছিল নেপালেই। অবশ্য আরএসএসের মুখপত্র বারবার অলির প্রগলভতার সমালোচনা করেছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানকে ‘মেটিক্যুলাসলি ডিজাইনড’ বলেছিলেন তিনি। নেপালে এই বিদ্রোহের পর এর অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে উঠে আসছে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহর নাম। বলেন্দ্র পড়াশোনা করেছেন কর্ণাটকে। স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে ভোটে জিতেছেন। বদলে দিয়েছেন ভোটের সমীকরণ। যুবসমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে র্যাপ লিখে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। রাষ্ট্রপরিচালিত হত্যার বদলা চাইতে তাঁর বৃষস্কন্ধেই কি ভরসা রাখবে ক্লান্তপ্রাণ জেন-জি? তিনিও কি একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’? দাবার বোর্ডের অশ্ব? নাকি বোড়ে?
লেখক: ইনস্ক্রিপ্ট-এর সম্পাদক।
তরুণেরা এখন বালেন্দ্রকে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর হিসেবে চাইছেন, দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমানে চলছে এমনই রব।
২০ ঘণ্টা আগেআজ ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ছয় বছরের বিরতির পর আবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডাকসু। এ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে সারাদেশে। এমনকি অনেকেই মনে করছেন, এ নির্বাচন প্রশাসনের জন্য জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি পরীক্ষা।
১ দিন আগেনেপাল সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব) কোম্পানির সাথে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধে জড়িয়েছে, যা মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
২ দিন আগেরাত পেরোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট। ক্যাম্পাসের বাতাসে নির্বাচনী আমেজ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আবাসন সংকট নিরসন, খাবারের মানোন্নয়ন, পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ
২ দিন আগে