ইসহাক দার-জাম কামালের বাংলাদেশ সফর
গত তিন দশকে পাকিস্তানের কোনো উপপ্রধানমন্ত্রী এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে এলেন। তাঁর সফরকে দেখা হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
স্ট্রিম ডেস্ক
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। শনিবার দুপুরে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। গত তিন দশকে পাকিস্তানের কোনো উপপ্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে এলেন। আর ১৩ বছরে পাকিস্তানের কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও বাংলাদেশে প্রথম সফর এটি।
তার আগে গত ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে কাজ করবেন ইসহাক দার ও জাম কামাল খান। পাকিস্তান বলছে, এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
জাম কামাল খান আলিয়ানি বেলুচিস্তানের লাসবেলা অঞ্চলের একজন রাজনীতিবিদ ও ‘জাম’ পরিবারের উত্তরসূরি। জাম পরিবার একসময়কার রাজবংশীয় শাসক পরিবার।
জাম কামাল খান মূলত পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কিউ)-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ২০১৮ সালে নিজের দল বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি।
২০১৮–২০২১ পর্যন্ত তিনি বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আর ২০২৪ সালের মার্চ থেকে পাকিস্তানের ফেডারেল বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
জাম কামাল খান ও তার দল বিএপি শুরুতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–এর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাম কামাল খানের বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
দলটি পিটিআই-এর জোটসঙ্গী হয় এবং তাদের সমর্থনেই ইমরান খানের কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এর বিনিময়ে জাম কামাল খান বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন। এই সময় ইমরান খান ও পিটিআই তাঁকে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে বিবেচনা করত।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। বিশেষ করে বেলুচিস্তান প্রাদেশিক রাজনীতিতে পিটিআইয়ের সঙ্গে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। উন্নয়ন প্রকল্প ও তহবিল বণ্টন নিয়ে পিটিআই বনাম বিএপি টানাপোড়েন শুরু হয়। ফেডারেল স্তরে ইমরান খানের দল বিএপি-কে ধরে রাখতে চাইলেও স্থানীয় পর্যায়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
বিএপির ভেতরেও একটি বড় অংশও জাম কামাল খানের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট হয়। বিরোধীরা দাবি তোলে, তিনি একনায়কসুলভ আচরণ করছেন। তাঁর উন্নয়ন প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি আছে, আর তিনি দলীয় ঐক্য নষ্ট করছেন। পিটিআইয়ের স্থানীয় শাখা এই বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়।
ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে জাম কামাল খান ২০২১ সালের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগ অনেকটা পিটিআই ও বিদ্রোহী বিএপি সদস্যদের চাপের ফলাফল।
২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানের সরকার পতনের পর বিএপি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টে (পিডিএম) যোগ দেয়। এটি ইমরান বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের জোট হিসেবে পরিচিত। জাম কামাল খান প্রকাশ্যে পিটিআই নেতৃত্বের সমালোচনা করতে থাকেন। বিশেষ করে বেলুচিস্তানের উন্নয়ন ব্যর্থতার জন্য তিনি পিটিআইকে দায়ী করেন।
২০২৪ সালের মার্চে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে জাম কামাল খান বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এতে স্পষ্ট হয় যে তিনি এখন ইমরান খান ও পিটিআইয়ের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে অবস্থান করছেন।
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ ইসহাক দার পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ।
২০২৪ সালের এপ্রিলে শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় তাঁকে উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী—উভয় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে একাধিকবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ছিলেন (১৯৯৮–১৯৯৯, ২০০৮, ২০১৩–২০১৭, ২০২২–২০২৩)।
ইসহাক দার মূলত তার অর্থনৈতিক নীতির জন্য বেশি পরিচিত। তিনি কঠোর অর্থনৈতিক সংস্কার, কর বৃদ্ধি এবং আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
২০২৪ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মূলত চীন, উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছেন। ভারত ও আফগানিস্তান ইস্যুতে তিনি তুলনামূলক কঠোর অবস্থান নেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি শাহবাজ শরিফের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং সরকারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফেরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় (তিনি নওয়াজ শরিফের ভগ্নিপতি)।
এ কারণে তাকে পিএমএল-এন এর অর্থনৈতিক নীতির স্থপতি ও নওয়াজ পরিবারের অন্যতম ভরসাযোগ্য মানুষ হিসেবে দেখা হয়।
ইসহাক দার ও ইমরান খান রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থনৈতিক নীতিতে বিপরীতমুখী এবং ব্যক্তিগতভাবে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়িত। বর্তমানে দার ইমরান খানের অন্যতম সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
ইমরান খান বরাবরই দারকে অভিযুক্ত করতেন যে তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ‘ডলার নির্ভর’ করে ফেলেছেন এবং ভুয়া স্থিতিশীলতার ভান দেখান।
অন্যদিকে, দার প্রকাশ্যে বলতেন যে ইমরান খানের সরকার (২০১৮–২০২২) অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছে, ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করেছে।
ইমরান খান দারকে প্রায়ই ‘দূর্নীতিগ্রস্ত আমলা’ বলে অভিযুক্ত করতেন। দারকে দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালে আদালতও তলব করেছিল। পরে তিনি লন্ডনে চলে যান।
২০১৮ সালে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর ইসহাক দারকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ব্যর্থ হন।
এরপর ২০২২ সালের এপ্রিলে যখন ইমরান খানের সরকার অনাস্থা ভোটে হেরে যায়, তখন দার ফেরত এসে আবার অর্থমন্ত্রী হন। এরপর তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘আমাদের বড় কাজ হচ্ছে ইমরান খানের তৈরি অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সামলানো।’
বর্তমানে কারাবন্দী এবং রাজনীতি থেকে কার্যত কোণঠাসা ইমরান খান। তাঁর দল পিটিআইকে ইসহাক দার পাকিস্তানের ‘অস্থিতিশীলতার কারণ’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস এবং পাকিস্তানের দায় অস্বীকার সবসময়ই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ আমলে (২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সাধারণত শীতল ও উত্তেজনাপূর্ণ এবং অকার্যকর ছিল। কারণ তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঐতিহাসিক বিরোধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার বারবার পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১-এর ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছে, যা পাকিস্তান কখনোই পূরণ করেনি। এই দাবিই সম্পর্কে উত্তেজনা বজায় রেখেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতেও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগও এতে ভূমিকা রেখেছে। ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক। শেখ হাসিনা সরকারও ভারতের সেই কর্তৃত্ববাদী আচরণ মেনে নিয়েছেন।
ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রধান ভরসা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তান এই দুটো সম্পর্ক পৃথিবীর অন্যতম ঘৃণার স্মৃতি বহনকারী বাস্তবতায় নির্ণয় করা হয়েছে। এ কারণেই আমরা দেখি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে গেছে। গত ১৫-১৬ বছরে ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। শেখ হাসিনাও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে একেবারে আপসকামী ছিলেন এবং ভারতের কৌলশগত উদ্দেশ্যসহ সমস্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন। এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থও বিসর্জন দিয়েছেন।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পাকিস্তানের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। চলতি বছরে এসে সম্পর্ক নতুন গতি পায়। এপ্রিলে ১৫ বছর পর দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। জুলাইয়ে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভী। এরপর সফরে এলেন দুই রাজনীতিবিদ জাম কামাল খান ও ইসহাক দার। এই সফরকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের এক নতুন সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসহাক দার গতকাল শনিবার ঢাকায় এসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আজ আমাদের শক্তিশালী অংশীদারত্বের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। আমাদের হৃদয় খোলা, আর আমাদের উদ্দেশ্য আন্তরিক।’
পাকিস্তানের এই রাজনীতিবিদ জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ও ভবিষ্যতমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
ইসহাক দার জানান, পাকিস্তান সরকার সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত—সরকার, রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও তরুণ প্রজন্ম—যাতে দুই দেশের শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।
ইসহাক দার আরও বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেন করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট, আর লাহোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত তরুণেরা হাতে হাত রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং তাদের যৌথ স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’
ভারত এই উষ্ণতাকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে। ভারত বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতিকে নিজের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষণ করছে। তবু উভয় দেশ এখন বাস্তবমুখী ও ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক নীতির দিকে এগোচ্ছে, যা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব মোকাবিলাও করা সম্ভব হবে।’
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামানানের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের কারণে ত্রিপক্ষীয় গতিশীলতা তৈরি হতে পারে, যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি বাংলাদেশকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
সবমিলিয়ে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার দিকে এগোতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে। তবে এই সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখা জরুরি।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। শনিবার দুপুরে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। গত তিন দশকে পাকিস্তানের কোনো উপপ্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে এলেন। আর ১৩ বছরে পাকিস্তানের কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও বাংলাদেশে প্রথম সফর এটি।
তার আগে গত ২১ আগস্ট পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে কাজ করবেন ইসহাক দার ও জাম কামাল খান। পাকিস্তান বলছে, এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
জাম কামাল খান আলিয়ানি বেলুচিস্তানের লাসবেলা অঞ্চলের একজন রাজনীতিবিদ ও ‘জাম’ পরিবারের উত্তরসূরি। জাম পরিবার একসময়কার রাজবংশীয় শাসক পরিবার।
জাম কামাল খান মূলত পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কিউ)-এর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ২০১৮ সালে নিজের দল বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি।
২০১৮–২০২১ পর্যন্ত তিনি বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আর ২০২৪ সালের মার্চ থেকে পাকিস্তানের ফেডারেল বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
জাম কামাল খান ও তার দল বিএপি শুরুতে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–এর গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাম কামাল খানের বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
দলটি পিটিআই-এর জোটসঙ্গী হয় এবং তাদের সমর্থনেই ইমরান খানের কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এর বিনিময়ে জাম কামাল খান বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী হন। এই সময় ইমরান খান ও পিটিআই তাঁকে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে বিবেচনা করত।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। বিশেষ করে বেলুচিস্তান প্রাদেশিক রাজনীতিতে পিটিআইয়ের সঙ্গে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। উন্নয়ন প্রকল্প ও তহবিল বণ্টন নিয়ে পিটিআই বনাম বিএপি টানাপোড়েন শুরু হয়। ফেডারেল স্তরে ইমরান খানের দল বিএপি-কে ধরে রাখতে চাইলেও স্থানীয় পর্যায়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকে।
বিএপির ভেতরেও একটি বড় অংশও জাম কামাল খানের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট হয়। বিরোধীরা দাবি তোলে, তিনি একনায়কসুলভ আচরণ করছেন। তাঁর উন্নয়ন প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি আছে, আর তিনি দলীয় ঐক্য নষ্ট করছেন। পিটিআইয়ের স্থানীয় শাখা এই বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়।
ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে জাম কামাল খান ২০২১ সালের অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগ অনেকটা পিটিআই ও বিদ্রোহী বিএপি সদস্যদের চাপের ফলাফল।
২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানের সরকার পতনের পর বিএপি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টে (পিডিএম) যোগ দেয়। এটি ইমরান বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের জোট হিসেবে পরিচিত। জাম কামাল খান প্রকাশ্যে পিটিআই নেতৃত্বের সমালোচনা করতে থাকেন। বিশেষ করে বেলুচিস্তানের উন্নয়ন ব্যর্থতার জন্য তিনি পিটিআইকে দায়ী করেন।
২০২৪ সালের মার্চে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে জাম কামাল খান বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এতে স্পষ্ট হয় যে তিনি এখন ইমরান খান ও পিটিআইয়ের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে অবস্থান করছেন।
পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ ইসহাক দার পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর রাজনীতিতে যুক্ত আছেন। তিনি একজন অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ।
২০২৪ সালের এপ্রিলে শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় তাঁকে উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী—উভয় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে একাধিকবার পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ছিলেন (১৯৯৮–১৯৯৯, ২০০৮, ২০১৩–২০১৭, ২০২২–২০২৩)।
ইসহাক দার মূলত তার অর্থনৈতিক নীতির জন্য বেশি পরিচিত। তিনি কঠোর অর্থনৈতিক সংস্কার, কর বৃদ্ধি এবং আইএমএফ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
২০২৪ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মূলত চীন, উপসাগরীয় দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছেন। ভারত ও আফগানিস্তান ইস্যুতে তিনি তুলনামূলক কঠোর অবস্থান নেন।
উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি শাহবাজ শরিফের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং সরকারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফেরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় (তিনি নওয়াজ শরিফের ভগ্নিপতি)।
এ কারণে তাকে পিএমএল-এন এর অর্থনৈতিক নীতির স্থপতি ও নওয়াজ পরিবারের অন্যতম ভরসাযোগ্য মানুষ হিসেবে দেখা হয়।
ইসহাক দার ও ইমরান খান রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী, অর্থনৈতিক নীতিতে বিপরীতমুখী এবং ব্যক্তিগতভাবে শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়িত। বর্তমানে দার ইমরান খানের অন্যতম সমালোচক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
ইমরান খান বরাবরই দারকে অভিযুক্ত করতেন যে তিনি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ‘ডলার নির্ভর’ করে ফেলেছেন এবং ভুয়া স্থিতিশীলতার ভান দেখান।
অন্যদিকে, দার প্রকাশ্যে বলতেন যে ইমরান খানের সরকার (২০১৮–২০২২) অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছে, ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করেছে।
ইমরান খান দারকে প্রায়ই ‘দূর্নীতিগ্রস্ত আমলা’ বলে অভিযুক্ত করতেন। দারকে দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালে আদালতও তলব করেছিল। পরে তিনি লন্ডনে চলে যান।
২০১৮ সালে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর ইসহাক দারকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ব্যর্থ হন।
এরপর ২০২২ সালের এপ্রিলে যখন ইমরান খানের সরকার অনাস্থা ভোটে হেরে যায়, তখন দার ফেরত এসে আবার অর্থমন্ত্রী হন। এরপর তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘আমাদের বড় কাজ হচ্ছে ইমরান খানের তৈরি অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা সামলানো।’
বর্তমানে কারাবন্দী এবং রাজনীতি থেকে কার্যত কোণঠাসা ইমরান খান। তাঁর দল পিটিআইকে ইসহাক দার পাকিস্তানের ‘অস্থিতিশীলতার কারণ’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস এবং পাকিস্তানের দায় অস্বীকার সবসময়ই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ আমলে (২০০৯-২০২৪) বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সাধারণত শীতল ও উত্তেজনাপূর্ণ এবং অকার্যকর ছিল। কারণ তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঐতিহাসিক বিরোধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার বারবার পাকিস্তানের কাছে ১৯৭১-এর ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছে, যা পাকিস্তান কখনোই পূরণ করেনি। এই দাবিই সম্পর্কে উত্তেজনা বজায় রেখেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতেও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগও এতে ভূমিকা রেখেছে। ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক। শেখ হাসিনা সরকারও ভারতের সেই কর্তৃত্ববাদী আচরণ মেনে নিয়েছেন।
ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। আর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রধান ভরসা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ-পাকিস্তান এই দুটো সম্পর্ক পৃথিবীর অন্যতম ঘৃণার স্মৃতি বহনকারী বাস্তবতায় নির্ণয় করা হয়েছে। এ কারণেই আমরা দেখি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও অনেক বেশি জটিল হয়ে গেছে। গত ১৫-১৬ বছরে ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। শেখ হাসিনাও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে একেবারে আপসকামী ছিলেন এবং ভারতের কৌলশগত উদ্দেশ্যসহ সমস্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছেন। এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থও বিসর্জন দিয়েছেন।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পাকিস্তানের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। চলতি বছরে এসে সম্পর্ক নতুন গতি পায়। এপ্রিলে ১৫ বছর পর দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। জুলাইয়ে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভী। এরপর সফরে এলেন দুই রাজনীতিবিদ জাম কামাল খান ও ইসহাক দার। এই সফরকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের এক নতুন সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসহাক দার গতকাল শনিবার ঢাকায় এসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আজ আমাদের শক্তিশালী অংশীদারত্বের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। আমাদের হৃদয় খোলা, আর আমাদের উদ্দেশ্য আন্তরিক।’
পাকিস্তানের এই রাজনীতিবিদ জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ও ভবিষ্যতমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
ইসহাক দার জানান, পাকিস্তান সরকার সব অংশীজনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত—সরকার, রাজনৈতিক দল, বিশ্ববিদ্যালয়, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও তরুণ প্রজন্ম—যাতে দুই দেশের শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।
ইসহাক দার আরও বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেন করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট, আর লাহোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত তরুণেরা হাতে হাত রেখে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং তাদের যৌথ স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’
ভারত এই উষ্ণতাকে সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছে। ভারত বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতিকে নিজের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষণ করছে। তবু উভয় দেশ এখন বাস্তবমুখী ও ভবিষ্যৎ-কেন্দ্রিক নীতির দিকে এগোচ্ছে, যা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদী মনোভাব মোকাবিলাও করা সম্ভব হবে।’
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামানানের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের কারণে ত্রিপক্ষীয় গতিশীলতা তৈরি হতে পারে, যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নকে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ব্যবহার করতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি বাংলাদেশকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
সবমিলিয়ে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার দিকে এগোতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে। তবে এই সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখা জরুরি।
বিজয়ের গল্পের সবচেয়ে নাটকীয় দিক হলো, ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উৎকর্ষতার সময়ে এসে সিনেমা ছেড়ে দেওয়া। ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ও সর্বাধিক জনপ্রিয় তারকাদের একজন ছিলেন বিজয়। তাঁর ছবি একের পর এক রেকর্ড ভাঙছিল। তবু তিনি ঘোষণা করলেন, ব্যক্তিগত গৌরব আর বিপুল অর্থের লোভ ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে আসবেন।
২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ও পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্যে একটি নতুন যৌথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন গঠনে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে একটি প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) প্রণয়ন এবং যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনাও করছে।
৫ ঘণ্টা আগেএই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। এদিকে, শনিবার ঢাকায় আসছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সরকারের উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে।
২ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্র নিজেই চীনের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। এশিয়াকে অভ্যন্তরীণভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং নিজেদের মধ্যে নতুন সমঝোতার ভিত্তি খুঁজতে বাধ্য করছে।
৩ দিন আগে