স্ট্রিম ডেস্ক
নাটকীয়ভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এতে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে নিজের অবস্থান বদলে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সমর্থনে ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে নেওয়া ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। অথচ এর আগে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই কিছু ছাড় দিতে হবে বলেছিলেন। বিশেষকরে ইউক্রেনকে ভূখণ্ডগত ছাড় দিতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু নতুন বক্তব্যে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সহায়তায় ইউক্রেনের পূর্ণ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। রাশিয়া তখন দেশটিতে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালায়, যাকে তারা বলেছিল ‘বিশেষ সামরিক অভিযান।’ এরপর রাশিয়া চারটি ইউক্রেনীয় প্রদেশ— দোনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার বিশাল অংশ দখল করে নেয়। রাশিয়া এসব অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়, যার মধ্যে আছে শিল্পাঞ্চল দোনবাস ও কৌশলগত বন্দর শহর মারিউপোল। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপও দখল করে নিয়েছিল। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের— বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর— সহায়তায় প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা কমিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ন্যাটোর অর্থ সহায়তাও কমিয়ে দেন ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনকে চাপ দিতে থাকেন রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য।
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন না। ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের হাতে এমন কোনো কৌশলগত সুবিধা নেই যা দিয়ে তারা রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া ছাড়াই থামাতে পারবে। তিনি সতর্ক করেন, জেলেনস্কির অবস্থান সংঘাতকে আরও বড় যুদ্ধে রূপ দিতে পারে। যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একাধিকবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে সময় দুজনের মধ্যে বেশ সখ্য দেখা গিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় নেতাদের শঙ্কা ছিল, আড়ালে হয়তো ইউক্রেনের দখল হওয়া ভূখণ্ডগুলো রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে যেকোনো ধরনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে ট্রাম্প আবারও বলেন, শান্তির পথ সম্ভবত ‘ভূখণ্ড অদলবদলেই’ নিহিত। অর্থাৎ, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়কেই কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বৈঠকটিকে ‘পরীক্ষামূলক আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে পুতিন আলোচনায় কতটা আগ্রহী তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বৈঠক থেকে কোনো চুক্তি হয়নি এবং কোনো ঘোষণাও আসেনি।
এ মাসের শুরুর দিকে পুতিন জানান, আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে। তবে তিনি বলেননি যে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে তিনি রাজি হবেন কি না। সেসময় শোনা যায়, ট্রাম্প নাকি পুতিনকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু পুতিন আর পরে কিছু জানাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকের পর নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি মনে করি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে ইউক্রেন যুদ্ধ করার এবং পুরো ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে।’
ট্রাম্প এমনকি ন্যাটোর কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘সময়, ধৈর্য এবং বিশেষত ইউরোপ ও ন্যাটোর আর্থিক সহায়তায় যুদ্ধ শুরুর আগের সীমানা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
রাশিয়ার সমালোচনা করে ট্রাম্প লেখেন, ‘তারা যুদ্ধ করছে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে’এবং এখন একেবারে ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে গেছে। ‘কাগুজে বাঘ’ বলতে এমন কাউকে বা কিছুকে বোঝানো হয়, যাকে ভয়ংকর মনে হলেও আসলে তেমন শক্তিশালী নয়।
ট্রাম্প রাশিয়াকে লক্ষ্য করে আরও মন্তব্য করেন, কোনো প্রকৃত সামরিক শক্তি হলে এই যুদ্ধ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যেত।
তার মতে, ইউক্রেন এখন শুধু দেশটিকে মূল সীমানায় ফিরিয়ে আনতেই সক্ষম নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে। কারণ পুতিন ও রাশিয়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে আছে, আর এ সময়টাই ইউক্রেনের জন্য কাজ করার সুযোগ।
পোস্টের শেষে ট্রাম্প লিখেন, তিনি উভয় দেশের মঙ্গল কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে এবং ন্যাটো তা নিজেদের মতো ব্যবহার করতে পারবে। শেষে তিনি যোগ করেন, ‘সবাইকে শুভকামনা!’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের নতুন অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাদের আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক্স-এ দেওয়া পোস্টে জেলেনস্কি যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে ট্রাম্পের বোঝাপড়া এবং যুদ্ধের অবসানে তার অঙ্গীকারের প্রশংসা করে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জেলেনস্কি লেখেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাননীয় প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন এবং এ যুদ্ধের সব দিক সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। আমরা এ যুদ্ধের অবসানে তার অঙ্গীকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পেসকভ ইউক্রেনের জন্য দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের ধারণা খারিজ করেছেন। তিনি ট্রাম্পের ‘কাগুজে বাঘ’ মন্তব্যের জবাবে রাশিয়াকে ‘ভাল্লুক’ হিসেবে তুলনা করেন। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও রাশিয়ার স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতার শক্তির উল্লেখ করেন।
বুধবার পেসকভ রাশিয়ার আরবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা এটি করছি আমাদের দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতের বহু প্রজন্মের জন্য। অতএব, আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। পেসকভ আরও বলেন, ট্রাম্পের পূর্বের সমঝোতার চেষ্টা, যার মধ্যে আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকও রয়েছে, তার ফল ‘প্রায় শূন্য’।
বুধবার রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় দেশটির মূল্য সংযোজন কর ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ খাতের অর্থায়ন ঠিক রাখা যায়। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, এবছর রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১ শতাংশে নেমে আসবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে পরিবর্তন তাঁর নীতিতে পরিবর্তন নাও আনতে পারে। কেউ কেউ একে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য পরোক্ষ হুমকি হিসেবে দেখছেন।
চাথাম হাউসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ কির গাইলস বলেছেন, ট্রাম্পের অবস্থান প্রায়শই তার সর্বশেষ সংলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। যেমন জেলেনস্কি বা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ইউরোপীয় নেতারা।
তবে রাশিয়ার প্ররোচনা বৃদ্ধি, যেমন ইউরোপের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং ইউক্রেনে তীব্র আক্রমণ, ট্রাম্পকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে প্ররোচিত করতে পারে। যাতে ন্যাটো অংশীদারদের আশ্বস্ত করা যায় এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলা করা যায়।
সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিল, ন্যাটো দেশগুলো কি রাশিয়ার বিমানগুলোকে তাঁদের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে গুলি করতে পারবে, তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পারবে।’
অবশ্য, ট্রাম্পের কথাগুলো প্রকৃত নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। গাইলস উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডই মার্কিন নীতি নির্ধারণ করবে, তার বক্তব্য নয়। কারণ তিনি অতীতে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। গাইলস বলেন, ‘সবাই ভুলে যায় যে ট্রাম্প কী বলে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তিনি কী করেন তা-ই গুরুত্বপূর্ণ।’
নাটকীয়ভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এতে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে নিজের অবস্থান বদলে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সমর্থনে ইউক্রেন রাশিয়ার দখলে নেওয়া ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। অথচ এর আগে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই কিছু ছাড় দিতে হবে বলেছিলেন। বিশেষকরে ইউক্রেনকে ভূখণ্ডগত ছাড় দিতে হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু নতুন বক্তব্যে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সহায়তায় ইউক্রেনের পূর্ণ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের পক্ষে মত দিয়েছেন।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। রাশিয়া তখন দেশটিতে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালায়, যাকে তারা বলেছিল ‘বিশেষ সামরিক অভিযান।’ এরপর রাশিয়া চারটি ইউক্রেনীয় প্রদেশ— দোনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার বিশাল অংশ দখল করে নেয়। রাশিয়া এসব অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয়, যার মধ্যে আছে শিল্পাঞ্চল দোনবাস ও কৌশলগত বন্দর শহর মারিউপোল। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপও দখল করে নিয়েছিল। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে রয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্রদের— বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর— সহায়তায় প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউক্রেনের প্রতি সহায়তা কমিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ন্যাটোর অর্থ সহায়তাও কমিয়ে দেন ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি ইউক্রেনকে চাপ দিতে থাকেন রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য।
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন না। ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের হাতে এমন কোনো কৌশলগত সুবিধা নেই যা দিয়ে তারা রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া ছাড়াই থামাতে পারবে। তিনি সতর্ক করেন, জেলেনস্কির অবস্থান সংঘাতকে আরও বড় যুদ্ধে রূপ দিতে পারে। যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একাধিকবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সে সময় দুজনের মধ্যে বেশ সখ্য দেখা গিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনসহ ইউরোপীয় নেতাদের শঙ্কা ছিল, আড়ালে হয়তো ইউক্রেনের দখল হওয়া ভূখণ্ডগুলো রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। জেলেনস্কি প্রকাশ্যে যেকোনো ধরনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আগে ট্রাম্প আবারও বলেন, শান্তির পথ সম্ভবত ‘ভূখণ্ড অদলবদলেই’ নিহিত। অর্থাৎ, ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়কেই কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বৈঠকটিকে ‘পরীক্ষামূলক আলোচনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে পুতিন আলোচনায় কতটা আগ্রহী তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে বৈঠক থেকে কোনো চুক্তি হয়নি এবং কোনো ঘোষণাও আসেনি।
এ মাসের শুরুর দিকে পুতিন জানান, আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে তাদের মধ্যে কিছু ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে। তবে তিনি বলেননি যে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে তিনি রাজি হবেন কি না। সেসময় শোনা যায়, ট্রাম্প নাকি পুতিনকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু পুতিন আর পরে কিছু জানাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকের পর নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি মনে করি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে ইউক্রেন যুদ্ধ করার এবং পুরো ইউক্রেনকে তার আসল রূপে ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে।’
ট্রাম্প এমনকি ন্যাটোর কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘সময়, ধৈর্য এবং বিশেষত ইউরোপ ও ন্যাটোর আর্থিক সহায়তায় যুদ্ধ শুরুর আগের সীমানা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
রাশিয়ার সমালোচনা করে ট্রাম্প লেখেন, ‘তারা যুদ্ধ করছে ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে’এবং এখন একেবারে ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে গেছে। ‘কাগুজে বাঘ’ বলতে এমন কাউকে বা কিছুকে বোঝানো হয়, যাকে ভয়ংকর মনে হলেও আসলে তেমন শক্তিশালী নয়।
ট্রাম্প রাশিয়াকে লক্ষ্য করে আরও মন্তব্য করেন, কোনো প্রকৃত সামরিক শক্তি হলে এই যুদ্ধ এক সপ্তাহেরও কম সময়ে শেষ হয়ে যেত।
তার মতে, ইউক্রেন এখন শুধু দেশটিকে মূল সীমানায় ফিরিয়ে আনতেই সক্ষম নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে। কারণ পুতিন ও রাশিয়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে আছে, আর এ সময়টাই ইউক্রেনের জন্য কাজ করার সুযোগ।
পোস্টের শেষে ট্রাম্প লিখেন, তিনি উভয় দেশের মঙ্গল কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখবে এবং ন্যাটো তা নিজেদের মতো ব্যবহার করতে পারবে। শেষে তিনি যোগ করেন, ‘সবাইকে শুভকামনা!’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পের নতুন অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তাদের আলোচনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এক্স-এ দেওয়া পোস্টে জেলেনস্কি যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে ট্রাম্পের বোঝাপড়া এবং যুদ্ধের অবসানে তার অঙ্গীকারের প্রশংসা করে বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন অংশীদারিত্ব আরও জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জেলেনস্কি লেখেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাননীয় প্রেসিডেন্ট পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন এবং এ যুদ্ধের সব দিক সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। আমরা এ যুদ্ধের অবসানে তার অঙ্গীকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি।’
রুশ প্রেসিডেন্ট দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পেসকভ ইউক্রেনের জন্য দখলকৃত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের ধারণা খারিজ করেছেন। তিনি ট্রাম্পের ‘কাগুজে বাঘ’ মন্তব্যের জবাবে রাশিয়াকে ‘ভাল্লুক’ হিসেবে তুলনা করেন। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও রাশিয়ার স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতার শক্তির উল্লেখ করেন।
বুধবার পেসকভ রাশিয়ার আরবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা এটি করছি আমাদের দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য। ভবিষ্যতের বহু প্রজন্মের জন্য। অতএব, আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। পেসকভ আরও বলেন, ট্রাম্পের পূর্বের সমঝোতার চেষ্টা, যার মধ্যে আলাস্কার শীর্ষ বৈঠকও রয়েছে, তার ফল ‘প্রায় শূন্য’।
বুধবার রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় দেশটির মূল্য সংযোজন কর ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে ‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা’ খাতের অর্থায়ন ঠিক রাখা যায়। বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, এবছর রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে প্রায় ১ শতাংশে নেমে আসবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে পরিবর্তন তাঁর নীতিতে পরিবর্তন নাও আনতে পারে। কেউ কেউ একে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য পরোক্ষ হুমকি হিসেবে দেখছেন।
চাথাম হাউসের ইউরেশিয়া বিশেষজ্ঞ কির গাইলস বলেছেন, ট্রাম্পের অবস্থান প্রায়শই তার সর্বশেষ সংলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। যেমন জেলেনস্কি বা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ইউরোপীয় নেতারা।
তবে রাশিয়ার প্ররোচনা বৃদ্ধি, যেমন ইউরোপের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং ইউক্রেনে তীব্র আক্রমণ, ট্রাম্পকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে প্ররোচিত করতে পারে। যাতে ন্যাটো অংশীদারদের আশ্বস্ত করা যায় এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মোকাবিলা করা যায়।
সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিল, ন্যাটো দেশগুলো কি রাশিয়ার বিমানগুলোকে তাঁদের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে গুলি করতে পারবে, তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, পারবে।’
অবশ্য, ট্রাম্পের কথাগুলো প্রকৃত নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। গাইলস উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডই মার্কিন নীতি নির্ধারণ করবে, তার বক্তব্য নয়। কারণ তিনি অতীতে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। গাইলস বলেন, ‘সবাই ভুলে যায় যে ট্রাম্প কী বলে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তিনি কী করেন তা-ই গুরুত্বপূর্ণ।’
ইসরায়েলের ‘ইউনিট ৮২০০’ গোয়েন্দা সংস্থাটি মাইক্রোসফটের অ্যাজুর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি শক্তিশালী গণনজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা পশ্চিম তীর ও গাজার লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের ফোনকল রেকর্ড করত।
২১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের আগস্টে ভারত সফলভাবে তার অগ্নি-৫ মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইআরবিএম) পরীক্ষা চালায়। নিখাদ জ্বালানি (সলিড ফুয়েল) চালিত তিন স্তরের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি।
১ দিন আগেনির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের অবস্থানের ভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে বিভেদ থাকলেও সব রাজনৈতিক দলের কণ্ঠেই ছিল এই উদ্বেগ — ‘আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং’।
২ দিন আগেগাজায় প্রায় দুই বছরের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানির দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে নতুন সচেতনতা তৈরি করেছে। একের পর এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলকে ঘিরে মার্কিন জনমত বদলাচ্ছে এবং ইসরায়েলের প্রতি অনুকূল মনোভাব কমছে।
৩ দিন আগে