ইরাকে ‘অস্ত্র’ ছিল না। তবে বোমা ঠিকই পড়েছিল। এবারও সেই পুরোনো স্ক্রিপ্টে নতুন শুটিং চলছে। লোকেশন পাশের দেশ ইরান। ইসরায়েল বলে এটা আগাম হুমকি মোকাবিলার আক্রমণ। আর ট্রাম্প কী করবে কেউ নিশ্চিত নয়। গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাতে নাটক জমাতে চাইছে ইসরায়েল, দৃশ্যপট এবার ইরান। যুদ্ধের নাম নিরাপত্তা, আগ্রাসনের নাম কূটনীতি—মঞ্চে কেউ পুরোনো, কেউ মুখোশধারী। দর্শক এখন বিশ্ববাসী। কী করবে ইরান? ইউরোপ, রাশিয়া, চীন কি দাঁড়াবে ইরানের পাশে?
রাতুল আল আহমেদ
ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক শুরু থেকেই নাটকীয়। ১৯৪৭ সালে যে ১৩টি দেশ ইসরায়েল পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল, ইরান ছিল তার অন্যতম। তবে পাহলভি শাসনামলে ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মূলত মিশর, সিরিয়া ও ইরাক ঘিরে গড়ে ওঠা আরব জাতীয়তাবাদের বিপরীতে জায়নবাদী ইসরায়েল ও ইরানি জাতীয়তাবাদী ইরানের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠে। এমনকি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইরান ইউরোপের মাধ্যমে তার তেল ইসরায়েলে পৌঁছে দেয়।
১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর তুঙ্গে থাকা এই সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেল, তা কিন্তু নয়। বিপ্লবের পরের বছর ইরাকের সঙ্গে ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল ইরানকে সহায়তা করে। ইসরায়েল বিমানবাহিনী ১৯৮১ সালে ইরাকে বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরাকের নির্মাণাধীন পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সাংবাদিক রোনেন বার্গম্যান তাঁর ‘দ্য সিক্রেট ওয়ার উইথ ইরান: দ্য থার্টি ইয়ার ক্লান্ডেস্ট্যান স্ট্রাগল অ্যাগেইন্সট দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস টেরোরিস্ট পাওয়ার’ বইয়ে এ হামলার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, ইরানে শাহের পতনের পর সেখানে পুনরায় প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলের প্রয়োজন ছিল এ যুদ্ধে জড়ানো। এ ছাড়া যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন বিজয়ী হলে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারতেন বলে মনে করেন তিনি।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডেভিড মেনাশরি বলেন, আশির দশকে ইরানকে কেউ প্রকাশ্যে হুমকি হিসেবে মনে করেনি। তাঁর মতে, বিপরীতমুখী রাজনৈতিক ভাষা থাকা সত্ত্বেও ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর নির্ভর করত। বিশেষ করে ইরাক ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতা মোকাবিলায় তাদের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। এই গোপন সহযোগিতা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ইরাকি সেনাবাহিনীর ধ্বংস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
কেউ কেউ মনে করেন ইসরায়েল এই সহযোগিতার মাধ্যমে ইরানে বসবাসরত ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। তবে ইরান বারবার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলকে ‘ছোট শয়তান’ উল্লেখ করেন তৎকালীন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেইনী। ১৯৮১ সালের ২৪ আগস্ট এক বক্তৃতায় ইজরায়েলের সহযোগিতা গ্রহণের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। তাঁর দাবি ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকেই ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বহু ইসলামিক দেশ যেখানে মুখ খোলেনি। তাঁর মতে ইসরায়েলের মাধ্যমে অসিরাক পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস ছিল সাদ্দাম হোসেনের সাজানো নাটক। এর মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেন ইরানে হামলার আসল উদ্দেশ্য আড়ালের চেষ্টা করেছিলেন।
১৯৮১ সাল থেকে নজর সরিয়ে আনা যাক বর্তমানে। বহু বছর ধরে ইসরায়েল ও ইরান নিজেদের মধ্যে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ বা ফিলিস্তিনের হামাসকেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মদদ দিয়ে আসছে ইরান। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর থেকে দেশটি ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। একইভাবে আরব বসন্তের ফলাফল হিসেবে মিশর বা সিরিয়ার রাজনীতিও ভঙ্গুর। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখে থাকে।
২০২৫ সালের ১৩ জুনে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরানে। দেশটির আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা ইসরায়েলের পুরোনো উদ্দেশ্যকেই সামনে এনেছে। লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো মধ্যপ্রাচ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে পরমাণু অস্ত্রের কাছাকাছি পৌঁছাতে না দেওয়া। ইসরায়েলের ভাষায় এই হামলা ‘পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত প্লুটোনিয়াম তৈরির সক্ষমতাকে অক্ষম করে দেওয়ার জন্য’।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ৪০টি যুদ্ধবিমান একযোগে শতাধিক অস্ত্র নিয়ে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি, রাডার ইউনিট, বিমান প্রতিরক্ষাকেন্দ্র ও ড্রোন নির্মাণকেন্দ্র। এই হামলার পেছনে ‘প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’, অর্থাৎ সম্ভাব্য হুমকি আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্রমণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই প্রেক্ষাপটে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ না করে, তাহলে সামরিক হামলা অনিবার্য, এই হলো তাঁর অভিমত। ‘ক্ষ্যাপা’ এই প্রেসিডেন্ট কী করতে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নয়। মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন নাকি ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বোমা ব্যবহারের কথাও ভাবছে।
ইরান-ইসরায়েলের এই সংঘাতে চীন ও রাশিয়াও নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই। এই দুই শক্তিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে। ফলে প্রতিটি কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনাকে তারা একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। রাশিয়ার জন্য ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ক্রয়কারী দেশ। সিরিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তারা ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুই দেশই সেখানে বাশার আল আসাদের পক্ষে লড়েছে। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটি মাধ্যম হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে পারে।
অপর দিকে চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির মধ্যস্থতাকারী ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে মরিয়া। ২০২৩ সালে চীনই সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক পুনর্মিলনের চুক্তি করায়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা দেখাতে চায়, মার্কিনিরা যেখানে বারুদ জোগায়, চীন সেখানে এগোয় কূটনীতির মারফতে। তবে চীনের লক্ষ্য কেবল কূটনীতি নয়; তাদের শক্তিশালী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তেল সরবরাহে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।
সংঘাত যুদ্ধে গড়ালে রাশিয়া ও চীন হয়তো সরাসরি সেনা মোতায়েন করবে না। তবে তথ্য, অস্ত্র, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক মোর্চায় তারা ইরানকে শক্তিশালী সহায়তা দেবে। তাতেই এই সংঘাত হয়তো আর একটি আঞ্চলিক বিরোধ থেকে পরিণত হতে পারে ‘নিয়ন্ত্রিত বিশ্বযুদ্ধে’। সরাসরি না হয়েও পরাশক্তিরা যেখানে একে অপরকে ছায়াযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরখ করে নিতে পারে।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ পুরোদস্তুর যুদ্ধে পরিণত হবে কি না, তা নিয়ে গবেষকরা একমত নন। ফিলিস্তিনে চালানো ইসরায়েলি গণহত্যা কি ইরান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে? ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, এরপর তাদের মনোযোগ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানের দিকে। স্পষ্টই ইউরোপ চাইছে না মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হোক। শরণার্থী ইস্যু ইতিমধ্যেই ইউরোপের রাজনীতিতে একটি বড় সংকট। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ পৃথিবীকে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো আরেকটি পারমাণবিক হামলা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং মানবসভ্যতার জন্যই হুমকি তৈরি করবে। এখন জায়নবাদী নেতানিয়াহু আর ‘স্যামচাচা’ ট্রাম্প কতদূর এগিয়ে যান, আর তার বিপরীতে ইরান কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং বিশ্বনেতারা মানবসভ্যতার এই সংকটে কতটুকু এগিয়ে আসতে পারেন, সেটিই দেখার বিষয়।
ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক শুরু থেকেই নাটকীয়। ১৯৪৭ সালে যে ১৩টি দেশ ইসরায়েল পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল, ইরান ছিল তার অন্যতম। তবে পাহলভি শাসনামলে ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মূলত মিশর, সিরিয়া ও ইরাক ঘিরে গড়ে ওঠা আরব জাতীয়তাবাদের বিপরীতে জায়নবাদী ইসরায়েল ও ইরানি জাতীয়তাবাদী ইরানের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে ওঠে। এমনকি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইরান ইউরোপের মাধ্যমে তার তেল ইসরায়েলে পৌঁছে দেয়।
১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর তুঙ্গে থাকা এই সম্পর্কের সমীকরণ বদলে গেল, তা কিন্তু নয়। বিপ্লবের পরের বছর ইরাকের সঙ্গে ইরান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল ইরানকে সহায়তা করে। ইসরায়েল বিমানবাহিনী ১৯৮১ সালে ইরাকে বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরাকের নির্মাণাধীন পারমাণবিক চুল্লি ধ্বংস করে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সাংবাদিক রোনেন বার্গম্যান তাঁর ‘দ্য সিক্রেট ওয়ার উইথ ইরান: দ্য থার্টি ইয়ার ক্লান্ডেস্ট্যান স্ট্রাগল অ্যাগেইন্সট দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস টেরোরিস্ট পাওয়ার’ বইয়ে এ হামলার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, ইরানে শাহের পতনের পর সেখানে পুনরায় প্রভাব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরায়েলের প্রয়োজন ছিল এ যুদ্ধে জড়ানো। এ ছাড়া যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন বিজয়ী হলে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারতেন বলে মনে করেন তিনি।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ডেভিড মেনাশরি বলেন, আশির দশকে ইরানকে কেউ প্রকাশ্যে হুমকি হিসেবে মনে করেনি। তাঁর মতে, বিপরীতমুখী রাজনৈতিক ভাষা থাকা সত্ত্বেও ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ওপর নির্ভর করত। বিশেষ করে ইরাক ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতা মোকাবিলায় তাদের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। এই গোপন সহযোগিতা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও ইরাকি সেনাবাহিনীর ধ্বংস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
কেউ কেউ মনে করেন ইসরায়েল এই সহযোগিতার মাধ্যমে ইরানে বসবাসরত ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। তবে ইরান বারবার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলকে ‘ছোট শয়তান’ উল্লেখ করেন তৎকালীন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেইনী। ১৯৮১ সালের ২৪ আগস্ট এক বক্তৃতায় ইজরায়েলের সহযোগিতা গ্রহণের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। তাঁর দাবি ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকেই ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বহু ইসলামিক দেশ যেখানে মুখ খোলেনি। তাঁর মতে ইসরায়েলের মাধ্যমে অসিরাক পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস ছিল সাদ্দাম হোসেনের সাজানো নাটক। এর মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেন ইরানে হামলার আসল উদ্দেশ্য আড়ালের চেষ্টা করেছিলেন।
১৯৮১ সাল থেকে নজর সরিয়ে আনা যাক বর্তমানে। বহু বছর ধরে ইসরায়েল ও ইরান নিজেদের মধ্যে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। ইয়েমেনের হুতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ বা ফিলিস্তিনের হামাসকেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মদদ দিয়ে আসছে ইরান। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর থেকে দেশটি ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। একইভাবে আরব বসন্তের ফলাফল হিসেবে মিশর বা সিরিয়ার রাজনীতিও ভঙ্গুর। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ইরানকে হুমকি হিসেবে দেখে থাকে।
২০২৫ সালের ১৩ জুনে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরানে। দেশটির আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলা ইসরায়েলের পুরোনো উদ্দেশ্যকেই সামনে এনেছে। লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো মধ্যপ্রাচ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে পরমাণু অস্ত্রের কাছাকাছি পৌঁছাতে না দেওয়া। ইসরায়েলের ভাষায় এই হামলা ‘পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত প্লুটোনিয়াম তৈরির সক্ষমতাকে অক্ষম করে দেওয়ার জন্য’।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ৪০টি যুদ্ধবিমান একযোগে শতাধিক অস্ত্র নিয়ে ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর মধ্যে ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি, রাডার ইউনিট, বিমান প্রতিরক্ষাকেন্দ্র ও ড্রোন নির্মাণকেন্দ্র। এই হামলার পেছনে ‘প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’, অর্থাৎ সম্ভাব্য হুমকি আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্রমণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই প্রেক্ষাপটে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ না করে, তাহলে সামরিক হামলা অনিবার্য, এই হলো তাঁর অভিমত। ‘ক্ষ্যাপা’ এই প্রেসিডেন্ট কী করতে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত নয়। মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন নাকি ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বোমা ব্যবহারের কথাও ভাবছে।
ইরান-ইসরায়েলের এই সংঘাতে চীন ও রাশিয়াও নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই। এই দুই শক্তিই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে চাইছে। ফলে প্রতিটি কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনাকে তারা একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে। রাশিয়ার জন্য ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ক্রয়কারী দেশ। সিরিয়া যুদ্ধের ক্ষেত্রেও তারা ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুই দেশই সেখানে বাশার আল আসাদের পক্ষে লড়েছে। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর একটি মাধ্যম হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে পারে।
অপর দিকে চীন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির মধ্যস্থতাকারী ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে মরিয়া। ২০২৩ সালে চীনই সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক পুনর্মিলনের চুক্তি করায়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা দেখাতে চায়, মার্কিনিরা যেখানে বারুদ জোগায়, চীন সেখানে এগোয় কূটনীতির মারফতে। তবে চীনের লক্ষ্য কেবল কূটনীতি নয়; তাদের শক্তিশালী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তেল সরবরাহে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।
সংঘাত যুদ্ধে গড়ালে রাশিয়া ও চীন হয়তো সরাসরি সেনা মোতায়েন করবে না। তবে তথ্য, অস্ত্র, অর্থনীতি ও কূটনৈতিক মোর্চায় তারা ইরানকে শক্তিশালী সহায়তা দেবে। তাতেই এই সংঘাত হয়তো আর একটি আঞ্চলিক বিরোধ থেকে পরিণত হতে পারে ‘নিয়ন্ত্রিত বিশ্বযুদ্ধে’। সরাসরি না হয়েও পরাশক্তিরা যেখানে একে অপরকে ছায়াযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরখ করে নিতে পারে।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ পুরোদস্তুর যুদ্ধে পরিণত হবে কি না, তা নিয়ে গবেষকরা একমত নন। ফিলিস্তিনে চালানো ইসরায়েলি গণহত্যা কি ইরান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে? ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, এরপর তাদের মনোযোগ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানের দিকে। স্পষ্টই ইউরোপ চাইছে না মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হোক। শরণার্থী ইস্যু ইতিমধ্যেই ইউরোপের রাজনীতিতে একটি বড় সংকট। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ পৃথিবীকে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে। হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো আরেকটি পারমাণবিক হামলা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং মানবসভ্যতার জন্যই হুমকি তৈরি করবে। এখন জায়নবাদী নেতানিয়াহু আর ‘স্যামচাচা’ ট্রাম্প কতদূর এগিয়ে যান, আর তার বিপরীতে ইরান কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং বিশ্বনেতারা মানবসভ্যতার এই সংকটে কতটুকু এগিয়ে আসতে পারেন, সেটিই দেখার বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যেন চলছে নতুন এক রিয়েলিটি শো। নাম ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’। গত ৬ জুন ইলন মাস্ক নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণা দিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ইলন মাস্কের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ এর সপ্তাহখানেক পর ইলন মাস্ক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়াতে করা মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।
২ দিন আগেআলোচনার এই কূটকৌশলের মধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ে আসা হচ্ছিল। ২৩ মার্চ আওয়ামী লীগ জানায় তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। এখন সিদ্ধান্তের পালা প্রেসিডেন্টের। কিন্তু সিদ্ধান্ত আসেনি।
৮ দিন আগেপহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় এবার বাঘ, ইলিশ, তরমুজসহ বেশ কিছু নতুন প্রতীকের সমাবেশ ঘটেছে। এই প্রতীকগুলো আসলে কী বলছে? এর মধ্যে কি কোনো রাজনীতি আছে?
১৩ দিন আগেসদ্য সমাপ্ত কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো বিশেষ স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’। এ ছবির নির্মাতা আদনান আল রাজীব কীভাবে গেলেন এত দূর?
১৪ দিন আগে