জুলাই সনদ নিয়ে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের জায়গা এর বাস্তবায়ন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে। সনদটি কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব প্রকট। যদিও সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে নীতিগত সম্মতি রয়েছে, কিন্তু সেই গণভোট কখন এবং কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
তুফায়েল আহমদ
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নেয় ‘জুলাই সনদ’। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর, গত ১৬ আগস্ট জুলাই সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রেরণ করে।
এর মূল লক্ষ্য ছিল শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জন্য এই সংস্কারগুলোকে অবশ্য পালনীয় দলিলে পরিণত করা।
গত ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্রসহ জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সনদের যাত্রা শুরু হলেও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি, সাংবিধানিক বৈধতা এবং বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে সনদের চূড়ান্ত স্বাক্ষর ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
সনদের প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার।
এরই অংশ হিসেবে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য মোট ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনগুলো বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে ১৬৬টির মতো সংস্কার প্রস্তাব সুপারিশ করে। এই কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করে গঠিত হয় এই কমিশন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
দীর্ঘ আলোচনার পর প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয়। এই সনদের মূল উদ্দেশ্য হল, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও টেকসই রূপ দেওয়া এবং পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য নৈতিক ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গণভোটের সময় এবং সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে। রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ অক্টোবর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে এবং এর পরবর্তী সময়ে স্পষ্টভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে।
১৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি চূড়ান্তভাবে জানায়, সনদে স্বাক্ষরের আগেই প্রধান উপদেষ্টাকে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ বা অনুরূপ বিশেষ আদেশ জারি করে সংস্কার বাস্তবায়নের পথ নিশ্চিত করতে হবে। আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করাকে তারা অর্থহীন মনে করছে এবং বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার না হলে তারা সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপি ১৫ অক্টোবরের বৈঠকে স্পষ্ট করে যে তারা শুক্রবারেই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। তবে সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে আয়োজনের পক্ষে তাদের অবস্থান। দলটির মতে, নির্বাচনের অল্প সময় বাকি থাকায় আলাদা গণভোট আয়োজন বাস্তবসম্মত নয় এবং নির্বাচনের দিন গণভোট হলে ভবিষ্যৎ সংসদ এটি বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনকে ‘শর্তযুক্ত’ বলে উল্লেখ করেছে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকেই প্রধান শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।
জামায়াতে ইসলামী আবার ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। দলটি ১৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এবং ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তাদের অবস্থান তুলে ধরে। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই, বিশেষত নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।
তাদের যুক্তি হলো, সনদের কিছু প্রস্তাব যেমন—উচ্চকক্ষ ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করবে। তাই নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনের দিন গণভোট হলে এই সংস্কারগুলো কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। এই ভিন্নমত সত্ত্বেও জামায়াত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মূল দ্বন্দ্ব
জুলাই সনদ নিয়ে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের জায়গা এর বাস্তবায়ন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে। সনদটি কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব প্রকট। যদিও সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে নীতিগত সম্মতি রয়েছে, কিন্তু সেই গণভোট কখন এবং কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
বিএনপিসহ বেশ কিছু দল চায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। আবার, এনসিপির দাবি, সনদে স্বাক্ষর করার আগেই 'সংবিধান আদেশ' জারির মাধ্যমে এর বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করতে হবে। এনসিপি মনে করে, বাস্তবায়নের পদ্ধতির নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করা হলে তা ভবিষ্যতে গুরুত্বহীন একটি দলিলে পরিণত হতে পারে।
এই জটিলতার কারণে ঐকমত্য কমিশন সনদের মূল দলিল থেকে বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়টি আলাদা করে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দলগুলোর মধ্যকার অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করতে পারেনি।
সনদের বিষয়বস্তু ও সাংবিধানিক বিতর্ক
বাস্তবায়ন পদ্ধতির পাশাপাশি সনদের কিছু নির্দিষ্ট ধারা এবং এর আইনি মর্যাদা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সনদের একটি অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
এই ধারাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি জুলাই সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা? এই শর্তের কারণে সনদটি একটি বিচারিক সুরক্ষা পেলেও এটি দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, সেই বিতর্ক চলমান।
পাশাপাশি সনদে অন্তর্ভুক্ত সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং বামপন্থী দলগুলোসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত বা 'নোট অব ডিসেন্ট' রয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান থাকতে না পারার প্রস্তাব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবে কয়েকটি বড় দল আপত্তি জানিয়েছে। অন্যদিকে, বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি পুনর্বহালের সুপারিশ না থাকায় বামপন্থী দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে সংশয় থেকে গেছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এবং বিষয়বস্তু নিয়ে মতপার্থক্য গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। কিছু প্রস্তাবে ভিন্নমত পোষণ করা দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হলে সেই প্রস্তাবগুলো কেন বাস্তবায়ন করবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এই বিভাজন ও অবিশ্বাসের কারণে নির্ধারিত সময়ে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে যে, সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করবে, কিন্তু বিভিন্ন দলের কঠোর অবস্থান সেই আশাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
জুলাই সনদ নিয়ে কেন এই অচলাবস্থা এবং সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী স্ট্রিমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাবই জুলাই সনদ ঘিরে তৈরি হওয়া বর্তমান অনিশ্চয়তার অন্যতম প্রধান কারণ। এই গভীর আস্থাহীনতার কারণেই সনদটি নিয়ে সব দলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে, তা জনগণের পক্ষেও মেনে নেওয়া কষ্টকর হবে। এই পরিস্থিতি আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকেও একটি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।’
অধ্যাপক বুলবুল আরও বলেন, ‘তবে অল্প সময় বাকি থাকলেও আমি আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমেই দলগুলো তাদের মতানৈক্যের জায়গাগুলো দূর করতে সক্ষম হবে এবং নিজ নিজ কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসবে। জুলাই সনদের মতো এত ব্যাপক পরিসরে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। এই ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য দলগুলোর সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি।’
জুলাই সনদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমঝোতার দলিল হয়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের পথের স্বচ্ছতা ও সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে না পারায় এই ঐতিহাসিক উদ্যোগটি এখন বাধার সম্মুখীন। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় এসে সনদ বাস্তবায়নের কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে একমত হতে না পারে, তবে জুলাই সনদের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সংস্কার আকাঙ্ক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নেয় ‘জুলাই সনদ’। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর, গত ১৬ আগস্ট জুলাই সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রেরণ করে।
এর মূল লক্ষ্য ছিল শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জন্য এই সংস্কারগুলোকে অবশ্য পালনীয় দলিলে পরিণত করা।
গত ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্রসহ জুলাই সনদের চূড়ান্ত কপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সনদের যাত্রা শুরু হলেও এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি, সাংবিধানিক বৈধতা এবং বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে সনদের চূড়ান্ত স্বাক্ষর ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
সনদের প্রেক্ষাপট ও লক্ষ্য
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার।
এরই অংশ হিসেবে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য মোট ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনগুলো বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে ১৬৬টির মতো সংস্কার প্রস্তাব সুপারিশ করে। এই কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি করে গঠিত হয় এই কমিশন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
দীর্ঘ আলোচনার পর প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হয়। এই সনদের মূল উদ্দেশ্য হল, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও টেকসই রূপ দেওয়া এবং পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য নৈতিক ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গণভোটের সময় এবং সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে। রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ অক্টোবর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে এবং এর পরবর্তী সময়ে স্পষ্টভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে।
১৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি চূড়ান্তভাবে জানায়, সনদে স্বাক্ষরের আগেই প্রধান উপদেষ্টাকে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ বা অনুরূপ বিশেষ আদেশ জারি করে সংস্কার বাস্তবায়নের পথ নিশ্চিত করতে হবে। আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করাকে তারা অর্থহীন মনে করছে এবং বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার না হলে তারা সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বিএনপি ১৫ অক্টোবরের বৈঠকে স্পষ্ট করে যে তারা শুক্রবারেই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। তবে সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে আয়োজনের পক্ষে তাদের অবস্থান। দলটির মতে, নির্বাচনের অল্প সময় বাকি থাকায় আলাদা গণভোট আয়োজন বাস্তবসম্মত নয় এবং নির্বাচনের দিন গণভোট হলে ভবিষ্যৎ সংসদ এটি বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনকে ‘শর্তযুক্ত’ বলে উল্লেখ করেছে এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনকেই প্রধান শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছে।
জামায়াতে ইসলামী আবার ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। দলটি ১৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এবং ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তাদের অবস্থান তুলে ধরে। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগেই, বিশেষত নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।
তাদের যুক্তি হলো, সনদের কিছু প্রস্তাব যেমন—উচ্চকক্ষ ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করবে। তাই নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ে জনগণের রায় নেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনের দিন গণভোট হলে এই সংস্কারগুলো কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। এই ভিন্নমত সত্ত্বেও জামায়াত সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে।
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মূল দ্বন্দ্ব
জুলাই সনদ নিয়ে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের জায়গা এর বাস্তবায়ন পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে। সনদটি কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের অভাব প্রকট। যদিও সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি গণভোট আয়োজনের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে নীতিগত সম্মতি রয়েছে, কিন্তু সেই গণভোট কখন এবং কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
বিএনপিসহ বেশ কিছু দল চায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলো নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। আবার, এনসিপির দাবি, সনদে স্বাক্ষর করার আগেই 'সংবিধান আদেশ' জারির মাধ্যমে এর বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করতে হবে। এনসিপি মনে করে, বাস্তবায়নের পদ্ধতির নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করা হলে তা ভবিষ্যতে গুরুত্বহীন একটি দলিলে পরিণত হতে পারে।
এই জটিলতার কারণে ঐকমত্য কমিশন সনদের মূল দলিল থেকে বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়টি আলাদা করে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দলগুলোর মধ্যকার অবিশ্বাস ও সন্দেহ দূর করতে পারেনি।
সনদের বিষয়বস্তু ও সাংবিধানিক বিতর্ক
বাস্তবায়ন পদ্ধতির পাশাপাশি সনদের কিছু নির্দিষ্ট ধারা এবং এর আইনি মর্যাদা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সনদের একটি অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
এই ধারাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি জুলাই সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা? এই শর্তের কারণে সনদটি একটি বিচারিক সুরক্ষা পেলেও এটি দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, সেই বিতর্ক চলমান।
পাশাপাশি সনদে অন্তর্ভুক্ত সব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং বামপন্থী দলগুলোসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত বা 'নোট অব ডিসেন্ট' রয়েছে। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান থাকতে না পারার প্রস্তাব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাবে কয়েকটি বড় দল আপত্তি জানিয়েছে। অন্যদিকে, বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি পুনর্বহালের সুপারিশ না থাকায় বামপন্থী দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে সংশয় থেকে গেছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যৎ
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে এই দ্বন্দ্ব এবং বিষয়বস্তু নিয়ে মতপার্থক্য গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। কিছু প্রস্তাবে ভিন্নমত পোষণ করা দলগুলো নির্বাচনে জয়ী হলে সেই প্রস্তাবগুলো কেন বাস্তবায়ন করবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এই বিভাজন ও অবিশ্বাসের কারণে নির্ধারিত সময়ে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে যে, সব দল শেষ পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করবে, কিন্তু বিভিন্ন দলের কঠোর অবস্থান সেই আশাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
জুলাই সনদ নিয়ে কেন এই অচলাবস্থা এবং সম্ভাব্য সমাধান প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বুলবুল সিদ্দিকী স্ট্রিমকে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাবই জুলাই সনদ ঘিরে তৈরি হওয়া বর্তমান অনিশ্চয়তার অন্যতম প্রধান কারণ। এই গভীর আস্থাহীনতার কারণেই সনদটি নিয়ে সব দলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে, তা জনগণের পক্ষেও মেনে নেওয়া কষ্টকর হবে। এই পরিস্থিতি আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকেও একটি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।’
অধ্যাপক বুলবুল আরও বলেন, ‘তবে অল্প সময় বাকি থাকলেও আমি আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমেই দলগুলো তাদের মতানৈক্যের জায়গাগুলো দূর করতে সক্ষম হবে এবং নিজ নিজ কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসবে। জুলাই সনদের মতো এত ব্যাপক পরিসরে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। এই ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য দলগুলোর সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি।’
জুলাই সনদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমঝোতার দলিল হয়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের পথের স্বচ্ছতা ও সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে না পারায় এই ঐতিহাসিক উদ্যোগটি এখন বাধার সম্মুখীন। যদি রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় এসে সনদ বাস্তবায়নের কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতিতে একমত হতে না পারে, তবে জুলাই সনদের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সংস্কার আকাঙ্ক্ষার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
মতানৈক্যের কারণে রাজনৈতিক দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়টি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১৬ ঘণ্টা আগেইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা থেকে শুরু করে নেপালের শান্তি প্রক্রিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রিডম চার্টার, স্পেনের মোনক্লোয়া চুক্তি ও চিলির কনসারটাসিওন—প্রতিটিই নিজ নিজ প্রেক্ষাপটে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তবে এই চুক্তিগুলো যেমন ঐকমত্যের নজির স্থাপন করেছে, তেমনি বিভেদ ও আপত্তির ইতিহাসও কম নয়।
১৭ ঘণ্টা আগেইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়িত হবে তা নিয়ে মতভেদ আজও গভীর। তার দ্বিতীয় মেয়াদের সাহসী পররাষ্ট্রনীতির দাবিগুলো এই বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনি ‘সাতটি অনন্ত যুদ্ধ’ থামিয়েছেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি এনেছেন।
১ দিন আগে১৯৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন, ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদেরই ভূমি; ইহুদিদের সেখানে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।’ সাত দশক পর, সেই একই ভূমিতে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের সত্যিকারের বন্ধু।
২ দিন আগে