স্ট্রিম ডেস্ক
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান—একদিকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় ভূখণ্ড, অন্যদিকে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এক দুর্বার ইতিহাসের দেশ। ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বৈশ্বিক কূটনীতির ঢেউ এই দুই রাষ্ট্রকে বারবার এক অদৃশ্য সেতুবন্ধনে যুক্ত করেছে। সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ, আবার সাম্প্রতিক তালেবান প্রত্যাবর্তন—প্রতিটি পর্যায়েই ঢাকা-কাবুল সম্পর্ক নতুন প্রশ্ন ও নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। আজ যখন আঞ্চলিক ভূরাজনীতি নতুন রূপ নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সম্পর্ককে ফিরে দেখা মানে শুধু অতীত ঝালাই নয়, বরং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক দিকনির্দেশও খুঁজে দেখা।
‘রাজমহলে বহু বাঙালি পরিবার রয়েছে, যাঁদের পূর্বপুরুষ আফগানিস্তানের বলখসহ নানা অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।’ ১৬২৬ সালে মন্তব্য করেছিলেন আফগান পর্যটক মাহমুদ বালখি। এমনকি ঔপনিবেশিক যুগে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী শিক্ষক হিসেবে স্থায়ী হয়েছিলেন আফগানিস্তানে। কাবুল কৃষি কলেজে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচনা করেন ‘দেশে বিদেশে’।
মানুষের ইতিহাসে দুই দেশের যোগাযোগ শুধু সীমাবদ্ধ নয়; তা প্রায় হাজার বছরের পুরোনো ও বহুস্তরবিশিষ্ট। এর সূচনা হয় ঘনিষ্ঠ ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, যা পরবর্তী সময়ে ধর্ম, শাসন ও জনসংখ্যার গতিপ্রবাহে গভীর প্রভাব ফেলে।
১৩শ শতকে গরমসির অঞ্চলের খলজ গোত্রের যোদ্ধা মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি বঙ্গ জয়ের মাধ্যমে প্রথমবার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। একই সময়ে বলখের যুবরাজ সুলতান বালখি উত্তর বাংলায় বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখেন। এরপর থেকে আফগানদের একটি বড় অংশ ধারাবাহিকভাবে বাংলায় বসতি স্থাপন করতে থাকে, যা ঔপনিবেশিক যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
বঙ্গের সুলতান নাসিরউদ্দিন নাসরাত শাহের আমলে, মুঘল সম্রাট বাবরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে আফগান লোদি বংশের মাহমুদ লোদি বাংলায় আশ্রয় নেন। তাঁদের বিপুল জমি দান করেন সুলতান। নিজেও ইব্রাহিম লোদির কন্যাকে বিবাহ করেন। সূর বংশ বাংলার প্রথম আফগান শাসক পরিবার হিসেবে ক্ষমতায় আসে ১৫৩৯ সালে। মুঘলদের আক্রমণে আবারও বিপুল সংখ্যক আফগান বাংলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ঈশা খাঁর নেতৃত্বে ‘বারো ভূঁইয়া’দের শাসনব্যবস্থায় সহযোগী ছিল আফগানেরা।
ইতিহাসবিদদের মতে, সোনারগাঁ ঘাটিতে থাকা মুঘল নৌ সেনাপতি শাহ বরদির ওপর আক্রমণ করে সৈন্যসামন্তকে বিতাড়িত করেছিলেন। এ কারণে তখনকার বাংলার আফগান শাসক দাউদ খান কররানি ঈশা খাঁকে মসনদ-ই-আলা উপাধি দেন।
১৬১২ সালে আফগান নেতা উসমান লোহানির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বাংলায় থেকে যায় অধিকাংশ আফগান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি সমাজে মিশে যায় তাঁরা।
আফগান-শিখ যুদ্ধগুলোতেও বাঙালিরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ১৮৩১ সালে রণজিৎ সিংয়ের বিরুদ্ধে বালাকোটের যুদ্ধে লড়াই করে তাঁরা।
প্রথম ইংরেজ-আফগান যুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজয় ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাসে বড় মোড় এনে দেয়। তা পরোক্ষভাবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে।
১৯৭১। বাংলাদেশে চলছে স্বাধীনতাযুদ্ধ। ওদিকে পাকিস্তানে আটকা পড়েছেন বহু বাঙালি। এই বাঙালিদের নিরাপদ পথে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল তৎকালীন আফগানিস্তান সরকার। সে সময় আফগানিস্তানের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি দ্রুত নবগঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানায়।
আফগানিস্তান পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আসছে, যা তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও প্রশংসা করেছিলেন। আফগান নাগরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ব্যাংকিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি খাতসহ নানা বিষয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রায় ১৭০টি বাংলাদেশি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশভিত্তিক কয়েকটি এনজিও আফগানিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি কাজ করছে। এর মধ্যে ব্র্যাক অন্যতম, যারা ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১২ সাল নাগাদ ব্র্যাকের সেখানে ১৭৩টি অফিস ছিল, যার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৯৮ লাখ মানুষ সেবা পেয়েছে।
২০২২ সালের ৫ জুলাই আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ সরকার মানবিক সহায়তা পাঠায়।
আফগানিস্তান তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা নিতে ঢাকা সফর করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৫ জন আফগান শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। বর্তমানে আফগানিস্তানের ঢাকায় একটি দূতাবাস আছে, তবে কাবুলে এখনও দূতাবাস স্থাপন করেনি বাংলাদেশ।
২০১০ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিচার্ড হলব্রুক বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ-সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ করেন। অন্যদিকে তালেবানরা বাংলাদেশকে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়।
তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মত ছিল—জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশের সেনা পাঠানো উচিত নয়। পরে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনো সেনা পাঠানো হবে না। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগান শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিও সরকার নাকচ করে। বর্তমানে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ছেচল্লিশ হাজার পশতুন বাস করে। যদিও মোট কতজন আফগান বংশোদ্ভূত বাংলাদেশে আছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। পশতুনদের বড় অংশ ঢাকায় বসবাস করে, এরপর রংপুর ও রাজশাহীতে।
জিওপলিটিক্সের গবেষকদের একটি দল মনে করছেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে আরও সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাঁদের মতে, এর প্রভাব দুই ধরনের হতে পারে। একদিকে বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্ভাবনা। অন্যদিকে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই সম্পর্ক আরও জোরদার হলে তালেবান-প্রভাবিত চিন্তাধারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভেতরে অনুরণন তৈরি করতে পারে।
এই পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেখা যায় ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে একটি ইসলামি প্রতিনিধি দল তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে কাবুল সফর করে। ওই দলে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাঁরা আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি, কয়েকজন মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় মূলত আলেমদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে নতুন ধরনের সহযোগিতার পথ খোঁজার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা, জিওপলিটিক্স ডট কম, বিবিসি
বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান—একদিকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় ভূখণ্ড, অন্যদিকে পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এক দুর্বার ইতিহাসের দেশ। ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বৈশ্বিক কূটনীতির ঢেউ এই দুই রাষ্ট্রকে বারবার এক অদৃশ্য সেতুবন্ধনে যুক্ত করেছে। সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ, আবার সাম্প্রতিক তালেবান প্রত্যাবর্তন—প্রতিটি পর্যায়েই ঢাকা-কাবুল সম্পর্ক নতুন প্রশ্ন ও নতুন সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। আজ যখন আঞ্চলিক ভূরাজনীতি নতুন রূপ নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের সম্পর্ককে ফিরে দেখা মানে শুধু অতীত ঝালাই নয়, বরং ভবিষ্যতের কূটনৈতিক দিকনির্দেশও খুঁজে দেখা।
‘রাজমহলে বহু বাঙালি পরিবার রয়েছে, যাঁদের পূর্বপুরুষ আফগানিস্তানের বলখসহ নানা অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।’ ১৬২৬ সালে মন্তব্য করেছিলেন আফগান পর্যটক মাহমুদ বালখি। এমনকি ঔপনিবেশিক যুগে বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী শিক্ষক হিসেবে স্থায়ী হয়েছিলেন আফগানিস্তানে। কাবুল কৃষি কলেজে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচনা করেন ‘দেশে বিদেশে’।
মানুষের ইতিহাসে দুই দেশের যোগাযোগ শুধু সীমাবদ্ধ নয়; তা প্রায় হাজার বছরের পুরোনো ও বহুস্তরবিশিষ্ট। এর সূচনা হয় ঘনিষ্ঠ ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে, যা পরবর্তী সময়ে ধর্ম, শাসন ও জনসংখ্যার গতিপ্রবাহে গভীর প্রভাব ফেলে।
১৩শ শতকে গরমসির অঞ্চলের খলজ গোত্রের যোদ্ধা মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি বঙ্গ জয়ের মাধ্যমে প্রথমবার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। একই সময়ে বলখের যুবরাজ সুলতান বালখি উত্তর বাংলায় বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখেন। এরপর থেকে আফগানদের একটি বড় অংশ ধারাবাহিকভাবে বাংলায় বসতি স্থাপন করতে থাকে, যা ঔপনিবেশিক যুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
বঙ্গের সুলতান নাসিরউদ্দিন নাসরাত শাহের আমলে, মুঘল সম্রাট বাবরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে আফগান লোদি বংশের মাহমুদ লোদি বাংলায় আশ্রয় নেন। তাঁদের বিপুল জমি দান করেন সুলতান। নিজেও ইব্রাহিম লোদির কন্যাকে বিবাহ করেন। সূর বংশ বাংলার প্রথম আফগান শাসক পরিবার হিসেবে ক্ষমতায় আসে ১৫৩৯ সালে। মুঘলদের আক্রমণে আবারও বিপুল সংখ্যক আফগান বাংলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ঈশা খাঁর নেতৃত্বে ‘বারো ভূঁইয়া’দের শাসনব্যবস্থায় সহযোগী ছিল আফগানেরা।
ইতিহাসবিদদের মতে, সোনারগাঁ ঘাটিতে থাকা মুঘল নৌ সেনাপতি শাহ বরদির ওপর আক্রমণ করে সৈন্যসামন্তকে বিতাড়িত করেছিলেন। এ কারণে তখনকার বাংলার আফগান শাসক দাউদ খান কররানি ঈশা খাঁকে মসনদ-ই-আলা উপাধি দেন।
১৬১২ সালে আফগান নেতা উসমান লোহানির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে বাংলায় থেকে যায় অধিকাংশ আফগান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি সমাজে মিশে যায় তাঁরা।
আফগান-শিখ যুদ্ধগুলোতেও বাঙালিরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ১৮৩১ সালে রণজিৎ সিংয়ের বিরুদ্ধে বালাকোটের যুদ্ধে লড়াই করে তাঁরা।
প্রথম ইংরেজ-আফগান যুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে। সেই যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজয় ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাসে বড় মোড় এনে দেয়। তা পরোক্ষভাবে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পথ প্রশস্ত করে।
১৯৭১। বাংলাদেশে চলছে স্বাধীনতাযুদ্ধ। ওদিকে পাকিস্তানে আটকা পড়েছেন বহু বাঙালি। এই বাঙালিদের নিরাপদ পথে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল তৎকালীন আফগানিস্তান সরকার। সে সময় আফগানিস্তানের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি দ্রুত নবগঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ারও আহ্বান জানায়।
আফগানিস্তান পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে আসছে, যা তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও প্রশংসা করেছিলেন। আফগান নাগরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ব্যাংকিং, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষি খাতসহ নানা বিষয়ে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রায় ১৭০টি বাংলাদেশি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশভিত্তিক কয়েকটি এনজিও আফগানিস্তানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি কাজ করছে। এর মধ্যে ব্র্যাক অন্যতম, যারা ২০০২ সাল থেকে আফগানিস্তানে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১২ সাল নাগাদ ব্র্যাকের সেখানে ১৭৩টি অফিস ছিল, যার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৯৮ লাখ মানুষ সেবা পেয়েছে।
২০২২ সালের ৫ জুলাই আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ সরকার মানবিক সহায়তা পাঠায়।
আফগানিস্তান তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা নিতে ঢাকা সফর করে। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৫ জন আফগান শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। বর্তমানে আফগানিস্তানের ঢাকায় একটি দূতাবাস আছে, তবে কাবুলে এখনও দূতাবাস স্থাপন করেনি বাংলাদেশ।
২০১০ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিচার্ড হলব্রুক বাংলাদেশকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ-সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ করেন। অন্যদিকে তালেবানরা বাংলাদেশকে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানায়।
তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মত ছিল—জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশের সেনা পাঠানো উচিত নয়। পরে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনো সেনা পাঠানো হবে না। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগান শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিও সরকার নাকচ করে। বর্তমানে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ছেচল্লিশ হাজার পশতুন বাস করে। যদিও মোট কতজন আফগান বংশোদ্ভূত বাংলাদেশে আছেন, তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। পশতুনদের বড় অংশ ঢাকায় বসবাস করে, এরপর রংপুর ও রাজশাহীতে।
জিওপলিটিক্সের গবেষকদের একটি দল মনে করছেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে আরও সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাঁদের মতে, এর প্রভাব দুই ধরনের হতে পারে। একদিকে বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্ভাবনা। অন্যদিকে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই সম্পর্ক আরও জোরদার হলে তালেবান-প্রভাবিত চিন্তাধারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভেতরে অনুরণন তৈরি করতে পারে।
এই পরিবর্তনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেখা যায় ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে একটি ইসলামি প্রতিনিধি দল তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে কাবুল সফর করে। ওই দলে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাঁরা আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি, কয়েকজন মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় মূলত আলেমদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার, কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে নতুন ধরনের সহযোগিতার পথ খোঁজার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা, জিওপলিটিক্স ডট কম, বিবিসি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের। শেখ হাসিনার এই শাসনামলকে দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসন এবং তাঁকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোতে এই ফ্যাসিবাদের শুরু হয়েছিল কীভাবে? আর কীইবা ছিল সেই ফ্যাসিবা
১১ ঘণ্টা আগেঢাকায় আজ (৭ অক্টোবর, মঙ্গলবার) চতুর্থ বাংলাদেশ-তুরস্ক ফরেইন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বা পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকটি তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিনসি গতকাল সোমবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন।
১ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগেই চীন তাদের প্রোটোটাইপ ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের অস্ত্র প্রতিযোগিতার এমন একটি নতুন ধাপ দেখাচ্ছে, যেখানে নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২ দিন আগেবৈশ্বিক চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এখানে ক্যানসার কেবল বাড়ছেই না, বরং এক নীরব মহামারির মতো কেড়ে নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক প্রাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন শনাক্ত হওয়া প্রতি তিনজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে দুজনেরই মৃত্যু হচ্ছে।
৩ দিন আগে