সুনামগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয় সরকার। কিন্তু নৌযান চালানোর জন্য চালক ও তেলের বরাদ্দ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে রোগীবহনে একদিনও ব্যবহার করা যায়নি অ্যাম্বুলেন্সগুলো। পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। ওই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে এর আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন জাকির হোসেন
স্ট্রিম সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জের মাটিয়ান হাওর অধ্যুষিত তাহিরপুর উপজেলার দুর্গম গ্রাম বড়দল। জেলা সদর থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। চারপাশে পানি থই থই। দ্বীপের মতো আলাদা দুটি বাড়ি। এর একটিতে স্বামীর সঙ্গে বাস করেন ষাটোর্ধ্ব আয়েশা বেগম। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এক রাতে তীব্র পেটের পীড়ায় বিপাকে পড়েন তিনি। রাতে নৌকা না পেয়ে অসহায়ের মতো পুরো রাত বাড়িতেই কাটিয়ে দেন। সকালে তাঁর স্বামী জমিরুল হক একজনের কাছ থেকে নৌকা চেয়ে তাঁকে নিয়ে রওনা দেন জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে। ততক্ষণে ব্যথার তীব্র হওয়ায় জ্ঞান ছিল না তাঁর।
আয়েশা বেগমের মতো জেলার হাওর অঞ্চলে অনেককেই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগ-ব্যথায় বাড়িতেই কাতরাতে হয়। অথচ রোগীদের নৌপথে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে। কিন্তু কখনোই এর সুফল পাননি হাওরবাসী।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বাসিন্দাদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে কেনা হয়েছিল চারটি আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বা এক শয্যার ক্লিনিক বোট। প্রতিটি নৌযানের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এতে খরচ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে তিনটিই চলেনি কোনো দিন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অযত্ন-অবেহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোটগুলো। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এর মধ্যে থাকা সরঞ্জাম। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ। ব্যবহার না হওয়ায় খুলে রাখা হয়েছে এর ইঞ্জিন।
চালক ও তেলের বরাদ্দ না থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার কথা জানান সিভিল সার্জন।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার জন্য চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনে তৎকালীন সরকার। এ সব অ্যাম্বুলেন্স এখন পরিত্যক্ত।
তাহিরপুরের বড়দল গ্রামের আয়েশা বেগমকে নিয়ে ছোট একটি নৌকায় উত্তাল মাটিয়ান হাওর পারি দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তাহিরপুর হাসপাতালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে, এমন কথায় কপালে ভাজ পড়ে আয়েশা বেগমের স্বামী জমিরুল হকের। তিনি বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে আফনেরার কাছ থাকি হুনছি। আমরা কোনদিন দেখছিও না, ফাইছিও না। আমরা খেউ অসুখ ওইলে ঘরো লইয়া আল্লাহ আল্লাহ খরি। কোনরকম রাইত ফার কইরা হাসপাতালো লইয়া যাই।’ একই সুরে কথা বলেন তাহিরপুরের বড়দল গ্রামের রহমত আলী।
শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা এখটা নাউয়ের অভাবে আখতা আখতা (অনেক সময়) রাইত রোগী লইয়া বিফতো (বিপদে) ফরি। এইতা (নৌ-অ্যাম্বুলেন্স) যে আছে, ইতা তো হুনছি না। ইডা ছললে আমরার বাক্কা (সবার) উফকার ওইলোনে।’
জেলার শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলা জন্য বরাদ্দ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো পড়ে আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে। এগুলো আর চলাচলের উপযোগী নয়। নৌযানের কোথাও ছিদ্র, কোথাও বোর্ড-কাঠ পচে গেছে।
নথি অনুযায়ী, প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ১৭ ধরনের সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও সরজমিনে কোথাও ২টি আছে, আবার কোথাও একটিও নেই। রোগী বহনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই একটিতেও।
জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরবাসীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয় সরকার। তবে এটি চালানোর জন্য তেল ও চালকের বরাদ্দ ছিল না। নৌ-যানটির সন্ধানে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট যাওয়া হয় জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জামালগঞ্জ থানার সামনের একটি ঝোপের ভেতর খুঁজে পাওয়া যায় অ্যাম্বুলেন্সটি, পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে।
শাল্লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির খোঁজে ২৩ আগস্ট যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের একটি ডোবায় দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। তবে এরপর একদিনও ব্যবহার করা হয়নি এটি। কর্তৃপক্ষের দাবি, বোটটি হাসপাতালের পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরকারের দেওয়া উপহার অ্যাম্বুলেন্সটি কোথায় আছে, তার অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
অ্যাম্বুলেন্সের সরঞ্জাম কোথায় গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সদ্য বিদায়ী) রিয়াদ হাসান প্রথমে কথা বলতে চাননি। পরে নিয়ে যান হাসপাতালের পুকুরপাড়ে। তিনি জানান, এই পুকুরেই ডুবিয়ে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু বাস্তবে তা দেখতে পাননি স্ট্রিম প্রতিবেদক। তবে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের কয়েকটি টুকরোর খোঁজ মেলে হাসপাতালের পরিত্যাক্ত একটি ভবনে। অ্যাম্বুলেন্সটি ক্রয়ের সময় ১৭ ধরনের সরঞ্জাম থাকলেও পরিত্যাক্ত ভবনের একটি কক্ষে শুধু ইঞ্জিন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
রিয়াদ হাসানের বক্তব্য অনুযায়ী, একটা বোট বছরের পর বছর পুকুরে ডুবিয়ে রাখলে কী সমস্যা হতে পারে, এ সব বিষয়ে জানার জন্য কয়েকজন স্পিডবোট চালকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে একজন মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তানভির আহমদ। এই বোটচালক জানান, বোট যদি পানিতে ডুবিয়ে রাখে, তাহলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে। যতদিন যাবে বোটের বিভিন্ন অংশ পঁচে খুলে খুলে পড়বে।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সংস্কারের এক সেট যন্ত্র, রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা উপকরণের খোঁজ মেলেনি কোথাও।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একাধিক চিঠিতে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তেল ও চালকের বরাদ্দ না থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সেই সূত্রে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনও জানতেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চিঠি থেকে জানা যায়, জি-১১৯৯ নম্বর প্যাকেজে দেশের আট জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য প্রত্যেককে একটি করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে। ব্যবহার শুরুর তিন বছর পর পর নৌ-যানটি সংস্কারের কথাও উল্লেখ ছিল ওই চিঠিতে।
এদিকে নৌযান পাওয়া অর্ধমাস পরে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি এক চিঠিতে জেলার সিভিল সার্জনকে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, শুরু থেকেই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য কোনো চালক না থাকায় তা তাহিরপুর থানার উত্তর পাশের নদীতে রাখা হয়েছে। এটি দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে হাসপাতালের লোক স্বল্পতা তৈরি হওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণে নতুন লোক নিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়াও অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ শাখার পরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়।
আবার ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল-৪ অধিশাখার এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য জানাচ্ছেন তাহিরপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এতে একটি ছকের ৭ নম্বরে ‘অ্যাম্বুলেন্সে কর্মরত ড্রাইভারের সংখ্যা’ ঘরে জানাচ্ছেন ‘নাই’। ১২ নম্বর ‘মন্তব্য’ ঘরে জানানো হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি ‘অচল অবস্থায় সংরক্ষণ আছে।’
শুধু তা-ই নয়, ২০২৩ সালের ৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ শাখার সহকারী পরিচলকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরাসরি লাইন ডিরেক্টরকে এক চিঠি দেন তাহিরপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শুরু থেকে চালক নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘বর্তমান বর্ষা মৌসুমে হাওর বেষ্টিত এলাকায় জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য একজন নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক একান্ত প্রয়োজন।’
তাহিরপুর হাসপাতাল উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে আছেন এমন একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছে স্ট্রিম প্রতিবেদক। তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলেন, ‘সরকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে হাওরবাসীর সেবার জন্য, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নষ্ট হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
নৌ-অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিল রহমান বলেন, ‘তেল ও চালক না দেওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রকল্পটির উদ্যোগ হাওরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। এই নৌ-যানগুলো সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়নি, ফলে এই দুরবস্থা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা উচিত, কেন এত মূল্যবান জিনিসগুলে নষ্ট হলো।’
জেলার সিভিল সার্জন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এগুলোর জন্য শুরু থেকেই চালক ও তেলের কোনো বরাদ্দ ছিল না। তাই এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পরে আছে। এতে সরঞ্জাম নষ্ট হবে, এটাই স্বাভাবিক। হয় এগুলো চালানোর মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, না হয় ফেরত নেওয়া হোক।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ গৌছ আহমদ চৌধুরী জানালেন, ‘ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো পত্র আসেনি। তবে এই বিষয়টা সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমরা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এখনো কোনো উত্তর পাইনি।’
দেড় কোটি টাকার চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আজ হাওরের কাদায় পচছে। অথচ এই নৌযানগুলোই হতে পারত জীবনরক্ষার শেষ ভরসা। চালক ও তেলের বরাদ্দ নেই বলে বছর বছর পড়ে থেকে এগুলো অচল হয়ে গেছে, সরঞ্জাম চুরি গেছে, সরকারি সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।
এ ঘটনা শুধু গাফিলতি নয়, জনস্বাস্থ্যের প্রতি সরাসরি উদাসীনতা। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার চিঠি গেছে, কর্তৃপক্ষ জানত—তবু সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ভুগছে হাওরের মানুষ। আয়েশা বেগমদের অসহায় রাত যেন আরেকটি পরিসংখ্যান হয়ে যায়।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো অবিলম্বে সংস্কার ও চালু করতে হবে। স্থায়ী চালক ও তেলের বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এগুলো শুধু কাগুজে প্রকল্প নয়—এগুলো না চললে জীবন থেমে যায়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্স সচল না হলে সরকারি ব্যয় ও প্রতিশ্রুতি দুটোই ডুবে যাবে হাওরের গভীরে।
সুনামগঞ্জের মাটিয়ান হাওর অধ্যুষিত তাহিরপুর উপজেলার দুর্গম গ্রাম বড়দল। জেলা সদর থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। চারপাশে পানি থই থই। দ্বীপের মতো আলাদা দুটি বাড়ি। এর একটিতে স্বামীর সঙ্গে বাস করেন ষাটোর্ধ্ব আয়েশা বেগম। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এক রাতে তীব্র পেটের পীড়ায় বিপাকে পড়েন তিনি। রাতে নৌকা না পেয়ে অসহায়ের মতো পুরো রাত বাড়িতেই কাটিয়ে দেন। সকালে তাঁর স্বামী জমিরুল হক একজনের কাছ থেকে নৌকা চেয়ে তাঁকে নিয়ে রওনা দেন জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে। ততক্ষণে ব্যথার তীব্র হওয়ায় জ্ঞান ছিল না তাঁর।
আয়েশা বেগমের মতো জেলার হাওর অঞ্চলে অনেককেই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগ-ব্যথায় বাড়িতেই কাতরাতে হয়। অথচ রোগীদের নৌপথে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে। কিন্তু কখনোই এর সুফল পাননি হাওরবাসী।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের বাসিন্দাদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে কেনা হয়েছিল চারটি আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বা এক শয্যার ক্লিনিক বোট। প্রতিটি নৌযানের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এতে খরচ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। কিন্তু চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে তিনটিই চলেনি কোনো দিন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অযত্ন-অবেহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোটগুলো। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এর মধ্যে থাকা সরঞ্জাম। চুরি হয়ে গেছে অধিকাংশ। ব্যবহার না হওয়ায় খুলে রাখা হয়েছে এর ইঞ্জিন।
চালক ও তেলের বরাদ্দ না থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়ার কথা জানান সিভিল সার্জন।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার জন্য চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনে তৎকালীন সরকার। এ সব অ্যাম্বুলেন্স এখন পরিত্যক্ত।
তাহিরপুরের বড়দল গ্রামের আয়েশা বেগমকে নিয়ে ছোট একটি নৌকায় উত্তাল মাটিয়ান হাওর পারি দিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তাহিরপুর হাসপাতালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে, এমন কথায় কপালে ভাজ পড়ে আয়েশা বেগমের স্বামী জমিরুল হকের। তিনি বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আছে আফনেরার কাছ থাকি হুনছি। আমরা কোনদিন দেখছিও না, ফাইছিও না। আমরা খেউ অসুখ ওইলে ঘরো লইয়া আল্লাহ আল্লাহ খরি। কোনরকম রাইত ফার কইরা হাসপাতালো লইয়া যাই।’ একই সুরে কথা বলেন তাহিরপুরের বড়দল গ্রামের রহমত আলী।
শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা এখটা নাউয়ের অভাবে আখতা আখতা (অনেক সময়) রাইত রোগী লইয়া বিফতো (বিপদে) ফরি। এইতা (নৌ-অ্যাম্বুলেন্স) যে আছে, ইতা তো হুনছি না। ইডা ছললে আমরার বাক্কা (সবার) উফকার ওইলোনে।’
জেলার শাল্লা ও জামালগঞ্জ উপজেলা জন্য বরাদ্দ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো পড়ে আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে। এগুলো আর চলাচলের উপযোগী নয়। নৌযানের কোথাও ছিদ্র, কোথাও বোর্ড-কাঠ পচে গেছে।
নথি অনুযায়ী, প্রতিটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ১৭ ধরনের সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও সরজমিনে কোথাও ২টি আছে, আবার কোথাও একটিও নেই। রোগী বহনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই একটিতেও।
জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরবাসীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয় সরকার। তবে এটি চালানোর জন্য তেল ও চালকের বরাদ্দ ছিল না। নৌ-যানটির সন্ধানে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট যাওয়া হয় জামালগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জামালগঞ্জ থানার সামনের একটি ঝোপের ভেতর খুঁজে পাওয়া যায় অ্যাম্বুলেন্সটি, পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে।
শাল্লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির খোঁজে ২৩ আগস্ট যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের একটি ডোবায় দেখা যায় অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয় ২০১৩ সালে। তবে এরপর একদিনও ব্যবহার করা হয়নি এটি। কর্তৃপক্ষের দাবি, বোটটি হাসপাতালের পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সরকারের দেওয়া উপহার অ্যাম্বুলেন্সটি কোথায় আছে, তার অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
অ্যাম্বুলেন্সের সরঞ্জাম কোথায় গেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সদ্য বিদায়ী) রিয়াদ হাসান প্রথমে কথা বলতে চাননি। পরে নিয়ে যান হাসপাতালের পুকুরপাড়ে। তিনি জানান, এই পুকুরেই ডুবিয়ে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু বাস্তবে তা দেখতে পাননি স্ট্রিম প্রতিবেদক। তবে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের কয়েকটি টুকরোর খোঁজ মেলে হাসপাতালের পরিত্যাক্ত একটি ভবনে। অ্যাম্বুলেন্সটি ক্রয়ের সময় ১৭ ধরনের সরঞ্জাম থাকলেও পরিত্যাক্ত ভবনের একটি কক্ষে শুধু ইঞ্জিন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
রিয়াদ হাসানের বক্তব্য অনুযায়ী, একটা বোট বছরের পর বছর পুকুরে ডুবিয়ে রাখলে কী সমস্যা হতে পারে, এ সব বিষয়ে জানার জন্য কয়েকজন স্পিডবোট চালকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে একজন মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা তানভির আহমদ। এই বোটচালক জানান, বোট যদি পানিতে ডুবিয়ে রাখে, তাহলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে। যতদিন যাবে বোটের বিভিন্ন অংশ পঁচে খুলে খুলে পড়বে।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সংস্কারের এক সেট যন্ত্র, রক্ষণাবেক্ষণ সরঞ্জামসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা উপকরণের খোঁজ মেলেনি কোথাও।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একাধিক চিঠিতে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য তেল ও চালকের বরাদ্দ না থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সেই সূত্রে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনও জানতেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চিঠি থেকে জানা যায়, জি-১১৯৯ নম্বর প্যাকেজে দেশের আট জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য প্রত্যেককে একটি করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে। ব্যবহার শুরুর তিন বছর পর পর নৌ-যানটি সংস্কারের কথাও উল্লেখ ছিল ওই চিঠিতে।
এদিকে নৌযান পাওয়া অর্ধমাস পরে ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি এক চিঠিতে জেলার সিভিল সার্জনকে তাহিরপুর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, শুরু থেকেই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য কোনো চালক না থাকায় তা তাহিরপুর থানার উত্তর পাশের নদীতে রাখা হয়েছে। এটি দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন নিরাপত্তা প্রহরীর মধ্যে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে হাসপাতালের লোক স্বল্পতা তৈরি হওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণে নতুন লোক নিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়। চিঠিটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়াও অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ শাখার পরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছেও অনুলিপি পাঠানো হয়।
আবার ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল-৪ অধিশাখার এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য জানাচ্ছেন তাহিরপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এতে একটি ছকের ৭ নম্বরে ‘অ্যাম্বুলেন্সে কর্মরত ড্রাইভারের সংখ্যা’ ঘরে জানাচ্ছেন ‘নাই’। ১২ নম্বর ‘মন্তব্য’ ঘরে জানানো হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি ‘অচল অবস্থায় সংরক্ষণ আছে।’
শুধু তা-ই নয়, ২০২৩ সালের ৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন ও অর্থ শাখার সহকারী পরিচলকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরাসরি লাইন ডিরেক্টরকে এক চিঠি দেন তাহিরপুরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। শুরু থেকে চালক নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘বর্তমান বর্ষা মৌসুমে হাওর বেষ্টিত এলাকায় জনগণের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য একজন নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চালক একান্ত প্রয়োজন।’
তাহিরপুর হাসপাতাল উন্নয়ন সমন্বয় কমিটিতে আছেন এমন একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছে স্ট্রিম প্রতিবেদক। তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলেন, ‘সরকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছে হাওরবাসীর সেবার জন্য, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নষ্ট হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
নৌ-অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিল রহমান বলেন, ‘তেল ও চালক না দেওয়ায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রকল্পটির উদ্যোগ হাওরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। এই নৌ-যানগুলো সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়নি, ফলে এই দুরবস্থা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলোর দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা উচিত, কেন এত মূল্যবান জিনিসগুলে নষ্ট হলো।’
জেলার সিভিল সার্জন জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এগুলোর জন্য শুরু থেকেই চালক ও তেলের কোনো বরাদ্দ ছিল না। তাই এগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পরে আছে। এতে সরঞ্জাম নষ্ট হবে, এটাই স্বাভাবিক। হয় এগুলো চালানোর মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, না হয় ফেরত নেওয়া হোক।’
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ গৌছ আহমদ চৌধুরী জানালেন, ‘ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো পত্র আসেনি। তবে এই বিষয়টা সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাথে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমরা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন মিটিং এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এখনো কোনো উত্তর পাইনি।’
দেড় কোটি টাকার চারটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স আজ হাওরের কাদায় পচছে। অথচ এই নৌযানগুলোই হতে পারত জীবনরক্ষার শেষ ভরসা। চালক ও তেলের বরাদ্দ নেই বলে বছর বছর পড়ে থেকে এগুলো অচল হয়ে গেছে, সরঞ্জাম চুরি গেছে, সরকারি সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।
এ ঘটনা শুধু গাফিলতি নয়, জনস্বাস্থ্যের প্রতি সরাসরি উদাসীনতা। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার চিঠি গেছে, কর্তৃপক্ষ জানত—তবু সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ভুগছে হাওরের মানুষ। আয়েশা বেগমদের অসহায় রাত যেন আরেকটি পরিসংখ্যান হয়ে যায়।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্সগুলো অবিলম্বে সংস্কার ও চালু করতে হবে। স্থায়ী চালক ও তেলের বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এগুলো শুধু কাগুজে প্রকল্প নয়—এগুলো না চললে জীবন থেমে যায়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্স সচল না হলে সরকারি ব্যয় ও প্রতিশ্রুতি দুটোই ডুবে যাবে হাওরের গভীরে।
শেখ হাসিনার ‘শখের বাগানে’ দেখা মেলে সারিবদ্ধ আম গাছের। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং গুগল আর্থের স্যাটেলাইট ছবি ঘেঁটে দেখা যায়, বাগানটির চারপাশে পাকা প্রাচীর ছিল। ৫ আগস্টের পরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সাইনবোর্ড ও প্রাচীর দুটোই ভাঙা পড়ে। এ বাগানে বারি-৪ জাতের প্রায় ১৫০টি গাছ রয়েছে।
১ দিন আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ভূমিধস বিজয় হয়েছে’ বলা হলেও প্রকৃত চিত্র এমন নয়। বরং জয়ীদের প্রায় অর্ধেকই সরাসরি শিবির করেন না। সদ্য শেষ হওয়া ডাকসু নির্বাচনে ১৫টি পদে শিবিরের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যুক্ত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে এসেছেন। আর এর বাইরে ১৩টি পদে
২ দিন আগে‘আসসালামু আলাইকুম, আমি যুদ্ধে আছি। কোনো সমস্যা নেই। আব্বা-আম্মা, আমার জন্য দোয়া কোরো। সবাই আমার সঙ্গে আছে, চিন্তা কোরো না।’ পরিবারের জন্য পাঠানো ভিডিওতে এই ছিল নিহত হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার শেষ বার্তা। ইতালি নেওয়ার কথা বলে হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াকে (২০) রাশিয়ায় পাচার করা হয়। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘যুদ্
৩ দিন আগেতাহলে ভারতের কী করণীয়? প্রমাণভিত্তিক কূটনীতি, সহযোগিতার হাত বাড়ানো এবং সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা। অযাচিত হস্তক্ষেপের পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্য সহযোগিতা তৈরি করাই হবে নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখার একমাত্র পথ।
৪ দিন আগে